somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনন্য জন্মগুলো

২২ শে জুন, ২০১০ রাত ২:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রতিটি জন্মের নিজস্ব কিছু দায় থাকে।অন্যান্য প্রাণীর বেলায় তার দায় মেটানোর দায় কতটুকু তা নিয়ে দ্বি-মত থাকলেও,মানুষ যদি তার নামের প্রতি সুবিচার করতে চায়,তবে তাকে তার দায়ভার বহন করতেই হবে।মানুষ নামের সিমাবদ্ধতা এবং মহত্ব এখানেই।প্রতিটি মানবজন্ম সুতীব্র চিৎকারে পৃথিবীতে তার অস্তিত্ব জাহির করে।অনতিক্রম্য সীমাহীন স্বপ্ন নিয়ে শুরু হয় তার পথ চলা,তিব্র আবেগ আচ্ছন্ন করে রাখে তাকে সারাক্ষণ,অফুরন্ত ভালোবাসা পারিপার্শ্বিক সবকিছু হতে নিজেকে সবচাইতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ভাবতে শেখায়।আর তাই কথায় কথায় ঠোঁট ফোলানো,আবেগের মাত্রা সপ্তাকাশ ছোঁয়া,ভালবাসা চারপাশে এত বেশি যে,সারাক্ষণ মনে হয় কেউ বুঝি আমার দিকে দৃষ্টি দিচ্ছে না, নিজেকে সকলের আকর্ষনের কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে যাবার প্রচেষ্টা থাকে সারাক্ষন। রূপকথার গল্পগুলো যে রূপকথা তা তো বোধগম্য নয়ই, বরংচ নিজেই যে ঐ রূপকথার নায়ক তাতে কোন সন্দেহ থাকেনা। এই রূপকথার ছাপ থেকে যায় জীবন ব্যাপ্তির অর্ধেক সীমা পর্যন্ত। স্বপ্ন বিভোরতা বাস্তবতার স্বরূপ কিছুতেই বুঝতে দেয়না। সব কিছু পরিবর্তন করে ফেলাটা মনে হয় হাতের মুঠোয়। স্বপ্ন শুরু হয় মায়ের কষ্ট ঘোচানো থেকে, পরিবারের কষ্ট, পরিচিতজনের কষ্ট কমানো থেকে, বড় হবো, এতো বড় যে- সবার মুখে হাসি এনে দেব। এই বড় হওয়া যখন আঠারোর কাছাকাছি পৌঁছায়, তখন আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখে মন, তুচ্ছ হতে শুরু করে আপনজনেরা, আপন হতে শুরু করে পৃথিবী। ব্যক্তিগত দুঃখের চেয়ে বড় হয়ে ওঠে দেশ, দেশ এর চেয়ে পৃথিবী। স্বপ্ন রূপান্তরিত হয় বিপ্লবে, এমন একটা কান্ড আমি ঘটাবো, হৈ চৈ পড়ে যাবে পৃথিবীতে,এমন একটা মতবাদ আমি দেবো , পাল্টে যাবে পৃথিবীর ইতিহাস। মার্ক্সবাদী বিপ্লবে স্বপ্নাচ্ছন্ন মন ভাবে, আর একটু প্রচেষ্টা কেবল, সকল শোষনের অবসান ঘটিয়ে নিপীড়িত মানুষের মুখে হাসি ফোটাবোই। এমন আলৌকিক কিছু ঘটে যাবে যাতে পাল্টে যাবে পৃথিবীর ইতিহাস। এই স্বপ্ন আড্ডাবাজ করে তোলে, ছন্নছাড়া করে তোলে, মনে হয় অনেক কিছু করার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। ' অন্যায় কখনোই চিরস্থায়ী হতে পারেনা'- এ বিশ্বাস একমাত্র সত্য হয়ে উঠে।
জীবন সুন্দর। আহারে ! জীবন কি সুন্দর !



অথবা ক্লিক করুন
সকালের মায়ামাখা রোদ স্বপ্নালু করে দৃষ্টি, মধ্যাহ্নের প্রখরতা তীক্ষ্ম করে বোধ, বিকেলের স্নিগ্ধতা রহস্যময় করে তোলে মন, রাত্রির নিস্তব্ধতা সৃষ্টিশীল করে তোলে। সে এক সময়, শ্রেষ্ঠতম স্বপ্নময় সময়, কোন পথ দিয়ে যে হঠাৎ করে চলে যায়।

