গত সপ্তাহে স্বপ্নে দেখলাম আমি মারা যাচ্ছি। কাহিনী তখন ভয়াবহই ছিল। সকালে উঠে মৃত্যুর কারন মনে পড়ছিলনা। পরদিন গাড়িতে চড়তে গেলেই স্বপ্নের কথা মনে আসত। একবার ভাবলাম বাড়িতে ফোন করে মিলাদ দেয়ার কথা বলি। পরে মনে পড়ল, মৃত মানুষদের স্বপ্নে দেখলে এ নিয়ম, জীবিতদেরটা জানা নেই। ঠিক তার দুদিন পরে আমার মেজ খালা মারা যায়। বিকেল ৫ টায় ঝিনাইদাহর বাস হওয়ায় বেলা ২ টা থেকে ৪ টা পর্যন্ত একটা টানা ঘুম দিলাম। স্বপ্নে দেখলাম আসমাণী ওর হাজবেন্ডের বিয়ের পাঞ্চাবী রোদে শুকা দিতে গিয়ে পা পিছলে গাছের গুড়ির উপর পরে গেছে। ১৩ টা না যেন ১২ টা সেলাই দিছে। আর এই মুহুর্তে আমার মাথা, পিঠ সহ মোট ৩৮ টা সেলাই। সংখ্যাটা আমার বিশ্বাস হচ্ছিল না বলে কাত হয়েই বললাম, ‘‘ কস্ট করে সেলাইটা আর একবার গুনে দিবি। কেউ জানতে চাইলে যেন এক্সাট বলতে পারি। ’ ও হাসল। তবে আমি সেটা প্রত্যাশা করিনি। এমন সব প্রশ্নে বাচ্চারা হাসলেও একটা প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ে এমন মর্মান্তিক বিষয় নিয়ে হাসতে পারেনা। আমার কথা বলতে ইচ্ছে করছিল বলে আমি সেলাই গুনে দেয়ার কারনটা ব্যাখ্যা করলাম। বললাম, ‘‘ কোন এক্সিডেন্টে কেউ মরে গেলে ভালো কথা, আল্লার মাল আল্লা নিছে, কিস্তু বেচে থাকলে জখমের ধরনটা, সেলাইটা হচ্ছে মুল বিষয়, যত বেশি সেলাই সমবেদনার মাত্রা তত বেশি।’’ এ মেয়ে আবার হাসল। এরপর হাতে বাচ্চা গাচ্ছা হওয়ার সময় গ্রামের দাইরা ইউকেট কিপারদের মতো যে গ্লোবস পড়ে ওইরকম একটা পড়তে পড়তে বলল, উপুর হন, পিঠ থেকে শুরু করি। মেয়েটা শব্দ করে আমার পিঠ ছুয়ে ছুয়ে এক দুই তিন গুনতে লাগল।, এক! দুই! তিন! চার! পাঁচ! ছয়। এরপর আস্তে সংখ্যা গুলো গুলিয়ে যেতে লাগল।
আমার এরকম কখনো হয়নি যেমনটি এখন হতে লাগল। কস্টের তুফান এলো মনে, ভয়াবহ তুফাণ। আমি কান্না সামলাতে পারছিলাম না। এমননা যে কারো কস্ট দেখলেই আমার কান্না আসে, কোন রমনীর সিক্ত চোখে চোখ দিলে বোকা হয়ে যাই, শাবানার সিনেমা এলেই মা-খালার সাথে কান্নার জিকিরে বসে যাই, বরং আমিতো আমাকে শক্তই জানতাম। আসমানীর চোখের পানি আমার পিঠ ভিজিয়ে দিচ্ছে, আমি সাগরে ভাসছি। সে ফোপাতে ফোপাতে বলল, ‘‘ আমার দিকে তাকালে কি আপনার জাত চলে যাবে? যারে এত ভালোবাসছেন তারে এত ঘৃণা করেন কিভাবে?’’
