বাংলাদেশের মাটিতে আমার জন্ম, বাবা মুক্তিযোদ্ধা। স্বভাবতই এই দেশটার জন্য কম-বেশী আমার আবেগ কাজ করে। দেশের আর দেশের মানুষের ভালো চাই, তাদের সুখ-সমৃদ্ধি কামনা করি। হ্যাঁ আইনগতভাবে আমি বাংলাদেশের নাগরিক নই (দ্বৈত নাগরিকত্বের জন্য এখনো আবেদন করিনি, তবে করার ইচ্ছে আছে), বাংলাদেশে যেতে আমার ভিসা লাগে, তদুপরি নাড়ির একটা যোগসূত্র সারাজীবনই থেকে যাবে এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার তথা প্রশাসনের অদূরদর্শীতা, পরিকল্পনার অভাব আমার মতো ক্ষুদ্র মস্তিস্কের মানুষকেও বিচলিত করে। ছোট্ট একটা উদাহরণ দিয়ে শুরু করছি।
বিগত প্রায় এক দশক ধরে আমি বাংলাদেশের সোনালী ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতিমাসে হাজার হাজার টাকা দেশে পাঠাচ্ছি। বিভিন্ন উৎসবের আগে কখনো কখনো লাখের মতো পাঠাতে হয়। যে টাকাগুলোকে আপনারা রেমিট্যান্স বলে থাকেন। ঠিক কত টাকা এ পর্যন্ত পাঠিয়েছি তার সংখ্যা দশমিকের পরের দু'ঘরের সংখ্যাসহ জানা আছে আমার। সংখ্যাটা নিতান্তই ছোট নয়। বাংলাদেশে জন্ম নেয়া বেশীরভাগ নাগরিক একক ভাবে খুব সম্ভবত তার জীবদ্দশায় এত টাকা সরকারকে ট্যাক্স হিসেবে দিবে না বা দিতেও পারবেন না। ভুলে গেলে চলবে না যে, বিগত দেড় দশকেরও বেশী সময় আমি দেশে বসবাস করছি না, তাই সরকারি কোন সুবিধাও আমি ভোগ করছি না। এত কথা বলার উদ্দেশ্য হলো যারা দেশে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন তাদের সুবিধা-অসুবিধার ব্যাপারের সরকার তথা প্রশাসনের আরো সূক্ষ্ম দৃষ্টি দেয়া বা এ ব্যাপারে উদ্দ্যোগ নেয়া।
অসুবিধা
বর্তমান দুনিয়ায় যখন এ্যাপের জয়জয়কার চলছে, বাংলাদেশের মানুষ যখন নগদ, বিকাশ ব্যবহার করতে পারছে তখন আমরা প্রবাসে যারা আছি তাদের দেশে টাকা পাঠাতে হচ্ছে উপরে উল্লেখিত ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠানের মাধমে। এটা একটা বিরাট সমস্যা বলতে পারেন বেশ কিছু কারনে। আমি তৃতীয় কোন এ্যাপ কি ব্যবহার করতে পারি না? অবশ্যই পারি, তাতে কমিশন পেয়ে লাভবান হচ্ছে অন্য কোন কোম্পানী। আমার লক্ষ্য বাংলাদেশকে সেই মুনাফাটা তুলে দেয়া। তাই পারা সত্ত্বেও আমি ঐভাবে টাকা পাঠাই না।
আজও আমি প্রায় অর্ধলক্ষ টাকা বাংলাদেশে পাঠিয়েছি, সরকারী ঐ প্রতিষ্ঠানের রেট ৯৮টাকা আর তার নিচের তলায় অন্য ব্যক্তি মালাকানাধীন কোম্পানী রেট ঝুলিয়ে রেখেছে ৯৯.২৫ পয়সা। হুন্ডিতে পাঠালে ১০০ এর উপরের রেটে (বর্তমানে) পাঠানো সম্ভব। আমার লোকসান জেনেও সরকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পাঠিয়ে কিছুটা ঠকে আসলাম। আমি জানি সবাই আমার মতো বোকা নয়। কিন্তু ঐ যে দেশ!
