আমি একজন বাইকার, তাই সকল বাইকার ভাইদের কাছে আমার একটা Request যে আপনারা সবাই একটু কষ্ট করে হলেও এই লেখাটি একটু মনোযোগ সহকারে পড়বেন। হয়তবা আমার এই লেখাটি পড়ে কারো না কারো উপকারে আসতে পারে!!!
আমাদের দেশে প্রতিনিয়ত ছোটখাট থেকে প্রাণঘাতী মোটর সাইকেল দূর্ঘটনা ঘটছে। মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ঘটনা নতুন নয়। মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় মানুষ মরছে অস্বাভাবিক গতিতে। মৃত্যুর মিছিলে কেবল লাশ বাড়ছে তো বাড়ছেই। মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় অনেক মা-বাবা হারাচ্ছেন তাদের প্রিয় সন্তানদের। অনেকেই অ্যাকসিডেন্ট করে প্রাণে বেচেঁ গেলেও হয়েছেন পঙ্গু, পঙ্গুত্ব নিয়ে জীবণ কাটাতে হবে তাঁর। আবার অনেকেই মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায়া নিজের ভাইকে হারিয়েছেন, আপনজনকে হারিয়েছেন, প্রিয় বন্ধুটিও মারা গেছে মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় অথবা মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় প্রতিবেশী কেউ মারা গেছেন এমন করুণ মৃত্যু এমন শোক কি ভোলা যায়.....??
আপনি কি জানেন! খুব স্পিডে মোটর সাইকেল চালালে সবাই গালা-গালি করে। বিরক্ত, অতিষ্ট হয়ে, আবার অনেক সময় দেখাযায় যে অভিশাপ ও দিয়ে থাকে। বলে, এরা অ্যাকসিডেন্ট করে মরে না কেন। আমি মনে করি যে, স্পিডে বাইক চালানো কোন বাহাদুরি নয়, বরং বেশি স্পিডে বা বেপরোয়া মোটর সাইকেল চালানো রীতিমত বোকামি কাজ, এটা কোন বীবত্বের কাজ হতে পারে না। আমার কাছে এটাকে পাগলামি ছাড়া আর কিছুই মনে হয় না। বরং কোন দুর্ঘটনা না করে খুব ধীরে আজীবন মোটর সাইকেল চালিয়ে যাওয়াকে বাহাদুরি বলে।
সিলেটি আঞ্চলিক ভাষায় একটি প্রবাদ আছে - "তোমার নাই হুশ আল্লাহর কি দোষ!"
আসলে মোটর সাইকেলের অ্যাকসিডেন্ট মানেই বুঝে নিতে হবে যে এটা একটি মারাত্নক দূর্ঘটনা। মোটর সাইকেল অ্যাকসিডেন্ট মানে সামান্য ভুলের কারণে মৃত্যুবরণ ঘটে, মাত্র ১ সেকেন্ড। ভুলটি হয়ত অন্য কেউও করবে কিন্তু মৃত্যু হবে আপনার। ওয়ার্ল্ডের বেস্ট মোটর সাইকেল চালকও গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারবেনা যে তার দূর্ঘটনা ঘটবেনা। মনে রাখবেন - একটি মোটর সাইকেল অ্যাকসিডেন্ট, সারাজীবনের কান্না হয়ে থাকবে। তাই নিজের জীবনকে ভালবাসুন, নিজের পরিবারবর্গকে ভালবাসুন।
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) এর নিয়ম অনুযায়ী আপনি সর্বোচ্চ ১৫০ সিসির যে কোন বাইক রেজিষ্ট্রেশন করতে পারবেন এবং ১৫০ সিসির উপর কোন বাইক রেজিষ্ট্রেশন করার অনুমোদন পাবেন না। অর্থাৎ ১৫০ সিসির উপর কোন বাইক রাস্তায় পেলেই অবৈধ্য। বর্তমান সময়ে আমাদের ইয়াং জেনারেশনরা যে হারে মোটর সাইকেল কিনছে, তা আসলে মূল বিষয় নয়। কিন্তু তাদের কাছে যে বাইকগুলো দেখা যায় তা বেশিরভাগই ১৫০ সিসির উপরের বাইক। সাধারণত এদের কাছে যে মোটর সাইকেলগুলো দেখা যায় -
☞ Bajaj Pulsar 180
☞ Bajaj Pulsar 200NS
☞ Bajaj Pulsar 220
☞ Honda CBR 150R
☞ Honda CBR 250R
☞ KTM 200 Duke
☞ TVS Apache RTR 180
☞ Yamaha R15 Version 2