আমি অভিনেতাদের রকমে না গিয়ে যতটুকু চেপে গেলে কান্না চেপে হাসার ভান করা যায় ততটুকু করলাম। বললাম, তোকে এখানে আসতে বলছে কে? ভাগ, ফোট! গত সপ্তাহ ধরে সম্পা নামে একটা মেয়ের সাথে আমার প্রেম প্রেম চলছে, তোর থেকেও অনেক সুন্দরী। এখন এসে এসব দেখলে আমার আর সুন্দরী বউয়ের মুখ দেখা হবেনা। ’’
মনে মনে ওর অভিমানের জবাব দিয়ে বললাম, আসমানীরে, ঘৃণা দেখোস কই? ঐ শক্তি কি আল্লাহ দিছে আমারে! আমি তোর দিকে মুখ ঘুড়ে তাকালে আর কাউকে, কোনদিন ভালোবাসতে পারবোনা। আমি কি করি বলতো! আমার যে ভালোবাসার খুব শখ!’’। বালিশে মুখটা আলগা করে হাসতে চাইলাম। বললাম, যা চলে যা, যাওয়ার আগে কস্ট করে সেলাইর সংখ্যাটা একটু বলে যাসতো, ভুল হলে খাইছি’ ও হাসতে চেয়ে কান্না মুছতে মুছতে বলল, ‘‘ পারবোনা, নিজে গুনে নেন। আমি এ রুমের পাশের রুমে আছি। আপনি ঘুমোলে কানে এয়ার প্লাগ দিয়ে নিয়েন। তানা হলে আমার বাবু জন্ম হলে তার চিৎকারে ঘুম ভেঙ্গে যেতে পারে। ’’
বাবু পেটে আসমানীকে খুব দেখতে ইচ্ছে করল। পেটের বাবুসহ আমার আসমাণীকে কেমন দেখায় দেখি। পরে সামলে গিয়ে আড়ালে থেকেই বললাম, ‘‘ তাহলেতো তুই এখন পেটমোটা দারোগা, আন্ডা পারে বারোটা’’- বলে দুজনেই হাসলাম। ‘‘ ও হাসতে হাসতে বলল, ‘‘আল্ট্রাসনোগ্রামে দেখেছি ১২ টা না, আমি মাত্র একটা আন্ডা পারবো’’।
ও চলে গেলে মুখ ঘুরিয়ে দেখি, বেড ধরে ধরে চোখ মুছতে মুছতে সাবধানে পা ফেলে যাচ্ছে। খুব শুকরিয়া আদায় করে বললাম, ইস, আল্লাহ যদি আমাকেও মেয়ে বানাতো পেটে বাচ্চার বস্তা নিয়ে আমারওতো এমন চোখ মুছতে মুছতে সাবধানে পা ফেলতে হতো। শুকরান খোদা, হাজার শুকরান!
এরপর যখন ঘুম ভাঙ্গে তখন আমি ঝিনাইদহ সেবা ক্লিনিকের এম্বুলেন্সে শোয়া। আমার ডান পাশে যিনি তিনি সম্মানিত কেউ হবেন। বয়স ৪৫/৫০। চেহারার মধ্যে বদমেজাজি ভাবটা স্পষ্ট। কালো ফ্রেমের গ্লাস, তাকে খুব উদ্বিগ্ন লাগছে। এবং আমার মাথার পাশে যিনি তিনি জানালেন তার নাম সম্পা। তিনি মুখে না বললেও আমি নৌকায় বসা তার সেই ছবির সাথে মিলিয়ে বুঝে নিয়েছি। একবার ভাবলাম কনফার্ম হওয়ার জন্য ব্যাগ থেকে ছবিটা বের করে মিলিয়ে নেই। এক্সিডেন্টের সময় ব্যাগ গাড়িতে রেখে আসায় সেটা হলোনা। তাতে দুঃখ নেই, কারণ ব্যাগের ছবির থেকে আমার মস্তক বরাবরের মেয়েটা ১২০ গুন সুন্দরী। সামান্য সংকিত হলাম, মনে মনে ভাবলাম কোন মানে নেই এ মেয়ের সাথে আমাকে বিয়ে দেয়ার। যদি একটু হাটতে পারতাম কোন ধরনের রিস্ক না নিয়ে এম্বুলেন্স নিয়ে সোজা কাজী অফিসে ঢুকতাম। যত সময় যাবে রিস্ক ততই বাড়বে।
মাথা কাত করে বললাম, সম্পা, এই ভদ্রলোকের কাজ কি এখানে? উনিও কি ডাক্তার দেখাবেন?
সম্পা দায়িত্বশীল নার্সদের মতো বললেন, আপনার কথা বলা ঠিক হবেনা। ঠোটেও সেলাই আছে।
ভদ্রলোককে দেখিয়ে বললাম, চমশা পড়া উনি কে হন তোমার?
বড় চাচা। উনার ক্লিনিকেই নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। চুপ থাকেন।
আমার খুবই ভালো লাগল। খুবই সংসারী কথাবার্তা, খুব মায়া মনে, ব্যথা নিয়ে কথা বলতে না করছে। বউ হলে এরকম হওয়া উচিৎ। কেয়ারী বউ। যখনই চুপ থাকা উচিৎ তখনই বলবে ‘‘ চুপ থাকেন!’’।
ভদ্রলোক হঠাৎ ড্রাইভারকে এম্বুলেন্স থামাতে বলে সম্পাকে বললেন, সদর হসপিটাল থেকে অর্থপেডিক্সের ডাক্তার নিয়ে আসছি। তুমি ড্রাইভারকে নিয়ে ক্লিনিকে যাও। আমি না আসা পর্যন্ত হেলালের সাথে সাথে থাকবে, একপা ও নড়বে না।
সম্পা মাথা নাড়িয়ে জবাব দেয় নাকি ঠোট নাড়িয়ে দেয়, দেখবো বলে মাথা ঘুড়িয়ে ওর দিকে তাকালাম। সে মাথা ঝুকিয়ে বলল, আচ্ছা বড় বাবা।
মুরব্বী গেলে পড়ে বলি, ‘‘ তুমি না বললে তোমার চাচা হয়? বাবা ডাকলে কেন?’
