somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশ বিমানের ঢাকা-নিউ ইয়র্ক ফ্লাইট ও কিছু কথা

১৮ ই জুলাই, ২০২১ সকাল ৯:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশের শেষ ফ্লাইটটি আমেরিকার মাটিতে অবতরণ করেছিলো ২০০৬ সালে। ১৯৯৩ সাল থেকে সে সময় অবধি ঢাকা-ব্রাসেলস্-নিউ ইয়র্ক রুটে বিমান চলাচল করতে পারতো। কিন্তু রুটটি বিমান বাংলাদেশের জন্য লাভজনক ছিলোনা। তারপরেও বিমান বহুদিন এই পথে লোকসান দিয়ে হলেও এই ফ্লাইটটি পরিচালনা করছিলো তার অন্যতম কারণ হলো একবার হাতছাড়া হয়ে গেলে নিউ ইয়র্কের জে.এফ.কে বিমান বন্দরে নতুন স্লট পাওয়া কঠিন হবে। তার ফলাফলও আমরা দেখতে পাচ্ছি। ২০২১ সালে এসেও বাংলাদেশ বিমান এখনো পর্যন্ত এই পথে আর ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারে নি।

বাংলাদেশের সিভিল এভিয়েশন অথরিটি ২০০৬ সালে ক্রমাগত লোকসানের মুখে পড়ার কারণে, ঢাকা-ব্রাসেলস্-নিউ ইয়র্ক রুটে কিছুটা পরিবর্তন এনে তা ঢাকা-ম্যানচেস্টার-নিউ ইয়র্ক করার প্রয়াস চালায়। উদ্দেশ্য ছিলো এতে করে ইংল্যান্ডে বসবাসরত বহু বাংলাদেশী এই ফ্লাইটটি ব্যবহা করতে পারতেন বাংলাদেশে আসা-যাওয়ার জন্য। সমস্যা ছিলো অন্য জায়গায়, ইতোপূর্বে আমেরিকার ফেডারেল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ(এফ.এ.এ.) তাদের আন্তর্জাতিক বিমান চালনা সুরক্ষা মূল্যায়ন প্রোগ্রামে কোয়ালিফাই করতে না পারার কারনে, বাংলাদেশের সিভিল এভিয়েশন অথরিটিকে দ্বিতীয় ক্যাটেগরীতে নিয়ে আসে। মূলত এই কারণেই বাংলাদেশ বিমান চাইলেও তাদের ঢাকা-ব্রাসেলস্-নিউ ইয়র্কের ফ্লাইটে কোন পরিবর্তন আনার যোগ্যতা হারিয়েছিলো। কিন্তু বাংলাদেশ সেটা অমান্য করেই ঢাকা-ম্যানচেস্টার-নিউ ইয়র্ক ফ্লাইট চালু করে আর প্রথম ফ্লাইটেই জরিমানা গুনতে হয়। পরবর্তীতে বাংলাদেশ আবার আগের মতো ঢাকা-ব্রাসেলস্-নিউ ইয়র্ক রুট পরিচালনা করতে থাকে। (সূত্রঃ উইকিপিডিয়া)।

এছাড়াও ছিলো বিমান সমস্যা। মানে, সে সময়ে বোয়িং এর যে ডিসি-১০ বিমান এই পথে পরিচালনা করা হতো, তা নিয়েও এফ.এ.এ-র আপত্তি ছিলো কারণ বিমানগুলো বেশ পুরোনো ছিলো। এরপর দেখতে দেখতে ১৫ বছর কেটে গেলেও বাংলাদেশ বিমান আর আমেরিকার মাটিতে অবরতণ করতে পারে নি।

