somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইংরেজ শাসিত বাংলায় কোরবানী ঈদ

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঈদ উল আজ্হা বা কোরবানি ঈদ নিয়ে উপমহাদেশের মুসলিমদের সমাজ জীবনে নানা ঐতিহাসিক ঘটনা রয়েছে ৷ তবে সেটি উপমহাদেশের মুসলিমদের জনজীবনে খুব একটা ভালো বা সুখকর অভিজ্ঞতা নয় ৷ যার প্রমান মিলে বিভিন্ন লেখক-ইতিহাসবিদের গবেষনা কর্ম , রচনা বা তৎকালিন সমাজের রাজনৈতিবিদের জীবনি থেকে ৷
মধ্যযুগে প্রথমদিন গরু জবাইকে কেন্দ্র করে বাংলার তৎকালিন শ্রীহট্টতে ( বর্তমানে এলাকা সিলেট নামে পরিচিত) আগমন করেন প্রখ্যাত ইসলাম হযরত শাহ্জালাল ইয়ামেনী রহমতউল্লাহ আলাইহির ৷
বাংলাদেশ প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন রচয়িত " বাংলাদেশের উৎসব " নামক বইের 32 পৃষ্ঠায় তিনি লেখেছেন " আজকে আমরা ইদ-উল-আজাহায় গরু কোরবানীর অনায়সে গরু কিনে এনে সহজেই কোরবানী দিয়ে ফেলি আশি একশো দুরে থাকুক পঞ্চশ বছর আগেও তা তেমন সহজসাধ্য ছিল না ৷ আজকের প্রজন্ম হয়ত অবাক হবে যে এ নিয়ে সুদীর্ঘ পঞ্চাশ বছর বিতর্ক চলেছে ৷ এবং কোরবানী বিশেষ করে গরু কোরবানী দেওয়ার অধিকার আমাদের বাপ দাদাদের লড়াই করে আদায় করতে হয়েছে " ৷
অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনের এই উক্তি থেকেই বোঝা যাই যে বাংলার পূর্ববতী মুসলিমদের জন্য গরু কোরবানি করা কতটা দূরসাধ্য ছিল ৷
ইংরেজ শাসিত বাংলায় গরু কোরবানির পক্ষে বিপক্ষ নিয়ে অনেক আন্দোলনেরও উদাহরন ও আছে ৷ একাজে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে বাংলার পুজিপতি সম্প্রদায় ৷
1882 সালে দায়নন্দ সরস্বতী " গো হত্যা নিবারনী " সভা স্থাপন করলে শুরু হয়েছিল বিতর্ক ৷ " গো হত্যা" বা গরু কোরবানীর বিপক্ষে এ সভা থেকে ভারত জুড়ে হয়েছিল প্রবল প্রচার ৷ 1887 সালে রাজশাহীর তাহিরপুরের জমিদার শশিশেখর রায় কংগ্রেস মাদ্রাজ অধিবেশনে এ পরিপ্রেক্ষিতে উত্থাপন করেছিলেন প্রস্তাব ৷ ফরিদপুর ও বিভিন্ন অঞ্চলেও এ নিয়ে প্রচার শুরু হয়েছিল ৷ তখন এর বিরোধিতা করতে মুসলিমদের বিভিন্ন সভা বা আঞ্জুমান সমূহ এগিয়ে এসেছিল ৷ বিত্তবান হিন্দুদের এ প্রচারনার সমর্থনে এসেছিল স্থানীয় হিন্দু জমিদাররা ৷ ঐ সময়কার অবস্থার একটি বিবরন পাওয়া যাবে ইবনে মাযুদ্দিন আহমদের আত্মজীবনী 'আমার সংসার জীবন ' এ ৷ তিনি লিখেছিলেন " গোবিন্দপুর হরিশঙ্করপুর, সনাতন, গোপীনগর, আমলা, গোসাঞী পুকুর প্রভৃতি কতকগুলি গ্রাম একজন প্রচন্ড প্রতাপান্বিত বড় হিন্দু জমিদারের জমিদারীভুক্তি ; সেখানকার মুসলিমগন বহুকাল অবধি গরু কোরবানী করতে বা গরু জবেহ ও উহার গোসত ভক্ষন করিতে পারিত না ৷ কেহ করিলে তার আর রক্ষা ছিল না ৷ জমিদার কাছারীর দুর্দান্ত হিন্দু নায়েবগন কোরবানীদাতা ও হত্যাকারীকে ধরিয়া আনিয়া প্রহার ও নানা অপমান করিত এবং তাহাদের নিকট জরিমানা আদায় করিত ৷ সুতরাং তাহাদের অত্যাচারে ঐ অঞ্চল হইতে গো কোরবানী প্রথা উঠিয়া গিয়াছিল ৷ " (তথ্যসুত্রঃ বাংলাদেশের উৎসব , লেখকঃ মুনতাসীর মামুন, প্রকাশনাঃ বাংলা একাডেমী পৃষ্ঠা 33 )
