somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বর্ণযুগ আসছে বাংলার চলচ্চিত্রে :) :) :)

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ২:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


চলচ্চিত্র বর্তমান সময়ে মানুষের অন্যতম বিনোদনের মাধ্যম বিশেষ করে তরুন সমাজের জন্য। হলিউড, বলিউড এর সব নামকরা ছবির কাহিনী আমাদের আজ জানা। এবং মুক্তির অপেক্ষায় থাকা ছবির কাহিনীও অনেকের কাছে জানা। আবার প্রহরও গুনতে থাকি এই সব ছবির জন্য। আর এসব সম্ভব হয়েছে ইন্টারনেটে চলচ্চিত্রের সহজলভ্যতার কারণে। পত্রিকায় স্পেশাল ফিচার এর জন্য চলচ্চিত্র নির্মানের গল্প, আনুষাংগিক দিক উঠে আসে। এছাড়া বাংলাদেশে অনেক টিভি চ্যানেল বের হয়েছে। প্রতিটি চ্যানেলেই রূপালী জগত নিয়ে সপ্তাহে কিংবা প্রতিদিন কোন না কোন অনুষ্ঠান প্রচার করে। তাই বিজ্ঞাপনের জ্বালায় এই সব অনুষ্ঠান দেখতে না চাইলেও চোখে চলে আসে আর গ্ল্যামার জগত বলেই দেখেও না দেখে থাকতে পারে না অনেকে!! এই হলিউড বলিউড এর ছবি বর্তমানে আমাদের তরুন সমাজের ওপর বিশাল আকারে প্রভাব ফেলেছে। মেয়েদের কাপড় আজ বলিউড এর বিভিন্ন ছবির নামে, গানের নামে কিংবা নায়িকার নামে। ছেলেদের কথাবার্তা কিংবা আজকাল প্রেম নিবেদনের ক্ষেত্রেও ঐসব ছবির বিভিন্ন কৌশল প্রয়োগ করতে দেখা যায়! চলচ্চিত্রের এই প্রভাব পুরোটাই যে খারাপ আবার পুরোটাই যে ভালো তা বলবো না। হলিউড এর ছবি দেখে দেখে অনেকের আজ ইংরেজি বোধগম্য হয়েছে। অনেকে ভালো বোঝে আবার বলতেও পারে।
তবে এতো সব বিদেশী চলচ্চিত্রের ভীড়ে আমরা আমাদের দেশের অনেক ভালো চলচ্চিত্র দেখতে ভুলে যাই।
"মুখ ও মুখোশ" বর্তমান বাংলাদেশের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র মুক্তি পায় ১৯৫৬ সালে। পরিচালক ছিলেন আবদুল জব্বার খান। তিনি চলচ্চিত্রটি নির্মানে হাত দেন ১৯৫৩ সালে। তাঁর লেখা "ডাকাত" নাটকটি তিনি ছবির কাহিনী হিসেবে বেছে নেন। ১৯৫৪ সালের ৬ আগষ্ট ঢাকার শাহবাগ হোটেলে(বর্তমানে পিজি হাসপাতাল) এর শুভ মহরত অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৫৫ সালের ৩০ অক্টোবর শেষ হয় শুটিং। লাহোরের শাহনূর স্টুডিওতে ছবির সম্পাদনা হয়। এই সময়ে ছবিটিকে নিয়ে অনেক চক্রান্ত হয় যাতে কিছুতেই পূর্ব পাকিস্তানে ছবিটি মুক্তি না পায়। তখনকার সময়ে চলচ্চিত্র নির্মান করা এতো সহজ ব্যাপার ছিলো না। তবে ১৯৬৪ সালের সাল থেকে পূর্ব পাকিস্তানে চলচ্চিত্র বিকাশে বেশ অগ্রগতি হয়। ১৯৬৪ থেকে স্বাধীনতার আগ পর্যন্ত মোট ১৮৭ টি ছবি মুক্তি পায়।
"মুখ ও মুখোশ" সবাক চলচ্চিত্র হলেও নির্বাক চলচ্চিত্র অনেক আগেই শুরু হয়েছিল ১৯২৭-১৯২৮ সালের দিকে। এর উদ্যোক্তা চ্ছিলেন ঢাকার নবাব পরিবার। তাদের উদ্যোগে নির্বাক চলচ্চিত্র "সুকুমারী" তৈরির কাজ শুরু হয়। এরপর আর ১টি ছবি "দি লাস্ট কিস" নির্মান করা হয়। এই ছবি নির্মানের জন্য ঢাকার বাদামতলীর পতিতালয় থেকে ১৪ বছরের পতিতা লোলিটাকে আনা হয় কারণ তখন ভদ্রঘরের কেউ চলচ্চিরে আসা সম্মানজনক মনে করতেন না। ১৯৩১ সালে ঢাকার মুকুল বর্তমানে আজাদ (জর্জ কোর্টের বিপরীতে) প্রেক্ষাগৃহে ছবিটি প্রদর্শিত হয়।
বাংলাদেশ বিশ্বে চলচ্চিত্র নির্মানে ১০ম অবস্থানে রয়েছে। আমেরিকার হলিউড নির্মানে ২য় কিন্তু ব্যবসা দিক থেকে ১ম আর বলিউড নির্মানের দিক থেকে ১ম কিন্তু ব্যবসার দিক থেকে ২য়। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে অনেক ভালো চলচ্চিত্র নির্মান হতে থাকে। তখন মানুষের বিনোদন বলতে ছিলো শুধু রেডিও আর চলচ্চিত্র। আমার বাবা কাকার মুখে শোনা যায় তখন তারা প্রেক্ষাগৃহে ছবি দেখার জন্য কত পাগল থাকতো। বেশ ভালোই যাচ্ছিল কিন্তু আকাশ সংস্কৃতির আগ্রাসনে ধীরে ধীরে ঝিমিয়ে বসতে থাকে এ দেশের চলচ্চিত্র শিল্প। তারপরও ভালো চলছিলো কিন্তু মাঝখানে অশ্লীলতার ঝড় এসে সব কিছু ওলোট পালট করে দেয়। মানুষ মুখ ফিরিয়ে নেয় চলচ্চিত্র থেকে। আর হলিউড বলিউড এর প্রভাবে মুখ থুবড়ে পড়তে থাকে এদেশের চলচ্চিত্র শিল্প। তবে বর্তমান সময়ে অনেক তরুন মেধাবী নির্মাতা এই শিল্পের সাথে জড়িত আছে। মোস্তাফা সারোয়ার ফারুকী, মুস্তফা কামাল রাজ, রেদোয়ান রনি, গিয়াসউদ্দিন সেলিম প্রমুখ(এনাদের নামের বানান ভুল হলে ক্ষমাপ্রার্থী। কারণ একেক জায়গায় একেক বানান পেয়েছি।) এনাদের ছবির নাম নিশ্চয়ই বলার প্রয়োজন নাই।
আজ যারা আমরা বাংলা ছবির মান গেলো গেলো বলে মুখে ফ্যানা তুলছি তাদের উদ্দেশ্যে বলছি আপনারা কি তাদের নির্মিত ১টি ছবিও দেখেছেন? অনেকে বলবেন দেখেছি কিন্তু ঐ ১ টাইপ এর ছবি কিংবা ১টা নাটক তৈরি করেছে। এই কথা বলাটাই আজ স্বাভাবিক কারণ আজ আমাদের মাথায় বলিউড হলিউড এর ছবির ধাঁচ এমনভাবে আকঁড়ে ধরেছে যে ঐ টাইপ না হলে আমরা বলি "কি সব ছবি এইগুলা"!!! আমি তাদের উদ্দেশ্যে বলছি তাদের সামাজিক ব্যবস্থা, জীবনধারন আর আমাদের সামাজিক ব্যবস্থা, জীবনধারন কিন্তু এক নয়। তাই এক ভাবে চিন্তা করলে হবে না। ঐ ভাব ধারা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। আজ যারা আমরা ব্যাটলশিপ কিংবা এভেনজার্স দেখার জন্য স্টার সিনেপ্লেক্সে লম্বা লাইন দিচ্ছি আবার বাংলা সিনেমার নাম বলে মজা করছি। স্টার সিনেপ্লেক্সে কিছু দিন আগে মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ এর "প্রজাপতি" দেখার জন্য যতটা না লাইন দেখা গেলো তার চেয়ে বেশি দেখা গেলো হলিউড এর ছবি দেখার জন্য। :(
কিন্তু এখন দিন বদলাচ্ছে আস্তে আস্তে তরুন নির্মাতার আমাদের মত যুব সমাজের চাহিদা বুঝচ্ছে এবং চলচ্চিত্র নির্মান করছেন। এর মধ্যে রয়েছে মুহাম্মোদ মোস্তফা কামাল রাজ এর "ছায়াছবি"

