somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঠিক পাওয়া না পাওয়ার হিসেব না, শুধু মিলিয়ে দেখা, “কি দিয়েছে এ প্রবাস? (সংযুক্ত আরব আমিরাত

১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বলে নেই আমি মধ্যবৃত্তের। এ শুধু অর্থেরই না। মেধায়, রুচীতে, শিক্ষায়। আরো সহজ করে বলা যায়। দাদা বাড়িতে জৈষ্ঠ মাসে আমের ভাগ আনতে যাওয়ায় ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে ১ম সিডিউলে ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারিনি। পরের বার যখন দিয়েছি তখন ভাইয়া জানালার পাশে দাড়িয়ে নবান্ন এর সন্ধি বিচ্ছেদ বলে দিয়েছে বলেই হয়তো ১ম হয়েছিলাম, মোট মিলিয়ে রোল হয় ফোরটি ওয়ান, বাংলায় একচল্লিশ। আমার মেধার ধার বুঝতে সুবিধা হবে বলে বলে নিচ্ছি, যে ছেলেটা ২য় হয়েছিল তার (সম্ভবত) এসএসসি পাশ করাও সম্ভব হয়নি।

‘‘৮নং প্রশ্নের উত্তর’’- পরীক্ষার খাতায় এমন লেখাটিকে হাইলাইট করতে যে রংয়ের হাইলাইটারটা প্রায় সকলেরই পছন্দ ছিল ঠিক নিজের পছন্দে ঐ রংয়ের একজোড়া বর্ষার জুতা কিনেছিলাম ক্লাস সেভেনে বসে। প্রেম বোঝার আগে এটাই বোধহয় আমার জীবনের স্বর্ণযুগ ছিল যখন পথের এমন কোন মেয়ে ছিলনা যারা আমাকে সহ আমার জুতার দিকে না তাকিয়েছে। এখনো পুরনো শার্টের মাপ জানিয়ে স¤্রাট ভাইয়াকে ফোন দিয়ে দিলে উনি তার পছন্দ মত কাপড় কিনে শার্ট বানিয়ে রাখেন।

ঠিক সেই অরুচীর ধারাবাহিকতায়ই জীবিকার জন্য সবার অপছন্দের ‘‘প্রবাসী’’ হওয়া। যাক সেসব কিছুনা; যে জীবিকা জীবনের জন্য সে জীবিকা এ একবছর ২ মাসে সে জীবনে কি দিয়েছে কি নিয়েছে দেখি!

জাতীয়দলের ডে নাইট ক্রিকেট টূর্নামেন্ট দেখে খুব আফসোস হতো কোথাও যদি একটু রাতে খেলতে পারতাম! মেসি, রোনাল্ড এর খেলা দেখে ভাবতাম ওমন মশ্রিন মাঠ হলেও আমি-রাজিব (আমার এক বন্ধু)ও কম পারতাম না। আজ হুন্দাই ক্যাম্পে তেমন সুন্দর মাঠ, মশ্রৃন ঘাস, ফ্লাইট লাইটের চকচকা আলো, জাল টানানো সাদা-কালো রং মাখা গোল পোস্টে কোন ভিড় নেই, গেলেই খেলতে পারি! অথচ সে মন নেই, একবারের জন্যও মন চায়না নামি, মেসিদের ফুটবল খেলি। ঠিক তেমনভাবেই প্লেনের চড়ার স্বপ্নের কাল পেড়িয়ে প্লেনে চড়া, তাই অহেতুক বাড়াবাড়ি নেই, সিটবেল্ট বেধেই পিঠ ঠেকিয়ে ঘুম। তারপরও ডায়েরির শেষ অর্ধেকে ‘‘প্লেনে চড়া’’ লিখে নিয়েছি প্রাপ্তি’র ঘরে।

