somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভারতীয় ষড়যন্ত্রে এদেশের আম চাষীদের সর্বনাশ। বাংলাদেশের আমের বাগান ও বাজার ধ্বংসের নেপথ্যে ভারতীয় ব্যবসায়ী ও ‘র’ খুবই তৎপর।

০১ লা জুলাই, ২০১৪ রাত ২:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


দেশে আমের ভরা মৌসুমে কথিত ফরমালিন বিরোধী অভিযানে দেশীয় আম চাষী ও ব্যবসায়ীদের সর্বনাশ হয়ে গেছে। সারা বছর ধরে অনেক চাষী আমবাগানে বিনিয়োগ করে এ সময় নগদ কিছু অর্থ হাতে পাওয়ায় আশায় থাকেন, যা দিয়ে তাদের সারা বছরের সংসারের ব্যয় নির্বাহ করা হয়। ফলে কথিত ফরমালিন বিরোধী অভিযানের কারণে এখন রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমের ক্রেতা মিলছে না। কৃষক গাছ থেকে আম পাড়ছেন না। এতে গাছেই আম পচে নষ্ট হচ্ছে।
অথচ কৃষকরা কখনোই আমে ফরমালিন মেশান না। কিছু অসৎ পাইকারি ব্যবসায়ী আম কিনে সেখানে ফরমালিন মেশাচ্ছে। এখন এর পুরো ক্ষতির দায় বহন করতে হচ্ছে কৃষকে। এছাড়াও চাঁপাইনবাবগঞ্জে উৎপাদিত আম সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে কোনো শিল্পকারখানা গড়ে না উঠায় প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ আম অবহেলায় পচে নষ্ট হচ্ছে। অপরদিকে ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ার কারণে আমে ব্যাকট্রিপ নামে এক ধরনের রোগ দেখা দিয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, আম সংরক্ষণে এখানে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলে যেমন স্থানীয় আমচাষীরা লাভবান হবেন, তেমন দেশে অর্থনীতিতেও আরো গতিশীলতা আসবে। আমের এই ভরা মৌসুমে চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমের বাজার ভিত্তিক প্রায় ৭ লাখ লোকের কর্মসংস্থান নষ্ট হচ্ছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার গোবরাতলার আম ব্যবসায়ী আবদুল ওয়াহেদ আলী, মোসলেহ উদ্দীন ও মিতু মিয়া জানান, তারা এবার ১২ লাখ টাকায় ৪টি আমবাগানের ফল কিনেছিলেন এবং আম বাগান পরিচর্যা ও কীটনাশক ব্যবহারের জন্য আরো ২ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে এখন তারা পুঁজি হারাতে বসেছেন। তারা আরো জানান, আম ব্যবসায় পুঁজি বিনিয়োগ করলেও প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে বাগানগুলোতে তেমন ফলন হয়নি। অন্যদিকে তারা আমে ফরমালিন না মিশালেও ঢাকায় আম পরিবহনের সময় টাঙ্গাইলে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ফরমালিনের অজুহাত দেখিয়ে তাদের প্রায় আড়াই লাখ টাকার আম নষ্ট করে দিয়েছে। অপরদিকে এখানে আম প্রক্রিয়াজাতকরণের ব্যবস্থা না থাকায় তাদের আরো দেড় লাখ টাকার আম পচে নষ্ট হয়ে গেছে। এবার আম ব্যবসায় যে লোকসান তারা করেছেন তাতে আগামী মৌসুমে তার পক্ষে আর আম ব্যবসা করা সম্ভব হবে না।
মূলত, বাংলাদেশের আম বাগান ও বাজার ধ্বংসে মরিয়া হয়ে উঠেছে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র। আর এর মূল নেপথ্যে কলকাঠি নাড়ছে ভারতীয় ব্যবসায়ী ও ‘র’। তাদের একের পর এক চক্রান্তে বাগান মালিক ও প্রকৃত আম ব্যবসায়ীরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। কোটি কোটি টাকা তারা অর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। যার কারণে এ অঞ্চলের আম শিল্প আজ ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে।
