somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দাম্পত্য জীবন এক মহাকাব্য।

১৮ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ৮:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দু'টি মানুষের সামাজিক বন্ধন নিয়ে তৈরি হওয়া একটি পথের নামই দাম্পত্য জীবন। বিবাহবন্ধন আসলে দুই পরিবারের দুইটি মানুষের একসাথে পথ চলার অঙ্গীকার। আপাত দৃষ্টিতে দু’জন মানুষ নিয়ে তৈরি হওয়া একটি সম্পর্ক দেখা গেলেও এটা শুধুমাত্র দু'জনের নয় এখানে অনেক মানুষের সম্পর্ক জড়িত। দাম্পত্যজীবন মানেই বিবাহবন্ধনের মাধ্যমে দুইটি পরিবারের গাঁথনি, সন্তান জন্ম দিয়ে তাদের গড়ে তোলা আর একসাথে পথচলার প্রতিশ্রুতি। সময় প্রবাহে ভিন্ন দুইটি মানুষের মধ্যে জন্ম নেয় প্রবল আস্থা। সূতা নেই তবুও বন্ধন, হাসি কান্নার এক মায়াবী জাল। এক কথায় সংসার মানেই মায়া। একে অপরের পছন্দের প্রতি সহনশীল ও শ্রদ্ধাশীল হয়ে পথ চলাই দাম্পত্যজীবনের লক্ষ্য হওয়া উচিৎ। সম্ভাব্য কি কি কারণে দাম্পত্যকলহ হতে পারে সেটাই আজকের আলোচনার বিষয়।
ভালোবেসেই হোক আর পারিবারিক পছন্দেই হোক ভিন্ন পরিবারের দু’টি মানুষ একসাথে চলার সময় কিছু অমিল থাকতেই পারে। বিবাহিত জীবনে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দ্বন্দের অন্যতম কারণ উভয় পক্ষের পারিবারিক পিছুটান ও কর্তব্যপালন। আরো অনেক কারণেই বিবাহিত জীবন বিষিয়ে উঠতে পারে। দাম্পত্যজীবনে অশান্তির প্রধান কারণ হিসাবে সাধারণত যে সমস্যাগুলো দেখা যায় –
১. মতের বিরুদ্ধে বিবাহ এবং বাল্যবিবাহ
২. দু’জনের বয়স এবং শিক্ষাগত যোগ্যতার বেশি অসমতা
৩. পরস্পরের প্রতি বিশ্বাসের অভাব
৪. উভয় উভয়ের পরিবারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হওয়া
৫. অর্থনৈতিক কারণ
৬. ভুল বুঝাবুঝি
৭. সন্তান বা পুত্র সন্তান প্রজননে অক্ষমতা
৮. নিত্যদিনের ব্যস্ততা
৯. হিংসা ও বিদ্বেষ
১০. ক্রোধ এবং অসহনশীলতা
১১. সমস্যা খোলাখুলি আলোচনা না করা
১২. দুই পরিবারের মধ্যে সামাজিক অসমতা
১৩. শারীরিক ও মানসিক অসুস্থ্যতা
১৪. একে অপরের কাছে অসংগত প্রত্যাশা করা
১৫. অসৎ বন্ধু মহল
১৬. বিবাহ বহির্ভুত সম্পর্ক

মতের বিরুদ্ধে এবং বাল্যবিবাহ থেকে অনেক সময় দাম্পত্যকলহ শুরু হতে দেখা যায়। এক্ষেত্রে দু’জনের মানসিক অসমতা কাজ করে। দু’জনের শিক্ষাগত যোগ্যতার বড় ব্যবধান আশা ভঙ্গের জন্ম দেয়।
দেখা যায় এক সাথে বাস করেও একে অপরকে বিশ্বাস না করতে না পারার মতো সমস্যায় ভুগছে দম্পতি। এই সমস্যা দু'জনকে আস্তে আস্তে দূরে ঠেলে দেয়, নিজেদের মধ্যে ভাঙ্গন সৃষ্টি করে।
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিশ্বাসের ভিত যতো বেশি নড়বড়ে হয় ভুল বুঝাবুঝি ততো বেশি হয়।
