দুটো সত্যি ঘটনা দিয়ে লিখাটা শুরু করতে চাচ্ছি। আশা করছি ধৈর্য্য নিয়ে পড়লে কিছুটা হলেও বুঝতে পারবেন। তবে পুরো বিষয়টিই আমার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ থেকে তুলে ধরা। আপনার বাড়ির আশেপাশের প্রযুক্তি পণ্যের বা কম্পিউটার বিক্রেতা দোকানগুলোর সাথে কথা বললেও এর সত্যতা হয়তো বুঝতে পারবেন।
এক
দীর্ঘ প্রায় চার বছর ইন্টেলের আই৭-৮৭০০ প্রসেসরটি ব্যবহারের পর আমার কিছুদিন ধরেই মনে হচ্ছিলো এটি আসলে আমার ব্যক্তিগত প্রয়োজনের তুলনায় একটু বেশীই শক্তিশালী প্রসেসর যা আমার পুরো কম্পিউটারটিকে প্রায়ই গরম রাখে, মানে অনেক তাপ উৎপন্ন করে। যদিও মোটামুটি ভালো মানের একটি কুলিং ফ্যান ব্যবহার করছি তবুও সেটাকে যথেষ্ট মনে হয় নি। আমার দৈনন্দিন কাজে ততটা শক্তিশালী প্রসেসরের প্রয়োজন হয় না তবে যেহেতু মাঝে মাঝে ইউটিউবের জন্য ভিডিও এডিট করার প্রয়োজন পড়ে তাই সেটা অনেকটাই যুক্তিযুক্ত। মূলত সে উদ্দেশ্য থেকেই ৩২ গি.বা. এর মেমরি ক্রয় করা হয়েছিলো।
সম্প্রতি আমি প্রসেসরের নিরাপত্তা ইস্যু নিয়ে কিছুটা উদ্বিগ্ন, যে কারনে এই প্রসেসরটি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকার উদ্দেশ্যে ইন্টেলের ৯ম প্রজন্মের একটি আই৫-৯৫০০ প্রসেসর কেনার সিদ্ধান্ত নেই যেটাতে এই নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই পাশাপাশি তুলনামূলকভাবে প্রসেসরটি একটু ঠান্ডা মেজাজের। সমস্যার শুরু এখানেই। এই প্রসেসরটির ইন্টেল সাজেস্টেড দাম ২০০ ডলারের বেশী হওয়ার কথা নয়। এ্যামাজনের ঢুঁ দিয়ে দেখি সেটি ৩৫৬ ডলারে বিক্রি হচ্ছে। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার যোগাড় হলো। ২০/৩০ ডলার কম বেশী হতে পারে তাই বলে ১৫০ ডলার বেশী কিভাবে সম্ভব। কিছু বিক্রেতা ই-বেতে ব্যবহৃত এই প্রসেসরটি বিক্রি করছেন প্রায় ৩০০ ডলারে। মেজাজ আমার বিরক্তির শেষ পর্যায়ে। অনেক ভেবে "ওয়ালমার্ট" নামক একটি বড় কোম্পানীর সাইটে গিয়ে ২১৬ ডলারে অর্ডার করা হলো যা এক সপ্তাহের মধ্যে পাওয়া কথা। পাই নি। কাস্টমার সার্ভিস বললো আবার অর্ডার করুন আর পুরোনো অর্ডার বাতিল করে দিন, সেটাও করা হলো। দু' সপ্তাহ পরেও হদিস নেই। তারা জানালো স্টক নেই, তারা নতুন স্টকের জন্য অপেক্ষা করছে। ততক্ষণে আমার ধৈর্য্যের বাধ ভাঙার উপক্রম। অনলাইনে দেখলাম অস্ট্রেলিয়ায় একটি কোম্পানী প্রসেসরটি ৩২০ ডলারে বিক্রি করছে, ব্র্যান্ড নিউ। অর্ডারের আগে ফোন দিলাম, তারা ফোনে জানালো আমি অর্ডার করার এক ঘন্টা আগে অন্য একটি কোম্পানী সবগুলো প্রসেসর কিনে নিয়েছে। ভীষণ হতাশ হতে হলো। অনেক ঘাটাঘাটি শেষে, শেষ পর্যন্ত ই-বে থেকে ১৭০ ডলারে এই পসেসরটি নতুন কিন্তু ট্রে প্রসেসরের লট থেকে কিনতে হলো। প্রসেসর হাতে পেয়ে অনেকটাই আনন্দে আত্মহারা হবার জোগাড়। বর্তমানে সেই পিসি থেকেই লিখছি।