‘‘আপনাকে চুপ থাকতে বলছিনা!’’- সম্পা জোড়ে ধমক দিল। এরপর একটা টিস্যু বের করে আমার ঠোট মুছতে মুছতে বলল, কথা বললেই ঠোট থেকে রক্ত আসছে। এই কাগজ কলম দিচ্ছি, কিছু লাগলে এখানে লিখে দেন।- বলেই একটা প্যাড আর কলম ধরিয়ে দিল।
আমি খুব কস্টে আমার জিন্সের পকেটে হাত ঢুকালাম। ব্রেইনের এমন অবস্থা যে সামান্য কিছুও মনে থাকেনা। ডান পকেট, বাম পকেট, পিছন পকেট খুজে টুজে শেষে শার্টের বুক পকেটে পেলাম। ভদ্র ভাবে দিতে হলে চিত থেকে উপুর হতে হবে, সেটা সম্ভব না বলে চিত হয়েই হাতটা মাথা বরাবর বাড়িয়ে দিলে বললাম, আমার সাথে ফুলগুলোও যখম হইছে। পাপড়ি টাপড়ি নাই, ধরো। নাইস টু মিট ইউ’’
‘‘ কি করেন কি করেন! কি এটা? কি ফুল, এটা কেন?’’ সম্পার ভয়েজ এমন হলো যে জীবনে বোধহয় এর থেকে বেশি খুশি সে কখনোই হয়নি। আমার খুব শান্তি শান্তি লাগলো, আরামের আরাম, বিশ্ব সেরা আরাম। নিজেকে পুরুষ পুরুষ লাগলো এজন্য যে একটা মেয়েকে জীবনের সব থেকে খুশির মুহুর্তটা তৈরী করে দিতে পারলাম। হোক সেটা পাপড়ি ভাঙ্গা ফুলে ! একবার তার এ খুশি মুখটাও দেখতে ইচ্ছে করলো কিন্তু পারা গেলোনা। কারন তারপরই তার চোখের পানি কিভাবে কিভাবে যেন আমার কপালে এসে পড়ল। বললাম, এসব কেন? এসব নো গুসা।’ এরপর প্যাডটা হাতে নিলে লিখলাম, ‘‘ নো গুসা কি জানো সম্পা? নো গুড। নো গুড মানে হলো ভালোনা।’’
সম্পা বললো, ‘‘ আমি জানি”
লিখলাম, ‘‘ জানো কিভাবে?’’
বলল, ‘‘ আপনি ব্লগে লিখছেন। আপনার করিয়ান বুড়ো বস সবসময় এমন বলতো’’
ব্লগ মানে?- আমি ঘুরে তাকাতে চাইলে’ ‘‘সে মাথা চেপে ধরে বলল, নড়বেন না বলছিনা!’’
আপনি সামহোয়ারের যে ব্লগ লিখেন সেটা পড়ি। সব সময় পড়ি, দৈনিক চেক করি নতুন কোন লেখা দিয়েছেন কিনা।
‘‘খাইছে রে- মনে মনে বললাম। ’’ বলকি তুমি? বলতো আমার ব্লগ নেম কি?
এরপর আবার ওর ব্যাগ থেকে টিস্যু বরে করে ঠোটে চেপে ধরে বলল, ‘‘মুখে কথা বলতে একবার না করলাম না। রক্ত যা গেছে আরো গেলেতো ৫ মিনিটের বেশি বাঁচবেন না’’
মনে মনে বললাম, আমারতো আর বাচার শখ নেই সম্পা। এমন সুন্দরী একটা মেয়ে চাইছে রক্তক্ষরণ হয়ে যেন আমি মারা না যাই, বেঁচে থেকে যেন তার কাছাকাছি থাকি’’- টেলিসামাদীয় এই জীবনে আর কি চাই সম্পা! শুকরান খোদা, হাজার শুকরান’’।
এম্বুলেন্স থেকে নামানোর সময় সম্পা দুনিয়ার দোড়াদৌড়ি করল। নার্সদেরকে খুব সতর্ক করে দিয়ে বলল ‘‘কোনভাবে যেন ব্যাথা না লাগে। ব্যথা পেলেও কিন্তু সে শব্দ করতে পারবেনা, খুব সাবধান।’’ তার ভয়েজে স্পস্ট যে এটা তার আপন চাচারই ক্লিনিক। এরপর আমাকে একটা ডাবল কেবিনে ঢোকানো হলো। ডাবল বেড দেখে মনে একটা ইসলামীক চিন্তা এলো- ‘‘বিয়ের আগে একটা রুমে অবিবাহিত দুজন থাকা কি ইসলাম অনুমোদন দেয়? ’’- চিন্তার ৩০ সেকেন্ডের মাথায় সম্পার বুড়ো চাচা একজন ডক্টর নিয়ে হন হন করে ঢুকে বললেন, সম্পা, তুমি নিচে যাও। হেলালের বিশ্রাম নেয়া দরকার।