বিগত ২০০০ সালের দিক থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সীমান্তবর্তী শিবগঞ্জ-কানসাট ও ভোলাহাটের বৃহৎ আম বাগানগুলোতে প্রথম লোলুপ দৃষ্টি পড়ে দেশী-বিদেশী কুচক্রী ব্যবসায়ীদের। এই অঞ্চলের বেশিরভাগ আম গাছগুলোর বয়স ৫০ থেকে একশ বছর। শতবর্ষীয় এসব গাছে আমও ধরে প্রচুর পরিমাণে। প্রাকৃতিক আবহাওয়াগত খোদায়ী নিয়ম অনুযায়ী একবছর আম কম হলেও পরের বছরে আমের ফলন বাম্পার হয়। যাতে বাগান মালিক ও ব্যবসায়ী উভয়ে লাভবান হন। আর এই অঞ্চলের আম রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। এই আমগুলো বাজারে আসার অন্তত ১৫ থেকে দিন আগেই রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে উঠে ভারতীয় আম। এসব আম প্রথমদিকে ধনী পরিবারগুলো কিনলেও দাম বেশির কারণে সাধারণ মানুষ এ আম কেনা থেকে বিরত থাকেন। এ কারণে ব্যবসায়ীরাও ভারতীয় আম আমদানি করেন খুবই কম। পরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ অঞ্চলের আম বাজারে উঠতে শুরু করলে ভারতীয় এসব আমের কোনো নাম-নিশানা থাকে না। এ কারণে দীর্ঘদিন থেকে ভারতীয় আমশিল্প বড় ধরনের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়। অথচ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সীমান্তবর্তী এলাকাতেও ভারতের বিশাল বিশাল আম বাগান রয়েছে।
আম বাগান মালিক, ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন রাসায়নিক সারের দোকানে কথা বলে জানা গেছে, ব্যবসা-সফল এই অঞ্চলের শতবর্ষীয় বাগানগুলোকে ধ্বংস করতে মরিয়া হয়ে উঠে-পড়ে লাগে সীমান্তবর্তী ভারতীয় ব্যবসায়ীরা ও ‘র’। আর তাদের চক্রান্ত সফল করতে সহযোগিতা করে স্থানীয় অসৎ বাগান ব্যবসায়ীরা। তারা প্রথমে বাগান মালিকদের কাছে ২ থেকে ৫ বছরের জন্য আম ফল কিনে নেয়। আমের অধিক ফলন ও অধিক লাভের আশায় চোরাইপথে আসা ভারতীয় কার্লটার হরমোন গাছের একেবারে গোড়ায় মাটির নিচে দেয়। এতে বাগানগুলোতে প্রতি বছর প্রচুর আম ধরে। এমনকি মূলপাতা ছাড়াও গাছের ৬ থেকে ১০ ইঞ্চি মোটা পাতাবিহীন ডালগুলোতে আম ধরে। এদিকে হরমোন ব্যবহারের পরের বছরে গাছে নতুন পাতা গজানো বন্ধ হয়ে যায়। এভাবে ২ থেকে ৩ বছরের মধ্যে ভয়াবহ এ বিষ ব্যবহারে পাতার দিক হতে গাছ শুকাতে শুরু করে। যা পরে এক বছরের মধ্যে গাছ মরে যায়। ইতোমধ্যেই এই অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় এককে পর এক আমবাগান মরে বিরান হয়ে যাচ্ছে। এই অঞ্চলে একের পর এক বাগানের আম গাছগুলো মরে যাবার মাধ্যমেই প্রথম ভারতীয় কার্লটার হরমোনের ব্যবহার জনসম্মুখে আসে। বর্তমান সময়েও অবাধে ভারতীয় এ বিষ প্রয়োগ করছে। স্থানীয় প্রশাসনের যথার্থ ভূমিকা না থাকায় এর কোনো সুরাহা হচ্ছে না। অথচ এনিয়ে আম বাগান মালিকরা আতঙ্কগ্রস্ত রয়েছেন। স্থানীয় কৃষিবিদদের আশঙ্কা নিষিদ্ধ ভারতীয় কার্লটার হরমোন নামক বিষ ব্যবহার বন্ধ না হলে অচিরেই এই অঞ্চলের আম বাগানগুলো ধ্বংস হয়ে যাবে।
