somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশের ডাটাবেইজ থেকে লাখ লাখ মানুষের তথ্য ফাঁস আপনারা কি ভাবছেন?

০৯ ই জুলাই, ২০২৩ দুপুর ১:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত বছরে ফেব্রুুয়ারি মাসের বইমেলাতে আমি ঘুরতে গিয়েছিলাম। উদ্দেশ্য ছিলো বইমেলা ঘুরে দেখা, পছন্দ হলে নিজের জন্য কিছু বই কিনে নিয়ে আসা আর ভিডিও করা। বই কেনা হয় নি, কারণ গল্প, উপন্যাস পড়ি কম আর বাপ-দাদর গৌরব গাঁথা চাটুকারি বই পড়ার ইচ্ছেও আমার নেই। এখনতো রাজনৈতিক দলও বই প্রকাশ করা শুরু করেছে, লও ঠেলা। যাইহোক, মূলত প্রযুক্তি সর্ম্পকিত বই খুঁজছিলাম কিছুটা হতাশ হতে হলো।

ঘুরতে ঘুরতে চোখে পড়লো একটি স্টল, গাছের গোড়ায় অনেকটাই গোলাকৃতির স্টল। স্টলটি আমার ভিডিওর ৭ মিনিট ৪৫ সেকেন্ডে দেখা যাবে, নাম "এটুআই ডিজিটাল বাংলাদেশ তথ্যকেন্দ্র"। মূলত উনারাই বাংলাদেশ সরকার ছাড়াও আরো বেশ কিছু ওয়েব সাইটের কাজ করেছে। বুঝতেই পারছেন বিরাট প্রজেক্ট। প্রবাসে বসে বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারি ওয়েব সাইটে গিয়ে নানা ভোগান্তির কথা মনে পড়লো। কাজের মান এত খারাপ অথচ দেখার কেউ নেই। জেনে রাখা ভালো যে আমি পেশাগত কারনেই এই ইন্ডাস্ট্রিতে আছি, টুকটাক কাজ জানি, পড়াশোনাও করেছি এই বিষয়েই। ভাবলাম কথা বলে আসি।

স্টলের সামনে গিয়ে কথা জুঁড়ে দিলাম একজন তরুণ যুবকের সাথে। তাদের কাজ সম্পর্কে নানা প্রশ্ন করা হলেও তিনি সদুত্তর দিতে পারছিলেন না, আরেকজনকে ডেকে নিয়ে আসলেন উত্তর দেয়ার জন্য। কাজ হলো না, বললেন আমার কোন সাজেশান বা অভিযোগ থাকলে যেন ফরম পূরণ করি। সেটাও করা হলো। তারা ধন্যবাদ জানিয়ে বললেন এ ব্যাপারে আমার প্রশ্নগুলোর জবাব নিয়ে আমার সাথে যোগাযোগ করবেন। এরপর তারা কোনদিনও আর যোগাযোগ করার প্রয়োজন বোধ করেন নি, বাঙালীর গল্প তাই আগেই জানা ছিলো।

আজ সকালে পত্রিকায় খবর এসেছে লাখ লাখ মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হয়ে গেছে (সূত্র)। না, সরকার বা তাদের কোন প্রতিষ্ঠান ব্যাপারটি প্রথমে উল্লেখ করেনি খবরটি প্রথম এসেেছে বিদেশী প্রযুক্তি সংক্রান্ত একটি সাইটে (সূত্র)। দুঃখের বিষয় এটা নিয়ে ব্লগেও কোন লেখা চোখে পড়েনি। কেউ কোন উচ্যবাচ্য করছেও না। বুঝতে পারছি না বাংলাদেশের মানুষ কি এর ভয়াবহতা নিয়ে বুঝতে অপারগ না প্রতিক্রিয়াহীন?!

অবশ্য আমার প্রশ্ন অন্য জায়গায়। এত বড় সমস্যা যারা এটা নিয়ে কাজ করছেন তারা খুঁজে পেল না কেন? বা তৃতীয় কোন প্রতিষ্ঠান দিয়ে অডিট/টেস্ট কেন করানো হলো না? আমি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করি সেখানে একটা সাইটের একটা পাতা প্রকাশ করার আগে তিনটা ধাঁপ পার হতে হয়। সবকিছু ঠিক থাকলেই কেবল সেটা সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। এখানে নিরাপত্তার ইস্যু চেক আমি আর আমার কলিগ দু'জনই আলাদাভাবে করি যাতে কোনকিছু আমার চোখ এড়িয়ে গেলে কলিগ বা কলিগের চোখ এড়িয়ে গেলে আমি খুঁজে পেতে পারি। পুরো বিষয়টাই বেশ কড়া প্রসেস দিয়ে যেতে হয়। কিন্তু একটা দেশের সরকার যারা কোটি কোটি মানুষের তথ্য নিয়ে কাঁজ করছে এত বড় প্রতিষ্ঠান যাদের দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে জনগণের টাকা দিয়ে, তাদের চোখ এড়িয়ে যাচ্ছে কিভাবে আর "প্রযুক্তি উপদেষ্টা"-ই বা কি করছেন? এখানে জবাবদিহিতা কোথায়?

