
যারা প্রথাগত উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম ভিত্তিক কম্পিউটার ব্যবহার করছেন তাদের কে বছর দুই আগে "হ্যাকিন্টোশ" ব্যবহার করেছেন কিনা তা জিজ্ঞেস করে একটা লিখা লিখেছিলাম। আজ আবারও একই বিষয়ে কিছু আপডেট জানাতে লিখতে বসেছি। যারা "হ্যাকিন্টোশ" শব্দটির সাথে পরিচিত নন তাদের জন্য বলে রাখা ভালো যে এটি মূলত ম্যাক অপারেটিং সিস্টেম কে প্রথাগত উইন্ডোজ ভিত্তিক কম্পিউটারে ব্যবহারের উপযোগী করে তোলার একটা পন্থা। স্বাভাবিকভাবে সুর্নিদিষ্ট কিছু হার্ডওয়্যার ছাড়া যেন কোন কম্পিউটারে এ্যাপলের ম্যাক ওস ব্যবহার করা সম্ভব নয়।
যারা এ্যাপল ও ম্যাক কম্পিউটার নিয়ে কম-বেশী ঘাঁটাঘাঁটি করেছেন, তারা হয়তো জেনে থাকবেন যে এ্যাপল অনেক আগে থেকেই তাদের বিভিন্ন মডেলের কম্পিউটারে ইন্টেলের প্রসেসর ও এ.এম.ডি-র গ্রাফিক্স চিপ ব্যবহার করে আসছে। তবে বিগত বেশ ক'বছর ধরে এ্যাপল ধীরে ধীরে তাদের নিজস্ব চিপসেট দিয়ে কম্পিউটার বাজারে নিয়ে আসছে। এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় যেটা সেটা হলো ইন্টেলের প্রসেসরগুলো এক্স-৮৬ প্ল্যাটফর্মভিত্তিক অন্যদিকে এ্যাপলের ডিজাইনকৃত চিপসেট মূলত আর.আই.এস.সি ভিত্তিক। আর.আই.এস.সি. আর্কিটেকচার এর একটি ভ্যারিয়েন্ট হলো এ.আর.এম. যা মূলত এ.আর.এম. হোল্ডিংস কর্তৃক ডিজাইনকৃত বিশেষ ধরনের চিপসেট। বাজারে প্রচলিত বেশীরভাগ স্মার্টফোনই মূলত এই ঘরানার চিপসেট ব্যবহার করে। সমস্যা হলো এই চিপসেট ব্যবহার করতে হলে এ.আর.এম. হোল্ডিংস-এর কাছ থেকে লাইসেন্স কিনে নিতে হয় নির্দিষ্ট ফি প্রদান করে। এমনকি এ্যাপল কোম্পানী-ও তাদের কে লাইসেন্স ফি প্রদান করে থাকে।
অন্যদিকে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকগণ ২০১০ সালে আর.আই.এস.সি. ভিত্তিক নতুন ঘরানার চিপসেট ডিজাইন করেছে যা বাজারে মূলত আর.আই.এস.সি.-ভি. নামে বেশ পরিচিত। এর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো এই প্রযুক্তি সম্পূর্ন উন্মুক্ত ও ফ্রি। মানে, চাইলে আপনিও এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিজের পছন্দমত নতুন চিপসেট তৈরী করতে পারেন। বেশ কিছু কোম্পানী ইতোমধ্যে এই পযুক্তির চিপসেট বাজারে এনেছে যদিও এটি বাজারে এখনো ততটা জনপ্রিয় নয়। এর অনেক কারন রয়েছে যা এই স্বল্প পরিসরে আলোচনা সম্ভব নয়। এতগুলো কথা বলার উদ্দেশ্য হলো এটা বোঝানো যে, এ্যাপল তার পণ্যের জন্য উপযোগী করে নিজেদের মতো চিপসেট বানিয়েছে এবং তার উপর ভিত্তি করেই তাদের নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেম ও সফটওয়্যার তৈরী করছে মূলত অন্যের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনা ও পণ্যের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করে প্রডাক্টিভিটি ম্যাক্সিমাইজ করার জন্য। এতে তাদের পণ্যের গুণগত মান বৃদ্ধি পেয়েছে অনেকটাই। যেমন পণ্যের ব্যাটারী লাইফ বেড়েছে, তাপ উৎপাদন কমেছে ও খরচ কমেছে।
এ্যাপল নিজস্ব চিপসেট তৈরী করে নতুন পণ্য বাজারে নিয়ে আসাতে সমস্যা হয়েছে হ্যাকিন্টোশ ব্যবহারকারীদের কারণ হ্যাকিন্টোশ ব্যবহারকারীরা মূলত এক্স-৮৬ ঘরানার চিপসেট সমৃদ্ধ কম্পিউটার ব্যবহার করেন যা মূলত ইন্টেল ও এএমডি তৈরী করে। এ্যাপল তাদের সর্বাধুনিক ম্যাক ওএস টাহো এর পর ভবিষ্যত কোন অপারেটিং সিস্টেমে আর এক্স-৮৬ প্রসেসর সমৃদ্ধ সিস্টেম সাপোর্ট করবে না। অন্য কথায় বলতে গেলে হ্যাকিন্টোশ এর ব্যবহার অনেকটাই কমে আসবে আগামী দিনগুলোতে। ইন্টেলের ১০ম প্রজন্মের প্রসেসর এর পরের জেনারেশনের চিপসেটের জন্য আর কোন অফিসিয়াল সাপোর্টও থাকছে না।
সম্ভবত ২০২৩ এর কোন এক সময়ে আমি মূলত হ্যাকিন্টোশ ব্যবহারের জন্য ডেল অপটিপ্লেক্স এর ৩০৮০ মাইক্রো কম্পিউটারটি ক্রয় করেছিলাম। ওটাতে তখন ম্যাক ওএস ভেনচুরা ব্যবহার করতে গিয়ে বেশ কয়েকটি রাত আমাকে নির্ঘুম কাটাতে হয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশে আসার সময় পিসিটা সাথে করে নিয়ে এসেছিলাম। খুব শীঘ্রই ওটাতে টাহো ইন্সটল করবো। ওটার বেশীরভাগ হার্ডওয়্যারই এ্যাপল টাহো সমর্থন করে তবে বরাবরের মতোই কিছু কিন্তু রয়ে যাচ্ছে। যারা ইন্টেলের ১০ম বা পূর্ববর্তী প্রজন্মের চিপসেট ব্যবহার করছেন, তারা চাইলেই খুব সহজে ওপেনকোর সিমপ্লিফাই ব্যবহার করে দেখে নিতে পারেন যে আপনার বর্তমান কম্পিউটারটি কোন হ্যাকিন্টোশ ওএস ব্যবহারের উপযোগী। বিষয়টি আসলে বেশ টেকনিক্যাল ও অনেক হার্ডওয়্যারগত সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এ ব্যাপারে সম্যক অবগত না হয়ে থাকলে অভিজ্ঞ কারো সহযোগীতা নিতে পারেন। বর্তমানে হ্যাকিন্টোশ ব্যবহার করা আগের যে কোন সময়ের চেয়ে অনেক বেশী সহজ। তবে এ বিষয়ে সবচেয়ে বেশী যেটা প্রয়োজন সেটা হলো ধৈর্য্য ও শেখার ইচ্ছে।
আপনার হ্যাকিন্টোশ বিল্ডের জন্য আগাম শুভ কামনা থাকছে। ধন্যবাদ।
ছবি কপিরাইট: ইনসেইনলি ম্যাক
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:২১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