ছোটবেলা থেকে আমরা বাপ-চাচারা একসাথে বেড়ে ওঠা। বড় ঘরের রুম ভাগ করে চাচার ফ্যামিলি আমার বাবার ফ্যামিলি। তাই কখনো আলাদা করতে পারিনি চাচাতো আপা আর আপন আপাকে। কি কারনে সেজ চাচতো বোন মা’র উপর রাগ করে আমাদের নতুন বাড়িতে যেতে চাচ্ছিলেন না জানিনি। তাই বলি, হাজাবু (সেজ বুবু) আপনে না জান না জান, আমি মিতুরে নিয়ে গেলাম। মিতুর বয়স তখন ৮ কি ৯ হবে। আমি বাড়িতে যাওয়ার পরপরই আমাদের বাসায় যাওয়ার জন্য গলা ধরে বসে থাকে। হাফিজা আপা তার মেয়েকে যেতে দেয়নি। মিতু অনেক অনেক বড় বড় চোখে তখন খুব কান্না কাটি করল। আমি যদি সেদিন আরো ছোট থাকতাম সত্যি সত্যিই হাফিজা আপাকে খুব জোরে একটা ঘুষি দিয়ে পালাতাম। হুন্দাই ক্যাম্পের মেসহলে খেতে বসে শুনি মিতু জ্বরে দুদিন বেহুশ থেকে মারা গেছে। এরপর অদ্ভুদ ব্যাপার যেটা ঘটলো আমার চোখে যে ক’বার পানি আসলো ঠিক সেকবারই মিতু’র মুখের পাশাপাশি আমার আপন বোনের মেয়ে জিতু’র ছবি উঠে আসে। ভয়, কান্না আরো বাড়ে তখন। খুব দেখতে ইচ্ছে হচ্ছিল মিতুকে, দেখা হয়নি।


আবুধাবী এয়ারপোর্টে নামি সম্ভবত রাত ১১.৩০ এর দিকে। ১ টায় ক্যাম্পে এসে হাত মুখ ধুয়ে শুয়ে পড়ি। ভাইয়া ইচ্ছা করলে পরদিনই আমাকে অফিসে না নিলেও পারতো। উনি ৪ টায় উঠিয়ে বলে, জলদি জলদি। আমি জলদি জলদি করে নাওয়া, খাওয়া সেরে ৩০ মিনিটের বাস জার্নির পরে এক অফিসে ঢুকি। ঠিক আমার সম্মুখ বরাবর একজন পরিস্কার মানুষ আমাকে দেখা মাত্র কি যেন বলে উঠল। আমি কিছু না বুঝে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘‘ কি বলতেছে?’’ উনি হেসে বলেন, গুড মর্ণিং বলছে। সপ্তাহ খানেক অফিসে থেকে করিয়ানদের ইংলিস একসেন্ট জানা হয়ে গেলে পরে আর তেমন সমস্যা হয়নি। হ্যাভো, গিভো... এখন প্রায় সবটাই বুঝি। এখন যেখানে আছি সেখানে কি যেন কিম নামে একজন করিয়ান সুপারভাইজর আছেন। উনি বাক্যের আগের গুলো করিয়ান ভাষায় বলে শুধু শেষের শব্দটা ইংরেজিতে বলেন। যেমন কাউকে কোন কাজে তার কাছে আসতে বললে ঠিক এমনটি বলতে শোনা যায়... ইয়ং গুস কিও কুংগুংCOMMING . ...!!! বয়স্ক করিয়ানরা প্রায় অনেকেই এই টাইপের। তারপরও এরা বাংঙ্গালি, ইন্ডিয়ান, ফিলিপিনো, চাইনিজ, ভিয়েতনামিজ, নোপালি, পাকিস্তানি সবার সাথে কাজ করছেন, কাজ চলেও যাচ্ছে। ডায়রীর শেষ পাতায় ৬/৭টা ন্যাসনালিটির মানুষদের সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতাটাকেও প্রাপ্তি হিসেবেই তুললাম।

