
প্রতিবারের মতো এবারো বইমেলায় গিয়ে বেশ কিছু বই কেনা হয়েছে। সবগুলো এখনও পরে শেষ করে উঠতে পারিনি। তবে যে গুলো এখন পর্যন্ত পড়া হয়েছে তার মধ্যে সবচাইতে ভাল লেগেছে বিভূতিভূষণের “ চাঁদের পাহাড়”, অসাধারণ একটা বই। এই বইটা হয়ত অনেকেই অনেক আগেই পরে ফেলেছেন, তবে আমার এবারই পড়া হল আমার সমুদ্রের কথায়। আমি আজকে বইটা নিয়ে লিখব। আমি অবশ্যই বিভূতিভূষণের লেখার সমালোচক নই, আমি নিতান্তই তার একজন পাঠক হিসেবে লিখছি।
মানুষ এতো চমৎকার কি করে লিখে আমি ভেবে পাইনা। লেখক শুরুতেই বলেছেন যে, “এই বইয়ের গল্প ও চরিত্র আমার কল্পনাপ্রসূত”। তবে উনি কিছু বিদেশী গ্রন্থের সাহায্য নিয়েছেন। একটা মানুষ যে কিনা একটা স্থানে না যেয়ে কি করে তার এতো জীবন্ত বর্ণনা দিতে পারে সেটা জানতে হলে “চাঁদের পাহাড়” পড়তেই হবে। পুরোটা গল্পই উত্তেজনায় ভরা, পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল এই বুঝি মধ্য আফ্রিকার কোন গহীন বন থেকে আমার ই উপর কোন সিংহ ঝাঁপিয়ে পরছে অথবা মনে হচ্ছিল আমি হয়ত কোন শ্যাওলা পরা পাহাড়ে হেঁটে বেড়াচ্ছি বুনো ফুলের গন্ধ শুঁকতে শুঁকতে।
তবে এই বইটা পড়ে আমার এজন্য খুব মনখারাপ হয়েছে যে কত সাধারন ভাবে জীবনটা চলে যাচ্ছে, এতো সুন্দর পৃথিবীতে আমরা জন্মেছি অথচ তার সৌন্দর্যই আমরা উপভোগ করতে পারছিনা। জীবনে দেখার মতো কত কিছু আছে, অথচ আমরা কত ক্ষুদ্র বিষয় নিয়ে মাথা ঘামিয়ে এই জীবনটা পার করে দিচ্ছি। আর পরে মনে হয়েছে আমরা কত ক্ষুদ্র অথচ আমাদের মাঝে কত অহঙ্কার……….. আর প্রকৃতি এতো বিশাল কিন্তু সেই সাথে কতো উদার।

আমি বইটির কিছু অংশ এখানে তুলে ধরছি, গল্পের মুল চরিত্র যখন সাড়ে ছ হাজার ফুট উঁচু পাহাড়ে যাত্রা শুরু করেছিল, মূলত এই পাহাড়ের উপর যাত্রাটাই আমার সবচেয়ে প্রিয়।
“পথ বলে কোন জিনিস নেই। চোখের সামনে শুধুই গাছের গুঁড়ি যেন ধাপে ধাপে আকাশের দিকে উঠে চলেছে। কোথা থেকে জল পড়ছে কে জানে, পায়ের নিচের প্রস্তর আর্দ্র ও পিচ্ছিল, প্রায় সর্বত্রই পাহাড়ের উপর শ্যাওলা ধরা। পা পিছলে গেলে গড়িয়ে নিচের দিকে বহুদুর চলে গিয়ে তীক্ষ্ণ শিলাখণ্ডে আহত হতে হবে।
বড় চমৎকার বন, যেন পরির রাজ্য, মাঝে মাঝে ছোটখাটো ঝরনা বনের মধ্য দিয়ে খুব উপর থেকে নিচে নেমে যাচ্ছে।গাছের ডালে ডালে নানা রঙের টিয়া পাখি চোখ ঝলসে দিয়ে উড়ে বেড়াচ্ছে। বড় বড় ঘাসের মাথায় মাথায় শাদা শাদা ফুল, অর্কিডের ফুল ঝুলছে গাছের ডালের গায়ে, গুঁড়ির গায়ে।“


অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