অনেক সময় দেখা যায় স্বামী বা স্ত্রী শুধু তাঁদের নিজের পরিবার নিয়েই বেশি ব্যস্ত থেকে অপরের পরিবারের প্রতি কর্তব্যবোধের কথা ভাবতে কার্পণ্য করছে। এতে দু'জনের মধ্যে মানসিক ক্ষোভ এবং অশ্রদ্ধার জন্ম নেয়, ধীরে ধীরে নিজেদের মধ্যে দূরত্ব ও অনীহা তৈরি হতে থাকে।
অর্থনৈতিক সচ্ছলতা এবং অসচ্ছলতা দুইই সংসারে অশান্তি ডেকে আনতে পারে। এই সমস্যা স্ত্রীদের ক্ষেত্রেই বেশী হয় কারণ তারা নিজেদের অসহায় ভাবে এবং সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে দুশ্চিন্তা করে সংসারে অশান্তি তৈরি করে। অনেকেই ভুলে যার স্বামী বা বাবা হিসাবে পুরুষরাও কম দায়িত্ববান নয়।
অজ্ঞানতার কারণে পুত্র সন্তান জন্ম না দেয়ার জন্য অথবা সন্তান প্রজননে অক্ষমতার জন্য স্ত্রীকে দায়ী করা হয় যা দু’জনের অসম্পূর্ণতার কারণেই হতে পারে। প্রতিদিনের ব্যস্ত জীবনে একে অপরকে সময় দিতে না পারলে দাম্পত্যজীবনে নিজেদের অগোচোরে কোলাহল শুরু হয় যার প্রতিফলন সন্তানদের জীবনেও পরে।
স্ত্রীর সাফল্যে অনেক সময় স্বামী হিংসা পরায়ণ হয়ে ওঠে এই বিষয়টি স্বামীদের ক্ষেত্রে বেশি প্রকট। স্বামীদের সাফল্যে স্ত্রীরা সাধারণত গর্ব বোধ করে আর স্ত্রীদের সাফল্যে অনেক সময় স্বামীদের ইনসিকিউর হতে দেখা যায়। দু'টি মানুষ প্রতিদিন এক সাথে চলতে গিয়ে ভুলত্রুটি হয় বা হতেই পারে। এই ক্ষেত্রে উভয়ের সংবেদনশীলতা এবং ধৈর্যের অভাব দাম্পত্যকলহের একটি বিশেষ কারণ হিসাবে দেখা যায়। অনেক ক্ষেত্রে এই বিস্ফারণগুলো সন্তানদের সামনে এমনকি পরিবারের অন্য সদস্যদের সামনেও ঘটতে দেখা যায় যা সন্তানদের জীবনে হতাশা তৈরি করে কারণ সন্তানরা সব সময় বাবা-মাকে সুখী এবং হাসিখুশি দেখতে চায়।
সংসারের যে কোনো সমস্যা স্বামী-স্ত্রী মিলে খোলামেলা আলোচনা করা সম্পর্কের সুস্বাস্থ্যের জন্য আবশ্যক।
সামাজিক জীবনে স্বামী-স্ত্রীর পারিবারিক অসমতা সংসারে অশান্তির কারণ হতে পারে এই ক্ষেত্রে স্ত্রীদের মায়েরা অগ্রগণ্য। অনেক সময় মেয়েদের সংসারে আশান্তির প্রধান ভূমিকা পালন করতে দেখা যায় তাঁদের মায়েদের যারা মেয়েদের সংসারে হস্তক্ষেপ করে। স্বামীর পরিবার থেকেও এই সমস্যা হতে পারে না তা নয়।
বিবাহিত জীবনে দু’জনের যে কোনো একজন শারীরিক বা মানসিকভাবে অসুস্থ্য হলে সংসারের শান্তি ব্যহত হয় এই জন্য নিজেদের যতদূর সম্ভব উভয়কে অশান্তির কারণগুলো থেকে দূরে থাকার জন্য সচেষ্ট হওয়া উচিৎ।