এরপর বিদেশি ডাক্তারদের যেমন দেখায় এমন চেহারাওয়ালা দুজন ডাক্তার দ্রুত ঢুকে আমাকে টেপাটেপি করতে লাগলেন। রক্ত টক্ত দেখলেন, কি একটা রুমে ঢুকিয়ে সারা শরীর এক্সরে করে ডাক্তার রা চলে গেলে চাচা দরজা বন্ধ করে দিলেন। এরপর ৩০ মিনিট বসে বসে চাচাজান খুব গুরুত্বপুর্ণ কিছু কথা বললেন, আমি মন দিয়ে শুনে বললাম, সম্পাকে কি একটু সাথে করে নিয়ে যাবেন। ওর হাতের চ্যালা মাছ আর টমোটো ভাজিটা খুব খেতে ইচ্ছে করছে। মরে টরে গেলেতো আর খাওয়ার সুযোগ হবেনা। এক ঘন্টার মধ্যে ফিরে আসলেই হবে। এ ১ ঘন্টা আমি একাই থাকতে পারবো।
চাচা হাসি দিলেন। এরকম বদমেজাজি লোকজান যখন হাসে তখন তার আসে পাশের মানুষ গুলো খুব খুশি হয়। আমাদের পাইপিং সেকশনের যিনি সাইট ম্যানেজার ছিলেন তাকে আল্লাহ কুৎসিত মুখ দিয়ে বানিয়েছেন। আমরা সবাই বলি, তার জন্মের সময় তাকে চামিচে করে প্যাচার মাংসের জুস খাওয়ানো হয়েছিল। তিনি কেমন তার একটা উদাহরন দেই। কোন একটা বিষয়ে তার সাথে আলাপ করতে গেলাম। গিয়ে মুখ থেকে কিছু না বলে ভদ্রতার সাথে দৃশ্যত তার দৃষ্টি আকর্ষনের চেস্টা করি। তিনি মাথা ঘুরিয়ে প্রথমই বলবেন ‘‘হোয়াই?’’- তার মুখ দেখলে মনে হবে তার তিন দেশর ৩টা বউ-ই একসাথে মারা গেছেন। এ ম্যানেজার ঈদের আগের দিন আমাকে ল্যাং (পিছন থেকে পায়ে লাথি) দিয়ে বলেন ‘‘ হোয়াই ইউ নো কামিং টুমরো? ইউ নো কামিং মি টুমাচি প্রবলেমা,, ইম্মা’’- বলেই শব্দ করে হেসে উঠল। আমার ১ বছরের চাকুরীর জীবনে আমি ঐদিনই খুব খুশি হয়েছিলাম।
চাচা ¯েœহের স্বরে বললেন, ‘‘ বাবা তোমার আর কি কি খেতে ইচ্ছে করে?‘‘
সুযোগ পেয়ে অনেক কিছু বলবো বলে চেস্টা করতে লাগলাম। পরে শুধুমাত্র শোল মাছ আর আলুর কথা মনে পড়ল। বছর ৮ আগে আসমানীদের বাড়িতে খেয়েছিলাম। ওরে ঝালরে! তারপরও লজ্জা সরম ভেঙ্গে ৩ প্লেট শেষ করছিলাম। বললাম, ‘‘ আর কিছুর দরকার নেই কাকা। কষ্ট না হলে অল্প একটা রং চা’র ফ্লাস্ক, আর ছোট বাটির একবাটি চালভাজা। ’’। কাকা অনেক সুন্দর করে হেসে বেরিয়ে গেলেন।
সম্পা কাজের কাজ যেটা করলো সেটা হলো ড্রেস চেঞ্চ করে এলো। ইন্ডিয়ার নিরমা ডিটারজেন্ট এর ঐ মডেলের মতো হলাকা আকাশি আর সাদার রঙের মিক্সিং এর থ্রী পিচ। আল্লাহর রুচির বিষয়ে মুগ্ধ হয়ে ৫০ টাকা দশফান্ডে দেয়ার ডিসিশন নিলাম। আল্লাহ কত সুন্দর করে একটা মানুষ বানায়। একটা মেয়েকে ৫ ফিট ৪ ইঞ্চি বানালে তাকে কতটুকু স্বাস্থ্য দিতে হয়, গায়ের রঙে হলুদ সাদার মিশাল থাকবে কোন অনুপাতে, চোখে কাজল দিতে হলে সে চোখকে কতটা ভাসিয়ে দিতে হবে, সামনে থেকে ঠিক ক গোছা চুল কপালে ঝুলিয়ে দিলে ৩৮ টা সেলাই খাওয়া ছেলে তাকে দেখে নাওয়া-খাওয়া-ব্যথা ভুলে বুত হয়ে থাকবে, রাতে আর দিনে চুলের খোপায় কি ভিন্নতা আনতে হয় সে জ্ঞানটুকুও যদি এই একই মেয়েকেই দেওয়া হয় পৃথিবীর বাকী মেয়েরা দোষ করল কি? আল্লাহ কি আমাতে খুশি হয়ে সম্পাকে এমন সাজালো নাকি সম্পার কোন গুনে?
