Blogger and Online Activist Network -BOAN এর পেজ এ বলা হচ্ছে,হেফাজতি হুজুরর নাকি নামাজ পড়েনা!!! স্ট্যাটাসের ভংগি দেখে আমার বাঁশের কেল্লা'র কথা মনে পড়ে গেলো। তারাও এই জাতীয় বালছাল পোষ্ট করতো, এখন চেতনার নামধারী আমরাও একই কাজ করতেছি। ফারাক কই!
লেখাপড়া করনেওয়ালা যারা নবী-রাসুল-দেবদেবী নিয়া গালিগালাজ কইরা কি চ্যাটের মুক্তমন না মুক্তকচ্ছ দেখাইছেন , যা দিয়া তারা নিজেদের মাদ্রাসার চেয়ে বেশি শিক্ষিত দাবী করেন ? তারা আজকে কই? উনাদের জন্য শাহবাগে দাঁড়িয়ে মুক্তমনে রাজাকারদের বিচার চাওয়া লোকগুলো যে নাস্তিক গালি শুনছেন, ইসলামবিদ্বেষী ট্যাগ খাইতাছেন। আপনাদের জন্য পুরা শাহবাগের নির্দোষ ৯৯.৯% ব্লগারকে গালি খেতে হচ্ছে। এক থাবাবাবার লেজ বাঁচাতে গিয়ে পুরো মুক্তিযুদ্ধের চেতনার গায়ে কলংক দিলেন। এমন এক 'শহীদ' ব্লগার বানালেন, যার লেখা প্রচার অযোগ্য, অশ্লীলতার চূড়ান্ত সীমানায়। সুস্থ সমাজে শেয়ার অযোগ্য। আর শাহবগের নেতারাও মাইরি…!!!! অন্যের কৃতকর্মের ঝোল নিজের পাতে আনার কি দরকার ভাই!!!
হেফাজত, জামাত শিবির কে প্রশ্রয় দিয়ে কোন বক্তব্য দিছে এমন শুনি নাই। ভেতরে অন্য কিছু থাকতে পারে কিন্তু সামনা সামনি তারা জামাত এর পক্ষ নেয় নেই। এই অবস্থায় গনজগরন মঞ্চ, হেফাজত ঠেকাও কর্মসূচী কেন দিল? নিজেদেরকে অফিশিয়ালি হেফাজত এর প্রধান এনটি পার্টি হিসেবে এস্টাব্লিশইবা কেন করলো? গণজাগরণ মঞ্চের প্রতিপক্ষ হিসেবে হেফাজতকে টার্গেট করাটাকে আমি সমর্থন করতে পারলাম না। মঞ্চের দাবি স্পষ্টতই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, এখানে অন্য কাউকে প্রতিপক্ষ করলে ফাঁকতালে মূল আন্দোলনের ফোকাস নষ্ট হয়। হেফাজতের ১৩ দফা দাবিগুলো নিয়ে ডিল করা উচিত মহাজোট সরকারের, গণজাগরণ মঞ্চের নয়। সাধারণ মানুষের উচিত হবে সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে সাহস ও শক্তি জোগান, কিন্তু সেটি এই মঞ্চের ব্যানারে না। হেফাজতের ১৩ দাবির মধ্যে একটি হচ্ছে 'শাহবাগ আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী নেতৃত্বদানকারী স্বঘোষিত নাস্তিক-মুরতাদ এবং প্রিয় নবী (সা.)-এর শানে জঘন্য কুত্সা রটনাকারী ব্লগার ও ইসলামবিদ্বেষীদের সব অপপ্রচার বন্ধসহ কঠোর শাস্তিদানের ব্যবস্থা করা। আমি ঠিক বুঝতে পারছিনা এখানে তারা খারাপ কি চেয়েছে যা আপনাদের মানতে সমস্যা হবে?
