somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কদমরসুল দরগা ভ্রমণ চিত্র

১৯ শে আগস্ট, ২০১১ দুপুর ২:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


নারায়ণগঞ্জের আর একটি চমৎকার যায়গা হচ্ছে কদমরসুল দরগা। নারায়ণগঞ্জ শহরের বিপরীত দিকে শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্ব পাড়ে নবীগঞ্জে অবস্থিত কদমরসুল দরগা। চমৎকার এই দরগাটিতে রয়েছে আশ্চর্য একটি জিনিস। এখানে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-এর কদম মোবারকের ছাপ সংবলিত একটি পাথর রয়েছে। এর জন্যই দরগাহ এর নামকরণ হয়েছে কদমরসুল দরগাহ। একটি সুউচ্চ স্থানে কদম রসুল দরগাহ অবস্থিত।


চলুন তাহলে দেখে আসি কদমরসুল দরগা। নারায়ণগঞ্জ ভ্রমণের প্রথমাংশে আমরা দেখেছি হাজীগঞ্জ জলদুর্গ আর দ্বিতীয়াংশে দেখেছি [linkhttp://zizipoka.com/travel/1343|খেয়া ঘাট]। এই খেয়া খাট থেকেই নদীর অপর পারের কদমরসুল দরগা দেখতে পাওয়া যায়।


(নৌকো থেকে দেখা যাচ্ছে কদমরসুল দরগা।)

প্রথমেই খেয়া ঘাট থেকে একটি নৌকো নিয়ে শীতলক্ষ্যা পার হয়ে যান। অপর পারে গিয়ে হেঁটেই চলে যেতে পারেন কদমরসুল দরগায় বা রিক্সা নিলে ৫টাকা নিবে ভাড়া।


(এখানেই রিক্সা থেকে নেমে যেতে হবে।)

রিক্সা আপনাকে একেবারে দরগার গোঁড়ায় নিয়ে যাবে। সেখানে দেখতে পাবেন বিশাল উঁচু একটি প্রবেশ তরণ। চমৎকার কারুকাজ করা সুন্দর সুউচ্চ এই স্থাপনা দেখে মনে হবে একটি সুন্দর মসজিদ বা দরগা। আসলে এটি একটি প্রবেশ তোরণ। অনেকগুলি সিঁড়ি ডিঙ্গিয়ে আপনাকে উঠতে হবে আপনাকে উপরে। এই তোরণটি মোটামুটি পাঁচতালা দালানের উচ্চতার সমান। সিঁড়ি দিয়ে উঠার আগে জুতা খুলে হাতে নিয়ে নিতে ভুলবেন না।


(প্রবেশ তোরণ।)

তোরণ পার হয়ে ভীরতে ঢুকে দেখবেন উত্তর দিকে রয়েছে একটি মসজিদ আর দক্ষিণ দিকে আছে একটি কবরস্থান যেখানে রয়েছে ১৭টি পাকা কবর। এই দুইয়ের মাঝে আছে ছোট্ট একটি এক গম্বুজ বিশিষ্ট মাজার। এখানেই রয়েছে আশ্চর্য সেই মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-এর কদম মোবারকের ছাপ সংবলিত পাথরটি। বড়সড় একটি খড়ম আকৃতির একটি কালো পাথর এটি। এখানকার খাদেম বা হুজুরকে বললেই আপনাকে দেখাবে সেই কালো পাথরটি যেটাতে বেশ বড় একটি পায়ের ছাপ দেখা যাবে। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী এটি মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-এর কদম মোবারকের ছাপ। অবশ্য সত্যিই এটি মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-এর কদম মোবারকের ছাপ কিনা সেটা নিয়ে অনেক মতভেদ রয়েছে। আমাদের আলোচ্য বিষয় সেটি নয়। বিশ্বাস করা না করা আপনার ব্যাপার, তাই আমি কোন মতামত দিতে যাচ্ছি না। এখানে এই পাথরটি পানি বা গোলাপজলের মধ্যে চুবিয়ে রাখা হয়, আর দর্শনার্থীদের একটি গ্লাসে করে সেই পানিয় পানও করতে দেয়া হয়।