সম্পা ভাত মাখাচ্ছিল। বললাম, আজকে রাতটা শুধু কথা বলি। রক্ত যা পড়ার পরুক, রাগ করোনা।
সম্পা রাজি হলোনা। আমিও মানলাম না, বললাম, তুমি আমাকে না জানিয়ে ভাত মাখলে কেন? আমি অন্যের মাখা ভাত খাই কিনা জিজ্ঞেস করবেনা?’’
‘‘না, যদি দ্বিতীয় কেউ থাকতো আমি আপনার প্লেটই ধরতাম না। মাখাতো দুরের কথা।’’
একটু ঘুরতে চাইলাম। ব্যথায় পাড়া গেলনা। বলল, ‘‘মাখামাখি বাদ দিলাম। আমারতো হাতেও ব্যান্ডেজ , খাওয়ার কায়দি কি?’’
‘‘আমি ডেটল দিয়ে হাত ধুয়ে নিছি। সমস্যা নেই’’
বললাম, বিয়ের আগে অন্য একটা মেয়ের হাতের খাবার মুখে নিলেই জীবানুতে ধরে। তাতে ডেটল মাখো, আর পেট্রোল মাখো’’
ভক্তি না হলে দরকার নেই, চামিচ আছে। ধুয়ে নিয়ে আসছি’’- বলে উঠে যাচ্ছিল। আমি থামাতে গিয়ে ভুলে তার হাত ধরে ফেললাম। মনে হলে কারো হাত না, পাওয়ার প্লান্টের হাই ভোল্টেজ এর তার। সাথে সাথে ছেড়ে দিয়ে বলি, ‘‘সরি’’।
ও হেসে বলল, সরি কেন?’’- খানিকটা অবাক হয়ে বলল, ‘‘ আমাকে আপনার পছন্দ হয়নি?’’
আমি তার অবাক হওয়ার কারনটা বুঝতে পারলাম না। বিষয়টা এমন মনে হলো যে, তাকে অপছন্দ করার কোন কারনই থাকতে পারেনা। কোন ভাবেই না, এই কুৎসিত পৃথীবিতে রুপের দাম দিবেনা কোন শালা! কোন শালার এত বড় সাহস! রুপ-যৌবন যার, দুনিয়াতো তারই!’’ আমি তার ভাবনার কোন দোষ দিলাম না। খুব কস্ট করে এই কঠিন সত্যটা নিজেও মেনে নিয়ে বলি, ‘‘সে সুযোগ কই রাখলে? তুমি ভাত খাইয়ে দিবে বলেই বলছিনা, এই ২৭ বছরের জীবনে তোমার এই আগুনরুপী রুপ আমি আর দেখিনি, বিশ্বাস সম্পা !’’
সম্পা মোটেও লজ্জা পাওয়ার মতো করলোনা। এ লাইনটা হয়তো এর আগেও সে কয়েক হাজার বার শুনেছে, যেটা কখনো মিথ্যে ছিলনা। বরং যারা আমার মতো কথায় পটু না তারা হয়তো ভালো বিশেষণ দিতে পারেনি, তাই কখনো কখনো হয়তো সম্পার মনও খারাপ হয়েছে। এ মেয়ে জানে তার রুপের কী ধার !
সম্পা আমাকে চামচে করে খাবার মুখে তুলে দিচ্ছে। আমি এতবার বলতে চাইছি, হাত দিয়েই দাও, ডেটল ফেটল কিচ্ছু লাগবেনা, শুধু হাতটাই মুখে তুলে দাও, ভাত খরচ করে লাভ কি, জিহ্বায় ঐ হাত একবার লেগে গেলে সারাজীবনেও আর খাবারের ধরন খুজতে হবেনা- বলতে পারিনি। কোনভাবেই বলতে পারিনি।
চামিচে করে পানি মুখে দিতে দিতে কানের কাছে এসে বলল, আমিতো আপনার আসমানীর মতো না, না?’’
ক্লাশ রুমের ছাদে কাগজ দিয়ে বল বানিয়ে ফুটবল খেলায় হাইস্কুলের হেড স্যার একবার জোরা বেত দিয়ে বেদম ঘাই দিছিল। কোমড় থেকে ঘাড় পর্যন্ত প্রায় রক্ত বের হওয়ার অবস্থা। কিন্তু সম্পার এই ঘাইয়ে মনে হলো আমার সব সেলাই সাঁই সাঁই করে ছিড়ে যাচ্ছে। আমি আমার সেলাই করা হাতে ভর রেখে উপুর হয়ে বলি, ‘‘ কে? কারমতো না?’’
