১। প্রতিযোগিতার কোরিওগ্রাফার থেকে শুরু করে মেকাপম্যান পর্যন্ত সবাই প্রতিযোগীদের সঙ্গে আপত্তিজনক ব্যবহার করেছে। ইভেন্ট আয়োজকরা বোঝাতে চেয়েছে, নিজেকে যে যতো উজাড় করে দেবে তার স্কোরিং ততো বেশি হবে।
২। এমন এক হোটেলে রাখার ব্যবস্থা করা হয়, যেখানে অসামাজিক কর্মকাণ্ডের স্পস্ট ইঙ্গিত ছিল। হোটেলে আসা খদ্দেরদের অশ্লীল ইশরায় বিব্রত হতে হয়েছে।
৩। প্রতিযোগিতার এক পর্বে বিকিনির মতো স্বল্প বসনে ফটোসেশনের প্রস্তাব দেওয়া হয়। এ ফটো দিয়ে নাকি কোন এক ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ করা হবে। সেই খোলামেলা সেশনে অংশ নিতে আপত্তি জানালে ভীষণ দুর্ব্যবহার করা হয়।
৪। সবচেয়ে আপত্তির বিষয় ছিল, মেয়েদের পোশাক ঠিকঠাক করে দেওয়ার জন্য সেখানে রাখা হয় পুরুষ ড্রেসম্যান।
এতদিন ভারতীয় অনুকরণে বাংলাদেশী আয়োজকরা বিভিন্ন নামে সুন্দরী প্রতিযোগীতার আয়োজন করে যাচ্ছিল। এবার বাংলাদেশে সরাসরি ভারতীয়দের উদ্যাগে আয়োজন করা হয় সেই ধরনের একটি প্রতিযোগীতা। নাম মিস এ্যান্ড মিসেস অদ্বিতীয়া। প্রথম পর্ব বাংলাদেশে, দ্বিতীয় পর্ব কোলকাতায়। দুই বাংলা থেকে নাকি একজন করে মিস ও মিসেস অদ্বিতীয়া বাছাই করা হবে। হয়েছেও। কিন্তু সেই প্রতিযোগীতায় চুড়ান্ত পর্বের জন্য বাংলাদেশ থেকে নির্বাচিত তিন জনের একজন আনহা আমিন কৌশলে কোলকাতা থেকে পালিয়ে এসে কিছু তথ্য ফাঁস করেছেন উপরের কথাগুলোর মাধ্যমে।
তিনি জানিয়েছেন, প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে গিয়ে কলকাতায় অনাকাঙ্খিত ও অনৈতিক ঘটনার মুখোমুখি হই। মুসলিম নারী হিসেবে নিজেকে সেই আপত্তিজনক পরিবেশে মানাতে পারি নি বলেই মায়ের অসুস্থতার কথা বলে দেশে ফিরে আসি।” আনহা আমিনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিজয়ী সিলভিয়া আফরিন মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানালেও বলেন, “অচেনা-অজানা জায়গায় কিছু বিব্রতকর পরিবেশের মধ্যে আমাদের পড়তে হয়েছে। এরকম পরিস্থিতি কমবেশি সব রিয়েলিটি শোতে তৈরি হয়।”
সুন্দরী প্রতিযোগিতার অসভ্যতার নামে নারী অবমাননার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে সচেতন মহল বলে আসছে। কিন্তু ওসবের আয়োজক ও তথাকথিত প্রগতিবাদীরা ওই প্রতিবাদকে মৌলবাদী কর্মকান্ড ও নারী অধিকারের বিরোধীতাকারী হিসেবে চিহ্নিত করার প্রয়াস চালিয়েছে। অথচ ওই ধরনের একটি প্রতিযোগীতার চুড়ান্ত পর্ব থেকে একজন নারী সেই জন্যেই নিজেকে প্রত্যাহার করে পালিয়ে এসেছেন যা আমরা অনেক আগে থেকেই বলে আসছি। ওই সব প্রতিযোগিতার উদ্দেশ্য যে আসলে নারী উন্নয়ন নয় বরং নারীদের ভোগ করার একটা ষড়যন্ত্র, সেটি আবারও প্রমাণিত হয়েছে আনহা আমিনের কথার মাধ্যমে। সুন্দরী প্রতিযোগিতার মুকুট মাথায় পড়ানোর লোভ দেখিয়ে একজন মেয়েকে সামান্য মেকাপম্যান থেকে নিয়ে আয়োজক, বিচারক সহ অর্থাৎ সকল পর্যায়ের পুরুষের কাছে নিজের শরীর, আব্রু, ইজ্জতকে সপে দিতে হচ্ছে। যে যত বেশি দিতে পারবে সে তত বেশি স্কোর পাবে।
আনহা আমিনের বিবেক শেষ পর্যন্ত কথা বললেও বাকী অংশগ্রহণকারীদের বিবেক যে কথা বলেনি তা সিলভিয়া আফরিনের কথা দিয়েই বুঝা যায়। তিনি বা তারা বলেই দিয়েছেন নাচতে নেমে ঘোমটা দেবনা। সব রিয়েলিটি শোতে এসব হয়। অর্থাৎ এসব করেই মুকুট নিতে হয়। প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণকারীরা সাধারণত এসব প্রকাশ করেন না। আলোর নামে নিকষ কালো অন্ধকারের সেই জগতের বাস্তব অভিজ্ঞতা অনেকে চক্ষুলজ্জ্বার কারণেও প্রকাশ করেন না। অথচ যারা অংশগ্রহণ করে তাদের সকলের অভিজ্ঞতা আনহা আমিনের মতোই।
ওই সব প্রতিযোগীতার মূল উদ্দেশ্যই হয় নারীদের পণ্য হিসেবে উপস্থাপন করে ভোগ করা। এরপর যতদিন যৌবন থাকবে ততদিন ভোগ্যপণ্য হিসেবেই সেই নারীকে ব্যবহার করতে থাকবে রঙ্গিন জগতের বিভিন্ন স্বপ্ন দেখানোর মাধ্যমে। এসব যেমন দারুচিনি দ্বীপের নায়িকা খোঁজার প্রতিযোগীতায় করা হয়, তেমন অরুন চৌধুরীদের আনন্দ আলোতেও হয়, আবার লাক্স-চ্যানেল আই এর সুন্দরী প্রতিযোগীতাও ব্যাতিক্রম নয়। সব জায়গায় একই ভাবে নারীদের ভোগ্যপণ্য হিসেবে উপস্থাপন করা হয় এবং যে নারী নিজের আব্রু, ইজ্জতের মাধ্যমে অরুনদের সর্বোচ্চ খুশি করতে পারবে, তিনিই হবেন, সেরা সুন্দরী বা দারুচিনির দ্বীপের নায়িকা।
আনহা আমিন সেই গোগন কথা প্রকাশ করে দিয়েছে, নিজের চাক্ষুস অভিজ্ঞতা দিয়ে। নারীরা কি এখনো সতর্ক হবেনা?
রিলেটেড পোস্ট- প্রয়োজনে আমার মেয়ে বিয়ে করে ফেলুক, কিন্তু ওই জগতে অবশ্যই না!
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই আগস্ট, ২০১২ বিকাল ৪:২৩