সুপারস্টার প্রতিযোগিতা তার সৌন্দর্যের দাম দিতে গিয়ে মেধা ও ভবিষ্যৎ গড়ার পথ রুদ্ধ করে দিয়েছে।
কথাটি লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতা ২০১২ এর সেরা ৫ এ থাকা সোমার বড় বোন সায়লার। ওই প্রতিযোগীতায় অংশ নেয়ার পর তাকে ক্লাস করার সুযোগ দেয়া হয়নি। ফলে ঢাবি'র আইবিএ'র বিবিএ ছাত্রত্ব হারিয়েছে সোমা। গ্রুমিংয়ের নামে নাকি তাকে সম্পূর্ণ আটকে রাখা হয়েছিল। ফলে সে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছুটি নিতে পারেনি, আবেদনপত্র জমা দেওয়াও সম্ভব হয়নি। এমনকি পরিবারের সঙ্গেও যোগযোগ করতে পারে নি।
এ অবস্থায় সোমার পরিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রেস্টিজিয়াস শিক্ষা কার্যক্রম থেকে সোমার মাঝপথে ঝড়ে পড়ার জন্য দায়ী করছে ওই সুপারস্টার প্রতিযোগিতাকে। সোমার ছাত্রত্ব ধ্বংস হয়ে গেলেও কিন্তু ইউনিলিভারের ব্যবসা বন্ধ হয়নি। এর মধ্যে সোমাকে ব্যবহার করে বড় ব্যবসাও ফেদেছে তারা।
ওই ধরনের একটি সুন্দরী প্রতিযোগীতার বিরুদ্ধে মেধা-বুদ্ধিমত্বা-প্রতিভা নয়, শরীর ও চামড়া হয়ে উঠুক তোমার ভবিষ্যতের নির্মাতা...! শিরোনামে লিখেছিলাম, ...এভাবে নারীর মননে গেঁথে দেয়া হচ্ছে, সৌন্দর্যই আসল শক্তি। সে সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তুলতে হবে। কিভাবে? উগ্র মেকআপে, স্বল্প বসনে যতটুকু সম্ভব শরীর না ঢেকে নেমে পড়ো। তোমাকে কেউ ঠেকাতে পারবে না। জ্ঞানের শক্তির কথা নারীর আর মনে থাকবে না। নারীকে হতে হবে সাদা। White Beauty। টার্গেট একটাই, সাদা হবো। তুমি কিছুই পাবেনা, যদি চামড়া তোমার সাদা না হয়। আর শুধু সাদা হলেই হবেনা, সেই সাদা শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ যদি সকলের সামনে উম্মূক্ত করে দেয়া না হয়, তাহলে নারীর সবকিছুই বৃথা! ...
বিজ্ঞাপনের ধারাবাহিকতায় নারীকে বাস্তবে প্রদর্শন ও উম্মূক্ত করতে হবে। তা হতে হবে আরো বাস্তব, আরো ব্যাপক, আরো নিকটে। কিভাবে? সুন্দরী প্রতিযোগীতা। হাজারো সুন্দরী উম্মূক্ত হবে। তাদের ভিতর থেকে বের করে আনা হবে শারীরিক সৌন্দর্যের সুপারষ্টার। নারীর প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে মিলতে হবে পুরুষের ষ্টান্ডার্ড আকাংখার সাথে। সেই পরীক্ষায় পাশ করতে হলে দেখাতে হবে শরীর, যেভাবে বলা হবে সেভাবে হাটতে হবে, বাঁকতে হবে, দুলতে হবে। খোলামেলা হতে হবে বিশেষ পোষাকে। প্রকৃতি নারীত্বের যে অনন্য সৌন্দর্য তোমার শরীরে দিয়েছে তার সবকিছুই উম্মূক্ত করো। বুঝানো হবে শরীর দেখিয়েই তুমি বিখ্যাত ও বড় হতে পারো। মেধা-বুদ্ধিমত্বা-প্রতিভা নয়, শরীর ও চামড়া হয়ে উঠুক তোমার ভবিষ্যতের নির্মাতা।
মেধাবী সোমার ধ্বংস হয় যাওয়া শিক্ষাজীবন সেই কথা গুলোর সত্যতাই যেন আবার ফুটিয়ে তুলছে। সোমার চোখে-মুখে-মননে-শরীরে এমন স্বপ্ন এঁকে দেয়া হয়েছিল, শিক্ষাজীবন যে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে তা বুঝার সুযোগই তার হয়নি। সবকিছু শেষ হয়ে যাওয়ার পরই সোমা ও তার পরিবার বুঝতে পেরেছে সুন্দর একটি স্বপ্ন ও জীবন ওই সুন্দরী প্রতিযোগীতা ধ্বংস করে দিয়েছে।
এবার সুন্দরী ক্রীম মেখে সাদা হয়ে চাকুরি পাওয়া বিজ্ঞাপনের সেই কালো মেয়ের পিতা-মাতার মতো সোমার পিতা-মাতার চোখে আনন্দের নয়, কষ্ট ও হতাশার জল দেখা যাচ্ছে। কারণ বিজ্ঞাপনে সাদা চামড়া চাকুরী মিলিয়ে দিলেও বাস্তবে তা হয়না, হতে পারেনা। সাদা চামড়া ও শরীরিক সৌন্দর্য সবকিছুর মূল হতে পারেনা। প্রয়োজন মেধা, বুদ্ধিমত্বা, প্রতিভা, জ্ঞান, শিক্ষা। মেকাপ করে সোমার শারিরীক সৌন্দর্য সবার সামনে ফুটিয়ে তোলা সম্ভব হলেও সত্যিকারের সফলতা লাভের বাকী সবকিছুই ধ্বংস করে দিয়েছে ওই প্রতিযোগীতা। শুধু কি শিক্ষাজীবন ধ্বংস হচ্ছে? বরং ইজ্জ্বত, আব্রু, শরীর অনেক কিছুই নাকি শেষ করে দিতে হয়।
সোমার মতো শতশত সোমা এভাবে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে ওই সব অসভ্য ব্যবসায়ীদের ব্যবসা প্রসারের যন্ত্র হতে গিয়ে। সোমার মতো এক মেধাবীর ধ্বংস হয়ে যাওয়া দেখে কি এবার বাকীরা সতর্ক হবে? নাকি সেই আগের মতোই ধ্বংসের পথে ছুঁটে যাবে আধুনিকতা ও প্রগতিশীলতার নামে?!
এই লিখাটি সহ আরো কয়েকটি পোস্ট একত্রিত করে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম প্রকাশ করেছিল এ শিরোনামে- শরীর দেখাও, সুপারস্টার হও