শ্রীকৃষ্ণকীর্তন হলো বড়ু চণ্ডীদাস রচিত একটি মধ্যযুগীয় বাংলা কাব্যগ্রন্থ। তেরো খণ্ডে বিভক্ত কাব্যের বৃন্দাবন খণ্ডে কৃষ্ণ ১৬,০০০ গোপীদের সঙ্গে রাসলীলা শেষ করে রাধিকার কাছে যেতে দেড়ি হয়ে যায়। ফলে রাধিকা যায় রেগে। কৃষ্ণ নানান ভাবে রাধিকার রাগ ভাঙ্গানোর চেষ্টা করে বিফল হয়। তখন কৃষ্ণ রেগে গিয়ে রাধা আর তাঁর সখীরা বৃন্দাবনের যত ফুল নষ্ট করেছে তার সব এখনই ফেরত চায়। ফুল ফিরিয়ে দিতে না পারলে ফুলের বিনিময়ে চুম্বন দিতে হবে। রাধিকা তখন কৃষ্ণকে বলেন তার কাছে সব ফুল নেই, অল্প কিছু ফুল আছে সেগুলিই কৃষ্ণকে দিয়ে দিবেন। তখন কৃষ্ণ বলেন রাধিকার সমস্ত শরীর জুড়িই আছে সেই সব ফুল যা তিনি চান।
এই হচ্ছে সেই গানটি যা কৃষ্ণ গেয়েছিলো রাধিকার রূপের বর্ননায়।
সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি : গানটি পড়িতে গিয়া মস্তিষ্ক হোঁচট খাইলে মরুভূমির জলদস্যুকে দায়ি করা যাইবে না।
তমাল কুসুম চিকুর গণে।
নীল কুরুবক তোর নয়নে।।
সুপুট নাসা তিলফুলে।
দেখি তোর গণ্ডযুগ মহুলে।।
আধর সুরঙ্গ বান্ধুলী ফুলে।
কণ্ণ যুগ তোর এ বগহুলে।।
মুকুলিত কুন্দ তোর দশনে।
খস্তরী কুসুম তোর বসনে।।
ভুজযুগ হেম যূথিকা মালে।
আশোকতবক করযুগলে।।
মুকুলিত থলকমল তনে
রোমারাজী তাত আতয়ীগণে।।
গভীর নাভী নাগেশর ফুলে।
কনক কেতকী জংঘ যুগলে।।
চরণকমল থলকমলে।
আঙ্গুলী চম্পক কলিকা জালে।।
নখরনিকর দেখি গুলালে।
শিরীষ কুসুম তনু সকলে।।
কনক চম্পক কুসুম পান্তী।।
তোহ্মার সকল শরীর কান্তী।।
নেআলী সেআলী মাহ্লী বিকসে।
তোহ্মার মধুর ঈষত হাসে।।
দেখো মধুর ঈষত হাসে।।
দেখোঁ মো তোর ফুল শরীরে।
গাইল চণ্ডীদাস বাসলী বরে।
যদি উপরের কাব্যাংশটুকু পড়ে অর্থ বুঝতে ব্যর্থ হন তাহলে নিচের সরলিকরণ চেষ্টাটুকু পড়ে দেখতে পারেন। (হুবহু অনুবাদ নয়) যদিও সেখানেও ইচ্ছাকৃত ভাবে বেশ কিছু কঠিন-প্রাচীন শব্দ রেখে দিয়েছি।
রাধিকা তোমার কেশ তমাল ফুলের ময়ূরপুচ্ছ,
ঐ নীলাঞ্জন নয়ন নীল কুরুবক।
তোমার সুগঠিত নাসিকায় যেন তিলফুলের শোভা, আর
কপলযুগলে মহুয়া ফুলের মাদকতা।
রাধিকা তোমার রক্তিম অধরে বান্ধুলির আভা,
কর্ণে তোমার বকফুলের শোভা।
তোমার শুভ্র দশন রাজি যেন আধফোটা কুন্দ, আর
বসনে তোমার কস্তুরীকুসুমের আভাস।
রাধিকা তোমার বাহুযুগল স্বর্ণযুথিকার মালা,
করযুগলে তোমার অশোকের রক্তিমা।
তোমার পয়োধর যেন দুই মুকুলিত স্থল্পপদ্ম, আর
গভীর নাভিদেশ নাগেশ্বরের ফুল।
রাধিকা তোমার জঙ্ঘাযুগল স্বর্ণকেতকী,
চরণ তোমার চরণ কমল, দুটি স্থলপদ্ম।
তোমার আংঙুলগুলি যেন চাঁপারকলি, আর
সর্বাঙ্গে শিরিষ ফুলের কোমলতা।
রাধিকা তোমার নখরে গুলাল আবীর মাখা,
দেহে তোমার কনকচাঁপার আভা।
তোমার মধুর হাসিতে নবমল্লিকা, শেফালী ও মল্লিকার ঝরে, আর
রাধিকা তোমার সর্বাঙ্গেই কুসুমের সমাহার!
যদি পুরটুকু পড়ে শেষ করে থাকেন তাহলে বুঝতে হবে আপনার যথেষ্ট ধর্য্য আছে।
এবার একটু চেষ্টা করে দেখেন কাব্যাংশে কতটি ফুলের নাম খুঁজে পান।
ছবি : নেট হতে সংগৃহীত
কবিতা ও ফুল নিয়ে অন্য একটি লেখে ছিলো আমার। চাইলে সেটিও দেখতে পারেন-
বাসা
"বাসা" কবিতার ফুল ও গাছ গুলি
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ দুপুর ১২:২৮