(ভিতর থেকে সামনে প্রবেশ তোরণ, ডানে মসজিদ আর বামে এক গম্বুজ বিশিষ্ট মাজার।)


(ভিতর থেকে প্রবেশ তোরণ।)


(এক গম্বুজ বিশিষ্ট মাজার, এটার ভেতরেই রয়েছে সেই আশ্চর্য কদমরসুল পাথরটি।)


(মাজারের ভেতরে কদমরসুল পাথরটি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন দরগার প্রধান খাদেম।)


(কাছ থেকে কদমরসুল পাথর।)
আমি খুব ভয়ে ভয়ে ছিলাম যে পাথরটির ছবি তুলতে দিবে কিনা!! অনেক মাজারেই দেখেছি ছবি তুলতে দয় না। এখানে অবশ্য বলতেই ছবি তুলতে দিলো। তাই টপাটপ কিছু ছবি তুলে নিলাম।

কবরস্থানের ভিতরে রয়েছে বিশার বড় কেটি কাঠ গোলাপের গাছ। বি-শা-ল ব-ড়..... এতো বড় কাঠ গোলাপের গাছ আমি আর কোথাও দেখিনি। সেই কাঠগোলাপের গাছের একটি ডালে দেখলাম কিছু মহিলা আজমির শরীফের লাল-হলুদ সুতো বাধছেন। অনেক সুতো বাঁধা আছে, আর বাঁধা চলছে। কোন একটা মনোবাসনা পূরণের নিয়ত করে এই সুতো বাঁধা হয়। তাদের বিশ্বাস এতে করে তাদের সেই মনোবাসনা পূরণ হয়ে যাবে। কত বিচিত্র মানুষের মন, তাই না!!


(বিশাল কাঠগোলাপ গাছ।)


(কাঠগোলাপ গাছের নিচে কবরস্থান।)


(কাঠগোলাপের এই ডাল টিতেই মহিলারা সুতা বাঁধেন, মানত করে।)


(একজন মহিলা সুতো বাঁধছেন।)


(কাছ থেকে সুতো বাঁধা কাঠগোলাপের সেই ডালটি।)

মনে রাখবেন, আরবি সনের ১২ই রবিউল আউয়াল তারিখ থেকে ১৫দিন ব্যাপী বিশাল এক মেলা বসে এখানে। এই কদমরসুল দরগার কাছেই আরেকটি মাজার রয়েছে, যেটি পাঞ্জাবী মাজার নামে পরিচিত।


কথিত আছে, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) মেরাজের রাত্রে বোরাকে উঠবার সময় বেশকিছু পাথরে তার পায়ের ছাপ পরে। এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত পাথরটি আছে জেরুজালেমে। তাছাড়া আর কিছু পাথর রয়েছে ইস্তাম্বুল, কায়রো এবং দামেস্কতেও। আমাদের বাংলাদেশেও এমন দুটি পাথর রয়েছে, যার একটি আছে চট্টগ্রামে আর অপরটি রয়েছে নবীগঞ্জ কদম রসুল দরগায়।
মির্জা নাথান ১৭শ শতকে রচিত তার বিখ্যাত "বাহির-স্থানই গায়েবী" বইটিতে সর্বপ্রথম নবীগঞ্জের এই পাথরটির কথা উল্লেখ করেন। সম্রাট অকবরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণাকারী আফগান সেনাপ্রধান মাসুম খান কাবুলি, পদচিহ্ন সংবলিত এ পাথরটি একজন আরব বণিকের কাছ থেকে কিনেছিলেন। তার অনেক পরে ঢাকার জমিদার গোলাম নবী ১৭৭৭-১৭৭৮ সালে নবীগঞ্জের একটি উঁচু স্থানে একটি এক গম্বুজ বিশিষ্ট দরগা নির্মাণ করে সেখানে পবিত্র সেই পাথরটি স্থাপন করেন। পরে কদম রসুল দরগার প্রধান ফটকটি গোলাম নবীর ছেলে গোলাম মুহাম্মদ ১৮০৫-১৮০৬ সালে নির্মাণ করেন।


