গত সপ্তাহ থেকেই শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। বাসার সবাই কম-বেশী শারীরিক অসুস্থতায় ভুগেছে। ছেলেটার এখনো কিছুটা ঠান্ডা লেগে আছে। বাসা থেকে বের হলেও দূরে কোথাও যাওয়া হয় নি। গতকালই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আজ বই মেলায় যাবো।
রাত জাগা মানুষ আমি, যথারীতি ঘুম থেকে উঠতে দেরী হলেও যাওয়ার ইচ্ছেতে ভাটা পড়ে নি। বিষয়টি এমনও নয় যে বইমেলাকে আমি খুব বেশী সিরিয়াসলি নিয়েছি কখনো কিংবা আমার কোন বই প্রকাশ হচ্ছে। নিজের কোন বই-টই লিখার ক্যাপাসিটি নেই সেটা ভালোই বুঝতে পারি, কোনদিন আমারও কোনও বই বের হতে পারে সেটা আগে ভাবলেও এখন আর ভাবি না। মেলায় হাজার হাজার লেখক দেখলে নিজের ভেতর দৈন্যতাবোধ কাজ করে। মনে হয় সারা জীবন শুধু কাজ করেই গেলাম, লিখালিখি কিছুই হলো না।
মেলায় "অন্যপ্রকাশ" এর স্টলটির ডিজাইন বেশ নান্দনিক বলে মনে হয়েছে।
যাইহোক, অবশেষে যাওয়া হয়েছে। নিজের জন্য কোন বই কেনা হয় নি। কেনার ইচ্ছে যে ছিলো না তাও নয়, হাজার তিনেক টাকা সাথে নিয়েছিলাম যদি কোন বই ভালো লেগেে যায় সে আশাতেই। পুরো মেলা চক্কর দেওয়ার পর যখন নিজের জন্য কিছু পেলাম না তখন মনে হলো ছেলের জন্য অন্তত কিছু একটা নিয়ে যাই। ওর জন্য ছবি আাঁকার বই নিলাম, অবশ্য মুলামুলি করেই নিয়েছি। দিন শেষে বাঙালী বলে কথা। নিজের জন্য যেহেতু কিছু কেনা হয় নি, তাই আমি আগে ক্যামেরাম্যানের দায়িত্ব শেষ করে নিয়েছি। সেটাও এখানে শেয়ার করছি..
মেলায় বইয়ের বেচা-কেনা কেমন সেটা আমার জানা নেই তবে আমি মেলায় তেমন কোন বিকিকিনি দেখিনি। হতে পারে আমি যখন গিয়েছি, তখন হয়তো বিক্রির সময়ও না। অবশ্য ফটোশেসন আর সেলফি চলছে প্রতি মিলি-সেকেন্ডে। মাঝে মাঝে রমণীরা হাটার জন্য রাস্তার মাঝে কিংবা কোন স্টলের সামনে এসে পোজ দিচ্ছে দাত বের করে। হয়তো তাদের ফেসবুকে দেয়ার জন্য এই আপ্রান চেষ্টা। মেয়েদের মধ্যে সাজ-সাজ রব ছিলো চোখে পড়ার মতো, বিয়ের জন্য পাত্র দেখতে মেলায় এসেছে বললেও ভুল বলা হবে না। এক এক সময় মনে হচ্ছিলো মেলায় কোটি-কোটি মানুষ চলে এসেছে, যেদিকে তাকাই শুধু মানুষ আর মানুষ।
মেলায় প্রবেশ করার গেইটটা কম-বেশী ডিজাইন করার থাকলেও বের হওয়ার রাস্তা দেখে মনে হলো কোন এবড়ো-থেবড়ো চিপা দিয়ে বের হচ্ছি। ধুলো-বালি, ভিক্ষুক, এলোমেলোভাবে বসে থাকা র্নিবিকার পুলিশের লোকজন, এখানে-সেখানে কাগজ-ঠোঙ্গা, সব মিলিয়ে বিচ্ছিরি অবস্থা। আসতে আসতে মনে হলো, বড় হয়ে যতই মেলা দেখছি ততই মেলা তার প্রাণ-স্পন্দন হারিয়ে ফেলছে বলে মনে হচ্ছে। পুরো বিষয়টিকে অনেকটাই লোক দেখানো, নিয়ম মাফিক একটা অনুষ্ঠান বলে মনে হয়েছে। আশা করছি আপনাদের বইমেলা ভ্রমণ আমার চেয়ে অনেক বেশী আনন্দের হবে। অগ্রিম সেই শুভ কামনাও থাকছে। ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ১২:৫২