☞ Hero Karizma ZMR 250
এই মোটর সাইকেলগুলোকে বর্ডার ক্রস বাইক বলা হয়, কারণ এই মোটর সাইকেলগুলো ভারত থেকে সীমান্ত পেরিয়ে বেআইনিভাবে বাংলাদেশে ঢোকানো হয়ে। সাধারণত বাংলাদেশে মোটর সাইকেল শোরুমগুলোতে এই বাইকগুলা পাওয়া যায় না। আর আমাদের ইয়াং জেনারেশনরা এই বাইকগুলো পছন্দ করে এবং অনেকেই পাগল হয়ে কিনে থাকেন। কারণ এই বাইকগুলো দেখতে অনেক স্টাইলিস্ট এবং এই বাইকগুলা সিসি ১৫০ এর উপরে। এধরনের বাইক পাবার পর অনেকেই নিজেকে রাস্তার রাজা মনে করে, এবং আকাশে উড়াল দিতে মন চায়। আর ঠিক তখনই দুর্ঘটনা ঘটে।
ইয়াং বাইকারদের সম্পর্কে কিছু কথা:-
আসল বিষয় হচ্ছে এরা বাইক কিভাবে চালাচ্ছে। এরা বেপরোয়া স্পিডে বাইক চালায়, হুট করে মোড় নেয়। এদের মধ্যে বেশির ভাগই ট্রাফিক আইন জানেনা এবং এদের অনেকেরই লাইসেন্স নেই, থাকলেও তা জাল। এরা মনে করেন দ্রুত চালালে খুব তাড়াতাড়ি গন্তব্যে পৌঁছা যায়। আপাত দৃষ্টিতে এটা সত্য। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে একদম ভুল।। কারণ-ভদ্রভাবে চালিয়েও পাঁচ-সাত মিনিটে অনেক দূর যাওয়া যায়। ত্রিশ-চল্লিশ কিলো. পথ অতিক্রম করতে খুব বেশি সময়ের হেরফের হয় না। ভদ্রভাবে চালিয়ে যে সময় লাগবে, পাগলের মতো ছুটলে হয়ত তার চেয়ে ৫-৭ মিনিট কম লাগবে। এই সময়টুকু মাত্র! এটাকে দ্রুত পোঁছা বলা যায় না। একটা জীবনের জন্য এ সময় একদম তুচ্ছ। প্রতিদিন মিছেমিছি কত সময় আমরা নষ্ট করছি। আর রাস্তায় উঠলে মিনিটের হিসেব কষছি পাই- টু-পাই।
দু'চাকার ইঞ্জিন চালিত যান,
কেড়ে নিতে পারে আপনার প্রাণ,
সময় থাকতে আপনি সাবধান হয়ে যান।
মোটরসাইকেল চালানোর সময় যা খেয়াল রাখা উচিত:-
☑ অবশ্য অবশ্যই হেলমেট পড়ে চালানো উচিত। দূর্ঘনা ঘটলে অন্তত জীবনে বাঁচা যায়। মাথাটা দেহের অন্যান্য অঙ্গের তুলনায় অনেক ভারী। তাই অ্যাকসিডেন্ট হলে, বিশেষ করে পড়ে গেলে মাথাটাই আগে রাস্তার আছড়ে পড়ে। ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে মাথায় আঘাত লাগে। মাথায় খুব সাধারণ আঘাতেও মারা যায়। দেহের অন্য কোথাও এতো সাধারণ আঘাতে মৃত্যু হয় না। তাই হেলমেট পড়ে মাথাটা নিরাপদে রাখতে পারলে অনেক ক্ষেত্রে জীবন রক্ষা পেতে পারে। আর মৃত্যু লেখা থাকলে হবে। সেটা অন্য বিষয়। এ নিয়ে গোঁরামী বা বিতর্ক করা মুর্খতা বটে।
☑ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে চললে যে কোন সমস্যা আগেই বুঝা যায়। ফলে বড় রকমের কোন দূর্ঘটনা থেকে বাঁচা যায়।
☑ মোবাইলে কথাবলা মোটেও উচিত নয়। দূর্ঘটনা ঘটার দুই মুহূর্ত আগেও কেউ বুঝতে পারে না। যে মুহূর্তে বুঝতে পারা যায় সে মুহূর্তে করার কিছুই থাকে না। হয়ত মনে হতে পারে অনেক দিন মোবাইলে কথা বলেছি কিছুই হয়নি। হয়নি বলে হবে না-এমন ভাবনা আপনাকে ভয়ংকর সাহসী করে তুলতে পারে। এক সময় জীবন দিয়ে সেই অতি সাহসীকতার মূল্য পরিশোধ করতে হতে পারে। কাজেই আগে থেকে সাবধান হওয়ার মধ্যে কল্যাণ আছে।
☑ চালানোর সময় কেউ ওভারটেক করে সামনে গেলে তাকে ওভারটেক করে সামনে ওঠার চেষ্টা করা উচিত নয়। এ ধরনের মানসিকতা নিতানই ছেলেমি। তবে স্বাভাবিক গতিতে যদি কাউকে ওভাটেক করতে হয় তা করা যাবে।