আপনাদের দেশকে ডিজিটাল করতে গিয়ে, বাংলাদেশ ব্যাংক থেতে শত শত মিলিয়ন ডলার চুরি হয়ে গেল, লাখ লাখ মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হয়ে গেল, এত বড় একটা কান্ড ঘটে যাওয়ার পরও এ কারনে কারো চাকুরি যাবে বলে আমার মনে হয় না। অযোগ্য লোকজন দিয়ে দেশ চলছে জোড়া তালি দিয়ে, দেখার কেউ নেই, সবার গা সওয়া হয়ে গেছে, বাংলাদেশ ডিজিটাল হয়ে গেছে। আপনাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক সময় থাকতে সচেতন হোন। ধন্যবাদ।

আপডেট (জুলাই ১১, ২০২৩): বাংলাদেশের কৃষি ব্যাংকের গ্রাহকদের তথ্য চুরির খবর দিয়েছে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক সাইবার সিকিউরিটি কোম্পানী "আইজুলজিক"। গতকাল কোম্পানীটি তাদের ব্লগে উল্লেখ করেছে যে "এ.এল.পিএইচ.ভি." নামে একটি হ্যাকিং গ্রুপ বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সার্ভারের গভীরে একটি ব্যাকডোর স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে যা দিয়ে তারা যে কোন সময় সার্ভারে প্রবেশ করতে পারে। গ্রুপটি গত ১৯শে জুন কৃষি ব্যাংকের সার্ভারের ডাটাবেজে থাকা সকল তথ্য তাদের কাছে নিয়ে নিয়েছে (সূত্র) এবং তথ্য উদ্ধারের জন্য জুলাই এর ৮ তারিখে ৭২ ঘন্টার সময় বেধে দিয়েছে তাদের সাথে যোগাযোগ করে তথ্য অর্থ প্রদানের মাধ্যমে তথ্য ফেরত নেয়ার জন্য। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক তা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে (সূত্র)। ধারনা করা হচ্ছে তথ্যগুলো ডার্ক ওয়েবে বিক্রি হয়ে যেতে পারে।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুলাই, ২০২৩ রাত ১১:৪৭
৩৫টি মন্তব্য ৩৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণমাধ্যম আক্রমণ: হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিলেন নূরুল কবীর ও নাহিদ ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:০৫


জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রক্তস্নাত পথ পেরিয়ে আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সাম্প্রতিক মব ভায়োলেন্স এবং গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ সেই স্বপ্নকে এক গভীর সংকটের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। নিউ এজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

গাজার শিশুদের উদ্দেশ্যে - আমরা তোমাদের রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছি

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৫


তোমরা এসেছিলে মাথার উপর বোমা পড়ার ভয়ার্ত গল্প নিয়ে। যে বোমা তোমাদের ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়েছে, লোকালয় ধ্বংস করেছে। আমরা কান বন্ধ করে উদাসীন হয়ে বসে ছিলাম। তোমরা এসেছিলে ছররা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৪৯

রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি

সবাই যখন ওসমান হাদিকে নিয়ে রিকশাওয়ালাদের মহাকাব্য শেয়ার করছে, তখন ভাবলাম—আমার অভিজ্ঞতাটাও দলিল হিসেবে রেখে যাই। ভবিষ্যতে কেউ যদি জানতে চায়, এই দেশটা কীভাবে চলে—তখন কাজে লাগবে।

রিকশায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবিতে গণতন্ত্রের নামে মবতন্ত্র

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১০



তথাকথিত গণতন্ত্রকামীদের পীর আল্লামা পিনাকী এবং ছোট হুজুর ইলিয়াস মোল্লার উস্কানীতে দেশজুড়ে চলছে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে মবতন্ত্র। আল্লামা পিংকুর যুক্তি হচ্ছে- যে বা যারাই তাদের (গণতন্ত্রকামীদের) সূরে কথা না... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বিপ্লবীর মৃত্যু নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



শরিফ ওসমান হাদি। তার হাদির অবশ্য মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অনেকবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলেছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতবিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×