পারিপার্শ্বিক দেখাদেখিতে অনেক সময় স্বামী-স্ত্রী একে অপরের কাছে অসংগত প্রত্যাশা করে থাকে যা সংসারে প্রলয় ডেকে আনে বা আনতে পারে। এই ক্ষেত্রে স্ত্রীর ভূমিকাই বেশি কারণ নিজের স্বামীর সক্ষমতার কথা ভুলে গিয়ে অনেকেই অন্যের স্বামী কি করলো সেকথা নিয়ে সংসারে তাণ্ডব ঘটায়। সংসারের প্রতিদিন পাওয়া না-পাওয়ার হিসাব কষে একসময় কেউ কেউ বিবাহ বহির্ভুত সম্পর্কে জড়িয়ে পরে।
উপরে উল্লেখিত সমস্যাগুলো সমাধান বা মিনিমাইজ করা খুব যে অসম্ভব তা নয়। এর জন্য প্রয়োজন দু’জনের আন্তরিক ইচ্ছা, দরকার একে অপরকে ভালো ভাবে বুঝতে পারার আগ্রহ। নিজেদের মধ্যে বিশ্বাসের ভিত গড়ে তোলা এই সব সমস্যা সমাধানে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। ভাবতে ও মানতে হবে সংসারটা একজনের নয়, উভয়ের। দু'জনকেই মনে রাখতে হবে তাদের প্রত্যেকটি ভালো বা মন্দ আচরণ সন্তানদের জীবনে প্রভাব ফেলবে সেই হিসাবে উভয়কে আচরণ করতে হবে বা চলতে হবে। বাবা-মায়ের অশান্তির কারণে অনেক সময় সন্তানেরা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেয়। যে কোনো সমস্যা দু'জনের খোলাখুলি আলোচনা করলে ভুল বুঝাবুঝি কমে যায়, যে ক্ষেত্রে স্বামীদের সমস্যাই বেশি কারণ তারা স্ত্রীদের কাছে সমস্যার কথা বলে না বা বলতে চায় না।
অসৎ বন্ধু মহলও অনেক সময় সমস্যার আগুনে ঘি ঢালতে পারে, সেদিকে লক্ষ্য রাখা দরকার।
প্রতিদিনের ছোটো ছোটো সমস্যা জমা হয়ে এক সময় বড় বিস্ফারণ ঘটায়। এর ফলে বেড়ে যায় বিবাহ বহির্ভুত সম্পর্ক, ডিভোর্স এবং আত্মহত্যার মতো দুর্ঘটনা। নিজেরা একটু সচেতন হলে এসব দূর্ঘটনা অবশ্যই এড়ানো সম্ভব।
দাম্পত্য জীবনে সুখী হওয়ার মূলমন্ত্রঃ দু’জনকেই সুখী হতে চাইতে হবে এবং একসাথে ধৈর্য নিয়ে পথ চলার সদিচ্ছা থাকতে হবে।
বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার অর্থই একে অপরের কাছে নিজেকে বন্দি করা এরকম ভাবলে বা আচরণ করলে সংসারে একঘেয়েমী আসে।
সর্বপোরি সংসার জীবনে একে অপরের সাথে অটুট বন্ধনে আবদ্ধ হয়েও নিজস্ব স্বাধীনতাকে শ্রদ্ধা করতে হবে। এই লেখাগুলো নিজের পারিবারিক ও নারীদের মানসিক সমস্যার কারণ নিয়ে গবেষণার অভিজ্ঞতার আলোকে লেখা। অল্প কথায় দাম্পত্য জীবন নিয়ে আলোচনা করা দূরহ। সময় এবং সুযোগ সাপেক্ষে বিষয়টি নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে লেখার ইচ্ছা রইলো।

সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ৮:৩১
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিনেতা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৫



বলতে, আমি নাকি পাক্কা অভিনেতা ,
অভিনয়ে সেরা,খুব ভালো করবো অভিনয় করলে।
আমিও বলতাম, যেদিন হবো সেদিন তুমি দেখবে তো ?
এক গাল হেসে দিয়ে বলতে, সে সময় হলে দেখা যাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×