আরেকটু ব্যাখ্যা করে বলি, সরকারী ঐ প্রতিষ্ঠানটির ওয়েব সাইট আছে কিন্তু ঠিক মতো কাজ করে না। দশবার করে কল দিতে হয়, এটা হচ্ছে না ওটা কাজ করছে না। ৯-৫ টা কাজ করে আবার তাদের ব্রাঞ্চে যাওয়া আমার জন্য কঠিন। ঘরে বসে তাদের ওয়েব সাইট থেকে টাকা পাঠাতে পারলে আমার না শুধু আমেরিকার বসবাসকারী সকল বাংলাদেশীদের উপকার হবে। একটা এ্যাপ বা একটা কার্যকরী সাইট বানানো কি বাংলাদেশের সোনালী ব্যাংকের পক্ষেও সম্ভব নয়?! সম্ভব, কিন্তু তারা ইচ্ছে করেই এটা করে না। সরকারী ব্যাংকের আমেরিকার এই প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ব্রাঞ্চে কম করে হলেও অর্ধশত বা তার বেশী বাংলাদেশী নাগরিক কাজ করে। বাংলাদেশ সরকার এদের বসিয়ে বসিয়ে বেতন দিচ্ছে। এদের আচরণ খারাপ, কোন প্রফেশনালিজম নেই, কাস্টমার জানালায় দাঁড় করিয়ে ফোনে ব্যক্তিগত আলাপ করছে। আমার প্রশ্ন হলো "কেন?"
হোয়াই উই নিড দিস স্টুপিডস টু ওয়েস্ট পিপলস্ মানি? হোয়াই উই নিড দিস মেডিওকারস রিপ্রেজেন্টিং গভরমেন্ট ওউনড ব্যাংক ইন এ্যামেরিকা?
হ্যাঁ, আমি জেনে শুনেই পাঠাই। বলতে পারেন বিবেকের কারনে পাঠাতে বাধ্য হই। শত হলেও জন্মভূমিতো, মুখ ফিরিয়ে নেয়া আমার জন্য কঠিন। বাংলাদেশে বসে সরকার রেমিট্যান্স কমে আসছে, খরচের লাগাম ধরার চেষ্টা করছে বলে চিৎকার করছে। আমি একটা খরচের হিসেব কমানোর পথ বাতলে দিলাম। দয়া করে এসব অর্কমন্য লোকগুলোকে নিয়ে যান। এদের বসিয়ে রেখে বেতন দেয়ার কোন প্রয়োজন নেই।
সমাধান
দয়া করে ফাংশনাল এ্যাপ বা ওয়েব সাইট বানান যা দিয়ে আমেরিকায় বাংলাদেশী লোকজন তাদের মোবাইল ডিভাইস থেকেই টাকা পাঠাতে পারে। দেশের লোক দিয়ে যদি না বানাতে পারেন তবে প্রবাসে অনেক মেধাবী বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত লোক আছে যারা এসব কাজ আপনাদের ছ'মাসের কম সময়ে করে দিতে পারবে, তাদের সহযোগিতা নিন।
মতামত
এর কোনটাই যদি সম্ভব না হয়, তবে দয়া করে এসব অকর্মণ্য, ইংরেজীতে কথা বলতে না পারা, লেইজি ডাম্বগুলোকে নিয়ে যান। সোজা কথায়, "ই্ফ ইউ ক্যান্ট আর্ন ইট, ইউ ডোন্ট ডিজার্ভ ইট। দিস ইজ এ্যাজ সিম্পল এ্যাজ ই্ট ক্যান গেট। সো, স্টপ ওয়াইনিং।" প্রবাসে থাকা বাংলাদেশীরা তাদের কষ্টার্জিত টাকা হুণ্ডিতে কেন পাঠায় তা বোঝার জন্য নিজেদের ব্যবস্থাপনার দিকে নজর দিন, সার্ভিস ভালো করুন এবং সর্বপোরি তাদের প্রাপ্য সম্মানটুকু দিন।
বাংলাদেশের মাননীয় রাষ্ট্রপতি মহোদয় আজই বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্ণরকে কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন (সূত্র), আপনার কি মনে হয় কোন কাজ হবে?
ছবি কপিরাইট: ব্যাঙ্করেট
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুলাই, ২০২২ সকাল ৭:০২