আমাদের সংবিধানে স্পষ্ট বলা আছে, রাষ্টের প্রাকৃতিক ও সকল খনিজ সম্পদের মালিক জনগণ। সরকার ওগুলোর দেখভাল করবে। যদি তারা ব্যর্থ হ্য়, জনগণের কাছে তারা জবাবদিহিতা করতে বাধ্য। যদি রাষ্টীয় সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ সঠিকভাবে না করতে পারে, তবে ক্ষমতায় থাকার কোনো অধিকার কোনো সরকারেরই নেই। কিন্তু আমরা সরকারের জবাবদিহিতা পাওয়া তো অনেক দূরের কথা, ক্ষমতায় গেলে সরকারের সবাই ভাবে দেশটা তাদের বাপ-দাদার। স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্নীতি আর লুটপাট চলে সীমাহীন।
প্রধান বিরোধী দল নিয়মিত রোড মার্চের মাধ্যমে কালো টাকা আর গাড়ি প্রদর্শনী করছে। কিন্তু এ সবই আরেকবার ক্ষমতায় যাবার জন্য, রাষ্ট্র আর তার জনগণের স্বার্থের জন্য নয়। তাদের সমাবেশে আমরা লাখো মানুষের উপস্থিতি দেখি, কিন্তু 'তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি'র সমাবেশ বা কর্মসূচিতে কেনো মানুষের সংখ্যা লাখ হয় না?? কারণ, ক্ষমতা আর কালো টাকার হাতছানি সেখানে নেই। আমরা প্রত্যেকেই কী তাহলে ক্ষমতালোভী আর স্বার্থপর?
পেট্রোবাংলা দুর্নীতিবাজ আর বিদেশি কমিশনভোগীতে ভরে গেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানী তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার অজুহাতে বারবার তেল আর গ্যাসের দাম বাড়াচ্ছে সরকার। কয়েকজন মানুষ ছাড়া এ ব্যাপারে কেউ কিছু বলছে না। এ ব্যাপারে সবচে বেশি সোচ্চার হওয়ার কথা, সেই বিএনপি ব্যস্ত সাকাদেরকে বাঁচাতে! এতো তেল-গ্যাস আমাদের মাটির নিচে, তারপরও হাজার হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়ে তেল-গ্যাস কিনতে হয় ত্রিশ গুণ বেশি দামে; তাও যে সব বিদেশি কোম্পানীর কাছে আমাদের তেল-গ্যাসক্ষেত্র ইজারা দেয়া! দুর্নীতির কারণে সরকার ঋণগ্রস্ত, রাষ্ট্র ঋণগ্রস্ত, প্রতিটি পরিবার ও ব্যক্তিও ঋণগ্রস্ত। এসবের কারণে প্রতিদিন বাড়ছে দারিদ্র্য মানুষের সংখ্যা। তেলের দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ভর্তুকি দিতে না পারাটা সরকারের ঘৃণ্য মিথ্যাচার ও অযোগ্যতা ছাড়া কিছু নয়। আইএমএফ আর বিশ্বব্যাংকের আজ্ঞাবহ সরকার গঠণের জন্যই কী আমরা তাদের ভোট দেই?? কিন্তু আর কতদিন?
বহু অঘটনের জন্ম দেয়া কনোকো-ফিলিপসের হাতে আমাদের সমুদ্র তুলে দেয়ার চক্রান্ত চলছে। ইতোমধ্যে তাদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে দুইটি ব্লক। এতে করে আমাদের বিপুল পরিমাণ সামুদ্রিক সম্পদ হাতছাড়া হতে চলেছে, তা নিশ্চিত করেই বলা যায়। সুনেত্র আর রশিদপুরে পাওয়া আমাদের নতুন দুটি গ্যাসক্ষেত্র যদি বাপেক্সকে দেয়া হয়, তবে আগামী ৪০ বছর চলার মতো গ্যাস সেখান থেকে পাওয়া যাবে। কিন্তু, সর্বভূক দুর্নীতিবাজরা যেভাবে লেগে আছে, বিদেশি কোম্পানীর কাছেই গ্যাসক্ষেত্র দুটির ইজারা দেবার আশংকা বেশি। সম্প্রতি নিরাপত্তার অজুহাতে দেশের বিমান বন্দরগুলো বিদেশি কোম্পানীর কাছে ইজারা দেবার চিন্তা-ভাবনা করছে সরকারের একটি মহল। যারা বিমান বন্দরের নিরাপত্তা দিতে পারে না, তারা কিভাবে দেশের মানুষের নিরাপত্তা দেবে? কিছুদিন পর কী জনগণকেও ইজারা দেবে সরকার??
অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও পরিবেশ দূষণকারী ফার্নেস অয়েল, ডিজেল বা ক্ষুদ্র স্কেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ করা জরুরী। রাষ্ট্রীয় মালিকানায় নির্মিত বন্ধ হয়ে যাওয়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো আধুনিকায়ন করে আবার চালু করা দরকার। তাতেই বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধান সম্ভব। কিন্তু আকন্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ, চীন (এ দুটি শক্তিই বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী ছিলো) ও ভারতের পা চাটা রাজনৈতিক দলগুলো এবং সরকার কী তা কখনো করবে?
বাঙালি জাতীয়বাদ, বাঙলাদেশি জাতীয়তাবাদ এবং ইসলামি জাতীয়তাবাদ এই তিন ধরণের জাতীয়তাবাদি রাজনৈতিক শক্তি বাংলাদেশে বিদ্যমান। সব 'বাদী'-রাই আমেরিকার দালাল। গত চল্লিশ বছরে বিদেশিদের সাথে অসংখ্য চুক্তি করেছে সরকার। এর মধ্যে আমেরিকার সঙ্গে কমপক্ষে দশটি - কিন্তু কোনো চুক্তিই প্রকাশ হয় নি। কিন্তু কেনো??
ধন্যবাদ জানাই, 'তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি ও এর নেতৃবৃন্দকে। অন্তত তারা ক্ষমতার রাজনীতি করছে না। শুধু তারাই দেশের স্বার্থ রক্ষায় সোচ্চার। তারা নিন্মোক্ত দাবিগুলো নিয়ে দশ বছর ধরে আন্দোলন করে যাচ্ছেন :-
১। সুনেত্র ও রশিদপুর গ্যাসক্ষেত্র রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাপেক্সকে খনন ও উত্তোলন করতে হবে, কোনো বিদেশি শক্তির হাতে দেয়া যাবে না।
২। পিএসসি-২০১১ প্রক্রিয়া বন্ধ করতে হবে।
৩। পিএসসি-২০০৮ ও কনোকো ফিলিপসের সাথে চুক্তি বাতিল করতে হবে।
৪। খনিজ সম্পদ রফতানি নিষিদ্ধকরণ আইন অবিলম্বে পাশ করতে হবে।
৫। ফুলবাড়ী চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে।
৬। জাতীয় সম্পদে জনগণের মালিকানা নিশ্চিত করতে হবে।
একবার ভাবুন, তাদের দাবিগুলো দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কী না?? যদি আপনার বিবেক তা বলে, তাহলে যোগ দিন আমাদের সাথে। আর নয় ঘুমিয়ে থাকা, আর নয় ক্ষমতার কাছে মাথানত জীবন।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



