গেল ২৬ জানুয়ারী ভারতের প্রতিরক্ষা দিবসে দেশটিতে সফর করেছেন বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতা সম্পন্ন দেশের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। সফরকালে ভারতের সাথে করেছেন পরমানু চুক্তিও, সেই সাথে প্রতিরক্ষা সরঞ্জামাদি আর রাশিয়া থেকে নয় এখন থেকে আমেরিকা থেকে ক্রয় করতে পারে ভারত। আগে যার ৭৫ ভাগই আমদানি করা হত রাশিয়া থেকে। গার্ড অব অনার দেয়ায় দীর্ঘ দিনের নিয়মে ব্যত্যয় ঘটায় ভারত। ভারতের ইতিহাসে প্রথম গার্ড অব অনার দেয়া হয় নারী সৈনিক দিয়ে। নেতৃত্ব দেন উয়িং কমান্ডার পূজা ঠাকুর। আমেরিকায় নিযুক্ত এস জয় শঙ্করকে নতুন পররাষ্ট্র সচিব পদে নিয়োগ দিয়েছে মোদি সরকার। সব মিলে কুটনৈতিকরা ধারণা করছেন ভারত-আমেরিকা সম্পর্ক দৃঢ় হচ্ছে। এর আগে কংগ্রেস সরকারের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এর সময় যা ভাটা পড়েছিল।
এদিকে ওবামা’র ভারত সফর’র আলোচনার রেস কাটতে না কাটতেই আরেক আলোচনার জন্ম দিল গণচীন। দেশটি ঘোষণা দিল চলতি বছরে বড় একটি সামরিক কুচকাওয়াজ করার। আর তাতে প্রধান অতিথি করবেন আরেক পরাশক্তি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভাদিমির পুতিনকে। মঙ্গলবার ভারত থেকে ওবামার ফিরে যাওয়ার দিনই এ ঘোষণা দেয় চীন। এ নিয়ে এশিয়া অঞ্চলের রাজনীতির নতুন মোড় নিয়ে রাজীনীতির মঞ্চে আলোচনা এখন তুঙ্গে। এ অঞ্চলে চীনের অন্যতম প্রতিদন্দ্বী হিসেবে দেখা হয় ভারতকে। (সমকাল:২৯ জানুয়ারী ২০১৫) সেকারনে চীনের পর্যায়ক্রমে উত্থান মোকাবেলায় আমেরিকার নানা কৌশলের অংশ হিসেবে ধারণা করা হচ্ছে ভারতে ওবামার এমন আতিথেয়তাকে। চীন সাধারণত সামরিক কুচাকাওয়াজ করে থাকে প্রতি দশ বছর অন্তর। কিন্তু এবার তার ব্যত্যয় ঘটাচ্ছে অনেকটা তড়িঘরি করেই। আর তাতে ঘোষণা দেয়া হয় রুশ প্রেসিডেন্ট ভাদিমির পুতিনকে অতিথি করার।
কেন এই রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা, সামান্য একটি বিষয় তুলে ধরার জন্য। শাশ্ব্যত বিষয়টি হচ্ছে ক্ষমতা সবসময় আপেক্ষিক, একক নয়। পরস্পরের উপর নির্ভরশীল হতে হয়। অর্থাৎ প্রজা ছাড়া যেমন রাজা হয় না, তেমনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পক্ষাবলম্বন ছাড়া আমেরিকাও হয়নি। ক্ষমতার জন্য দুর্বলকে যেমন সবলের দিকে তাকিয়ে হাত উঁচু করতে হয়। আবার ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য বা আরো বেশী শক্তিশালী হওয়ার জন্য সবলকেও দুর্বলের কাছে হাত পাতটে হয়। মানে হচ্ছে আমেরিকা এককভাবে ক্ষমতাধর নয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাকে শক্তিশালী করেছে। বাংলাদেশও এর থেকে বাইরে নয় বোধ হয়। কাজেই আজকে আমরা যে অহরহই মধ্যপ্রাচ্যে বিভিন্ন ঘটনার জন্য আমেরিকাকে দায়ী করছি, এর দায় কি আমরাও এড়াতে পারি কিনা? আজকে দেখুন আপনি, আমি আমেরিকাকে যাচ্ছেতাই গালিগালাজ করতে পারি। কারণ আপনার আমার কথা তো আমেরিকার কানে যাবে না। কিন্তু যারা বললে কানে যাবে তাদেরকে স্পষ্ট ভাষায় আমেরিকার সমালোচনা করতে দেখেছেন কী? দেখলেও অত্যন্ত সুকৌশলে, যা সমালোচনা না করারই নামান্তর। তাহলে কী ক্ষমতার জন্য আমাদেরকে আমেরিকার কোন প্রয়োজন নেই! না কি স্বার্থের জন্য বাংলাদেশকে ব্যবহার করছে না? আপাতত সরাসরি করছে না হয় তো। কিন্তু ভবিষ্যতে যে কোন প্রয়োজনে বাংলাদেশকে ব্যবহারে যে আমেরিকা সবচেয়ে বেশী উপযুক্ত মনে করে তাদের বিভিন্ন কার্যক্রমে তা অনুমেয়।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:০৭