somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেধা-বুদ্ধিমত্বা-প্রতিভা নয়, শরীর ও চামড়া হয়ে উঠুক তোমার ভবিষ্যতের নির্মাতা...!

১৮ ই অক্টোবর, ২০১১ সকাল ৯:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
এবার নাকি বাংলাদেশে হবে মিস ইউনিভার্সিটি প্রতিযোগীতা!!

মনে পড়ে অপুর সেই উক্তিটি? "সে আমার সম্পত্তি নয়, সে আমার সম্পদ।"
নারীর সৌন্দর্য ও অনুভূতি যা নারীর সম্পদ বা ভোগাতীত ঐশ্বর্য। সেই সম্পদকে প্রদর্শনীর মাধ্যমে সকলের সম্পত্তি বা ভোগ্যবস্তু হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে।

নারী এমনিতেই তার আপন সৌন্দর্যে অনন্যা। আর সে সৌন্দর্যকে যখন নগ্ন প্রকাশে বা দেহের বিশেষ আকৃতিগত প্রদর্শনকে পুঁজি করে প্রকাশ করা হয়, তখন অনেকে সুযোগ নিতে চায়। মানব প্রকৃতি সুযোগ পেলে নিষিদ্ধ বস্তুর দিকে যেতে চায়। অনেকে সুযোগের অভাবে ভদ্র। ওরা যখন সুযোগ পায় তখন তা ভয়ানক রূপ নেয়। দেহ প্রদর্শনীর মাধ্যমে নারী কি সেই সুযোগকে হাতের কাছে পৌঁছিয়ে দিচ্ছে?

পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতায় সাবান একটি লিঙ্গ নিরপেক্ষ উপাদান। এটি নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যেই প্রয়োজনীয়। কিন্তু অধিকাংশ সাবানের মডেল হিসেবে টার্গেট করা হয়েছে নারীকে। সাবান মাখতে-মাখতে নারী মাঠ-ঘাট-পাহাড়-সমুদ্র মাড়িয়ে দৌড়াচ্ছে, পাহাড়ি ঝর্ণায়, খোলা আকাশের নীচে উম্মূক্ত চামড়াতে সাবান মাখছে! সাবানের ফেনায় নারী সাদা হচ্ছে, যেন সাবানের প্রধান কাজ নারীকে সাদা করা। এরপর সাবান মেখে সাদা হওয়া নারীকে দেখে রাজপুত্রের চোখের পলক আর পড়েনা! রাজপুত্র এবার কাছে না এসে পারেনা!

চামড়া সাদা না হলে এয়ার হোষ্টেস হওয়া যাবেনা, কোন চাকুরী পাওয়া যাবেনা! তাই চামড়া সাদা করতেই হবে। এক্ষেত্রে সুন্দরী ক্রিমই ভরসা। আবার তোমার মুখ সাদা কিন্তু গলা, হাত, বুক, পায়ের চামড়া কালো হলে কি চলবে? তাই পুরো শরীরে মাখো সাদা হওয়ার বডি লোশন। সাদা হয়ে স্বল্প বসনে পুরুষের সামনে দাঁড়াও, চাকুরী আর কেউ ঠেকাতে পারবে না। খুশিতে তোমার মা-বাবার চোখে জল চলে আসবে।

এভাবে নারীর মননে গেঁথে দেয়া হচ্ছে, সৌন্দর্যই আসল শক্তি। সে সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তুলতে হবে। কিভাবে? উগ্র মেকআপে, স্বল্প বসনে যতটুকু সম্ভব শরীর না ঢেকে নেমে পড়ো। তোমাকে কেউ ঠেকাতে পারবে না। জ্ঞানের শক্তির কথা নারীর আর মনে থাকবে না। নারীকে হতে হবে সাদা। White Beauty। টার্গেট একটাই, সাদা হবো। তুমি কিছুই পাবেনা, যদি চামড়া তোমার সাদা না হয়। আর শুধু সাদা হলেই হবেনা, সেই সাদা শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ যদি সকলের সামনে উম্মূক্ত করে দেয়া না হয়, তাহলে নারীর সবকিছুই বৃথা! এই সাদা হতে গিয়ে মনের সাদা দূর হয়ে গেলেও ক্ষতি নেই। কিন্তু চামড়া সাদা না হলে জীবন তোমার বৃথা।

বিজ্ঞাপনের ধারাবাহিকতায় নারীকে বাস্তবে প্রদর্শন ও উম্মূক্ত করতে হবে। তা হতে হবে আরো বাস্তব, আরো ব্যাপক, আরো নিকটে। কিভাবে? সুন্দরী প্রতিযোগীতা। হাজারো সুন্দরী উম্মূক্ত হবে। তাদের ভিতর থেকে বের করে আনা হবে শারীরিক সৌন্দর্যের সুপারষ্টার। নারীর প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে মিলতে হবে পুরুষের ষ্টান্ডার্ড আকাংখার সাথে। সেই পরীক্ষায় পাশ করতে হলে দেখাতে হবে শরীর, যেভাবে বলা হবে সেভাবে হাটতে হবে, বাঁকতে হবে, দুলতে হবে। খোলামেলা হতে হবে বিশেষ পোষাকে। প্রকৃতি নারীত্বের যে অনন্য সৌন্দর্য তোমার শরীরে দিয়েছে তার সবকিছুই উম্মূক্ত করো। বুঝানো হবে শরীর দেখিয়েই তুমি বিখ্যাত ও বড় হতে পারো। মেধা-বুদ্ধিমত্বা-প্রতিভা নয়, শরীর ও চামড়া হয়ে উঠুক তোমার ভবিষ্যতের নির্মাতা।

আসলে পণ্যের ভীড়ে, পণ্যের প্রচারে নারী তার অস্তিত্বকে, নারীত্বকে পণ্যের ন্যায় উপস্থাপনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। বড় আঙ্গিকে দেখলে এক্ষেত্রে পুরুষতান্ত্রিক ভাষাটিই প্রধান হয়ে উঠেছে। আর নারীর নিরবতা পুরুষতান্ত্রিক লোলুপ ষড়যন্ত্রকে আরো উৎসাহিত করছে। এভাবে বিজ্ঞাপন, সুন্দরী ও ফ্যাশন প্রতিযোগীতার অসভ্যতাকে শক্ত ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছে।

লজ্জ্বা নামক অনুভূতিটি যখন লোপ পাবে, তখন অবাধ যৌনতার গন্ধকে ভূল মনে করবে না। প্রকাশ্য-গোপনে বা দু'চোখের সামনে মানুষ্যত্ববোধ লোপ পাবে। এভাবে নারী হয়ে উঠেছে লোভনীয় এক মাংসপিন্ডে। পশ্চিমা বিশ্বে পারিবারিক ও সামাজিক জীবন ধ্বংস হয়েছে এ পথে। আমাদের এখানেও শুরু হয়েছে। খুব বেশী দিন হয়তো লাগবে না সম্পূর্ণ মূল্যবোধ ধ্বংস হয়ে যেতে। লক্ষণ শুরু হয়ে গিয়েছে। নারীরা যদি তা বুঝার চেষ্ঠা করতো! নাকি বুঝেও বুঝেনা?
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই আগস্ট, ২০১২ বিকাল ৩:৩১
৭৫টি মন্তব্য ৬৩টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×