বিমানের আধুনিকায়নঃ বার বার উদ্যোগ নেয়া হলেও বাংলাদেশ বিমান তার অব্যবস্থাপনার কারনে প্রকৃত অর্থে তেমন একটা লাভের মুখ দেখতে পারে নি। কিছুটা খুশির বিষয় হলো, ধীরে ধীরে অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। তবে সবচেয়ে আশার বিষয় হলো, বাংলাদেশ বিমান পুরোনো এয়ারক্রাফট ছেড়ে ধীরে ধীরে তার বহরে বেশ কিছু আধুনিক এয়ারক্রাফট যোগ করতে পেরেছে বিগত কয়েক বছরে। অনেক জল্পনা-কল্পনা শেষে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ বিমানে বোয়িং এর অত্যাধুনিক ড্রিমলাইনার সিরিজের চারটি ৭৮৭-৮ এবং পরে দুটি ৭৮৭-৯ মডেলের এয়ারক্রাফট ক্রয় করেছে যা বাংলাদেশের মতো দেশের এভিয়েশনের জন্য বেশ বড় একটা পদক্ষেপ। দুঃখজনক যে ৭৮৭-৯ মডেলের বিমানগুলো দূরপাল্লার হওয়ার পরেও তার স্বদব্যবহার করতে পারছে না যদিও বর্তমানে বিমানগুলো ঢাকা-ম্যনচেস্টার রুটে চলাচল করছে তবুও। ধারনা করা হচ্ছে ঢাকা-নিউ ইয়র্ক রুটে বিমান চলাচল শুরু হলে এই বিমানগুলো দিয়েই ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে এবং এই বিমানগুলোর যথার্থ ব্যবহার নিশ্চিত করা যাবে।

অর্থনৈতিক কিছু বিষয়ঃ বিগত ১৫ বছরে সবচেয়ে বড় যে পরিবর্তন এসেছে তা হলো অর্থনৈতিক। ব্যাপারটা একটু খুলে বলছি। ২০০৬ সালে যখন বিমানের আমেরিকায় আসা বন্ধ হয়ে গেল, তখন পুরো আমেরিকাতে বাংলাদেশীদের সংখ্যা ছিলো এক লাখের কিছু বেশী। সমস্যা হলো, সকল বাংলাদেশীতো আর আমেরিকার নিউ ইয়র্কে থাকেন না। সুতরাং সে সময়ে অর্থনৈতিক দিক থেকে বিমানের ফ্লাইটগুলোকে ততটা লাভজনকে রূপান্তর করা সম্ভব হয় নি। ২০২১ সালে এসে অবস্থার বেশ পরিবর্তন হয়েছে। বর্তমানে আমেরিকায় বসবাসরত বাংলাদেশীর সংখ্যা দুই লাখেরও অনেক বেশী। ২০১৯ সালের হিসেব অনুযায়ী নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশীর সংখ্যা প্রায় ৯৩ হাজারেরও বেশী (পিউ রিসার্চ সেন্টার)। সেদিক থেকে হিসেব করলে বাংলাদেশ বিমান নিউ ইয়র্কে ফ্লাইট পরিচালনা করলে তা লোকসানী হওয়ার কোন কারণ দেখছি না। যদিও সেটা সপ্তাহে মোট কতগুলো নিউ-ইয়র্ক-ঢাকা ফ্লাইট পরিচালনা করা সম্ভব বা কতগুলো ফ্লাইটের অনুমতি পাওয়া যাবে ইত্যাদি বিষয়গুলোর উপর নির্ভর করছে। এ ব্যাপারে হয়তো বাংলাদেশের সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ আরো ভালো বলতে পারবেন।

তবে সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হলো, বাংলাদেশের সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কতটুকু সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিতে পারবেন তা নিয়ে কিছু প্রশ্ন থেকেই যায়। অব্যবস্থাপনার অসংখ্য নজির বিমানের আগেও ছিলো এখনো রয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের করণীয় সবচেয়ে বড় দায়িত্ব ছিলো বিমানে নতুন এয়ারক্রাফট সংযোজন করা এবং সরকার সেটা করেছে-ও। হোক কিছুটা দেরীতে কিন্তু সরকার তার কাজ করেছে। নতুন টার্মিনাল প্রয়োজন ছিলো, সেটার কাজও চলছে। আমার ব্যক্তিগত ধারনা বিমান-কে এখন তার দায়িত্ব পালন করতে হবে। তবেই কেবল বিমানকে আধুনিক এবং লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে রূপান্তর করা সম্ভব হবে। মনে রাখতে হবে, বাঙালী কায়দায় ফ্লাইট পরিচালনা করতে গেলে, আধুনিক এয়ারক্রাফট দিয়েও খুব বেশী দূর যাওয়া সম্ভব নয়।

একদিন নিউ ইয়র্ক থেকে ঢাকায় বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটে দেশের মাটিতে পা রাখার স্বপ্ন নিয়ে বিভোর হয়ে আছি। সেই স্বপ্ন সত্যি হোক সেই প্রত্যাশাই করছি। ধন্যবাদ।

ছবি কপিরাইটঃ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস্
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুলাই, ২০২১ সকাল ৯:০৮
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×