somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মহাভারতের গপ্পো - ০০১

১৫ ই জুলাই, ২০২১ দুপুর ১২:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আদিপর্ব

১। শৌনকের আশ্রমে সৌতি


মহর্ষি শৌনক নৈমিষাবণ্যে দ্বাদশ বার্ষিক যজ্ঞ করছিলেন। একদিন লােমহর্ষণেব পুত্র পরাণকথক সৌতি সেখানে উপস্থিত হলেন।

আশ্রমের ঋষিরা তাঁকে প্রশ্ন করলেন, সৌতি, তুমি এখন কোথা থেকে আসছ, এতকাল কোথায় ছিলে?
সৌতি উত্তর দিলেন, আমি রাজর্ষি জনমেজয়ের সর্পযজ্ঞে ছিলাম, সেখানে কৃষ্ণদ্বৈপায়নরচিত বিচিত্র মহাভাবতকথা বৈশম্পায়নের মুখে শুনেছি

ঋষিরা বললেন, রাজা জনমেজয়ের সর্পযজ্ঞে বৈশম্পায়ন যে মহাভারতকথা বলেছিলেন আমরা তাই শুনতে ইচ্ছা করি।



পৌষ্যপর্বাধ্যায়
২। জনমেজয়ের শাপ
উপমন্যু, আরুণি ও বেদ


সৌতি বললেন-
পরীক্ষিৎপুত্র জনমেজয় তার তিন ভাইদের সঙ্গে কুরুক্ষেত্রে এক যজ্ঞ করছিলেন এমন সময় সেখানে একটি কুকুর এল। জনমেজয়ের ভাইয়েরা কুকুরটিকে মেরে তারিয়ে দিলো। কুকুরটি কাঁদতে কাঁদতে তার মাতার কাছে গেল। কুকুরের মা কুদ্ধ হয়ে যজ্ঞস্থলে এসে বললে, আমার পুত্রকে বিনা দোষে মারলে কেন? ও কোনও অপরাধ না করেই মার খেয়েছে, তােমার উপরেও অতর্কিত বিপদ এসে পড়বে।



দেবকুক্কুরী সরমার এই অভিশাপ শুনে জনমেজয় ভয় পেয়ে গেলেন। যজ্ঞ শেষ হলে তিনি হস্তিনাপুরে ফিরে এসে শাপমােচনের জন্য উপযুক্ত পুরােহিতের সন্ধান করতে লাগলেন। একদিন তিনি শ্রুতশ্রবা ঋষির আশ্রমে উপস্থিত হয়ে ঋষির পুত্র সােমশ্রবাকে নিজের পুরােহিত হিসেবে চাইলেন।

শ্রুতশ্রবা বললেন, আমার এই পুত্র সাপের গর্ভে জন্ম নিয়েছে। ও মহাতপস্বী ও বেদজ্ঞ, মহাদেবের শাপ ছাড়া অন্য সমস্ত শাপ মোচন করতে পারে। তবে এর একটি ব্রত আছে, কোনও ব্রাহ্মণ কিছু চাইলে ও তা অবশ্যই পূরণ করবে। যদি তুমি তাতে সম্মত হও তবে একে নিয়ে যাও।



জনমেজয় ঋষিপুত্রকে নিয়ে গিয়ে ভাইদের বললেন, আমি একে উপাধ্যায়রুপে বরণ করেছি, ইনি যা বলবেন তােমরা তা নির্বিচারে পালন করবে। এই আদেশ দিয়ে জনমেজয় তক্ষশিলা দেশ জয় করতে গেলেন।



