আজ হঠাৎ ছেলেবেলার একটি স্মৃতি প্রচন্ডভাবে আমায় তাড়িত করল। সেই স্মৃতিটি আপনাদের সাথে আজ শেয়ার করব। তখন আমার বয়স ১০ কি ১১ হবে, ১৯৯৯ এর ঘটনা। নিয়মিত মসজিদে জুমআ নামাজ আদায় শুরু করেছি। আমার জীবনে তখন জুমআর অভিজ্ঞতাগুলো ছিল খুবই কটু। ছোট হওয়ার দরুন অন্যরা নামাজের কাতার থেকে আমাকে পিছে পাঠিয়ে দিত। আমি ছিলাম খুবই সেন্সিটিভ, এটা আমার মোটেও পছন্দ হত না। একটা লোক পরে এসে আরেকটা লোককে স্থানচ্যুত করবে এটা কেমন বিচার, অবশ্য একটু আদর করে বললেও হত যে বাবু একটু পিছে যাও...কিন্তু বয়সে বড় হওয়ায় এযেন তাদের অধিকার। এতে আমার মনোযোগ ভীষনভাবে ব্যহত হত। দুঃখভারাক্রান্ত মন নিয়ে পিছনে চলে যেতাম, মন ভীষন খারাপ হয়ে যেত। এভাবেই চলছিল। প্রতি জুমায় ভয়ে থাকতাম কখন চলে যেতে হয়, হতোও তাই সবাই পিছে পাঠিয়ে দিত। আমার মনে দুঃখগুলো জমা হতে লাগল। কাওকে বলতেও পারলাম না সে কথা। হঠাৎ একদিন একটা বুদ্ধি বের করলাম। নামাজের পূর্বে যখন কাতার সোজা হত তখন নিজেকে লম্বা দেখা্নোর জন্য পায়ের পাতায় ভর দিয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতাম যাতে লম্বা দেখা যায়। দেখলাম এই বুদ্ধি ভালই কাজ করে, চালিয়ে যেতে থাকলাম এভাবেই। এরপরও পিছে পাঠিয়ে দেয়া হত আমায়। দুঃখভারাক্রান্ত মন নিয়ে পিছনে চলে যেতাম। একদিনের ঘটনা কাতার সোজা হচ্ছে হঠাৎ ২৮-২৯ বছরের একজন আমায় বলল পিছে যেতে। কি জানি কি হল আমার মধ্যে আমার মনে জমান দুখঃগুলো প্রতিবাদে রূপান্তরিত হলো আমি বলে উঠলাম আপনিও আল্লাহর বান্দা আমিও আল্লাহর বান্দা আমরা সবাই মুসলমান আমি কেন পিছে যাব? লোকটি আমার কথা শুনে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেলো। সে কল্পনাও করতে পারেনি এইটুকুন একটি ছেলের মুখ দিযে একথা বেরুতে পারে সে আর কিছু বলল না। শুরু হলো নামাজ, আমি তাতে মনোনিবেশ করলাম। এই ঘটনার পর আল্লাহর রহমতে আমাকে আর কোনদিন কেউ বলে নাই পিছে যাও। তারপরতো লম্বাই হয়ে গেলাম আর পিছে যাওয়ার প্রয়োজনও হয় নাই। ঘটনাটি এখানেই শেষ হতে পারত কিন্তু সেদিনের এক ঘটনায় স্মৃতিটি আবার মনে দোলা দিয়ে গেলো। কিছুদিন আগের ঘটনা এশার নামাজ পড়তে গেছি মসজিদে কাতারে দাঁড়াতে যাব এইসময় দেখি এক বড়ভাই কাতারে নামাজরত একটা বাচ্চাকে সরিয়ে তিনি নিজেই দাঁড়িয়ে গেলেন। বাচ্চাটি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল । এটাও কি একপ্রকার অবহেলা বা অবমূল্যায়ন না? কারন আমরা জানি ইসলামের চোখে সবাই সমান।
মানুষকে মানসিকভাবে কষ্ট দেয়ার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হচ্ছে তাকে অবহেলা করা। আমি আগে মসজিদে আসবনা , আরেকজনকে (হোক সে ছোট) তার জায়গা থেকে উঠিয়ে নিজে দাঁড়িয়ে যাব এটা তো কোন বিবেক সমৃদ্ধ মুমীনের কাজ হতে পারেনা। এটা কি ঐ শিশু বা কিশোরের মনে যথেষ্ট নেগেটভ ইমপ্যাক্ট সৃষ্টি করে না? এর দায়ভার কার উপর বর্তায়? শিশুরা আমাদের কাছ থেকে শিখে, ওরা কি শিখছে আমাদের থেকে বা আমরাই কি শিখাচ্ছি বা দিচ্ছি ওদের অবহেলা ছাড়া ।
ভালবাসা ও শুভকামনা সেই সকল শিশু ও কিশোরের প্রতি যারা প্রতিনিয়ত এর স্বীকার।