অপরদিকে বাগানগুলোকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়ে ষড়যন্ত্রকারীরা এবার আম শিল্পের উপর প্রকাশ্যে হাত দিয়েছে। তারা আমে কার্বাইড, ফরমালিনের ব্যবহার নিয়ে ধূম্রজালের সৃষ্টি করেছে। আর প্রশাসনের অভিযান নিয়ে দেশব্যাপী ব্যাপক বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে। এ অঞ্চলের আমে ফরমালিন মেশানোর অভিযোগে ঢাকার ৮টি প্রবেশ মুখের চেকপোস্ট বসায় ডিএমপি। আর ফরমালিন মেশানোর অভিযোগে আমও ধ্বংস করেছে প্রতিনিয়ত।
ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, বৈশাখের শেষ থেকে জ্যৈষ্ঠের প্রথম সপ্তাহ জুড়ে বাজারে ভারতীয় বিভিন্ন জাতের আম কিনতে পারে ক্রেতারা। আর ভারতীয় আমে ফরমালিন থাকে। চাহিদা বেশি থাকায় এসব আম বিক্রিও হয়। কিন্তু তখন প্রশাসন কোনো অভিযান চালায় না। এখন আমের ভরা মৌসুম, কেমিক্যাল ছাড়াই বাজারে আম পাওয়া যাচ্ছে। অথচ ফরমালিন মেশানোর কাল্পনিক অভিযোগে দেশী আমশিল্পকেই ধ্বংসের চক্রান্ত চলছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে ছোট-বড় মিলিয়ে অন্তত ৩০টি আমের বাজার রয়েছে। এর মধ্যে চারটি বড় বাজার হচ্ছে কানসাট আম বাজার, ভোলাহাট আম ফাউন্ডেশন বাজার, রহনপুর রেলস্টেশন আম বাজার ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরঘাট আম বাজার। কানসাটের বাজারটি দেশের সবচেয়ে বড় আমের বাজার। এই বাজারে আমের কমপক্ষে ৫শটি আড়ৎ আছে। আড়ৎদার সমিতির নেতারা জানান, এ বাজারে প্রতিদিন প্রায় ৮ কোটি টাকার আম কেনা-বেচা হয়। আর প্রতিদিন শতাধিক ট্রাক আম নিয়ে ঢাকায় যেত। অথচ ফরমালিনবিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার পর এখন কেনাবেচা দৈনিক ৮০-৯০ লাখ টাকায় নেমে এসেছে। কোনো ট্রাকই এখন আম নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছে না। এ সুযোগে জুস কোম্পানিগুলো ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা মণ দরে আম কিনে বাজারজাত করছে। অপরদিকে রাজশাহীর বানেশ্বর বাজারে প্রতিদিন প্রায় দুই থেকে তিন কোটি টাকার আম কেনা-বেচা হয়। আমকে কেন্দ্র করে এ হাটে এ অঞ্চলের ৩০ হাজার মানুষের মৌসুমী কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। অথচ এখন এই বাজার আমশূন্য।
বর্তমানে পুলিশী হয়রানির কারণে ব্যবসায়ীরা বাগান থেকে আম পাড়া কমিয়ে দিয়েছেন। ফলে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবার পাশাপাশি এখানকার হাজার হাজার মানুষের জীবিকার উপর হাত পড়েছে। এ শিল্পকে কেন্দ্র করেই এখানকার বেকার যুবক থেকে শুরু করে গৃহস্থ ও ট্রান্সপোর্টের মালিক-শ্রমিকরা জড়িত রয়েছেন। ফলে এই অঞ্চলের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবার পাশাপাশি গোটা দেশীয় অর্থনীতিও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
৮টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিনেতা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৫



বলতে, আমি নাকি পাক্কা অভিনেতা ,
অভিনয়ে সেরা,খুব ভালো করবো অভিনয় করলে।
আমিও বলতাম, যেদিন হবো সেদিন তুমি দেখবে তো ?
এক গাল হেসে দিয়ে বলতে, সে সময় হলে দেখা যাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×