আচমকা জীবন এসে সামনে দাঁড়ায়, অথবা জীবনের সামনে নিজে। রূপকথার গল্পের খলনায়ক হিসেবে কখন যে জীবন নিজেকে দাঁড় করিয়ে দেয়, সে এক রহস্য। পৃথিবীকে পাল্টানো দূরে থাক, নিজের জীবনকেই বদলানো হয়নি, পৃথিবীর মুখে হাসি ফোটানোর স্বপ্ন দেখেছিলো যে, কখন যে তার নিজের হাসিটুকু মুছে গেছে, লক্ষ্যই করা হয়নি। পৃথিবী হতে জঞ্জাল সরানোর প্রতিজ্ঞায় ছিল যে মন, হঠাৎ করে লক্ষ করে নিজের জীবনটাই বোঝা হয়ে গেছে। পরাজিত অস্তিত্ব অস্বীকার করতে ঘুমিয়ে পড়া বিদ্রোহ মাঝে মাঝেই মাথা চাড়া দিয়ে উঠে। নিজ অস্তিত্ব হতে অধিকার সরিয়ে নিতে ব্যাকুল হয়ে ওঠে মন।

' বিপদে মোরে রক্ষা কর এ নহে মোর প্রার্থনা ' - এ শক্তি ছিলো যে মনে, সে মন আজ আশ্রয় খোঁজে এই হতাশায় - ' ক্লান্তি আমার ক্ষমা করো প্রভু'। শক্তি খোঁজে অন্যের দ্বারে। বড় হবার যে আকুল আকাংখা নিয়ে সে অপেক্ষা করেছে , বড় হয়ে সে তার সকল আশ্রয়ের জন্য মুখ লুকায় শৈশবে।বড় পরিহাস। জীবনের বড় ব্যথিত উপহাস।

এই কি জীবন? এই বুঝি সাধারণ জীবনের কল্পকথা। কেউ কেউ এ জীবন পেরিয়ে যায় ঠিকই, ঠিকই নিজের পদচিহ্ন এঁকে রাখে পৃথিবীর জীবনে। সকালের মায়ারোদ আজীবন তার কাছে বিস্ময় নিয়েই আসে, হাহাকার ছড়ায়না। প্রতিটি মানুষের ভিতরেই রূপকথার যে চেরাগ রয়েছে তার আলোটা যত্ন করে জ্বালিয়ে রাখতে হয়, ঠিকমতো পরিষ্কার করে পুরনো তেল পাল্টে নতুন তেল দিতে হয়। কালবৈশাখী ঝড়ে তাকে সযত্নে ঝড় থেকে রক্ষা করে বাঁচাতে হয়। কত অসংখ্যবার যে কতরকম ঝড় তাকে নিভিয়ে দিতে আসে এবং ঠিকই নিভিয়ে দেয়। তাই মুহুর্তের জন্যও নিজের চেরাগটা হতে দৃষ্টি সরানো যাবেনা কিছুতেই। ঘষে মেজে এর আলোটা এত বেশী আলোকজ্জ্বল কবতে হবে, যাতে আলোকিত হয়ে ওঠে চারপাশ, অন্ধকার দূর হয় চারপাশের।

প্রতিটি মনুষ্যজন্মের নিজস্ব কিছু দায় থাকে।
মানুষ জন্ম বলেই বিনা আয়াসে উত্তরাধিকার সূত্রে 'মানুষ ' নামের যে স্বীকৃতি সে পেয়েছে তাকে তার পরিচর্যা করতেই হবে, নয়তো জন্মসূত্রে পাওয়া মানুষ শব্দটা শেষবেলায় এসে না আবার তার ঐতিহ্য হারায়। 'অ' নামক ছোট্ট একটা প্রত্যয় যদি মানুষ শব্দটার পূর্বে লেগে যায় তবে পশু হতে তার আর কোন ব্যবধান থাকেনা। পৃথিবীর ব্যবস্থা এমন সুশৃংখল যে , ঠিকই সে নির্দিষ্ট ব্যবধানে মানুষকে মনে করিয়ে দেয় তার জন্মের দায় এর কথা, মানুষ তা উপলদ্ধি করুক বা না করুক, ঠিকই মনে করিয়ে দেয় সময় চলে যাচ্ছে অন্তিমের দিকে, তুমি কি তোমার নামের সুবিচার করেছে?

মানুষ হিসেবে জন্ম গ্রহন করার কারণেই তার অবস্থান শুভত্বের কাছাকাছি, একই ভাবে অশুভ শক্তিও তাকে তাড়া করে টলিয়ে দিতে, এখানেই তার বড় পরীক্ষা, জন্ম সূত্রে সে মানুষ বলেই সে কিন্তু মানুষ হয়ে ওঠেনি, তার জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তাকে প্রমাণ রেখে যেতে হবে যে, সে মানুষ ছিলো।

আর তাই নির্দিষ্ট ব্যবধানে ব্যাক্তিকে ঠিকই তার জন্মের শুভত্বের কথা মনে করিয়ে দেয়া হলেও শুভত্বের শক্তি লালনের কথা মনেকি পড়ে তার ?
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুন, ২০১০ রাত ২:৪৮
৩০টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×