এই সময়ে আয়ােদ ধৌম্য নামে এক ঋষি ছিলেন, তার তিন শিষ্য উপমন্যু, আরুণি ও বেদ
তিনি তাঁর প্রথম শিষ্য আরুণিকে বললেন, যাও, তুমি আমার ক্ষেতের আল বাঁধ।
আরুণি গুরুর আদেশ পালন করতে গেলেন, কিন্তু আল বাঁধতে না পেরে অবশেষে শুয়ে পড়ে জল আটকালেন।
আরুণি সন্ধ্যায় ফিরে এলো না দেখে ধৌম্য তার অপর দুই শিষ্যের সঙ্গে ক্ষেতে গিয়ে ডাকলেন- "বৎস আরুণি, কোথায় আছ, এস।"
আরুণি উঠে এসে বললেন, আমি জল আটকাতে না পেরে সেখানে শুয়ে ছিলাম, এখন আপনি ডাকতে উঠে এসেছি, বলুন এখন কি কর‌তে হ‌বে ।



ধৌম্য বল‌লেন- "তু‌মি কেদারখন্ড (‌ক্ষে‌তের আল) থেকে উ‌ঠে‌ছো সেজন্য তোমার নাম হ‌বে উদ্দালক। আমার আজ্ঞা পালন ক‌রেছ সেজন্য তু‌মি শ্রে‌য়োলাভ কর‌বে এবং সমস্ত বেদ ও ধর্মশাস্ত্র তোমার অন্ত‌রে প্রকা‌শিত থাক‌বে।"

আ‌য়োদ ধৌম্য তার আরেক শিষ্য উপমন্যুকে আ‌দেশ দি‌লেন তার গরু চরানোর।
উপমন্যু প্রতিদিন গরু চ‌রি‌য়ে সন্ধ্যায় গুরু‌কে প্রণাম কর‌তে লাগ‌লেন।
এক‌দিন গুরু জিজ্ঞাসা কর‌লেন, বৎস, তু‌মি কি খাও? তোমাকে বেশ স্থূল দেখ‌ছি।
উপমন্যু বল‌লো, আ‌মি ভিক্ষা ক‌রে জী‌বিকা নিবার্হ ক‌রি।
গুরু বল‌লেন, আমা‌কে নি‌বেদন না করে ভিক্ষান্ন ভোজন করা উ‌চিৎ নয়।
তারপর থে‌কে উপমন্যু ভিক্ষাদ্রব্য এ‌নে গুরু‌কে দি‌তেন। কিছুদিন পরে উপমন্যুকে পুষ্ট দে‌খে গুরু বল‌লেন, তু‌মি যা ভিক্ষা পাও সবই তো আ‌মি নিই , তুমি এখন কি খাও?
উপমন্যু বল‌লেন, প্রথমবার ভিক্ষা করে আপনা‌কে দিই, তারপর আবার ভিক্ষা ক‌রি , তাতেই আমার জী‌বিকা‌ র্নিবাহ হয়।
গুরু বল‌লেন, এ তোমর অন্যায় হয়, এ‌তে অন্য ভিক্ষাজী‌বি‌দের ক্ষতি হয়, তু‌মি লোভী হ‌য়ে প‌ড়েছ।
তারপর উপমন্যু একবার মাত্র ভিক্ষা ক‌রে গুরু‌কে দি‌তে লাগ‌লেন। গুরু আবার তা‌কে প্রশ্ন কর‌লেন, বৎস, তোমা‌কে তো অ‌তিশয় স্থূল দেখ‌ছি, এখন কি খাও?
উপমন্যু বল‌লেন, আ‌মি এই সব গরুর দুধ খাই।
গুরু বল‌লেন, আমার অনুম‌তি বিনা গরুর দুধ খাওয়া অন্যায়।
উপমন্যু তারপরেও স্থূলকায় র‌য়ে‌ছেন দে‌খে, গুরু বল‌লেন, এখন কি খাও?
উপমন্যু বল‌লেন, স্তন্যপানের পর বাছুররা যে ফেনা উদগার ক‌রে তাই খাই।
গুরু বল‌লেন, এই বাছুররা দয়া ক‌রে তোমার জন্য প্রচুর ফেনা উদ্গার ক‌রে, তা‌তে এ‌দের পুষ্টির ব্যাঘাত হয়; ফেনা খাওয়া ও তোমার উচিৎ নয়।
গুরুর সকল উপ‌দেশ মে‌নে নি‌য়ে উপমন্যু গরু চরা‌তে লাগ‌লেন।
এক‌দিন তি‌নি ক্ষুধার্ত হ‌য়ে অর্কপত্র (আকন্দ পাতা) খে‌লেন। সেই ক্ষার তিক্ত, রুক্ষ ,তীক্ষ্ম বস্তু খে‌য়ে তি‌নি অন্ধ হ‌লেন এবং‌ চল‌তে চল‌তে কূপের ম‌ধ্যে প‌ড়ে গে‌লেন।

