শারীরিক প্রতিবন্ধী এই বিষয়টি যেকোন মানুষের জন্য খুবই পীড়াদায়ক। আমাদের দেহের কোন ১টি অংশ সামান্য আঘাত প্রাপ্ত কিংবা ব্যাথা পেলে তখনই আমরা বুঝি এর মর্যাদা। আর এমন কষ্ট নিয়ে দিনের পর দিন কত মানুষই না কষ্ট করছে। ফার্মগেট, গুলিস্তান, বাসে এমন জনাকীর্ণ স্থানে আমরা অনেক শারীরিক প্রতিবন্ধীদের ভিক্ষা করতে দেখি। এদের মধ্যে কারো হয়তো দুর্ঘটনায় কারো জন্মগত কিংবা অন্যের রোষানলে পরে তার এই দুর্গতি হয়েছে। পেটের দায়ে বাইরে এসে ভিক্ষা করে। আমরাও আমাদের সহানুভুতিশীল মন থেকে যে যার মত তাদের সাহায্য করি। ‘হাত পা’ থাকলেও বা মুখের করুন ‘শ্রী’ দেখে। কিন্তু এই সাহায্য করাটাই কি আসল সমাধান? শারীরিক ভাবে সুস্থ থাকলেও আমরা অনেক সময় এদের ভিক্ষা বা সাহায্য দিয়ে দেই। চিন্তা করি আহারে বেচারা কত কষ্টই না করে, আমার ২ টাকা নিয়ে যদি কিছু খেতে পারে। কিন্তু অনেক সময় সেই ভিক্ষুক কিংবা সাহায্য প্রার্থীর শারীরিক সক্ষমতা (আপাত দৃষ্টিতে বা ১টু ভাল করে না দেখে) না দেখেই দিয়ে দেই। সেই ভিক্ষুকের ক্ষমতা না দেখে ভিক্ষা দেয়া নিয়ে কেউ প্রশ্ন করলে উপর ওয়ালার দোহাই দিয়ে দেই। বলি/বলে আমার তো নিয়ত ভালো ও ব্যাটা/বেটি যদি ছল চাতুরি করে সে বুঝবে, আল্লাহ দেখবেন। ভাই আমার কথা হচ্ছে আল্লাহ তো বিচার বিবেচনা দিয়ে দিয়েছেন। এই বিচার বিবেচনা ১টু খাটাই।
ভাই আমি যাকাত সম্পর্কে ভালো করে কিছু জানি না। শুধু বুঝি এইভাবে ২-৪ টাকা করে যাকাতের টাকা বা অন্য কোন বড় মানতের টাকা শেষ না করে কোন ১জনকে সত্যিকার ভাবে উঠে আসতে, আর্থিক সচ্ছলতা দিতে সাহায্য করি। যাতে সেই লোকটাই যেনো আরো ২-৪ জনকে সাহায্য করতে পারে ভবিষ্যতে। আর এইভাবে বিচার বিবেচনা না করে টাকা দিয়ে দেয়ায় কি তাদেরকে আরো ভিক্ষাবৃত্তিতে উৎসাহিত করা হচ্ছে না? কারণ সে তো হিসাব করে ১০০ জন লোক গড়ে ২ টাকা করে দিলে ২০০ টাকা হয় যা কিনা তার দিনের খাওয়ার জন্য যথেষ্ঠ। ভালই তো আছি কষ্ট করে কাজ করার কি দরকার? আর এমন চিন্তা অনেকেরই আছে। আর এইভাবে টাকা দেই দেখেই হয়তো ভিক্ষা ব্যবসা হয়। পত্রিকা, টিভি খুললে দেখি সৎ বাবা তার সৎ ছেলের দুই হাত কেটে দিচ্ছে কিংবা দুধের বাচ্চাকে হাড়িতে রেখে পঙ্গু করে দিচ্ছে দুষ্কৃতকারীরা, মানুষের সহানুভূতিকে পুঁজি করে চালিয়ে যাচ্ছে ভিক্ষা ব্যবসা।
এখন কথা হচ্ছে এদের তাহলে কি করা যেতে পারে? এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব হচ্ছে সরকারের। সরকার এই ভিক্ষুকদের তুলে নিয়ে পুর্নবাসন করতে পারে। মোটিভেট করতে পারে জীবনকে আরো সুন্দর করতে পারার। শুধু সরকারের ওপর বসে থাকলেই হবে না। আমাদের নিজদেরও চেষ্টা করতে হবে এই সামাজিক সমস্যা থেকে বের হয়ে আসতে। আমাদের দেশে এমন অনেক কাজ আছে যাতে শুধু ২ হাতই প্রয়োজন। অন্য কিছুর দরকার হয় না। দরকার হয় না কোন স্বল্পকালীন বা দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষন। এবং অনেক সুস্থ সবল মানুষ শুধু ২ হাতই কাজে লাগাচ্ছে। আমি কিছুদিন আগে ১টি লেদার প্রোডাক্ট কোম্পানীতে ইন্টার্নিতে গিয়েছিলাম। সেখানে প্রায় ১০০ জন লোক কাজ করে। সেই ১০০ জনের মধ্যে খুব সহজেই ২-৩ জনকে ঢুকিয়ে দেয়া যায় জাস্ট ৪-৫ দিন কাজ দেখিয়ে দিয়ে(এটাকে প্রশিক্ষন বলবো না) প্রোডাক্টিভিটির কোন সমস্যা না করে(কেননা প্রোডাকশন লাইনে প্রোডাক্টিভিটি নিয়ে বেশ সতর্ক থাকতে হয়।)। এর জন্য দরকার সবার ১টু সহযোগিতা আর তার জন্য বিশেষ ধরনের চেয়ার। তাহলে এই সব ভাগ্য বিড়ম্বিত মানুষদের দেশের মূল স্রোতে নিয়ে আসতে পারবো। তারাও আর কারো বোঝা হবে না কারও বিরক্তির কারণ হবে না। মাথা উঁচু করেই সমাজে বসবাস করতে পারবে। আবার এর মধ্য দিয়ে কোম্পানিও তাদের CSR(Corporate Social Responsibility) এর দায়িত্ব পালন করতে পারে। তাদের মার্কেটিংও হতে পারে দেশে বিদেশে খুব ভাল ভাবে। তারা বলতে পারবে দেখুন আপনি যে প্রোডাক্ট কিনছেন তাতে শুধু কোম্পানীই লাভবান হচ্ছে না, ২জন প্রতিবন্ধীও জীবিকা নির্বাহ করছে। তাতে তাদের পণ্য কেনার প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়বে, ব্যবসা প্রসার হবে, ভালো ১টি ব্র্যান্ডি তৈরি হবে। আমার স্কুলের ১ ম্যাডাম ১টা কথা বলতেন সব সময়, “অনেক বিশৃংখলার মধ্যে কিংবা অনেক এলোমেলো কাজের মধ্যে তুমি ১টা ভালো কাজ করো কিংবা সেই খারাপ কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখো। তাতে বিশাল এলোমেলোর মধ্যে তোমার স্থানটি সুন্দর থাকবে। এবং তোমার ভালো কাজ দেখে মানুষ অবশ্যই তোমার ভালো কাজে উদ্ভুত হবে। কারণ সে দিন শেষে সৃষ্টিকর্তার শেষ্ঠ জীব ১জন মানুষ।“ তাই আমিও বিশ্বাস করি ১জন ১জন করে শুরু করলে আমাদের সমাজ তথা আমাদের দেশটাকে অনেক সুন্দর করে গড়ে তুলতে পারবো।