পাহারা দিয়ে কিছুটা বিশৃঙ্খলা কমানো গেলেও পুরোটা কী সম্ভব। এটার প্রমানিত সত্য নেই। তবে মানুষের মননশীলতাকে পরিবর্তন করে প্রায় পুরোটায় সম্ভব। কিছু উল্টো পাল্টা ঘটলেই আমরা আইন শৃঙ্খলা প্রশাসনকে দোষ দিয়ে থাকি। হ্যা অনেক ক্ষেত্রেই তাদের দায়িত্ব অবহেলা এবং অপারাধে জড়িত থাকা চোখে পড়ার মত। কিন্তু সব ঘটনাই তাদের দায়ী করা চলে কী? ১৬ কোটি মানুষ প্রতিজনকে কী চোখে চোখে রাখা সম্ভব। তাহলে মানুষ হওয়া উচিত আমাদের ৩২ কোটি। ১৬ কোটি মানুষের জন্য ১৬ কোটি পুলিশ। রাস্তার মোড়ে, মার্কেট প্লেসে সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে একে বারেই যে উপকার পাওয়া যাচ্ছে না তা বলব না। কিন্তু ক্যামেরা লাগালেই কী নিরাপত্তা নিচ্ছিদ্র হচ্ছে? হচ্ছে না। অপরাধীরা অপরাধ করার সময় সচেতন ভাবেই করে। করার সময় ধরা খাওয়ার মত করে করে না। তাহলে গলদ তা কোথায়। গলদ হচ্ছে মানসিকতায়, মননশীলতায়। মানুষের নৈতিক অবক্ষয়ের ফসল ইদানিংকালের আদিবাসী তরুণী ধর্ষণ, টিএসসি চত্বরে নারী লাঞ্ছনা, ছোট শিক্ষার্থীকে শিক্ষক কর্তৃক যৌণ নির্যাতন। এমন কি ইমাম বা ধর্মগুরুদের দাড়াও প্রায়সই লাঞ্ছনার ঘটনা শোনা যাচ্ছে। পরিবার পরিজন হচ্ছে শিক্ষার প্রথম ক্ষেত্র। সেখানে থাকতে হবে নৈতিকতার ছোয়া। আজকে আপনি হয়তো পত্রিকার পাতায় বা টেলিভিশনের পর্দায় দেখছেন অজানা অচেনা কেউ নারী নির্যাতন করছে। আপনি কি নিশ্চিত আপনার ছেলেটি, আপনার ভাইটি তা করছে না? তাই পরিবারে ছেলেদের, মেয়েদের আচার আচরণ লক্ষ্য করতে হবে, খেয়াল করতে হবে, খোজ খবর নিতে হবে। শুধু ছেলেটা পড়াশোনা করছে কিনা, ঠিকমত স্কুলে কলেজে যাচ্ছে কিনা তা দেখলেই হবে না। ছেলেটা কী ভাবে আর কী করে তাও দেখতে হবে। আর বর্তমানে তো শিক্ষালয় গুলিতে নৈতিকতার বালাই নাই। শুধু প্রাথমিক পর্যায়ে নৈতিক শিক্ষার অন্তর্ভক্তি রয়েছে। হাইস্কুলে বলুন, কলেজে বলুন ( কয়েকটা ছাড়া যেমন-নটরডেম) শিক্ষকদের কাছ থেকেও কোন নৈতিক শিক্ষার ছোয়া পাওয়া যায় না। বিশ্ববিদ্যালয় সেটি উন্মুক্ত জ্ঞান চর্চার জায়গা। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন আর জ্ঞ্যানের মুক্ত চর্চা হয় না। গদ বাঁধা রুটিন আর পাঠ্য দিয়েই চলছে পাঠ্যক্রম। কোন শিক্ষা আমাদের জাতিগত উন্নয়নে মানানসই তার কোন যাচাই বাছাই নেই। আজকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাশের বাইরে, সামাজিক, সাংস্কৃতিক বিভিন্ন আলোচনাসভা, আড্ডায় যোগদানের সুযোগ একেবারেই নেই বললেই চলে। ফলে একজন শিক্ষার্থীর সঠিক মনোবৃত্তি বেড়ে উঠবে না এটাইতো স্বাভাবিক। আমাদের স্কুল, কলেজের মান ধরা হচ্ছে কোন স্কুল বা কলেজ থেকে কতজন শিক্ষার্থী পাবলিক পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করল আর কত জন A+পেল তার উপর ভিত্তি করে। মনোবৃত্তির কোন গুরুত্ব নেই। স্কুল, কলেজে পড়া যদি শুধু সার্টিফিকেটে A+লাগানোই সার্থকতা হয়। তাহলে নিলখেত থেকে যারা নকল সাটিফিকেট তৈরী করে নিচ্ছে তাদের আমি কোন দোষ দিতে পারি না। আদর্শ, নৈতিকতা এগুলি চর্চার ব্যাপার, একদিনে তৈরী হয় না। কাজেই প্রাথমিক শিক্ষায়, কিংবা মক্তবে সেই যে শিক্ষা ‘‘ গুরু জনকে সালাম করবে, মিথা বলবে না ’’ ইত্যাদি নৈতিক শিক্ষা দিয়ে কী আর সারাজীবন চলে। একজন পরিমল, কিংবা তুষারদের শাস্তি দিয়ে কী আর অপরাধ ঠ্যাকানো সম্ভব। আরো কত পরিমল, কত তুষার ঘরে ঘরে তৈরী হচ্ছে কিংবা হবে। এ পর্যন্ত এসমস্ত ঘটনার যারা ঘটিয়েছেন তারা প্রত্যেকেই কথিত ভদ্র ঘরেরই বাসিন্দা। কাজেই এদিকে নজর দিতে হবে প্রত্যেককেই। সবার স্থান থেকে সচেতন হতে হবে সবাইকে। যেসব ছেলেরা এসমস্ত যৌন নিপীড়ন, ধর্ষনের ঘটনা ঘটায় তাদের সাথে হয়তো তাদের পরিবারের সদস্যদের ভাল বোঝাপোড়া নেই অথবা তারা পরিবারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে জবাবদিহিতার চর্চা নেই। অথবা এমন হতে পারে মা বাবা কেয়ারলেস। ফলে অজান্তে অসুস্থ্য মানসিকতায় জড়িয়ে পড়ে।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মে, ২০১৫ সকাল ৮:৪৯