আর হেফাজতে ইসলামের লং মার্চের মিছিল থেকে নারী সাংবাদিককে পেটানোর ঘটনায় যারা শেইম শেইম বলে চিৎকার করে ফেইসবুক, ব্লগ উজার করে ফেলছেন তাদের কাছে আমার প্রশ্ন গতবছর জুলাই মাসে বুয়েটের লীগপন্থী ভিসি অপসারণের আন্দোলনে হিজাবি মেয়েদের জামাতি-হিজবুতি বলে আঙ্গুল তোলার সময় আপনাদের মনে ছিলানা? ফেইসবুকে শেয়ার করা ছবিতে কতজন হিজাবি মেয়ে আছে গুনে রায় দিয়ে দিয়েছিলেন, ইহা একটি জামাতি-হিজবুতি আন্দোলন। এই হচ্ছে আপনাদের নারী অধিকারের নমুনা। আপনাদের পছন্দমত পোষাক পড়লে অধিকার দিবেন, আর পর্দা করলে ছুড়ে দিবেন টিটকারী।
লেজমোটা কিংবা ঘাড় তেরা করে বিরোধীতা করে শত্রুতাই বাড়িয়ে চলেছি। দাড়ি, টুপি, মাদ্রাসা ক্যাটাগোরাইজড করছি!!! কিন্তু ভাই এরা কারা? চিন্তা করুন? এট দা এন্ড অফ দা ডে তারাতো এই দেশেরই নাগরিক। এই দেশটা যতখানি আপনার ঠিক ততখানি তাদেরও। কোরবানীর ঈদে গরুর চামড়া বিতরন করে সাম্যাবস্থার বুলি ছুড়ছি অনলাইনে!! ভাই ওদের অধিকার বলতে শুধু এটুকুই আমদের কাছে এটাকি কখনও ভেবে দেখেছেন? আপনাদের উন্নাসিকতাই ওদের ঘৃণার কারন। যে কৌশলে ঢাকাকেন্দ্রিক বাংলাদেশী জাতীয়তার বুনন করছেন, তা থেকে সমাজের নিচুতলার মানুষ ৪২ বছর আলাদা। কিভাবে কাপড় পড়তে হয়, কিভাবে ফ্লার্ট করতে হয় সেটা আমাদের প্যাকেজ নাটক থেকে ওরা শিখছেনা! আপনার ভাষায় কথা বলছেনা। তাতে তাদের দোষ দেয়া যায় কতটুকু সেটুকু একবার ভেবে দেখুন। একমাত্র শিক্ষিত জনগোষ্ঠীই পারে বিপ্লবকে, প্রগতিকে ধরে রাখতে এবং সেটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে। বাংলাদেশের বৈষম্যমূলক শিক্ষা ব্যবস্থার ফলে এবং সীমিত অর্থাৎ শুধু মাত্র সক্ষমদের জন্য শিক্ষা নীতির ফলে রাষ্ট্রের অধিকাংশ অংশই রয়ে গেল শিক্ষার আলোর বাইরে। আর গ্রামের সেই প্রান্তিক বিপুল অংশের শিক্ষার দায়িত্বভার তুলে নিল স্বল্প শিক্ষিত এবং কুসংস্কারাচ্ছন্ন মৌ্লভীরা। তারা গ্রামের আনাচে কানাচে গহীনে হাজার হাজার মাদ্রাসা খুলে বসল এবং চলল ধর্মীয় শিক্ষার নামে অশিক্ষা কুশিক্ষা। সব জেনেও আমাদের নেতৃত্ব দৃষ্টি সরিয়ে রাখল অথবা প্রকৃত শিক্ষা যে একটি স্বাধীন শিক্ষিত রাষ্ট্রের জন্য অপরিহার্য সে শিক্ষাটুকুও আমাদের তথাকথিত রাষ্ট্র নায়কদেরই নাই তারা ব্যাস্ত ক্ষমতার কেদারার পেছনে। ভাই আমাদেরকে ইসলামফোবিয়া থেকে মুক্ত হতে হবে। ফানি ইন এ সেন্স ইট গৌজ বোথ ওয়েজ!!! যারা ইসলামবিদ্বেষী কিংবা যারা ধর্মান্ধ!!!
এই মাদ্রাসা শিক্ষার উপর ১৯৯৫ সালে আহমদ ছফার একটা লেখা বেরিয়েছিল সাপ্তাহিক রোববার-এ। আপনাদের জন্য লেখাটি যুক্ত করছি- (লেখাটি বাঙ্গাল নামক ফেইসবুকের একটি পেইজে শেয়ার করা হয়েছিল)
.. ‘মাদ্রাসা শিক্ষার মধ্যে একটা গুণগত এবং দৃষ্টিভঙ্গিগত পরিবর্তন আসুক, এটা সকলেই কামনা করেন। কারন যে বিপুল পরিমান ছাত্র মধ্যযুগীয় আবহাওয়ার মধ্যে লালিত-পালিত হয়ে বেরিয়ে আসে এবং তাদের নিরব উপস্থিতির যে বোঝা সৃষ্টি হয়, তার ভার আমাদের গোটা সমাজকে একদিকে এমনভাবে চেপে রাখে , সমাজ অগ্রগতির পথে আশানুরূপ অগ্রসর হতে পারে না।...
মাদ্রাসা শিক্ষা যে ভাবে চলছে এভাবে চলতে পারে না। যদিও অনেকে বলে থাকেন মাদ্রাসা...
শিক্ষার সঙ্গে ধর্মশিক্ষার একটা নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু ধর্মশিক্ষা আর বেকার এবং অকর্মা লোক তৈরী করা কিছুতেই এক হতে পারে না। সুতরাং অবিলম্বে মাদ্রাসা শিক্ষার একটি বড় ধরণের সংস্কার কর্মকাণ্ড শুরু হওয়া উচিত ।...
মাদ্রাসা শিক্ষার সঙ্গে ধর্মীয় অনুভুতির একটি ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বর্তমান । সুতরাং এই শিক্ষা পদ্ধতিতে যদি কোন পরিবর্তন আনতে হয়, এই পরিবর্তনের দাবিটি সেই বিশেষ শিক্ষা পদ্ধতির সঙ্গে সম্পর্কিত লোকদের মধ্য থেকেই সর্বপ্রথম আসতে হবে। ...