১০ টাকার ১টা পিস্তল, ১ টাকার কার্টিজ, আর ২০ টাকার ট্রলার; ঈদের বাজেটের বড় অংশটাই ছিল এ নিয়ে। এসবই সালামি নির্ভর থাকায় অনেক সময়ই ট্রলারটা কেনা হতোনা। তারউপর ঘর থেকেও বারণ ছিল। ট্রলার কিনলে তার জ্বালানি নিতে হতো ঘর থেকে। মা তাই অনেক সময় ঈদের আগের দিন কেরোসিনের বোতল লুকিয়ে রাখতো। তাতে মন ভাঙ্গতো না, একভাবে না একভাবেই ম্যানেজ হয়েই যেত। একটা বছরে হাতে টাকা আসার এই দুইটাই দিন, রোজার ঈদ, কুরবানির ঈদ। এরপরে টাকা নিয়ে স্বপ্ন দেখতে হলো ফাইভের বৃত্তি পরীক্ষা পর্যন্ত, তারপর এসএসসি, এইচএসসি, এরপর শেষ। এরপর অনেক বছর গেল মধ্যে, অনার্স মাস্টার্স হলো, বিজনেস হলো। কিন্তু কখনোই নিজের কাছে কিছু টাকা আছে এমন মনে হয়নি। ভাবলাম চাকুরী করে মাস শেষে বেতন পেলে বোধহয় অন্যরকম লাগবে। কিন্তু অবাক এ জন্য যে তাও লাগেনি। ছেলেদের বেতন বলে যে স্বপ্নটা থাকে সেটা পূরণ হলো এখানে, আবুধাবিতে। যখন ভাঙ্গা মাসের ১৭ দিনের বেতন পেলাম ভাবলাম রাতে গিয়ে ফিলিংস লিখো ফেলবো। পরদিন হঠাৎ অফিসে এসে পকেটে হাত দিলে দেখি বেতনের খামটা পকেটেই রয়েগেছে! প্রথম মাসের বেতন নিয়ে অনেকেরই এমন একটা হিসেব থাকে, মা’র জন্য একটা কাপড়, আব্বার জন্য জাপানি ট’রের একটা পাঞ্চাবি, ভাবির জন্য গায়ের রং মিলিয়ে একটা শাড়ি অথবা জিতু-অরিনের জন্য হাত-পা নাড়া পুতুল.. অথবা এইটাইপের। কখনো মাথায় এমন বাজেটও আসেনি দেখে ভয় ভয়ও লাগছে। এরকম হওয়ার কারন কি? অবশ্য গত বছর দশেক ধরে একটা সাহিত্য ম্যাগাজিন করছিলাম, মাঝে মাঝে ওটাতে কিছু দেয়ার জন্য ইচ্ছে হয়.. sref atotukui। যাইহোক সব মিলিয়ে আমার কাছে কেন যেন এটাকেই ভালো মনে হচ্ছে। ৮ জানুয়ারী ২০১৩ তারিখে ডায়রীর ২৫৫ তম পৃষ্ঠায় লিখলাম ’’প্রথম বেতন-আবুধাবির হাবসান-৫ এ। ’’

মন যে ভাঙ্গেনি এখানে তাও না। কিছুদিন আগে ক্যাম্পে ১জন লোক মার্ডার হওয়ায় সিকিউরিটি খুব শক্ত হয়ে গেলো। ক্যাম্প সিডিউল বাদে প্রজেক্টের নিকটবর্তী ছোট শহর মদিনাতেও যাওয়া যাচ্ছেনা। ওখানে গেলেই যে সব হয় তাও না। এরাবিয়ান খালামনিদের একই সাইজের ৪/৫ টা বাচ্চা নিয়ে ঘোরাঘুরি করতে দেখে মন আরো খারাপ হয়ে যায়। কি হতো এমন মাঝে মিনিমাম দুবছর দুবছর বিরতি দিলে। তাই এখন আর ও শহরেও যাইনা। গত সপ্তাহে লাঞ্চ করতে মেইন অফিস সংলগ্ন মেস হলে গিয়ে খাওয়া শেষে এসে গাড়িতে বসে ড্রাইভারের অপেক্ষা করছি। আমাদের মেস হলের পাশেই করিয়ান মেস হল। গাড়ির মধ্যেই বসা; হঠাৎ লোকজন চিৎকার করে বাসের জানালা দিয়ে মাথা বের করে আওয়াজ দিচ্ছে। ভড়কে গিয়ে আমিও গাড়ি দিয়ে নেমে আবার দৌড়ে উঠে আসি। তেমন কিছুই না ; ব্লু জিন্সে কালো কাপড়ে মুখ মোড়ানে এক করিয়ান ম্যাম যাচ্ছেন!!! মন চাইলো দৌড়ে গিয়ে বলি, ‘‘ দ্যাখ আপা, একটু ঐ দিকে চাইয়া দ্যাখ! তোর হাত ধরি, ফিগারের সেপ যখন দেখাইছো, মুখটাও একটু দেখা। দুমিনের রোদ আর এমন কি ক্ষতি করবে? তোদের হুন্দাই কোটি কোটি মিনিট রোদে পুড়িয়ে ওদের মনের কি অবস্থা করছে একটু বোঝ!

