মানুষ হিসেবে আমরা কতটা নির্ভুল বিচারক? আমরা কি পেরেছি সৃষ্টির শুরু হতে আজ পর্যন্ত যত অন্যায়-অপরাধ সংঘটিত হয়েছে তার সবগুলোর বিচার করতে। যদি না পেরে থাকি তবে ঠিক কত শতাংশ বিচার আমরা সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে পেরেছি? কত শতাংশ বিচারকার্য করতে গিয়ে আমরা সবধরণের পারিপার্শ্বিকতা বিবেচনা করে বিচার করেছি? কয় শতাংশ বিচারকার্য সম্পন্ন করতে যেয়ে আমরা ক্রিমিনালের মানসিক অবস্থা/মোটিভেশন নিয়ে আলাদা করে চিন্তা করেছি? মানবসমাজের বিচারকার্যের মূল উদ্যেশ্য কি প্রতিশোধ নেয়া? নাকি সমাজ হতে কিছু সামাজিক রোগ, অর্থাৎ অপরাধ নির্মূল করা? সময়ের সাথে কি অপরাধের সংগা পাল্টে যায় না? হাজার বছর আগে যে শাস্তি সামাজিকভাবে গ্রহনযোগ্য ছিল তা কি আজও গ্রহনযোগ্য আছে? মৃত্যুদন্ড নামক বিধানের মূল শিকার কারা? সমাজের ধনী ও প্রভাবশালী অপরাধীদের চেয়ে দরিদ্র ও কম প্রভাবশালী অপরাধীরা কি বেশি অনুপাতে মৃত্যুদন্ডে দ্বন্ডিত হয় না? এসব কথা বলার একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে বিচারক হিসেবে ব্যাক্তিগতভাবে এবং সমষ্টিগতভাবে মানুষের/মানবসমাজের যোগ্যতার দিকে আলোকপাত করা। উই আর নট পারফেক্ট জাজ। বিচারব্যাবস্থার হাজারটা চেকিং এর পরও যেখানে ভুল বিচার হতে পারে সেখানে মব সাইকোলজির শিকার হয়ে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে মৃত্যু অবশ্যই ভুলের শিকার হতে পারে। বড় বড় দুর্নীতিবাজদের টিকিটি ছোঁয়ার সাহস না রেখে ছিচকে চোর/পকেটমারকে পিটিয়ে মারা কতটা বীরত্ব/ ন্যায়বিচার? নিজামী/মুজাহিদদের মন্ত্রীসভায় পাঠিয়ে তাদের চ্যালা-চামুন্ডাদের পিটিয়ে মারা কতটা যুক্তিযুক্ত?
২৮ অক্টোবরের ঘটনায় আমি লজ্জিত। আরো লজ্জিত ব্লগের কিছু ব্লগারের মন্তব্যে। ভাববেন না আমি ছাগুদের প্রতি সহানুভুতিশীল, কিংবা সুশীল। ব্লগে আমার একটিভিটি দেখলেই বুঝতে পারবেন ছাগুবিরোধিতায় বিষয়ে আমি কতটা রেডিক্যাল। কিন্তু তবুও এধরণের ঘটনা আমাকে মর্মাহত করে দেয়।
২৮ অক্টোবর যারা মারা গিয়েছিলো তারা ছিল জামাত সমর্থক। হয়তো তাদের ছিল কোন ঘৃণ্য এজেন্ডা, নাহলে চিহ্নিত জামাত সমর্থকদের আওয়ামীলীগের লগি-বৈঠা মিছিলের মধ্যে যাওয়ার কোন কারণ দেখি না। আবার হতে পারে তারা ছিল পরিস্থিতির শিকার। নিজের চোখেই দেখেছি ক্লাসের সবচেয়ে নম্র-ভদ্র-শান্ত-বিনয়ী ছেলেটি কি করে ব্রেইনওয়াশড হয়ে ছাগুতে পরিণত হয়, রাজাকার নেতাদের জন্য জীবন বাজি রাখতেও দ্বিধা করেনা। এর পিছনে মূল কারণটা কি? আমাদের সমাজের বিভিন্ন ত্রুটি-বিচ্যুতি নয় কি? চোর-ডাকাত-খুনি-যুদ্ধাপরাধী সবই সমাজেরই প্রোডাক্ট। শিশু জন্মের সময়ই অপরাধী হয়ে জন্মায় না। সমাজই তাকে অপরাধীতে পরিণত করে। আবার সমাজের প্রয়োজনেই অপরাধীকে শাস্তি দিতে হয়। অপরাধ একটি সামাজিক ট্রাজেডি, যার দায়ভার কম বেশী পুরো মানবসমাজের ওপরই বর্তায়। আর শাস্তি হচ্ছে ঔষধ, যা প্রয়োগ করা হয় ব্যাক্তির ওপর। শাস্তি হোক সামাজের রোগ সারানোর একটি উপায়, সমাজের ব্যর্থতার দায়ভার ব্যাক্তি বা গোষ্ঠির ওপর চাপিয়ে দেয়ার উপায় নয়। আর বিচার বহির্ভুত শাস্তি সবসময়ই অযৌক্তিক। কারণ সেখানে ভুল হওয়ার স্কোপ অনেক অনেক বেশী।
অসংলগ্ন কথাবার্তার জন্য দু:খিত। আরেকটু গুছিয়ে আরেকটি পোস্ট দিব।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে অক্টোবর, ২০১০ রাত ১২:০১