, এশিয়ার বৃহত্তম চলচ্চিত্র উৎসব দক্ষিন কোরিয়ার পুসানে যাওয়া মুস্তফা সারোয়ার ফারুকী এর "টেলিভিশন"

, রেদোয়ান রনির "চোরাবালি"

। আর আমরা অনন্ত জলিল এর ছবি নিয়ে যতই মজা করি না কেন এটা সবাইকে মানতেই হবে যে তিনি উন্নত প্রযুক্তি নিয়ে আসছে বাংলাদেশে, ভালো লোকেশন নিচ্ছেন(যদিও বিদেশে তবুও সূচনা তো করলেন), নায়িকার ওজন কমিয়েছেন :P ! ইদানিং শাহীন সুমনের পরিচালনায় "ভালোবাসার রঙ" নামে নতুন ১টা চলচ্চিত্রের নাম শুনছি। ছবির নায়িকার দৈহিক উন্নতি অনেক ভালো হয়েছে এবং পড়াশোনায় ভালোও বটে এবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার তিনি এ+ পেয়েছেন। নাম মাহিয়া মাহি। http://www.facebook.com/ActressMahiyaMahi


অনেক মডেলও কিন্তু আজকাল চলচ্চিত্রে নাম লেখাচ্ছে।
তাই আমাদের চলচ্চিতের এই নতুন দিনের সূচনাতে আমাদের সকলের স্বাগত জানাতে হবে। ক্ষ্যাত বাংলা চলচ্চিত্র বলে গালি দিলে হবে না এই সব মেধাবী নির্মাতাদের চলচ্চিত্র দেখতে হবে এবং সমালোচনা করতে হবে। যাতে তারা আরো ভালো ছবি আমাদের উপহার দিতে পারে। আরা আমাদের জাতিসত্ত্বাকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে পারি।
আর আমাদের আর ১টা সমস্যা হচ্ছে ভালো প্রেক্ষাগৃহের অভাব। স্টার সিনেপ্লেক্স চালু হওয়ার পর মানুষের কিছুটা ছবি দেখার ইচ্ছা জেগছে। তাই এমন প্রেক্ষাগৃহ প্রতিটি সুপার মার্কেটে চালু হওয়া উচিত। এতে মানুষ কেনাকাটা শেষে অথবা মাঝে ঢু মেরে আসতে পারে বাংলা চলচ্চিত্রের দুনিয়া থেকে। এতে করে উন্নয়ন হবে দেশীয় চলচ্চিত্রের এবং অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ৩:০৮
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×