(গোলাম মুহাম্মদ নির্মিত প্রবেশ তোরণ।)



(গোলাম মুহাম্মদ নির্মিত প্রবেশ তোরণ।)


(গোলাম মুহাম্মদ নির্মিত প্রবেশ তোরণ।)


(গোলাম মুহাম্মদ নির্মিত প্রবেশ তোরণ।)


(গোলাম মুহাম্মদ নির্মিত প্রবেশ তোরণ।)


সতর্কতাঃ
১। দরগার সামনের রাস্তায় অনেকেই দোকান সাজিয়ে বসেছে আগরবাতি, মোমবাতি, গোলাপজল, আতর, সুতা ইত্যাদি নিয়ে। চাইলে আপনি সেখান থেকে কিনতে পারেন, এতে কিনতেই হবে বা দরগায় এগুলি আপনাকে দিতেই হবে তা কিন্তু নয়।



২। জুতা খুলে মাজারে প্রবেশ করেতে হয়।
৩। জুতা খুলে অবশ্যই হাতে করে নিয়ে যাবেন। বাইরে রেখে গেলে ফিরে এসে নাও পেতে পারেন।
৪। ভেতরে প্রকাশ্য গঞ্জিকা সেবন হয়ে থাকে কখনো সখনো, মেলাতে অবশ্যই। তাই অপরিচিতদের সাতে না মেশাটাই ভালো সেখানে।
৫। কোন খাদেম বা অন্য কাউকে পাত্তা দেয়ার দরকার নেই, নিজের মত করে দেখে চলে আসুন। যায়গাটা নিরাপদ, অন্যান্য মাজারের মত টাউট বাটপারের ছড়াছড়ি নেই। তবুও সাবধান থাকতে কোন দোষ নেই।


পথের হদিস : ঢাকার যে কোন স্থান থেকে আপনাকে প্রথমে যেতে হবে, গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ী বা কমলাপুর। গুলিস্তান বা যাত্রাবাড়ী থেকে নারায়ণগঞ্জ যেতে পারবেন এসি বা ননএসি বাসে। আশিয়ান, বন্ধন, উৎসব, সেতু, আনন্দ ইত্যাদি পরিবহনের বাস। ভাড়া পরবে ২৫ থেকে ৩৫ টাকার মধ্যে। আর কমলাপুর থেকে যাবেন ট্রেনে, ভাড়া ১০ টাকার বেশি নয়। কম-বেশি ৪৫ মিনিটে পৌঁছে যাবেন ঢাকা থেকে ২২ কিলোমিটার দূরের নারায়ণগঞ্জে। নারায়ণগঞ্জ বাস বা ট্রেন স্টেশন থেকে ১৫ থেকে ১৮ টাকায় রিক্সা ভাড়া নিবে হাজীগঞ্জ কেল্লা/ফোর্ট (কেল্লা বা ফোর্ট না বললে ওরা চিনবে না)। ১০/১২ মিনিটেই পৌঁছে যাবেন হাজীগঞ্জ জলদুর্গের সামনে। এখানেই রয়েছে একটি খেয়া ঘাট। নৌকো নিয়ে শীতলক্ষ্যা পর হয়ে চলে আসেন পূর্ব পারে। এখান থেকে কয়েক মিনিটে হেঁটে বা রিক্সায়া ৫টাকা ভাড়ায় চলে আসুন কদমরসুল দরগা।

আগামী পর্বে দেখা হবে সোনাকান্দা দুর্গে, ততো দিন ভালো থাকবেন।


এখনো অনেক অজানা ভাষার অচেনা শব্দের মত এই পৃথিবীর অনেক কিছুই অজানা-অচেনা রয়ে গেছে!! পৃথিবীতে কত অপূর্ব রহস্য লুকিয়ে আছে- যারা দেখতে চায় তাদের ঝিঁঝি পোকার বাগানে নিমন্ত্রণ।
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×