"একজন মানুষকে চিনতে কতটুকু সময়ের প্রয়োজন? " ফারাহ দুম করে প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিয়েছিলো আমার মুখের ওপর....
তুই কি ভাবিস এ ব্যাপারে? - আমি পাল্টা প্রশ্ন করেছিলাম।
উত্তর চেয়েছি দোস্ত, আগে সেটা দে। পরে প্রশ্নের জবাব পাব- বললো ফারাহ।
আমাদের বন্ধুমহলে সবচাইতে বোকাসোকা যে বন্ধুটি তার কাছ থেকে এমন প্রশ্ন শুনে বেশ অবাকই হয়েছিলাম। যাহোক, আমার উত্তর ছিলো, পৃথিবীর সবচাইতে কঠিন কাজ হলো মানুষকে চেনা। দু'টো মানুষ সারাজীবন পাশাপাশি থেকেও কাউকে সম্পূর্ণভাবে চিনতে পারে না, সম্ভবও নয়। কথাগুলো বলতে বলতে বোঝার চেষ্টা করছিলাম আসলে ওর মনের মধ্যে কি চলছে....
বেশ চিন্তিতভাবেই উত্তর দিলো, "হুমম" ।
- কি হয়েছে রে? হঠাৎ এমন কথা?
- নাহ কিছুনা।
- বল না? এত্তো সিরিয়াস একটা প্রশ্ন করলি যে ? কোনও সমস্যা চলছে তমালের সাথে?
- সমস্যা ভাবলে সমস্যা , না ভাবলে সমস্যা'ই না। ওর সাথে সম্পর্কটাই তো সবচাইতে বড় সমস্যা ওর জন্য। আমার আজকেল মনে হয় জোর করেই আমাদের সম্পর্কটা টিকে আছে।
- ওমা! সে কি কথা? তোদের তো কখনোই এমন মনে হয়নি। বরং আমাদের সার্কেলে সবচাইতে সুখি জোড়া হিসেবে আমরা তোদের কথাই ভাবি।
- সুখি? সাত বছর প্রেম করার পর সুখের ডেফিনিশনটা মনে হয় পাল্টে যায়। ইনফ্যাক্ট সবকিছুই বদলে যায়, মানুষটাও।
[বেশ থতমত খেয়ে গেলাম। এধরণের কথাবার্তা আসলেও কখনো ফারাহর মুখে শুনিনি। ঘটনা যাই ঘটুক না কেন, খুব সিরিয়াস কিছু হয়েছে বুঝলাম। ]
- তুই যদি চাস আমাকে বলতে পারিস ফারাহ।
- হুমম
- কি হুমম? কি ভাবছিস?
- তমাল বদলে গেছে রে। অনেক বদলে গেছে।
- এ কথা কেনো মনে হলো তোর? ও কি বলেছে তোকে?
- কিছু বলা লাগেনা রে....বোঝা যায়।
- আজব! এত হেঁয়ালি করিস না তো!! ডিটেইলে বল শুনি।
- গত দুই মাস ধরেই ওর মধ্যে একটা অন্যমনস্কতা লক্ষ্য করছি। আগের মতো যোগাযোগ নেই। মন চাইলে মাঝে মধ্যে ফোন করে। দেখা করতে চায়না। ভেবেছিলাম অফিসে হয়তো কাজের প্রেশার অনেক বেশী। কিন্তু পরে দেখি ব্যাপারটা তাও না।
এই বলে একটু থামলো ফারাহ।
- এক গ্লাস পানি খাওয়া ।
- আচ্ছা আনছি, বলে উঠে ওকে পানি এনে দিলাম।
- পানিটা শেষ করে বললো, এই সম্পর্কটা আর আগাবেনারে।
- কি!!!!
- হুমম
- আবার হুমম???
- আমি কাজের ব্যস্ততা ভেবেছিলাম। পরে শুনি চাকরি বদলেছে। দু'মাস আগেই। কিন্তু আমাকে জানায়নি। একদিন ওর আগের অফিসে ফোন করে শুনলাম। পরে ওকে বলেছিলাম যে কেন জানালে না? ওর জবাব কি ছিলো শুনবি?
- কি?
- তোমার কাছে সবকিছুর এক্সপ্লেইনেশন দিতে হবে?
- আজব!
- হ্যাঁ। নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছিলামনারে।
- তারপর?
- এটা গত সপ্তাহের ঘটনা। তারপর আমি বেশ জোর করে হলেও ওকে দেখা করতে বললাম। অনেক টাল-বাহানা করলো। পরে গতকাল ওর বাসায় গেছিলাম।
- হুমম।
- আমাকে দেখে ভুত দেখার মত চমকে উঠলো। দোস্ত ৭ বছরের সম্পর্ক। ওর চেহারা দেখেই আমি বুঝে গেছি কিছু একটা ব্যাপার আছে যেটা ও আমার কাছে লুকাচ্ছে। জানিনা কি হলো আমার, আমি সরাসরি ওকে প্রশ্ন করলাম যে, তোমার কি এমন কোনও কথা আছে যেটা তুমি আমাকে জানাতে চাও?
- .......
- ও অনেকক্ষণ চুপ করে রইলো। আমি জানিনা কেনো আমার প্রচন্ড মেজাজ খারাপ হলো। আই ওয়াজ শাউটিং! "উইল ইউ প্লিজ টেল মি হোয়্যাট দ্য হেল হ্যাপেনড উইথ ইউ?"
- হুমম
- ও মিন মিন করে বললো, "আই ডোন্ট লাভ ইউ এনিমোর। আই ডোন্ট ফিল ফর ইউ নাউ " বিশ্বাস কর!! আমার মনে হলো পায়ের নিচে থেকে মাটি সরে গেছে। হাত পা অবশ হয়ে গেলো। বুকের ভেতরটা একটা মোচড় মেরে হঠাৎ করে একদম খালি হয়ে গেলো! অঝোরে কাঁদছিলাম।
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৫ ভোর ৬:৪৫