মোটামুটিভাবে জ্ঞান হবার পর থেকেই সোভিয়েত ইউনিয়নকে মানচিত্রে দেখে আমি অবাক হতাম। বাংলাদেশকে দেখে যখন সোভিয়েত ইউনিয়নকে দেখতাম, ভাবতাম এত বড় দেশ হয় কি করে? এটাকেতো মহাদেশ বলা উচিত। আমার এখনোও তাই মনে হয়। অর্থনৈতিক নয়, কেবল দেশটির আকার দেখেই এমনটা মনে হয়। উৎসাহটা সেখান থেকেই মূলত।
অনেক গুরুত্বপূর্ণ রাষ্টপ্রধানের ব্যাপারে জানলেও, যেই রাষ্ট্রপ্রধানের ব্যাপারে আমি সবচেয়ে বেশী মনোযোগ দিয়ে স্টাডি করার চেষ্টা করেছি বা করছি তিনি হলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। রাষ্ট্র হিসেবে রাশিয়া নিয়ে আমি খুব বেশী স্টাডি করিনি আর সেটা নিয়ে খুব বেশী আগ্রহও নেই, তবে তাদের সামরিক সক্ষমতা নিয়ে মনে হয় বেশ সময় ব্যয় করেছি। পুতিনকে আমি বর্তমান বিশ্বের একজন অন্যতম বুদ্ধিমান এবং বিচক্ষণ ব্যক্তি বলে মনে করি। তেমনটা না হলে খুব সম্ভবত এতগুলো বছর রাশিয়ায় ক্ষমতার শীর্ষে থাকা সম্ভব হতো না। তিনি যে একজন দেশ প্রেমিক ব্যক্তি তা তার সোভিয়েত সময়ের বেশ কিছু ঘটনা থেকে আমি জানতে পেরেছি, সব হয়তো খুলে বলা সম্ভব নয়। তবে এগুলো নিয়ে অনেক সময় ব্যয় করার প্রয়োজন পড়বে মন্তব্য করার জন্য। না জেনে বা বুঝে মন্তব্য করা বেশ সহজ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই আর্ন্তজাতিক অঙ্গনে স্টালিন, ক্রুশ্চেভ, ব্রেজনেভ বেশ দাপট দেখিয়ে বেড়িয়েছেন। তাদের পরে খুব সম্ভবত পুতিন-ই একমাত্র ব্যক্তি যিনি সোভিয়েত উত্তর রাশিয়াকে অনন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়েছেন অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে। গর্বাচেভ বা ইয়েলেৎসিন সেই মাপের রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন বলে আমি মনে করি না। আর্ন্তজাতিক অঙ্গনেও তাদের ততটা প্রভাব ছিলো বলে আমার মনে হয় নি। তবে পুতিন সামগ্রিকভাবে ভিন্ন ঘরনার ব্যক্তি। বিশ্ব রাজনীতিতে তাকে মোটেও হালকাভাবে নেয়া হয় না। খুব সম্ভবত তার কেজিবি বা সামরিক ব্যাকগ্রাউন্ড তার চিন্তা-ধারা বা ভাবনাকে অনেকটাই প্রভাববিত করে। তবে তিনি বেশ যৌক্তিক কথা বলেন, তার যে কোন দীর্ঘ ইন্টারভিউ দেখলে কিছু কিছু ব্যাপার মোটামুটিভাবে সবাই বুঝতে পারবেন। তিনি যথেষ্ট রিল্যাক্সড মুডে আর বিচক্ষণ ব্যক্তির মতো কথা বলেন। তবে প্রথাগত আইনেকও তিনি বৃদ্ধঙ্গুলি প্রদর্শন করতে পিছপা হন না।
একটা উদাহরণ দিচ্ছি, ইউক্রেন বিষয়ে একজন উপস্থাপক তাকে আর্ন্তজাতিক আদালতের বিষয় উল্লেখ করলে তিনি বলেন, "আর্ন্তাজতিক আদালতকে আমরা রেকগনাইজ করি না"। সে বিষয়ে তিনি সম্যক ব্যাখ্যা না দিলেও খুব সম্ভবত তিনি বোঝাতে চেয়েছেন যে ঐ আদালতের আইন তথা বিচারকগণ মূলত পশ্চিমাপন্থী, যে কারণেই হয়তো তাদের এ ব্যাপারে অনীহা। আমার ধারনা ভুলও হতে পারে তবে তাদের ভাবনা সেটা হলেও আমি অবাক হবো না।
সোভিয়েত ভেঙ্গে যাওয়ার পর রাশিয়াকে পুনরায় সামরিক দিক দিয়ে শক্তিশালী করার ব্যাপারে তিনি বেশ জোর দিয়েছেন এবং তার বেশ কিছু সুফলও রাশিয়া এখন পাচ্ছে। বর্তমান রাশিয়ার তথা পুতিনের আগ্রাসী সামরিক নীতির পেছনে ইরাক এবং আফগানিস্তানে আমেরিকার নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটের কর্মকান্ডের বেশ বড় ভূমিকা আছে বলে আমার ধারনা। এ ব্যাপারে তিনি বেশ ক'বার খোলামেলা সমালোচনা তিনি করেছেন। বারবার মনে করিয়ে দিয়েছেন বিশ্ব কোন একক মোড়লের নেতৃত্বে চলতে পারে না।
আমেরিকার সামগ্রিক অর্থনৈতিক সাফল্যকে তিনি সম্মান করেন, সেটা তিনি বলতে দ্বিধা করেন নি তবে রাষ্ট্রের প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে তিনি ততটা এ্যাপ্রিশিয়েট কররেন না। ক্লিনটন, বুশ, ট্রাম্প সবার সাথেই তিনি সুসম্পর্ক বজায় রাখলেও ওবামা বা বাইডেনের ব্যাপারে তিনি ততটা পজিটিভ নন। এর পেছনে তার ব্যক্তিগত ভাবনা তথা রাশিয়ার ক্রিশ্চিয়ান রক্ষণশীল সমাজ ব্যবস্থার ধারনার একটা ব্যাপক প্রভাব রয়েছে বলে আমার মনে হয়। ব্যক্তিগতভাবে আমি তাকে রক্ষণশীল বলে মনে করি। ধার্মিক কি না সেটা পরিষ্কার না হলেও ধর্মের প্রভাব বিদ্যমান এবং সেটা লক্ষ্যণীয়।
ন্যাটোকে তিনি থ্রেটা মনে করেন বলে আমার মনে হয় নি তবে তাদের আগ্রাসী নীতির সমালোচক বেশ যুক্তি সঙ্গত কারণেই। জাতীয়তাবাদ ধারণা তার ব্যাক্তি সত্ত্বাকে বেশ প্রভাবিত করে বলে আমি মনে করি। আমারা ধারনা পশ্চিমারা বরাবরই পুতিনকে তাদের দৃষ্টি দিয়ে দেখতে চায় বা দেখলেও তাকে রাশিয়ান দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখতে অনাগ্রহী। এটা একটা ক্ল্যাসিক্যাল সমস্যা।
দ্রষ্টব্যঃ পুরো লিখাটিই আমার ব্যক্তিগত ধারনা এবং দীর্ঘদিনের অবজারভেশনের প্রেক্ষাপটে লিখা।