সম্পা প্রচন্ড রকম ভয় পেয়ে গেলো। অতবড় চোখ ভয়ে আরো বড় হয়ে গেলো। বলল, ‘‘ আপনার গল্পের নায়িকার কথা বলছি। ব্লগের গল্পেতো সব সময় আসমানীর নামই লিখতেন?’’- সে অপরাধির মতো ভয়ে গুটিয়ে যেতে লাগলো।’’
আমাকে হঠাৎ করে অমিতাভ টাইপের পাকা অভিনেতা মনে হলো। একটা ফাটকি হাসি দিয়ে বিষয়টা এমন সহজ করে ফেললাম, যেন এরকম মজা আমি খুব স্বাভাবিক ভাবেই করতে পারি। অভিনয়ে অভিনয়ে বললাম, ‘‘ আমার খুব ভালো লাগছে কি জন্যে জানো সম্পা?’’
সম্পার মুখ দেখে মনে হলো তার ভয় কাটেনি। সে মুখে কোন কথা বললোনা।
‘‘আমার গল্প নিয়ে, লেখা নিয়ে কেউ কিছু বললে আমার কি যে ভালো লাগে! যদিও তোমার চ্যালা মাছ টমোটোও খুব ভাল্্ লাগতেছে’’- যতটা না হাসতে হয় তাকে স্বাভাবিক করতে তার থেকেও জোরে সোরে হাসি দিলাম। তাতে অবশ্য কাজও হলো। সম্পাও হাসল।
সম্পা পুরনো আগ্রহেই বলল, ‘‘ আপনার কাছে আপনার কোন গল্পটা সবথেকে বেশি ভালো?’’
নিজেকে বিশাল টাইপের রাইটার মনে হতে লাগল। ভাবে গদগদ! বললাম, ‘‘ আমি যা লিখি সবই ভালো লাগে। লেখক মাত্রই এমন!’’
সে ভাবের পাত্তা না দিয়ে বলল, ‘‘ ভাব রাখেন। শোনেন, সর্বশেষ আমার নাম ইউস করে চিঠির মতো যেটা লিখলেন সেটা সব থেকে সুন্দর।’’
আমার মস্তকে আগুন লাগার দশা। সে গল্পতো পোস্টই দেইনি। এটাতো খাম বন্ধি এখনো। বলি, তুমি কোনটার কথা বলছো?
হেলালের হস্তে লিখিত সম্পার প্রতি চিঠি খানা সামনে নিয়া সম্পা বলিল ‘‘ এই যে, এটা। আপনার ব্যাগে পেয়েছি। ভালো হয়েছে কেন জানেন, আপনি যদি পোস্ট করে দিতেন, ১ মাস লাগতো আসতে। একটা মানুষের তিনটা কিডনি হয়, না? আসমানীর মা এত বোকা?’’- সম্পা হাসতে হাসতে আমার মাথার উপর এসে পড়ল। তার ঐ কোমল হাতেও মস্তকের আগুন নিভালোনা। টের পেলাম আমার শরীরের সব ব্যথা একবারে বাড়ছে।
কন্ঠ থেকে হঠাৎ করুন সুর বেড়িয়ে গেল। ‘‘আমার ব্যাগটা কই এখন? তুমি কিভাবে পেলে সম্পা?
আমরা তো আপনার বাসের অপেক্ষায়ই ছিলাম। আসতে দেরি হয় দেখে সদর কাউন্টারে ফোন করে জানলাম গাড়ি এক্সিডেন্ট করছে। তখনই টেক্সি নিয়ে স্পটে যাই। গিয়ে শুনি সবাইকে কাছাকাছি মেডিকেলে পাঠিয়েছে। আমি আবার বুদ্ধি করে বড় বাবাকে বলি, গাড়িতে ব্যাগ ট্যাগ রয়ে গেলো কিনা দেখবেন? ভাবলাম, ধমক দিয়ে বলবেন, তুমি চিনবে কি করে?’’ পরে ভাঙ্গা গাড়িতে ঢুকে ৩ টা ব্যাগ পাই, যার একটাতে আমার নৌকায় বসা ছবিটা আর চিঠিটা পাই। চিঠিতে আপনার নাম দেখে কনফার্ম হইছি। আপনার হাতে লেখা এত সুন্দর কেন?’’
গলাতো শুকিয়ে যাওয়ারই কথা। পানি না চেয়ে কম্বল চাইলাম, বললাম, কম্বল টম্বল কিছু আছে? চাদর টাদর হলেও হয়? শীত শীত লাগছে সম্পা। তোমাদের ক্লিনিক খুব একটা জুতের না। ঠান্ডা, স্যাঁতস্যাঁতে ভাব!