☑ যে কোন ধরনের মোটর বা গাড়ির কাছাকাছি পিছনে পিছনে যাওয়া ঠিক নয়। এমনও হতে পারে সামনের গাড়ি কোন সিগনাল না দিয়েই ইউটার্ন করেছে। এরূপ ক্ষেত্রে যেন নিজেকে রক্ষা করা যায় এতটুকু দূরত্ব বজায় রেখে চলা উচিত। বিশেষ করে রিকসা, ভ্যান, মোটর সাইকেল, সাইকেল চালকেরা প্রাই ইউটার্ন করে।
☑ নিজের মোটরসাইকেলের পিছনে অন্য কোন মোটরযান থাকা যাবে না। পিছনে পিছনে কোন মোটরযান আসলে তাকে সাইড দিয়ে সামনে দিতে হবে। তাতে অনেক লাভ আছে। কোন কারণে কোথাও টোকা লেগে ছোটখাট দূর্ঘটনার কারণে আপনি বা আপনার মোটর-সাইকেল থেকে কেউ রাস্তার উপড়ে পড়ে গেলে ওই পিছনের মোটর দেহের উপর দিয়ে চলে যাবে। ফলে দেহটি ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে। বাঁচার কোন সম্ভাবনাও থাকবে না।
☑ মোটরসাইকেলে দুই জনের বেশি অরোহন করা উচিত নয়। যদি কোন কারণে জরুরী হয়েই যায় তবে খুব সতর্কতার সাথে চালানো উচিত। কাছাকাছি চলাচল করা যেতে পারে। লং রুটের জন্য একদম করা যাবে না।
☑ ট্রনিং এ খুব আস্তে চালানো উচিত। যে বাঁকে সামনে কে আসছে বা যাচ্ছে দেখা যায় না তাকে অন্ধবাঁক বলে। তা না হলে বিপরীত দিক থেকে উদ্ভট কোন পাগল ধরনের চালক দ্রুত বেগে এসে আপনার মোটর সাইকেলের উপর উঠে পড়তে পারে। আপনি বুঝতেই পারবেন না কি হ’ল। শুধু শুধুই জীবন দিতে হতে পারে আপনাকে।
☑ যে কোন ধরনের বাঁকে পিছনের ব্রেক চাপা উচিত নয়। এতে করে পিছনের চাকা সামনে গিয়ে প্রায় ৯০ থেকে ১৬০ ডিগ্রি কোণে ঘুরে যেতে পারে। এবং দূঘটানা মাস্ট। সে জন্য সামনে কোন বাঁক আসলেই বাঁকের মাত্রা অনুযায়ী আগেই স্লো করতে হবে। এবং প্রয়োজনে আস্তে করে সামনের ব্রেক চাপতে হবে। তাহলেই মোটর-সাইকেল নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আসবে। এটা এক রকম নিশ্চিত করে বলা যায় যে দ্রুত বেগে থাকা অবস্থায় পিছনের ব্রেক চাপলে অবশ্যই মোটর-সাইকেল উল্টে যাবে। তবে হঠাৎ করে যদি বে-খেয়ালে থাকা অবস্থায় কোন বাঁক এসে পড়ে তবে ক্লাচ, সামনে ব্রেক, পিছন ব্রেক সাবধানে একসাথে চেপে মোটর-সাইকেল নিয়ন্ত্রণে আনা যেতে পারে। এক্ষেত্রে চালককে প্রশিক্ষিত ও এক্সপার্ট হতে হয়।
☑ চালানো অবস্থায় কথা বলা বা মনে মনে কোন অংক কষা, টাকা-পয়সা বা অন্য কিছুর হিসেব নিকেশ করা বা কোন দুঃশ্চিন্তা বা সুখের চিন্তা করা উচিত নয়।
☑ বেশি আনন্দিত অবস্থায় চালানো ঠিক নয়।
☑ রাস্তায় চালানোর সময় দু’হাত ছেড়ে দিয়ে পরীক্ষা করা উচিত নয় যে, দুই হাত ছেড়ে দিয়ে চালাতে পারেন কি’না। হয়ত এমন দেখে থাকতে পারে না যে, অন্যদের অনেকেই পারে। এমনটি করতে যদি ইচ্ছেই হয় তবে কোন খেলার মাঠে অত্যন্ত সাবধানে প্র্যাকটিস করতে পারেন। আর এভাবে চালাতে শেখার মধ্যে বিশেষ কোন গৌরব নেই।
শেষ কথাঃ অ্যাকসিডেন্ট এমন একটি ঘটনা যা সিচ্যুয়েশন সৃষ্টি হওয়ার এক মুহূর্তের মধ্যে সংঘটিত হয়। এখানে কারো করার কিছুই থাকে না। আমরা যত বুদ্ধিই খাটাই না কেন সিচ্যুয়েশন সৃষ্টি হলে তা রোধ করা কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। তবুও সেই সিচ্যুয়েশন যাতে সৃষ্টি না হয় তার জন্য আমরা সতর্ক হতে পারি মাত্র। তারপর আল্লাহ্.........।