somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আইয়ুব বাচ্চু - শ্রদ্ধাঞ্জলী

১৯ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


গতকাল রাতে যখন নিজের ব্যক্তিগত কিছু কাজের পাশাপাশি ব্রাউজারে এখানে সেখানে ঢুঁ মারছি, তখন হঠাৎই নজরে এলো "আইয়ুব বাচ্চু আর নেই", শিরোনামে প্রথম আলো পত্রিকার হেডলাইনটি। বেশ কয়েক সেকেন্ডের জন্য মনে হয় স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। প্রত্রিকার পাতা থেকে চোখ সরাতে পারছিলাম না। বিশ্বাস হচ্ছিলোনা, আইয়ুব বাচ্চু ভাই আর নেই। খুব কাছের কেউ চলে গেল বলে মনে হচ্ছিলো।

আমার মত যারা আশির দশকের প্রথমার্ধে জন্ম নিয়েছেন, তারা মোটামুটি সবাই আইয়ুব বাচ্চু স্যারের গান শুনেই বড় হয়েছেন, স্যারকে ভালোবেসেছেন। আজও মনে পড়ে ছোট বেলায় টিফিনের টাকা জমিয়ে ক্যাসেট ওয়াকম্যান কিনেছিলাম। ইলেকট্রনিক্স এর দোকান থেকে স্পেয়ার ছোট স্পিকার কিনে সেটাকে হেডফোনের স্থানে লাগিয়ে তার গান শুনতাম, সবাইকেও শোনাতাম। এমনই এক সময় বাজারে এলো "কষ্ট" এ্যালাবমটি। প্রায় প্রতিটি গানই হিট ছিলো। "১০০টা স্বপ্ন", "আমিও মানুষ", "বহুদূর যেতে হবে" এমনই অনেকগুলো জনপ্রিয় গান নিয়ে আইয়ুব স্যারের জনপ্রিয়তা তখন তুঙ্গে।

বাবার চাকুরির সুবাদে তখন আমরা থাকতাম মিরপুর, মনে পড়ে পাইকপাড়ার বাসার পাশের মাঠে রাতে ব্যডমিন্টন খেলা হতো, তিনতলা বাড়ির বারান্দায় বড় স্পিকার লাগিয়ে গান বাজানো হতো, আর চলতো খেলা। বিশেষ কোন দিন আসলে তো কথাই ছিলোনা। এর মাঝেই ৯৬/৯৭ এর দিকে আমাদের বাসায় কম্পিউটার এলো, সাথে ছিলো সিডি রম। সেই থেকে শুরু। সিডি কালেকশনে নেমে পড়লাম। অবশ্য তখনো অডিও ক্যাসেট সিডির তুলনায় অনেক বেশী জনপ্রিয়। হাতে গোনা খুব অল্প কিছু অভিজাত দোকানে সিডি পাওয়া যেত। যদিও তখনো ব্যান্ড মিউজিক সিডি কে ততটা এডপ্ট করেনি। তার আগেই এমপিথ্রি তে ছেয়ে গিয়েছিলো বাজার। ধীরে ধীরে অবশ্য পুরোনো জনপ্রিয় এ্যলবামগুলোর রি-মাস্টার্ড সিডি বাজারে এসেছে।

এক যুগ পর যখন ২০১৭ সালে বাংলাদেশে বেড়াতে গিয়েছিলাম, ততদিনে বদলে গেছে অনেক কিছু। সিডিগুলো হারিয়ে যেতে বসেছে। স্টেডিয়াম মাকের্টে অনেক ঘুরে মাইলস্, জেমস্ এর কিছু অডিও সিডি কিনেছিলাম। আসলে সিডির যুগ এখন আর নেই, তবুও আমি এখনো বাসায় আমার স্টেরিও প্লেয়ারে সিডিতেই গান শুনি। যদিও আমার স্টেরিওতে আইপড, এমপিথ্রি, ফ্ল্যাক, হাই-রেজ মিউজিক সাপোর্ট করে তবুও সিডিতে শুনতেই ভালো লাগে। আমেরিকাতে এখন সিডি/ডিভিডির বাজার নেই বললেই চলে, তবুও মাত্র এক মাসের কম সময়ের আগেও আমি আবারও দু'টো ডিভিডি (এমডিস্ক) রিডার রাইটার কিনেছি শুধুমাত্র আমার অডিও সিডিগুলো যাতে কম্পিউটারেও শুনতে পারি পাশাপাশি নিজের জরুরী ফাইলের ব্যাকআপ রাখতে পারি। ১ টেরা বাইটের এসএসডি ড্রাইভে বেশ কিছু পুরোনো গান কালেকশন করেছি। মূলত মিউজিক সংগ্রহ করার উদ্দেশ্যেই এটা কেনা হয়েছে। থাক, এ গল্প না হয় অন্য কোনদিন শোনাবে।

গান পাগল আমার এক ছোট বেলার বন্ধু মাঝে ব্যান্ডের সাথে জড়িয়ে পড়েছিলো, টিভি ছাড়াও আমেরিকাতে এসেছিলো শো করার জন্য। ওর ফেইসবুকে বাচ্চু ভাইয়ের সাথে ওর ছবি দেখে ভীষণ ভালো লেগেছিলো। মনে পড়ে ক'বছর আগেও তিনি নিউ ইয়র্কে এসেছিলেন। খুব ইচ্ছে থাকা স্বত্বেও তার কনসার্টে যেতে পারিনি। একটা আক্ষেপ থেকেই গেল।

বলছিলাম, আইয়ুব বাচ্চু স্যারের কথা, তিনি হয়তো আমার রক্তের সম্পর্কের কেউ নন, কিন্তু ছোটবেলা থেকে যে মানুষটার গান শুনে বড় হয়েছি তার এই অকস্মাৎ চলে যাওয়া মেনে নিতেও কেন জানি বেশ কষ্ট হচ্ছে। আমি তার বিশেষ কেউ নই, কনসার্টে তার লাখো ভক্তের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা আমিও একজন। একটা ব্যাপার আমি বরাবরই আমার মা'কে বলতাম, বাচ্চু ভাইকে দেখতে অনেকটাই আমার বড় মামার মত দেখায়। মা'ও কখনো ব্যাপারটা অস্বীকার করেন নি। পরিবারের কারও দ্বিমত ছিলোনা। হয়তো সে কারনেই তাকে আরো বেশী আপন মনে হেতো।

মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেখানে থাকুন না কেন, যেন ভালো থাকেন। মানুষ আইয়ুব বাচ্চু চলে গেলেও তার গান বেঁচে থাকবে আজীবন। বাংলা ব্যান্ড মিউজিক তাকে চিরকাল শ্রদ্ধাভরে স্মরন করুক আর আগামী প্রজন্ম তাকে জানুক, চিনুক, শিখুক একজন লিজেন্ড হিসেবে। সম্মান জানাক এক মিনিট নিরবতায় এটাই চাওয়া।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১২:২৪
৮টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯

মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×