মনে ক্ষীন আশা ছিল পুরুষ যখন হয়েছি চাকুরীও হবে, হাজার হাজার না থাকুক মিনিমাম দুচারটা ওমন কলিগও জুটবে যারা অন্তত বাচ্চার বাবার বিরুদ্ধে আমার কাছে দুচারটা অভিমানী অভিযোগ তুলবে। হয়নি, সে আশাও হয়নি পুরণ। লিখলাম, ‘‘চাকুরীতে উষনো আবহাওয়া’’।

অফার শব্দটা প্রথম কবে শিখি মনে নেই। তবে ওটার অর্থ জানার পর ওটাতে খুব দূর্বল হয়ে পড়ি। দূর্বলে ভীড় জমেনা বলেই হয়তো কখনো দেখা মেলেনি তার। গায়ের ওজন একটু বাড়ার পর গত ১৩ দিন আগে শৈল্পিক (!) শহর দুবাই গিয়েছিলাম। সাথে ভাইয়াও ছিল। চিকন মানুষ মোটা করা স্যামসাং গ্যালাক্সি সেটে (ধার করা) কয়েকটা ফটো তুলে বেশ তৃপ্তি নিয়ে হাটছি, আয়না দেখলেই সবার অলক্ষে একবার তাকিয়ে অভিমানে গালের চামড়াটা টেনে টেনে বলি, আর একটু মোটা হলে হয়কি পাগলী চামড়া! ঘুরে ঘুরে ক্রিক পার্ক না যেন কি পার্কে গিয়েই ভোদাই সাজলাম অনুমতি না নিয়ে ঢুকে। ও গেটে নাকি এ্যারাবিয়ান আপাদের গোসল খানা! পাশে কেউ দাড়ায়না বলে দু একটা পুতুলের সাথে ছবি তুলে এসে বাস স্ট্যান্ডে হাটাহাটি করলাম অনেকক্ষণ। অতরপর ১২ জনের সেই কাঙ্খিত অফারটা (!) পেয়ে গেলাম পটাপট। আমি প্রথমে কিছু বুঝিনি, সাথে হাসান নামে আর এক ভাই ছিল। উনি বুঝিয়ে বললেন। যে ছোটকা ছেলেটা অফার দিলো ভাইয়া সাথে না থাকলে ভালো মন্দ সব জিজ্ঞেস করবো ভাবছিলাম। অবশ্য অফারেই সে বলেছে, এরা বাংলাদেশ থেকে গত কালই এসেছে, আজই প্রথম! ভয়ের কিছু নেই, পুলিশের ভয় নেই। তাছাড়া সব বুঝিয়ে শুনিয়ে দেওয়ার জন্য হোটেলের মধ্যেও বাঙ্গালি রাখা আছে!
যাই হোক ক্যাম্পে আসতে আসতে রাত ৩ টা বাজায় ও দিন আর লেখা হয়নি ‘‘ এ দুবাই আমাকে অফারও দিয়েছে আজ!’