সম্পা দ্রুত সাদা রংয়ের একটা কাঁথা বের করে দিল। আমি তার থেকেও দ্রুত কিডনি অপারেশনের সেলাইর জায়গা ঢেকে দিয়ে ভাবি, সে যদি মজা করে কিডনি অপারেশনের সেলাই দেখতে চায় কি বলবো? ২ সপ্তাহ পরে চাইলে এক্সিডেন্টের সেলাইর সাথে মিশিয়ে দেয়া যেত।
সুন্দরীরা যে বোকা হয় সেটা সম্পাও দেখালো। সে কোন ভাবেই বুঝলনা ও আসমানী শুধু আমার গল্পের নায়িকাই না। তাকে এও বললাম, ‘‘ সম্পা, আসমানীর পেট কাটতে চিটিগং থেকে তোমাদের ঝিনাইদহ আসছে। আমাদের বিয়ের পর একদিন যাবে নাকি? খরচের ঝামেলা নেই? জন্মের পর দিনই যাবো, মা-মেয়ে কেউ ই কিছু খেতে পারবেনা, খাবার নেয়ার প্রশ্নই আসেনা।
সম্পা উত্তর না করে ঘরির দিকে তাকালো। তখন ১০ বাজে। ক্লিনিক, হসপিটালের ১০ টা ১২ টা কোন ঘটনা না, কিন্তু এখানে তেমন মনে হলোনা। মনে হলো ক্লিনিকের সবাই হাড়িকেন নিভিয়ে ঘুমিয়ে গেছে।
চোখ বুজে বুজে বললাম, সম্পা, তুমিতো একবারও বললেনা আমাকে কেমন লাগলো?
ও তখন রং চা ঢালছে। বলল, জিজ্ঞেসওতো করেন নি।
ব্যথায় ভুলে গিয়েছি।
সত্যনা। আমার রুপ দেখে ভুলে গেছেন। তারউপর ভয়ও ছিল, যদি বলি পছন্দ হয়নি- তাই।
শেষেরটা সত্যি। অবশ্য শেষেরটা সত্যি হলে প্রথমটাও সত্যি। এখন জিজ্ঞেস করবো?
না।
আচ্ছা পছন্দ অপছন্দের বিষয়না। সত্য বলবে, আমি মানুষ কেমন সেটানা , দেখতে কেমন?
ভালো। আপনিতো লিখছেন, চিকন মানুষ, আমারতো তেমন মনে হচ্ছেনা।
হাসি দিয়ে বললাম, কিছুক্ষণ আগে টয়লেটের আয়না দেখে আমারও তাই মনে হলো। তাকিয়েইতো অবাক আমি! ১০ মিনিট আয়না দেখে তারপরে টয়লেটে যাই। আর মনে মনে বলি, আল্লাহ, তুমি ব্যাথাটা কমাও, ফোলাটা কমিও না।
সম্পা হাসি সামলাতে গিয়ে পারেনি। গরম চা আমার বিছানার উপর ফেলেছে। এরপর একা একাই সরি সরি বলে নিজ ওরনা দিয়ে পরিস্কার করতে লাগল। তার ওরনার গোছা হাতে তুলে দিয়ে বলি, তেমন পড়েনি, বসো তুমি।
আমার ঝিমুনি বাড়তে লাগল, সাথে ব্যাথাও। কথা বলতেও কস্ট হচ্ছিল। আমি চুপ করে রইলাম। আমি যখন চুপ সম্পা তখনও ব্যস্ত। একটা সুন্দরী সারাদিনের ৯০ ভাগ সময়ই তার সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির চিন্তায় থাকে। বাথরুমে গিয়ে মুখ ধুয়ে ক্রিম দিচ্ছে। এ ক্রিম হেনোলাক্স কিংবা ফেয়ার এন্ড লাভলি নয়। সুন্দরীদের প্রসাধনী ভালো না হলেও ব্যতিক্রমী করে রাখে। এটাও একটা কৌশল। ওরনার একা প্রান্ত দিয়ে খুব হালকা করে মুখ মুছছে।
চোখ বুঝেওই বললাম, সম্পা আমার খারাপ লাগছে খুব , কটা বাজে বলবে?
সম্পা দৌড়ের মতো এসে বলল, কেন? ডাক্তার ডাকবো?- সম্পা আমার হাত ধরে বসলো।
আমি হাত ছেড়ে দিয়ে বলি, বিয়ে করতে কি লাগে জানো?
সম্পার চোখে অল্প অল্প বিষ্ময়। হাতে নাড়া দিয়ে বলি, তাকিয়ে কি দ্যাখো? বলো?
সেকেন্ড বিশেক জিরিয়ে আমার একদম মুখের কাছে এসে চোখ স্থীর করে বলল, ‘‘ শুধু ইচ্ছে। আর কিচ্ছুনা’’। হেলাল ভাই, আপনি বসেন আমি ডাক্তার নিয়ে আসছি।
আমি হাত ধরবোনা বলে ওরনা ধরে আটকে রাখলাম। বললাম, ১০ মিনিট বসো।
সম্পা, আমারওতো আসমানীকে বিয়ে করার ইচ্ছে ছিল, তোমাকেও। কিন্তু একটাও তো হচ্ছেনা।
সম্পা মুহুর্তে লাফ দিয়ে দরজার দিকে দৌড় দিল। আমি ঐ শরীর নিয়ে কিভাবে যেন দরজা আটকে দিলাম। বললাম, আমাকে কি তোমার ডাকাত মনে হয়? ডাকাতের মতো মোচ কই আমার? বসো। হাত ধরে বিছানায় বসিয়ে বলি, সুন্দরী বোকা হয়, কিন্তু এতটা হলে বেশি বিশ্রি দেখায়!
