somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অঝর ধারায় বৃষ্টি, কারো স্বস্তি কারো অস্বস্তি

২৪ শে মে, ২০১৪ রাত ৮:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ হয়ে গেল ঘন্টাব্যাপী অঝর ধারায় রিমঝিম বৃষ্টি। বৃষ্টি যখন পড়বে পড়বে ভাব, দূর আকাশে কালো মেঘে ছেয়ে গেছে। আর মাঝে মধ্যেই গগণ বিদারী মেঘের গুর গুর ডাক পড়ছিল তখন আমি সবে রওনা দিয়েছি কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুননাহার হলের সামনে তখনো সারি সারি যুগলবন্দী দিব্যি বসে আলাপনে মসগুল। আমি এসবের মধ্যদিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি একসময় ক্রসিং করছি সড়ক দ্বীপ। হঠাৎ মাথায় কয়েক ফোটা বৃষ্টি। কাউকে বলতে শোনা গেল এই চল চল উঠ বৃষ্টি পড়ছে। আর কাউকে দেখা গেল বৃষ্টিতে ভেজার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। সবে মাত্র সড়ক দ্বীপ পেরিয়ে হাকিম চত্ত্বরের দিকে যাবো ঠিক এ মহুর্তে উপর থেকে এমন বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল যেন আমি রাস্তা ধরে হেটে যাচ্ছি আর দুষ্টমি করে কেউ উপর থেকে পানি ঝড়িয়ে দিল। খুব সহজেই সামনে থাকা যাত্রী ছাউনিতে নিলাম ক্ষনিকের জন্য আশ্রয়। ঘরির কাটা তখনও ২টা ত্রিশ মিনিট। না-আমার কোন তারা নেই। আজ একটু আগেই রওনা দিয়েছি। তাই এ যাত্রাই বৃষ্টি উপভোগ্য হল। কারণ এর আগে অনেকবার বৃষ্টির সময় অফিসের ভেতরে ছিলাম, টের পাইনি ঘুনাক্ষরেও যে বাইরে বৃষ্টি পড়ছে। পড়ে যখন বসেরা (মানে সিনিয়ররা) ক্যামারা পাঠাচ্ছে বৃষ্টির ছবির জন্য তখন টের পেলাম। পড়ে বসেরা যখন সবাই রুম ছেড়ে বারান্ডায় গেল বৃষ্টি উপভোগের জন্য তখন বসে বসে মিস করছিলাম। আজ আর সেই মিস করা নয় পুরাই ষোলকলায় পুর্ণ। কারণ আমি যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম সেখানে একপ্রকার বৃষ্টি ভেজারই সামিল। বার বার বাতসটা ঝাপটি মেরে আমাদের সবাইকে ভিজিয়ে দিচ্ছিল। ঠিক যেন আমরা কোন ভরা নদীর মাঝ খান দিয়ে যাচ্ছিলাম পাল তোলা এক নৌকোয়। এমন সময় বৃষ্টি আর বাতাস আমাদের নিয়ে জলকেলি খেলছে। আমার সামনে দাঁড়ানো একটি ছেলে আমারই মত, আমার ঠিক পেছনেই একটি জুটি মানে প্রেমিক প্রেমিকা যুগল, বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি তাদের কথা শুনে। তারা অনবরত কথা বলেই যাচ্ছে। পাশেই কয়েকজন আধাবয়সী লোক। তাদের মধ্যে একজন সিগারেট ধরিয়েছেন, সবার মধ্যে অফরান তৃপ্তি নিয়ে তিনি সিগারেট টানছেন আর ধুয়া ছাড়ছেন, বৃষ্টি যেন উনার এ তৃপ্তি বাড়িয়েছে আরো দিগুন অন্তত টানটা দেখে তাই মনে হয়েছে। এরই মধ্যে বৃষ্টির আয়ু মিনিট দশেক হয়ে গেছে। বৃষ্টির গতি আরো বাড়ছেই। সামনেই ছিল একটি ম্যানহোল। সেখানটাই বইতে শুরু করেছে ছোট পাহাড়ী ঝড়নার মত বৃষ্টির জলধারা। ওদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে শুরু করে রাজু ভাস্কর্যের আশপাশের সব পানি আসছে এ ম্যাহোলের দিকে। তীব্র গতিতে ঢুকে পড়ছে। দাড়–ন লাগছিল এ জলধারা দেখতে। আমি এই স্বচ্ছ পানির ঝিরঝির বহতা দেখে স্বস্তি পেলেও ওদিকে অস্বস্তিতে পড়েছেন একটি ইদুর। সে এতদিন ম্যানহোলের কোন কোণায় ঠাই নিয়ে ছিল। দুর্বার গতিতে বৃষ্টির পানি ঢুকে পড়ায় বেচারা আর থাকতে পারলোন্ াভেতরে। বেরিয়ে আসতে হল। কিন্তু জলের স্রোতের সাথে পেরে উঠলনা। ভাসিয়ে নিয়ে গেল আবার ভেতরে। এরপর তার যে কী হল আমি জানিনা। বেচে থাকলেও থাকতে পারে। শহুরে ইদুর অত্যন্ত চালাক্ তো বটেই তাছাড়া শহরে থাকছেন অনেক যুদ্ধ করেই। ওদিকে অনেক জনকে ঘটা করে ভীজতে দেখা গেল, কেউ কেউ জলকেলি খেলছে পা দিয়ে হাত দিয়ে। অনেকে সড়কদ্বীপে, রাস্তার আইল্যান্ডে বসে দিব্যি