রফিক, শফিক, জব্বার, বরকত দের রক্তে অর্জিত হয়েছে বাংলা ভাষা, লাখো শহীদের রক্ত ও মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে বাংলার স্বাধীনতা। ঐ রক্ত পিসাচ একাত্তর পুর্ব পাকিস্তানী শাসকরা পারেনি তাদের ভাষাকে আমাদের উপর চাপিয়ে দিতে, পারে নি আমাদের স্বাধীনতাকে দমিয়ে রাখতে। কাজেই নাস্তিক বাদের অনুসারী বা চর্চাকারীদের হত্যার মাধ্যমে নাস্তিকবাদের প্রসারই ঘটবে বটে। হত্যায় মানুষের জীবন থেমে যেতে পারে, তার ভাবাদর্শ, মরে না। একটি ভাবাদর্শকে হত্যা করতে আরেকটি উত্তম ভাবাদর্শই উত্তম পন্থা, মানুষ হত্যা নয়। পৃথিবীতে অনেক মহামানব যেমন বৌদ্ধ, হযরত, যীশু খ্রীষ্ট এগুলি করেছেন। এখনো করে যাচ্ছে অনেকেই। যেমন একটি উদ্াহরণ জাকের নায়েক একটি ভাবাদর্শ প্রচার করছেন। তিনি তো অন্য ভাবাদর্শের কারো উপর হাতে কলমে ঝাপিয়ে পড়ছেন না। তিনি বলে যাচ্ছেন শুধু। আর আরেকটি চিরসত্য হচ্ছে, নাস্তিক রা কিন্তু অনন্ত শক্তির কখনো অস্বীকার করে না করতে পারে না, এটা আমার অভিমত। কিন্তু অনন্ত শক্তির উপর নির্ভরতার নামে আমাদের যে গতানুগতিক জীবন কর্ম, চর্চাপদ্ধতি অস্বীকার করেন ও তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তারা পৃথিবীর পরিবর্তনশীল সমাজ ব্যবস্থা, পরিবেশ, জীব বৈচিত্র, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রসারের সাথে সামঞ্জস্যপুর্ণি একটি সুন্দর ও সহজ জীবনের কথা বলেন। তাদের কথা শুনলে, তাদের মানলে যে কারো বিশ্বাস নষ্ট হবে এমনটি নয়। যারা এমন ভয় করে তাহলে বুঝতে হবে তাদের সৃষ্টিকর্তার প্রতি তাদের বিশ্বাস দৃঢ় নয়। আর তারাই বিশ্বাস হরন করে নিয়ে যাওয়ার ভয়ে নাস্তিক বাদীদের হত্যায় উদ্বুদ্ধ হয়। বিশ্বাস যদি কারো মনে একবার জন্ম নেয়, তাহলে সে বিশ্বাস আজীবন থাকতে বাধ্য। কোন প্রচার বা যুক্তিতে তা নষ্ট হওয়ার নয়, অবশ্য যদি সেটা সঠিক বিশ্বাস হয়। ভাই কোন নাস্তিক কী মূল ধারায় বিশ্বাসী কাউকে হত্যা করেছে তাদের নাস্তিক বাদ চর্চা করে না বলে? আমার জানা নেই। তাহলে আমরা যারা বিশ্বাসী আমরা করব কেন। আজকে বিশ্বাসীরা সংখ্যা গুরু,নাস্তিকরা সংখ্যা লঘু। তবে এটা চিরন্তন সত্যের কিছু নেই। ক্রমশই কিন্তু নাস্তিকবাদীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এক সময় নারী অধিকার নিয়ে লিখা যেতনা, বলা যেতনা। এখন কী হচ্ছে নারীরা, ঘর থেকে বেরিয়ে আসছে, কাজ করে পারিবারিক ও জাতীয় পর্যায়ে গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা
রাখছে। আমরা সবাই তার সুফল ভোগ করছি। এখন অনেক পুরুষের মুখে বলতে শোনা যায়, একার উপার্জনে কী সংসার চলে নাকি! আসলেও তো তাই। ভেবে দেখুন চোখ বন্ধ করে একবার। নাস্তিকবাদ বিষয়টি এর থেকে আলাদা নয়। তিন চার মাস আগে ক্যাম্পাসে হঠাৎ এক পর্যটকের সাথে দেখা, ভদ্রলোকের বাড়ি নেপালে। ঘুরতে এসেছেন পরিবারসহ। এক চলমান কমলা ব্যবসায়ীর কাছ থেকে কমলা ক্রয় করছিলাম। ভদ্রলোক বাংলা বলেন, কিন্তু তার ভাবে ভঙ্গিতে বুঝলাম তিনি আমাদের স্বদেশী নন, বিদেশী। জিজ্ঞেস করলে জানান, তিনি ভারতের ত্রিপুরার বাসীন্দা। অনেক কথা হল, সে দেশের কালচার খাদ্যাভাস ইত্যাদি নিয়ে। এক পর্যায়ে উনার কাছে শুনলাম যে ভারতের ৪০% লোক নাস্তিক। এটা উনার একান্ত ব্যক্তিগত ধারণা হতেও পারে অথবা এ বিষয়ে কোন কর্তৃপক্ষের হিসেবেও থাকতে পারে। আমাদের দেশেও নেহায়েদ কম হবে না। সাহস করে আত্ম প্রকাশিত হন না। সাহস দেখিয়ে কয়েকজন বলার চেষ্টার করলে তাদের কন্ঠ রোধ করে দেয়া হচ্ছে। কিন্তু একজন হুমায়ুন আজাদ, রাজীব, অভিজিৎকে হত্যা করা হলে গুনে, মানে আরো হুমায়ুন, রাজীব, অভিজিৎ কী জন্মাবে না?
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:৫৮