বাইরে থেকে সরকারি নীতির বলে যদি মাদ্রাসা শিক্ষা পাল্টাতে বাধ্য করা হয়, সে ক্ষেত্রে মাদ্রাসার ছাত্র- শিক্ষকরা বেঁকে বসবেন। তাঁরা বলতে থাকবেন ‘আমাদের অধিকারে হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে এবং ধর্মের শত্রুরা সমাজে নাস্তিকতা কায়েমের জন্য মাদ্রাসা শিক্ষা পদ্ধতির ওপর জোর জবরদস্তি চালাচ্ছে।’...
মাদ্রাসার শিক্ষক এবং ছাত্ররা যে কোন ধরনের পরিবর্তনের বিরোধিতা করে থাকেন তার প্রধান একটি কারন এই যে , কলেজ- বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষিত লোকেরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে মাদ্রাসার ছাত্রদের প্রতি অবজ্ঞা পূর্ণ একটি দৃষ্টি ভঙ্গি পোষণ করে থাকে। ...বাস্তবিক মাদ্রাসাতে যারা পড়াশোনা করে থাকে তাদের বেশিরভাগই দরিদ্র পরিবারের সন্তান। যে সমস্ত ছাত্র স্কুল , কলেজে ভর্তি হতে পারেনা, তাদের বেশির ভাগ মাদ্রাসায় পড়াশোনা করতে আসে এবং সমাজের দান-খয়রাতের অর্থে শিক্ষাজীবন অতিবাহিত করতে হয়। কোন কোন ধনী ভদ্রলোক পরকালের পুণ্য সঞ্চয়ের বাসনায় এবং মা-বাবার স্মৃতি বাঁচিয়ে রাখার জন্যে গ্রামে গঞ্জে মাদ্রাসা প্রতিস্টহা করে থাকেন । কিন্তু তাদের ছেলে-মেয়েদের কখনো মাদ্রাসায় পরতে দেন না। ধনী এবং সম্পন্ন ঘরের ছেলেরা খুব অল্পই মাদ্রাসাতে পড়াশোনা করতে আসে। বেশিরভাগ গরিব , বিত্তহীন পরিবারের ছেলে হওয়ার কারনে এবং ভবিষ্যতের কোন রকম নিরাপত্তা বোধের অভাবের দরুন তাদের মনে এক ধরণের হীনমন্যতা বোধ আশ্রয় নিয়ে থাকে । এই হীনমন্যতা বোধ যখন প্রাতিষ্ঠানিক আকার লাভ করে সেটা একটা মারাত্মক ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। কোন রকমের পরিবর্তনের কথা উঠলে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন ।...
মাদ্রাসার প্রতি শিক্ষিত লোকেরা এক ধরণের অবজ্ঞা পূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেন। আর মাদ্রাসার লোকদের অবস্থা দাঁড়িয়েছে অশ্বখুরাকৃতি হ্রদের মত । বাইরের পৃথিবীতে যতই পরিবর্তনের ঝড় বয়ে যাক , সেদিকে তাঁরা দৃষ্টি নিক্ষেপ করবেন না। তারা মৃত অতীতকে আঁকড়ে ধরে থাকবেন।...
প্রায় তিন রকম শিক্ষা ব্যাবস্থার মধ্যে পারস্পারিক অবিশ্বাস বোধ সমাজে কাজ করে যাচ্ছে। এই তিন রকম শিক্ষা পদ্ধতির মধ্যে যদি পারস্পারিক সম্পর্ক এবং যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করা না যায়, তাহলে শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে একটা কার্যকর পরিবর্তন আনা যাবে না।
এরকম একটা কর্মসূচি গ্রহন করা হত সেখানে স্কুল, কলেজ এবং মাদ্রাসার শিক্ষকদের এক জায়গায় দেকে আনা হত এবং তাদের মধ্যে পারস্পারিক মতবিনিময়ের ব্যবস্থা করা হত, শিক্ষার পাঠ্যসুচির মধ্যে কেন পরিবর্তন আনা প্রয়োজন সেটা ব্যাখ্যা করে মাদ্রাসার শিক্ষদের মানসিক ভীতি অপনোদন করা হত, অনেক বেশি সুফল পাওয়া যেত। ...
এই ধরণের সম্মেলন ঘন ঘন ডাকা হলে শিক্ষা পদ্ধতি গুলোর সাথে জড়িত লোকদের ভুল বুঝাবুঝির অবসান হত, আমাদের বিশ্বাস মাদ্রাসার শিক্ষকরা নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে সংস্কার কর্মসূচি গ্রহন করতে এগিয়ে আসতেন।...
সব কথার সার কথা যুগের প্রয়োজন স্বীকার করা। কর্মক্ষম এবং যোগ্য নাগরিক সৃষ্টি করা। এই প্রয়োজনটুকু সকলের মনে গেঁথে দিতে পারলেই মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা পরিবর্তনের পথটা প্রসারিত করা যাবে।’
(আহমদ ছফা। মাদ্রাসা শিক্ষার কথা । সাপ্তাহিক রোববার । আগস্ট ১৯৯৫। )
Courtesy: কিছু অংশ বাঙ্গাল- ফেইসবুক পেইজ-এর থেকে নেয়া।