somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কারো পিচ্চিবেলার ডায়রি

২৮ শে মার্চ, ২০১১ রাত ৮:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯৯৯
১৭ মার্চ বুধবার

আজ স্কুল যাইনি, ভান করলাম মাথা ঘুরে পড়ে গেছি, আসলে কিন্তু ঠিকই ছিলাম। আমার মাঝে মাঝে এমন হয়। স্কুলের সময়টা সব সময় অনেক লম্বা মনে হয়। আব্বু বকা দেয়নি, কিন্তু আম্মুতো পারলে খেয়ে ফেলে এজন্য। আমি যখন বড় হব, তখন মনে হয় আমার অফিস যেতে ভালোলাগবেনা। আবার যখন বুড়ো হব, তখন বাসায় থাকতে ভালোলাগবেনা। আমার আসলে কিছুই ভাললাগেনা, শুধু ঘুমাতে ভালোলাগে। আবার কমিক্স পড়তেও ভালোলাগে। আমি টিভি দেখিনা বেশি। টিভিতে ভাইয়া ইংলিশ মুভি দেখে। ইংলিশ মুভি আমি বুঝিনা। আমিও মনে হয় বড় হলে ইংলিশ মুভি দেখবো সারাক্ষন। তখন যদি পিচ্চি কেউ কার্টুন দেখতে চায়, আমি দেখতে দিব। আমি ভালো হতে চাই, আমি হিংসুটে হতে চাইনা। কিন্তু আমার অনেক হিংসা, সবাইকে এটা বুঝতে দেইনা। আমার ফ্রেন্ড কেউ যদি একটা নতুন কলম ও কেনে, আমার অনেক লোভ হয়, হিংসাও হয়। আমাকে ইচ্ছামত সব দেয়া হয়না। আমি টিফিনে টাকা পাইনা, আম্মু রুটি আর ভাজি দিয়ে দেয় প্রায় প্রতিদিন, আমার অনেক কষ্ট হয় কাউকে ভালো খেতে দেখলে, আমার টিফিন আমি লুকিয়ে খাই। আমার আব্বুর অনেক টাকা নেই, আম্মু তাই অনেক হিসেব করে চলে। আমরা যদি অনেক বড়লোক হতাম, তাহলে আমাদের একটা গাড়ী থাকতো। আব্বুর অফিসের গাড়ীতে মাঝে মাঝে যখন চরি, তখন নিজেকে অন্যরকম লাগে। আমরাও একদিন বড়লোক হব, ভাইয়া ভালো ছাত্র, ও অনেক টাকা আনবে চাকরী করে।

আজকেও দুপুরে লাউ আর কুচা চিংড়ী, সাথে ডাল খেয়েছি। আরো অনেকদিন এটাই চলবে। আমরা শুধু শুক্রবারে মাংস খাই। মাংস বেশী নেয়া নিয়ে আমার সাথে ভাইয়ার ঝগড়া হয়। আম্মু সব সময় কম খায়, বাসি খাবারও খায়। আমি খেতে পারিনা। আমি আম্মুর মত বড় হলেও কখনো পচা খাবার খাবনা। একদিন যখন অনেক বড় হব, তখন আমি আর টাকা কুড়িয়ে পেলে নিজে রেখে দিবনা। মসজিদে দিয়ে দিব। আমি কয়দিন আগে ৫০ টাকা কুড়িয়ে পেয়েছিলাম, আম্মুকে বলেছিলাম ফকিরকে দিয়ে দিয়েছি, কিন্তু আসলে টাকাটা আমি রেখে দিয়েছি। প্রতিবার যখন মামারা আসে, তখন ১০০ টাকা করে আমাদের দেয়, আম্মু নিয়ে নেয়, অগুলা আর পাইনা। ভাইয়ারটাও নিয়ে নেয়, ভাইয়া অনেক ঝগড়া করে, আমার কষ্ট লাগে। আম্মু অনেক বকাবকি করে, পরে আবার লুকিয়ে কাঁদে, আমি টের পাই। আমি জানি আম্মু আমাদের অনেক ভালোবাসে। আমরা যদি বড় হয়ে অনেক টাকা পাই, তাহলে আম্মু অনেক খুশি হবে।

বিকেলে যখন আব্বু অফিস থেকে বাসায় আসে, তখন আব্বু সাথে করে বেধে কিছু না কিছু নিয়ে আসে প্রায়ই। ব্যাগ এ করে না এনে মাঝে মাঝে হাতে অনেক কষ্ট করে ক্যানো আনে জানিনা।আমরা কি আনলো দেখতে পাগল হয়ে যাই। যদি ২-৩ টা শশাও থাকে, তাও আমাদের অনেক আনন্দ হয়। আব্বু মাঝে মাঝে আমাদের ৫-১০ টাকা দেয়, আম্মু ১ টা টাকাও দেয়না। আম্মু অনেক হিসেবী। একবার ওই টাকা পেলে আমার অনেকদিন মন ভালো থাকে। ঈদের দিন আমাকে ২০ তাকা দেয় আব্বু। ওই টাকাই অনেক দিন রেখে দেই। আমার নানা ভাই আমাদের অনেক প্রিয়। কখন স্কুটারের আওয়াজ শুনলে আমরা জানালা খুলে সাথে সাথে বাইরে তাকাই নানাভাই আসলো নাকি দেখতে। ফুপু আসলেও অনেক ভালোলাগে। ফুপু আমাদের সব সময় কিছু না কিছু কিনে দেয়। যতদিন থাকে আমাদের মন অনেক খুশী থাকে। ফুপু অনেক শুকনা। আমাদের চেয়েও বেশী লাফালাফি করতে পারে।

আমরা দাদুবাড়ী যাই বছরে ১ বার। পুকুরে সাতার কাটি, বরশী দিয়ে মাছ ধরি। আব্বু অনেক ভালো মাছ ধরে, আমরা পারিনা। আমরা ওখানে গিয়ে হুক্কার মত একটা কি জানি খেয়েছি অনেক। অনেক কাশি হয়। তিতা তিতা লাগে, তারপরেও অনেক মজা লাগে। মেলার সময় তো সবচেয়ে মজা হয়। বন্যার সময়ও হয়। আমার পানি দেখতে ভালোলাগে। আমার আসলে সবই ভালোলাগে। আগে মিথ্যা বলেছি। খারাপ খুব কম জিনিসই লাগে। আমরা যখন দাদুবাড়িতে বেরাতে যাই, তখন গ্রামের পিচ্চিরা আমাদের হা করে দেখে। ওরা আমাদের থেকে কত গরিব। শুধু ঢাকায় থাকি তাতেই ওরা আমাদের দেখতে আসে। আর অল্পতেই মজা পায়। আমারও যদি এত অল্পতেই সব ভাললাগত তাহলে ভাল হত। এখন শেষ। পরে আবার লিখব। বাই বাই দানটু মানটু ডাইরি।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই এপ্রিল, ২০১১ বিকাল ৩:৫৮
৪১টি মন্তব্য ৩৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×