নিন্দুকেরা বলে, আগে পাস করা কঠিন ছিল আর এখন নাকি ফেল করা কঠিন। তবে নিন্দুকের কথা শতভাগ ভুল প্রমান করেছে সন্দ্বীপের শিক্ষার্থীরা। তারা দেখিয়ে দিয়েছে, আগে যেমন এখনও তেমন! সদ্য প্রকাশিত এসএসসি পরীক্ষায় তারা বরাবরের মতো এবারও ফলাফল বিপর্যয়ে বিপর্যস্ত।
তবে শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্যে কোনরকম বিপর্যয় ঘটেনি। প্রতি শিক্ষক স্কুলের নির্ধারিত বেতন ছাড়াও প্রায় ২০ হাজার টাকার বেশি আয় করছেন প্রতি মাসে। না, আমরা হিংসা করছিনা স্যার। আপনাদের হাসি খুশি বদনখানি দেখলে অভিভাবক হিসেবে আমাদের মনটা আনন্দে ভরে যায়। ভাবি, আমাদের সন্তানরাও পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করে আপনাদের মতো আমাদের মুখও উজ্জল করবে। আমরাও আপনাদের মতো করে হাসতে চাই। সুতরাং আপনাদের এই ইনকাম নিয়ে আমাদের কখনও খেদ নাই।
কিন্তু মনটা বিষাদে ভরে যায়, যখন দেখি আপনাদের ইনকাম যতটা দুরপাল্লার ক্ষেপনাস্ত্রের মতো উর্দ্ধমুখি অন্যদিকে আমাদের সন্তানদের পড়াশোনার মান ততটা নিম্নমুখি!
সকাল ৮.৩০ মিনিট থেকে ১০.৩০ মিনিট পর্যন্ত আপনারা কোচিং নিয়ে ব্যতিব্যস্ত থাকেন। তাও শুধু অংক আর ইংরেজি। বাকিগুলো গোল্লায় যাক। তাতে কার কী আসে যায়! তবুও মনকে প্রমোদ দিতে পারতাম যদি দেখতাম আমাদের সন্তানরা ঐ দুটি বিষয়ে আশানুরুপ রেজাল্ট করেছে। বরং এই দুটি বিষয়ে তারা যে ফলাফল করেছে তাতে নিজের ভাগ্যকে দোষ দেয়া ছাড়া আমাদের আর কীইবা করার আছে!
তো কোচিং শেষে আমাদের সম্মানিত স্যারেরা হয়ে যান বড্ড ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত। একসময় চেয়ারে গা এলিয়ে ঘুমিয়ে হয়ে যান শান্ত। কোনরকম সময় অতিবাহিত করতে পারলেই যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন। আর বর্ষায় ঠাডা, বৃষ্টি অথবা গ্রীষ্মে প্রখর রোদ কিংবা শীতের সময় একটু বেশি শীত তাদের জন্য যেন আশীর্বাদ হয়ে আসে! ‘ .... এই যা, আইজ্জা তোর গো ছুটি.... আকাশের অবস্থা বালা না....বাপরে বাপ, কী গরম হরছে... এ বছরেই মনে হ বেশি হিত হইরতেছে... ইত্যাদি...’ এধরনের ‘ভয়ঙ্কর অবস্থা’য় তারা শিক্ষার্থীদের নিয়ে ‘মহা চিন্তায়’ পড়ে যান। ‘শিক্ষার্থীদের কথা বিশেষ বিবেচনায় নিয়ে’ আমাদের মহানুভব শিক্ষকরা ৪টার স্থলে ২টায় স্কুল ছুটি দিয়ে দেন।
সাপ্তাহিক কিংবা মাসিক পরীক্ষা দুরে থাক বিজ্ঞানের শিক্ষক নাই বললেই চলে। যেকজন আছেন তারা বেশ খোশ মেজাজেই আছেন। উচ্চতর গণিত, কেমিস্ট্রি পড়ানো বাদ দিয়ে তারা সাধারণ গণিত নিয়ে পড়ে থাকেন।
ছাত্রীদের উপবৃত্তি দিচ্ছে সরকার। এই টাকার মুখ দেখার সৌভাগ্য কিংবা হিম্মত তাদের হয় না। কোচিং এর টাকা দিতেই যে গলদঘর্ম!
তবে এখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও কোন অংশে কম যায় না। তারাও অগ্রজদের অনুসরন করছে। বলা যায়, কোচিংয়ের মহোৎসব চলছে সন্দ্বীপে।
তো, আসুন আমরা যদি ফলাফলের এই বিপর্যয় ঠেকাতে চাই তাহলে সব মহলের ( সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান, শিক্ষা অফিসার, অভিভাবক, শিক্ষক, স্কুল কমিটি) এখনই সচেতন হওয়ার সময়। আর যদি কেউ জেগে ঘুমের ভান করে শুয়ে থাকে, তাকে ঘুম থেকে তোলার সাধ্য কার....!?
আর নয় কালক্ষেপণ। আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের এই করুণ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সকলের এগিয়ে আসা এখন সময়ের দাবি। বিশেষ করে শিক্ষা অফিসার মহোদয়ের প্রতিটি স্কুলে সরেজমিন পরিদর্শন একান্ত জরুরী হয়ে পড়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:০১