‘বায়ান্ন’র ২১শে ফেব্রুয়ারি মওলানা ভাসানী ১৪৪ ধারা ভঙ্গের বিরোধী ছিলেন’ প্রেসিডেন্ট মো. জিল্লুর রহমানের এ ধরনের বক্তব্য নিয়ে দেশব্যাপি নিন্দার ঝড় উঠেছে। ভাসানী অনুসারী পরিষদ, ভাসানী স্মৃতি সংসদ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কৃষকদল তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। একই সঙ্গে প্রেসিডেন্ট মো. জিল্লুর রহমান মজলুম এই জননেতা সম্পর্কে কেন অপ্রাসঙ্গিকভাবে ভুল তথ্য উপস্থাপন করলেন তা আমাদের বোধগম্য নয় বলে উল্লেখ করা হয়। গতকাল এক বিবৃতিতে জানান, প্রেসিডেন্টের এই বক্তব্যে বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক ও ইতিহাস সচেতন জনগণ দারুণভাবে বিস্মিত ও মর্মাহত। বিবৃতিতে ভাসানী অনুসারী পরিষদের চেয়ারম্যান ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিন (ভাষা মতিন) এবং মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবুল বলেন, গত শনিবার প্রেসিডেন্ট মো. জিল্লুর রহমান ভাসানীকে নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক ও ইতিহাস সচেতন জনগণ দারুণভাবে বিস্মিত ও মর্মাহত। বিবৃতিতে বলেন, প্রেসিডেন্টের এই বক্তব্য শুধু অনাকাক্সিক্ষত ও অনভিপ্রেতই নয়, সত্যের অপলাপও বটে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, ১৪৪ ধারা জারির বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে মওলানা ভাসানী সেই সভায় উপস্থিত থাকতে পারেননি। সে সময় তিনি বগুড়ায় সাংগঠনিক সফরে ছিলেন। তার অবর্তমানে সেই সভায় সভাপতিত্ব করেছিলেন আব্দুল হাসিম। ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার বিরোধিতা করেন আওয়ামী মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক সামসুল হকসহ সিনিয়র রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। কিন্তু ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার পক্ষে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করেন অলি আহাদ, আব্দুল মতিন প্রমুখ ছাত্রনেতারা। গোপন পার্টির সিদ্ধান্তহীনতার কারণে যুবলীগ নেতা মোহাম্মদ তোয়াহা ভোট প্রদানে বিরত থাকেন।
বিবৃতিতে তারা আরও বলেন, মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর ওই সময়ের মুসলিম লীগ সরকারের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম বিরোধী রাজনীতির সূচনা করেন এবং আওয়ামী লীগ গঠন করেন। উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে তিনি তীব্র ভাষায় প্রতিবাদ জানান এবং বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেন। ২১শে ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গের ছাত্রদের সিদ্ধান্তের সঙ্গে তিনি একমত ছিলেন। বিবৃতিতে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট মো. জিল্লুর রহমান মজলুম এই জননেতা সম্পর্কে কেন অপ্রাসঙ্গিকভাবে ভুল তথ্য উপস্থাপন করলেন তা আমাদের বোধগম্য নয়। মওলানা ভাসানী সম্পর্কে তার বক্তব্য প্রত্যাহার করে জাতির সামনে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরবেন বলে তারা আশা প্রকাশ করেন। এদিকে, ভাসানী স্মৃতি সংসদের আহ্বায়ক জিয়াউল হক মিলু ও সদস্য সচিব এড. কাজী মুনিরুল হুদা এক বিবৃতিতে, ভাসানীকে নিয়ে প্রেসিডেন্টের বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানান। অপরদিকে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কৃষকদল কেন্দ্রীয় সংসদ ভাসানীকে নিয়ে প্রেসিডেন্টের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে। মওলানা ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকী পালন জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব ও জাতীয়তাবাদী কৃষকদলের সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান দুদু বলেন, প্রেসিডেন্ট ইতিহাস বিকৃত করে দিনকে রাত করবেন- এটা দেশবাসী আশা করে না। তিনি প্রেসিডেন্ট এর ইতিহাস বিকৃতিতে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, যখন রাষ্ট্রের প্রধান অসত্য বলেন, তখন দুঃখের আর শেষ থাকে না। এটা হওয়া উচিৎ নয়।
সূত্র