somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রাকৃতিক বুননের অন্যন্য কড়চা

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১২ বিকাল ৫:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





বর্তমানে দেশে বিশাল পশুসম্পদ রয়েছে যদিও তা চাহিদা মাফিক নয়। দেশে পশুসম্পদ মূলত হিসাব করা হয় দুধ, মাংসের জন্য চামড়ার জন্য নয়। চামড়াকে ধরা হয় বাইপ্রোডাক্ট হিসেবে। কিন্তু এই বাইপ্রোডাক্টই দেশের মোট রপ্তানী আয়ের অর্ধেক হতে পারে। সরকার ১টু খেয়াল করলে পোশাক শিল্পের মত বাংলাদেশের চামড়া খাতও বিশ্বে প্রতিদ্বন্দীতা করতে পারে। বাংলাদেশী চামড়ার প্রধান আমদানিকারক দেশ ইতালি, চীন, কোরিয়া, হংকং, তাইওয়ান, জাপান, কোরিয়া, অস্ট্রিয়া, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, বেলজিয়াম, ব্রাজিল, জার্মানি, ইতালি, সৌদি আরব। ১৯৪০ সালে আরপি সাহা নারায়ণগঞ্জের কাছে প্রথম যে চামড়া শিল্প স্থাপন করেছিলেন, কালের পরিক্রমায় এ শিল্প এখন বৃহৎ রূপ ধারণ করেছে। রফতানি বাণিজ্যে তৃতীয় অবস্থানে আছে এ শিল্প। বর্তমানে দেশে ১৭০টি চামড়া শিল্প ইউনিট আছে। এদের মধ্যে ১০০টি বড় এবং মধ্যম মানের শিল্প যা শিল্প অধিদপ্ততরের রেজিস্ট্রিভুক্ত, বাকি ৭০টি ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের মতো রেজিস্ট্রিভুক্ত নয়। সারা বছর পশু জবাই থেকে পাওয়া যাচ্ছে ১৮ থেকে ১৯ কোটি বর্গফুট কাঁচা চামড়া। কিন্তু দেশের ট্যানারিগুলোর বছরে ৪০ থেকে ৪২ কোটি বর্গফুট কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াজাত করার ক্ষমতা আছে। বাংলাদেশ ট্যানার্স এ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ) সূত্র জানিয়েছে, প্রতিবছর দেশে যে পরিমাণ চামড়া সংগৃহীত হয় তার ৬০ থেকে ৬৫ ভাগই পাওয়া যায় কোরবানির সময়।

গরুর চামড়া! ছাগলের চামড়া!
চামড়া খাত বাংলাদেশের ৩য় বৃহত্তম রপ্তানী খাত। বৃটিশ আমল থেকেই এই খাত এই অঞ্চলের অর্থনীতির জন্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করে আসছে। বর্তমানেও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিশাল অবদান রাখছে। বিশ্বেও বাংলাদেশের আলাদা ১টি পরিচিতি হয়েছে উন্নতজাতের চামড়ার জন্য। এখন কথা হচ্ছে এই শিল্পে কি আরো বিনিয়োগ সম্ভাবনা নেই? চায়না পৃথিবীর প্রায় দুই তৃতীয়াংশ জুতা সরবরাহ করে থাকে কিন্তু এখানে শ্রমের মূল্য দিন বেড়ে বেড়ে যাচ্ছে সেখানে শ্রমের মূল্য ১৫০ ডলার, বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দী ভিয়েতনামে ১০০, কম্বোডিয়ায় ৮০ ডলার। কিন্তু বাংলাদেশে এখনো ৫০-৬০ ডলার। শ্রমের মূল্য কম থাকার কারণে বাইরের বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের প্রতি বিশেষভাবে আগ্রহী। তাছাড়া বাংলাদেশে কম দামে কাঁচা চামড়া পাওয়া যায় এবং প্রতি বছর ২০ শতাংশ হারে কাঁচা চামড়ার উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
দেশীয় বাজারের অবস্থাঃ
বর্তমানে গুটিকয়েক কোম্পানী দেশে চামড়াজাত পণ্য সরবরাহ করছে। যারা পন্য সরবররাহ করছে তাদের লাভ প্রতিটি পণ্যে ১০০% এর ওপর। মানুষ এখন বেশ রুচিশীল। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ছে। মানুষ ভালো পণ্যই কিনতে চায়। এক্ষেত্রে চামড়াজাত পণ্য বেশ রুচিশীল এবং আভিজাত্য পূর্ণ। মেয়েদের স্কার্ট থেকে শুরু করে কলমদানী পর্যন্ত চামড়া দিয়ে তৈরি হচ্ছে। দেশীয় কোম্পানী এপেক্স, বে এম্পোরিয়াম, ফরচুনা, জেনিস, বাইরের কোম্পানী বাটা এদেশের বাজারে কি ব্যবসা করছে তা নিশ্চই আর বলার প্রয়োজোন নেই।

শ্রমের মূল্য কম, কাঁচা চামড়ার এতো সংস্থান থাকার পরও এই শিল্প এগিয়ে নিতে সমস্যা কোথায়?