উপভোগ করছে বৃষ্টি। আর কিছু ছেলেরাও বেড়িয়েছে বৃষ্টিতে ভিজবে বলেই। তারা এদিকে ছুটাছুটি করছেন। আর আমাদের পাশে থাকা একজন ফটোগ্রফার একটার পর একটা ছবি লুফে নিচ্ছেন। এটাই হল কারো স্বস্তি কারো অস্বস্তি। আবার এটাও চোখে পড়ল কয়েকজন মোটর সাইকেল চালিয়ে বৃষ্টিতে ভিজছেন উদাম শরীরে অবশ্যই ছেলেদের কথা বলছি। কিছু যুগল বৃষ্টিতে ভীজে মজা পাচ্ছেন, আবার কাউকে কাউকে দেখা গেল বৃষ্টিতে ভীজে খুব অস্বস্তিতে পড়েছেন। বিশেষ করে মেয়েদের বৃষ্টিতে ভীজলে কিছুটা অস্বস্তি দেখা গেছে। তবে সবাই কিন্তু নয়। এইতো যখন বৃষ্টি কিছুটা ধীরে বইতে শুরু করল আমি এগিয়ে গেলাম ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয় সেন্ট্রাল মসজিদ পর্যন্ত। এরপর আবার শুরু হল বৃষ্টি পুর্বেই ধারায়। সেখানে আবার ঠাই নিলাম। এমন সময় রাজু ভাস্কর্যের ওদিক থেকে আসছে তিনজন। দুর থেকে তাদের গতিবিধি বোঝা যাচ্ছিল না, যেই তারা সামনে এগিয়ে আমাদের ক্রসিং করছিল তখন শোনা গেল তাদের গলায় সম্মিলিত কণ্ঠে একটি ভাসা ভাসা গান যেখানে তাদের হাসিটাই ছিল গানের চেয়ে বেশী। তাদের দেখে বোঝা গেল তারা সবাই চারুকলার শিক্ষার্থী। কারণ হাতে ছবি আকার বোর্ড, পেপার বক্স ইত্যাদি ছিল। বৃষ্টির চরম ফিলিংস নিয়ে যাচ্ছিল ওরা। আমিও বার বার ভেবেছি সুযোগ যখন ছিল তখন তো আমিও কতবার ঝুম বৃষ্টিতে ভিজেছি তখন শুধু সেগুলি স্বরনে আসছিল। আর অনেক জুটির মধ্যে আমি কেমন যেন অস্বস্তিতে পড়ে গেছিলাম। তবু আমি নিরুপায় এমন অস্বস্তিতে ফেলেছে বৃষ্টি মশায়। এমন সময় হঠাৎ চোখ চলে গেল সোজা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। সেখানে দেখলাম লালন আখড়ার চত্বরে কতগুলি মোটর সাইকেল সার্কেল করে দাঁড়িয়ে থাকা। পাশেই দেখলাম দলবাধা এক ঝাক তরুন তরুনী। তারাও আজ মেতেছে বৃষ্টিতে। এদিকে ঠিক তার পাশেই দেখা গেল ভাসমানদের অস্থায়ী, জীর্ণ কুটির এক ঘন্টার বৃষ্টিতে ভিজে একাকার হয়ে গেছে। কেউ কেউ সে কুটিরকে রক্ষা করতে নানা রকম প্রানান্ত চেষ্টা চলাচ্ছে। একসময় প্রায় ঘন্টাখানিক বাদে বৃষ্টি কিছুটা ঝিমিয়ে আসছিল, অনেকে রিক্স্রায় করে চলতে শুরু করেছে, বাকি আছে কয়েকজন, তারা যাচ্ছে না এমন নয় রিক্স্রা পাচ্ছেনা। আমি অপেক্ষায় থাকলাম বৃষ্টি কখন আরেকটু কমে আসে। এমন সময় টিএসসির ওদিক থেকে একটি ছাতা মেলে আসছে একজন মেয়ে। কাছে এলে চিনতে পারলাম, সে আমার সহপাঠী। সে কাছে আসতেই জিজ্জেস করল দাদা কী অফিস থেকে আসছো নাকি যাচ্ছো? ডিপার্টমেন্টে আমাকে অনেকেই মজা করে দাদা বলে ডাকে। তাদের মধ্যে ও একজন। আমি বললাম না অফিসে যাচ্ছি। ও চট করে বলল চলে আস আমার ছাতাই করে সামনে যাই। আমি পড়ে গেলাম অস্বস্তিতে । এত একটা ছোট ছাতাতে যাই কীভাবে। তাকে বিষয়টি বুঝতে দেই নি। এমন সময় ভাগ্য দেবী সহায় হল যেন, একটি যাত্রীহীন রিক্সা আসল। সাথে সাথে তাকে নিয়ে নিলাম আর সাথে সহপাঠীকে নিয়ে শাহবাগে নামলাম দু’জনে। এরপর সে চলে গেলে তার গন্তব্যে আমি চললাম আমার টায়। এভাবেই বৃষ্টি কখনো কারো জন্য স্বস্তি আর কারো জন্য অস্বস্তি তবুও বৃষ্টি সে পড়বে তারই মত করে। তার ছন্দের সাথে ছন্দ শুধু মিলাতে পারি আমরা।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তোমাকে লিখলাম প্রিয়

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০২ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০১


ছবি : নেট

আবার ফিরে আসি তোমাতে
আমার প্রকৃতি তুমি,
যার ভাঁজে আমার বসবাস,
প্রতিটি খাঁজে আমার নিশ্বাস,
আমার কবিতা তুমি,
যাকে বারবার পড়ি,
বারবার লিখি,
বারবার সাজাই নতুন ছন্দে,
অমিল গদ্যে, হাজার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

×