প্রিয় নবীর প্রিয় দোয়া নামে একটা বই ছিল আমার। প্রয়োজন পড়লেই কাঠের সেলফ থেকে নামিয়ে পড়ে নিতাম। হাইস্কুল লাইফে এই বইটাকে বেশি মিস করতাম নির্দিস্ট একটা কারনে। রাতে যখনই ঘুমোতে যাই বইটা খুলে ‘‘বৃস্টির দোয়া’’টা পড়ে নিতাম খুব আন্তরিকভাবে। শুতে গিয়েও বারবার বলতাম, ‘‘আল্লাহ বৃস্টি দাও, বৃস্টি দাও’’।
রাতে বৃস্টি টের পেলে খুশিতে উঠে বসে থাকতাম। তখণ লিখতে পারতাম না বলে এ খুশির এর আর কোন প্রকাশ ছিলনা। বসে থেকে থেকে টিনের উপর বৃস্টির শব্দ শুনতাম। গত এপ্রিল-মে’র দিকের এক রাতেও ঠিক এভাবে উঠে বিছনায় বসে থাকি। এখানে আসার পর ওটাই প্রথম বৃস্টি ছিল। উপরে টিন না হলেও প্লাস্টিক না যেন কি টাইপের চাল, তাই শব্দটা ভালোই লাগছিল। নিজেকে চমকে দিয়েই ও রাতে চোখে পানি চলে এলো ঠিক তক্খুনি। বিশ্বাস করুন, খুব লজ্জা পেলাম। বাইরে আসার পর অকারণে এটাই প্রথম জল। একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে দিয়ে কম্বল মুড়ো দিতে দিতে বলি, ‘‘ ঘুমা ঘুমা!, আর একটু পরেই অফিস যেতে হবে’’।
প্রচলিত মায়ার বাইরে বৃস্টিকেই বোধহয় খুব বেশি মিস করছি।

ছোটবোন হঠাৎ সেদিন ম্যাসেজ করে বলল, ভাইয়া, জলদি জলদি ফোন দেন। আমি ফোন দিতেই শুনি, আমাদের অরিন সোনামনি (ভাইয়ের মেয়ে) কাকা কাকা বলে ডাকছে। এরপর চোখবুঝে ৫ মিনিট ভেবে ফাইনাল করলাম, যদি ৫০ বছরও বাইরে থাকতে হয় একটানা থাকবো, দেশে গিয়ে আর আসবোনা। আমার যে কেমন লাগলো! একটু পরেই বোন আবার ফোন করে বলল, ‘‘ ভাইয়া একটা কথা কই, মারবেন না তো?’’ বলি, ক। কয়, ‘‘অরিন অনেক কিছু কইতে পারে। মনে করেন, টিভিতে বিড়াল দেখলো, সাথে সাথে মিঁউ, মিঁউ, বাঘ দেখলো- হঁয়াঁ, হুঁয়াঁ।’’ আমি হাসি চেপে কই, এই রাত ৯টায় টিভিতে কাক দেখলো কোত্থেকে?’’ ফোনেই শুনলাম, ঘরের সবাই-ই হেসে উঠলো। অরিণকে খুব কোলে নিতে ইচ্ছে করছে। মিস ইউ মামনি!

আরো কিছু পরিবর্তণঃ
ক) দেশে বসায় পুকুর ঘাটে সেম্পু দেখলে সেম্পুর কথা মনে পড়ত, এখন ল্যাপটপের পাশেই রাখতে হয়। টার্গেট পূরনের আগে বিদেশ ছাড়লে খুশকির কারনেই ছাড়বো।
খ) অনার্স সেকেন্ড ইয়ার পর্যন্ত ব্রন ছিল। এখন আবার । ২২ বছর বয়স পর্যন্ত গরু খেতে পারতাম না, এখন পারি। গরুতে এলার্জি না হয়ে কিসে যে হচ্ছে বুঝতে পারছিনা। গা লাল-কালো হয়ে যাচ্ছে।
গ) ঢাকার জীবনের একদিনের টেনশন সমান সমান আবুধাবির ১ বছর ২ মাসের টেনশন। তাও না, এখানে কোন দুশ্চিন্তা নেই। মাস্টার্স করা একটা ছেলের চাকুরী পাওয়ার আগ পর্যন্ত যে অবস্থা থাকে সারা আরবের যুবকদের সারা জীবনেও তা হয়না।
ঘ) দাড়ি অল্প ছিল, এখন অল্পের থেকে বেশি (ভাইয়ার থেকেও বেশি) ।
ঙ) এখানে মাত্র ১ টা পেন ড্রাইভ হাড়িয়েছি, ঢাকাতে বসে অনেক।