জমির উচ্চ মূল্য, দেশীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য উচ্চ ব্যাংক ঋণসুদ, অবকাঠামো অসুবিধা, বিদ্যুৎ সমস্যা, দক্ষ মানব সম্পদ। মানে ঘুরে ফিরে সেই একি সমস্যা। জমির দাম যদি বেশি হয় তাহলে কিন্তু দেশী কেনো বাইরের বিনিয়োগকারীরাও দেশে বিনিয়োগ করতে চাইবে না। ঢাকার কাছে সাভার, টংগী, কেরানীগঞ্জ, মানিকগঞ্জে সুবিধাজনক স্থানে যদি প্রতি শতাংশে জমির দাম ১০-১২ লাখ টাকায় হয় তাহলে এক জমি কিনতে গিয়েই সব পুঁজি খাটিয়ে বসতে হবে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের দূরত্ব ৩০০ কিমি। এই ৩০০ কিমি যেতে যদি ১০-১১ ঘন্টা লাগে তাহলে এই কথা শুনে বাইরের যে কেউ আঁতকে উঠবে। দক্ষ মানব সম্পদ গড়ে তোলার জন্য ঢাকা বিশবিদ্যালয়ের ইনিস্টিউট অব লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজী(ILET) এবং কুয়েটের তিন বিভাগে ১৬০-১৭০ জন স্নাতক ৪ বছর কোর্স করার পর বের হয়ে আসছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। আবার এই ১৬০-১৭০ জনেরই সুষ্ঠ, সমান দক্ষতা নিয়ে ট্যানারী মালিক, ফ্যাক্টরী মালিকদের অনেক হতাশার কথা শোনা যায়।
কেনো এই হতাশা?
সরকার মুখে বলছে মেধাভিত্তিক জাতি গড়ার কিন্তু অন্য দিকে এই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় সুবিধা দিচ্ছে না। এখন বর্তমানে প্রক্রিয়াজাত চামড়া রপ্তানী করে বাংলাদেশ যে পরিমান আয় করছে পণ্য রপ্তানী করে তার প্রায় দিগুন আয় করতে পারে। রপ্তানীযোগ্য ৩০০০ টাকার চামড়া পণ্য তৈরি করে খুব সহজেই তার মূল্য ৫৫০০-৬০০০ করা সম্ভব। এক্ষেত্রে দক্ষিন কোরিয়ার কথা বলা যেতে পারে তারা সম্পূর্ণ আমেরিকা থেকে চামড়া আমদানী করে পণ্য তৈরি করছে। এতে যা আমদানী করছে তার প্রায় ৩গুন পর্যন্ত পণ্য মূল্য তৈরি করে বাইরে রপ্তানী করছে। চায়নাতে জীবনমান বেড়ে যাওয়া, এক সন্তান নীতি গ্রহণ করার কারণে তাদের ৪৬ বিলিয়ন জুতার বাজার বাংলাদেশ সহ প্রতিদ্বন্দী দেশের দিকে ঝুঁকে আসছে। বাংলাদেশে এতো বিপুল জনগোষ্ঠী থাকার পরও কেন আমরা এই সুযোগ নিতে পারবো না?

এবার একজন সফল উদ্যোক্তার কথা বলি
আমার এক চেনা বড় ভাই যে কিনা ILET থেকে পাশ করার তিন বছরের মাথায় এখন নিয়মিত জাপানে পণ্য রপ্তানী করছে। এই শীতে এক জ্যাকেট উৎপাদন করতে গিয়ে তার ৬০-৭০ জন কর্মচারী হিমশিম খাচ্ছে। এখন তাঁর পণ্যের এতো চাহিদা যে সে লোকাল আর বাইরে মার্কেটের জন্য ২টা ফ্যাক্টরী করতে হয়েছে। ঢাকার বসুন্ধরায় তার ১টি আউটলেট আছে এবং সেই আউটলেটে শুধু ২ ঈদেই নিয়মিত পণ্য সরবারহ করছেন।
কি কি করনীয় আরো বেশী আয়ের জন্যঃ
সহজে পুঁজির সংস্থান করা। পণ্যের ভিন্নতা আনতে হবে। বাংলাদেশ এখন গুটিকয়েক চামড়াজাত পন্য রপ্তানী করছে। ভিন্নতা এনে বাইরের বাজার ধরতে হবে এবং এর জন্য অবশ্যই দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে হবে। দেশীয় বিদেশী বিনিয়োগাকারীদের জন্য চামড়া শিল্পের জন্য বিশেষ অঞ্চল করে দিতে হবে যাতে জমি নিয়ে চিন্তা করতে না হয়। তাহলে luis Vuitton, Gucci, Reebok, Nike, Adidas, Puma, Lotto, H&M এর মত কোম্পানী বাংলাদেশে সরাসরি বিনিয়োগ করবে এবং সরাসরি এই দেশ থেকে কর্মী নেবে।
এই শিল্প এগিয়ে গেলে পাশাপাশি অনেক ছোটখাটো কারখানা গড়ে উঠতে পারে যেমন adhesive, button, lining, জুতার জন্য last industry(যা এখন ভারত থেকে আমদানী করতে হয়) ইত্যাদি।
তাই সরকার সহ সবার এগিয়ে আশার অনুরোধ করবো।
সুখের কথা হচ্ছে ইউএস বাংলা, সউদি বাংলা, বেক্সিমকো সহ অনেক দেশী বিদেশী কোম্পানী বিনিয়োগ করছে। :)
তাই প্রাকৃতিক বুননের অন্যন্য কড়চায় দেশ এগিয়ে যাক এই আশাই করি। :)
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১২ বিকাল ৫:৩৬
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×