সূর্যা‌স্তের পর উপমন্যু ফি‌রে এ‌লেন না দে‌খে শিষ্যদের স‌ঙ্গে নিয়ে ব‌নে গি‌য়ে ডাক‌লেন- "বৎস , উপমন্যু কোথায় আছ, এস।"
উপমন্যু কূ‌পের ভেতর থে‌কে উত্তর দি‌লেন, আ‌মি অর্কপত্র (আকন্দ পাতা) খাওয়ার ফ‌লে অন্ধ হ‌য়ে এখা‌নে প‌ড়ে গে‌ছি।
ধৌম বল‌লেন, তু‌মি দেব‌বৈদ্য অ‌শ্বিনীকুমারদ্ব‌য়ের গুণকীর্তন কর, তাঁরা তোমা‌কে চক্ষু ফিরিয়ে দিবেন।



উপমন্যু গুণকীর্তন কর‌লেন, অশ্বিদ্বয় তাঁর নিকট আ‌বির্ভূত হ‌য়ে বল‌লেন, আমরা তোমার গুরুভ‌ক্তি‌তে প্রীত হ‌য়ে‌ছি, তু‌মি এই পিঠা খাও। তোমার উপাধ্যায়ের দন্ত কৃষ্ণ লৌহময় হ‌বে, তোমার দন্ত হিরন্ময় হ‌বে, তু‌মি চক্ষু ফিরে পাবে এবং শ্রেয়লাভ কর‌বে ।
উপমন্যু চুক্ষ লাভ করে গুরুর কা‌ছে এ‌লেন, গুরু প্রীত হ‌য়ে বল‌লেন, অ‌শ্বিকুমারদ্ব‌য়ের ব‌রে তোমার মঙ্গল হ‌বে, সকল বেদ এবং ধর্মশাস্ত্রও তু‌মি আয়ত্ত কর‌বে।



আ‌য়োদ ধৌম্য তাঁর তৃতীয় শিষ্য বেদ‌কে আ‌দেশ দি‌লেন, তার বাড়িতে থেকে তাঁর সেবা করতে। বেদ দীর্ঘকাল গুরুগৃহে থে‌কে গুরুর আদেশে বল‌দের ন্যায় ভারবহন এবং শীত, গ্রীষ্ম, ক্ষুধা, তৃষ্ণা‌র কষ্ট সহ্য কর‌তে লাগ‌লেন। অব‌শে‌ষে তি‌নি গুরু‌কে প‌রিতুষ্ট করে শ্রেয় ও সর্বজ্ঞাতা লাভ কর‌লেন।


সূত্র :
কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাস কৃত মহাভারত : অনুবাদক - রাজশেখর বসু

বিশেষ ঘোষণা : হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ মহাভারতের কথা আমরা সকলেই জানি। আমি এটিকে পড়ছি একটি কল্পকাহিনীর সাহিত্য হিসেবে, ধর্মগ্রন্থ হিসেবে নয়। এই গ্রন্থে প্রচুর উদ্ভট কল্পকাহিনী রয়েছে। (কথা বলতে পারা দেবকুক্কুরী সরমা এবং সাপের গর্ভজাত ঋষিপুত্র সােমশ্রবা) সেগুলিই আমি এই সিরিজে শেয়ার করবো। যারা মহাভারত পড়েননি তা এখান থেকে ধারাবাহিক ভাবে সেগুলি জেনে যাবেন।

সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুলাই, ২০২১ দুপুর ১২:২৩
১০টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×