গরু কোরবানীকারিরা সে কালে রাষ্ট্রীয় ভাবে জেল জরিমানার হাত থেকেও রক্ষা পেত না ৷1895 সালে দিকে জানা যায় ময়মনসিংহের অশ্বরিয়া, মুক্তাগাছা ও সন্তোষের জমিদার অধম উল আজহার গরু কোরবানীর জন্য বেশ কিছু মুসলমানকে জরিমানা করেছিল ৷1905 সালে চাঁদপুরে কয়েকজন কোরবানী উপলক্ষে গরু কোরবানী দিয়েছিল ৷ এর ফলে জৈনক গোপাল চন্দ্র মজুমদার তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিল ৷ অভিযোগ ছিল মুসলমানরা প্রকাশ্য রাস্তায় গরু জবেহ করেছে এবং বদ্ধজলে গোসত ধুয়ে জল অপবিত্র করেছে ৷ জেলা হাকিম ছিলেন জগদীশচন্দ্র সেন ৷ সে তিনজন মুসলিমকে অভিযুক্ত করে একজনকে এক মাসের জেল এবং অপর দুজনকে যথাক্রমে পঞ্চাশ ও পনের টাকা জরিমানা করেছিল ৷ " (তথ্যসুত্রঃ বাংলাদেশের উৎসব , লেখকঃ মুনতাসীর মামুন, প্রকাশনাঃ বাংলা একাডেমী পৃষ্ঠা 34 )
গরু কোরবানি নিয়ে তৎকালিন সমাজে প্রথম সারির ব্যাক্তিদের বিভক্তি ও ছিল প্রখ্যাত কবি মীর মোশারেফ হোসেন মুসলিম সম্প্রদায়কে হতাশ করে তিনি ও গরু কোরবানীর বিরোধী করে ৷ " গো জীবন " নামক একটি গ্রন্থ রচনা করেন গরু কোরবানীর বিরোধী করে ৷ তিনি এক্ষেত্রে প্রতিবেশি হিন্দু সমাজের সমর্থনও লাভ করে ৷ তার গো-জীবন গ্রন্থের মুখবন্ধ লিখে এলাহাবাদের গো রক্ষীনী সভার শ্রী শ্রীমান স্বামী ৷
গরু কুরবানীর বিরোধী করার জন্য ঠাঙ্গাইল থেকে প্রকাশিত "মাসিক আখবারে এসলামীয়া " এর সম্পাদক মৌলবী নঈমুদ্দীন এক জনসভায় তাকে কাফের ও ঘোষনা করা হয়েছিল ৷ তখন কবি মীর মোশারেফ হোসেনও তার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করে ৷ সে সময় মৌলবী নঈমুদ্দীন এর পক্ষে এগিয়ে আসে ঢাকা কলেজ, মাদ্রাসা, পোগোজ, জুবিলী, জগন্নাথ, সার্ভে কলেজ , মেডিক্যাল এবং নর্মাল স্কুলের ছাত্ররা ৷ তারা মৌলবী নঈমুদ্দীনের পক্ষে জনসভা আয়জোন করে ৷ পরে মৌলবী নঈমুদ্দীন ও কবি মীর মোশারেফ হোসেনের মধ্যে আপসের মাধ্যমে মামলাটি প্রতাহার করা হয় ৷ তথ্যসুত্রঃ বাংলাদেশের উৎসব , লেখকঃ মুনতাসীর মামুন, প্রকাশনাঃ বাংলা একাডেমী পৃষ্টা 34- 35)
তৎকালিন সংবাদপত্র গুলোও বিভক্ত হয়ে পক্ষে বিপক্ষ পৃষ্ঠপোষকতা করতে ছাড়েনি ৷
1901 সালে মাওলানা আকরাম খাঁ তার সম্পাদিত মোহম্মদী পত্রিকায় কোরবানীর পক্ষে লেখারতে সে বলে যে মুসলিমরা সে রুপে কোরবানী পালন করে , হিন্দুরা এরুপ "গো মেঘ যঞ্জ " পালন করত ৷ " সঞ্জীবনী " নামক পত্রিকায় তার এই উক্তির বিপক্ষে লেখা হয় যে ৷ "ঐ সব প্র়াচীন তত্ত্ব কেন প্রকাশ করা হইতেছে? বিন্দুতে গো মাংস ভক্ষন করার জন্য? এদেশে গো-মাংস চলবে না ৷; " (তথ্যসুত্রঃ বাংলাদেশের উৎসব , লেখকঃ মুনতাসীর মামুন, প্রকাশনাঃ বাংলা একাডেমী পৃষ্ঠা 37 )
যাই কোরবানী নিয়ে বাংলাদেশে তেমন কোন বির্তক না থাকলেও আজ ও ভারতে গরু ভিত্তিক নানা বির্তক বিদ্যমান ৷ আজ ভারতে গরু রাজনৈতিক দলগুলোর একটি রাজনৈতিক গুটিতে পরিনত হয়েছে ৷

কৃতজ্ঞতাগ্যপন করছি ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন
( ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় , ইতিহাস বিভাগ)
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:২৬
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

=মৃত্যু কাছে, অথবা দূরেও নয়=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



©কাজী ফাতেমা ছবি
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বলি, আমারও সময় হবে যাবার
কি করে চলে যায় মানুষ হুটহাট, না বলে কয়ে,
মৃত্যু কী খুব কাছে নয়, অথবা খুব দূরে!
দূরে তবু ধরে নেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×