বেসম্ভব ঠান্ডা মার্কা একটা পুকুর আছে কাকার বাড়িতে। সারাদিনেও রৌদ্দুর মেলেনা। পুরনো হিন্দু বাড়ির পুকর ট্ইাপের ঘাট। চাচতো বোন পাখি’কে সাথে করে জাল নিয়ে মাছ ধরতে গেছিলাম একদিন। মলা মাছ, পুটি মাছ, টাকি মাছ! দুনিয়ার শীত, কাঁপি আর হাটি। হঠাৎ জাল মেরে ফাইসা যাই। কিসে যেন বেঁধে গেছে। কাকা যদি দেখে জাল ছিড়ছে; আমার শেষ! তার ভয়ে ওই শীতের মধ্যে পুকুরে ডুব দিয়ে জাল তুলতে হয়েছিল ঐ দিন। খালাম্মার (উনি আমাদের একমাত্র কাকিও আবার মেজ খালাও) শরীর ভালোনা গত ২২ বছর থেকে। তারপরও তাকে দিয়েই মাছ ভাজালাম। আমার মেজ খালা আর নয়া (৫ জনের মধ্যে যিনি ৪ নম্বর) খালার হাতের রান্না অনেক ভালো। রাধলেই মজা! এই মজা আর দিবেন বলে দিয়ে গত ২ মাস আগে খালাম্মা মরে গেছেন।

মরে যাওয়া ভালোনা বলেই আসমানী আমার কাছে ৩/৪ বছর জীবন্ত হয়ে বেঁচে ছিল। একদিন পাশে বসে মাথা নুইয়ে ছিল বলে বলি, কি রে শরীর খারাপ? বাড়ি যাবি?’’ হাত দিয়ে মাথা তুলে দেখি, চোখে পানি পানি! বলি, কি হইছে? মাথা ব্যাথা?’ চোখ মুছতে মুছতে বলে, ‘‘ একটা কথা বলি রাগ করবেন নাতো?’’ বলি, রাগের কথা কবি ক্যান। কি হইছে?’’ হাত ধরে দেখি হাল্কা হাল্কা গরম। ‘‘ আবার জ্বর হইছে? বস, ট্যাবলেট নিয়ে আসি’’। আমার হাত চেপে ধরে যেতে দেয়নি। বলে, ‘‘সকালে এন্টিবায়োটিক খেয়ে আসছি। গত ১০ দিনে ধরেই এন্টিবায়োটিক খেয়েই আসি। শুধু নাপাতে কমে না।’’ এরপর আবার মাথা নুইয়ে দেয়। দেশে বসে অবুঝ থাকায় হালকা পাতলা ঘটনায় আমারও চোখে পানি আসার অসুখ ছিল। মাথায় হাত দিয়ে বলি, ‘‘ ডাক্তার না ঐটা খাইতে তোরে নিষেধ দিছে?’’ ও কয় ‘‘ ওটা না খাইলে আপনার কাছে আসতে পারতাম না। মঙ্গলবারইতো চলে যাবেন। ’’ সহজ নিয়ম অনুযায়ী ওর কথা শুনে ঐদিন চোখের অসুখ অনেক গুনে বেড়ে গিয়েছিল।
বড় হয়ছি বলে এখন সে অসুখ আর চোখে থাকেনি। চোখ-গলা বেয়ে এখন বুক বরাবর। নামানোর চেস্টা করছি, নামানো যাচ্ছেনা। কিভাবে কি হলো বুঝতে পারছিনা। দেশের মানুষ ব্যস্ত থাকে খুব জানি। তারপরওতো টুকটাক জিনিস মনে রাখে বা রাখতে হয়। কোন বস্তুর চাপে এখন আর আমি ওর মনে’ই নেই ক্লিয়ার না। চুন-পান সুপারি ছোট হলেওতো প্রয়োজনে মনে রাখতে হয়, সেরকম ভেবেও যদি ২/১ মাস পরপরও একটু মনে করত! একটা মিস কল দিত!



আপাতত আর কিছু দেখছিনা...........
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×