এই হলো প্রসেসর দুনিয়ার বর্তমান অবস্থা। কোভিড-১৯ পৃথিবীর অনেক কিছু বদলে দিয়ে গেছে, আরো অনেক কিছু বদলে যাবে আগামীতে। আমেরিকার অটো ইন্ডাস্ট্রিতেও একই হৈচৈ চলছে। চিপের অভাবে গাড়ি বিক্রি বন্ধ হবার উপক্রম। পুরোনো গাড়ি অনেক দামে বিক্রি হচ্ছে। সব জায়গায় একটা হাহাকার অবস্থা চলছে। বাইডেন প্রশাসন বিভিন্ন উদ্যোগের কথা বললেও তা বাস্তবায়িত করতে অনেক সময় লেগে যাবে। মানে দাঁড়াচ্ছে, মোটামুটিভাবে ২০২৩ এর আগে এই অবস্থার সহসাই কোন পরিবর্তন আসছে না। চীন আমেরিকার রেষারেষিতে বিভিন্ন ভাবে অনেকেই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে আরো হবে যদিও এটা কাম্য নয়।
দুই
গতকাল রাতে ই-বেতে আমার ব্যবহৃত একটি টিপিএম মডিউল (এ সংক্রান্ত আমার পূর্ববর্তী একটি লেখা) বিক্রির জন্য তুলে দিয়েছিলাম। আজ সকালে সেটা বিক্রি হয়ে গেছে। মডিউলটি ক্রয় করেছিলাম ১৬.৯৯ ডলার দিয়ে, আর আজ তা কয়েক মাস ব্যবহারের পর ৭৯.৯৯ ডলারে বিক্রি করে ফেলেছি। কাল সকালেই সেটা ক্রেতার কাছে পাঠিয়ে দেবো। ছোট্ট একটা চিপসেট, এটি ছাড়া অনেকেই হয়তো উইন্ডোজ ১১ ব্যবহার করতে পারবেন না, তাই দেদারসে বিক্রি হচ্ছে। নতুন নয়, পুরোনো ব্যবহৃত এই চিপসেট ১০০ ডলারেও বিক্রি হচ্ছে এই মুহূর্তে তবে সেটা আমার কাছে মাত্রাতিরিক্ত বাড়াবাড়ি মনে হয়েছে। অনেকেই হয়তো জানেনই না যে, এটি ছাড়াও অনেক ইন্টেল বা এএমডি প্রসেসরের নিজস্ব টিপিএম প্রযুক্তি দিয়েও উইন্ডোজ ১১ ব্যবহার সম্ভব হবে। তাই আমি আমারটা বিক্রি করে দিয়েছি।
যেটা বোঝানোর জন্য এই লিখা সে হলো। বৈশ্বিক মহামারী এবং চীন আমেরিকার দলাদলিতে অনেক কিছুই হয়তো অস্বাভাবিকতায় রূপ নিতে পারে। যদিও ইতোমধ্যেই সেটা অনেকটাই নিয়ে নিয়েছে। চিপ নির্ভর অনেক প্রযুক্তি পণ্যের দাম বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে যা হয়তো সহসাই যাচ্ছে না। এর মূল ভুক্তোভোগী হবে সাধারণ জনগণ এবং বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি। তাই আপাতত প্রযুক্তি পণ্য কেনাকাটা থেকে বিরত থাকাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। মোটামুটিভাবে আগামী দু'এক বছরের জন্য এ ব্যাপারে একটু রক্ষণশীলতা বজায় রাখলে হয়তো অনেকটা অযাচিত খরচের হাত থেকে বাঁচা যেতে পারে। ধন্যবাদ।
ছবি কপিরাইটঃ ওয়েফার ওয়ার্ল্ড
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে আগস্ট, ২০২১ ভোর ৫:১৮