সম্পা ভয়ে, লজ্জায় ও সম্ভবত কস্টে ফুপিয়ে উঠল।
ওর মাথায় হাত রেখে বলি, আর এক ফোটাও যদি কাঁেদা, আমি কাকাকে এখন ফোন দিয়ে বলবো, সম্পা কিন্তু আমাকে রেখে ১২ টার সময় সাজ্জাতের সাথে ফুটবে। সম্পা আপনাদের মিথ্যে জানিয়েছে যে, সাজ্জাদ পরশু দেশে ফিরবে। সে সন্ধায় আমার সাথে দেখা করে গেছে। ১২ টায় ট্যাক্সি নিয়ে ক্লিনিকের সামনে থাকবে। মেয়ে ঠেকাতে চাইলে এখনি কাজী নিয়ে আসেন সম্ভাব্য ম্যজিস্ট্রেটের সাথে বিয়ে দিয়ে দেন।
সম্পা দৌড়ে টয়লেটে ঢুকে দরজা বন্ধ করে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো।
ইস, এই মুহুর্তটা যে আমার কি ভালো লাগলো? সাজ্জাতের কাছে যাওয়ার জন্য মেয়েটা কতটা ব্যকুল হয়ে আছে। এমন সুন্দর একটা মেয়ে কত সুন্দর করে কাঁদছে। পুরুষ হলে এমন হতে হয়। এমন সুন্দরীকে যে ছেলে এমন পাগল বানিয়েছে তার দুদিন দাস হয়ে থাকাও ভাগ্যের। গলা বাড়িয়ে বলি, সম্পা, কানাডা কিন্তু ওপেন কান্ট্রি। ওপেনের লোকও কিন্তু ওপেনই হয়। সাজ্জাদকে আমার অতটা ভালো মনে হয়নি। এখনো টাইম আছে ভেবে দেখো। বিসিএস আমার নিশ্চিত কিন্তু । ম্যাজিস্ট্রেট হয়ে গেলে আমাকে যতলোকে ম্যাজিস্ট্রেট বলবে তার থেকে বেশি লোকে তোমাকে ম্যাজিস্ট্রেটের বউ বলবে। ভাবো, টয়লেটই ভাবাভাবির উত্তম প্লেস, ভেবে জলদি জলদি জানাও।
আমার হাসতে হাসতে পানির পিপাশা লেগে গেলো। হেসে হেসেই সম্পাকে ডেকে বলি, ‘‘ ওগো, একটু পানি খাইয়ে যাওতো এ বেলা। তোমার ম্যাজিস্ট্রেট গলা শুকিয়ে মরে যাচ্ছে যে।’’
এরপর আর তেমন কিছু মনে নেই। শুধু দেখলাম যে, সম্পা দৌড়ে পানির গ্লাস নিয়ে ছুটে আসছে। আমি সম্পাকে সাজ্জাতের দেয়া বোরকাটা দেখিয়ে বলি,,‘‘ কাকা দাড়োয়ানদেরকে তোমাকে চেকে রেখে যেতে বলেছে। তাই বুদ্ধি করে আমি সাজ্জাকদে দিয়ে বোরকাটা কিনিয়েছি। তুমি বোরকা পড়ে বেড়িও’’ এতটুকু। এরপরই লোকজনের ধরাধরিতে আমাকে স্ট্রেচারে তুলে দিল। অল্প অল্প টের পাচ্ছি আমাকে এরুম থেকে ওরুমে, ও রুম থেকে আর এক রুমে নেয়া হচ্ছে। পুচকা ডাক্তাররা কেউ কেউ বলছে, অবস্থা খুবই খারাপ। ঢাকায় পাঠানো দরকার। আমি এতো করে বলতে চেস্টা করছি কিন্তু পারছিনা। ‘‘ তোমাদের হাত ধরে বলছি, দয়া করে আমাকে আগের হসপিটালে পাঠিয়ে দাও। যে হাসপাতালের একপাশে আমি আর একপাশে আমার আসমানী। আমার চোখে স্পষ্ট ভাসছে আসমানির সোনার টুকরোর মতো একটা মেয়ে হয়েছে। মেয়ে জন্ম দিয়েই সে দৌড়ে এসে আমাকে বলছে, ‘‘আপনার পায়ে পড়ি আমার একটা অনুরোধ রাখেন। আমার মেয়েটাকে দুঅক্ষরের সুন্দর একটা নাম দিয়ে দেন। আপনি নাম না দিলে এ মেয়েকে সত্যি সত্যি আমি নামহীনা রাখবো।’’
আসমানীর কথা শুনে আমি হাসতে হাসতে নাই!