
ময়ূরাক্ষী নদীর ধারে
আমার পোষা হরিণে বাছুরে যেমন ভাব
তেমনি ভাব ১শালবনে আর ২মহুয়ায়।
ওদের পাতা ঝরছে গাছের তলায়,
উড়ে পড়ছে আমার জানলাতে।
৩তালগাছটা খাড়া দাঁড়িয়ে পুবের দিকে,
সকালবেলাকার বাঁকা রোদ্দুর
তারি চোরাই ছায়া ফেলে আমার দেয়ালে।
নদীর ধারে ধারে পায়ে-চলা পথ
রাঙা মাটির উপর দিয়ে,
৪কুড়চির ফুল ঝরে তার ধুলোয়;
৫বাতাবি-লেবু-ফুলের গন্ধ
ঘনিয়ে ধরে বাতাসকে;
৬জারুল ৭পলাশ ৮মাদারে চলেছে রেষারেষি;
৯শজনে ফুলের ঝুরি দুলছে হাওয়ায়;
১০চামেলি লতিয়ে গেছে বেড়ার গায়ে গায়ে
ময়ূরাক্ষী নদীর ধারে।
নদীতে নেমেছে ছোটো একটি ঘাট
লাল পাথরে বাঁধানো।
তারি এক পাশে অনেক কালের ১১চাঁপাগাছ,
মোটা তার গুঁড়ি।
নদীর উপরে বেঁধেছি একটি সাঁকো,
তার দুই পাশে কাঁচের টবে
১২জুঁই ১৩বেল ১৪রজনীগন্ধা ১৫শ্বেতকরবী। (বেল সম্ভবতো বেলী হবে)
গভীর জল মাঝে মাঝে,
নীচে দেখা যায় নুড়িগুলি।
সেইখানে ভাসে রাজহংস
আর ঢালুতটে চরে বেড়ায়
আমার পাটল রঙের গাই গোরুটি
আর মিশোল রঙের বাছুর
ময়ূরাক্ষী নদীর ধারে।
ঘরের মেঝেতে ফিকে নীল রঙের জাজিম পাতা
খয়েরিরঙের-ফুল-কাটা।
দেয়াল বাসন্তী রঙের,
তাতে ঘন কালো রেখার পাড়।
একটুখানি বারান্দা পুবের দিকে,
সেইখানে বসি সূর্যোদয়ের আগেই।
একটি মানুষ পেয়েছি
তার গলায় সুর ওঠে ঝলক দিয়ে,
নটীর কঙ্কণে আলোর মতো।
পাশের কুটিরে সে থাকে,
তার চালে উঠেছে ১৬ঝুমকোলতা।
আপন মনে সে গায় যখন
তখনি পাই শুনতে--
গাইতে বলি নে তাকে।
স্বামীটি তার লোক ভালো--
আমার লেখা ভালোবাসে, ঠাট্টা করলে
যথাস্থানে যথোচিত হাসতে জানে,
খুব সাধারণ কথা সহজেই পারে কইতে,
আবার হঠাৎ কোনো-একদিন আলাপ করে
--লোকে যাকে চোখ টিপে বলে কবিত্ব--
রাত্রি এগারোটার সময় ১শালবনে
ময়ূরাক্ষী নদীর ধারে।
বাড়ির পিছন দিকটাতে
১৭শাক-সবজির খেত।
বিঘে-দুয়েক জমিতে হয় ১৮ধান।
আর আছে ১৯আম-২০কাঁঠালের বাগিচা
২১আসশেওড়ার-বেড়া-দেওয়া।
সকালবেলায় আমার প্রতিবেশিনী
গুন গুন গাইতে গাইতে মাখন তোলে দই থেকে,
তার স্বামী যায় দেখতে খেতের কাজ
লাল টাট্টু ঘোড়ায় চ'ড়ে।
নদীর ও পারে রাস্তা,
রাস্তা ছাড়িয়ে ঘন বন--
সে দিক থেকে শোনা যায় সাঁওতালের বাঁশি
আর শীতকালে সেখানে বেদেরা করে বাসা
ময়ূরাক্ষী নদীর ধারে।
এই পর্যন্ত
এ বাসা আমার হয় নি বাঁধা, হবেও না।
ময়ূরাক্ষী নদী দেখিও নি কোনো দিন।
ওর নামটা শুনি নে কান দিয়ে,
নামটা দেখি চোখের উপরে--
মনে হয় যেন ঘননীল মায়ার ২২অঞ্জন
লাগে চোখের পাতায়।
আর মনে হয়
আমার মন বসবে না আর কোথাও,
সব কিছু থেকে ছুটি নিয়ে
চলে যেতে চায় উদাস প্রাণ
ময়ূরাক্ষী নদীর ধারে।
=========================
এবার দেখে নেয়া যাক ছবি গুলি
১। শালবনে

২। মহুয়া।

৩। তালগাছ

৪। কুড়চির ফুল

৫। বাতাবি-লেবু-ফুল
৬। জারুল

৭। পলাশ

৮। মাদার

৯। শজনে ফুল

১০। চামেলি

১১। চাঁপাগাছ

১২। জুঁই

১৩। বেলী

১৪। রজনীগন্ধা

১৫। শ্বেতকরবী

১৬ঝুমকোলতা

১। শালবনে

১৭শাক-সবজির খেত

১৮। ধান

১৯। আম

২০। কাঁঠাল

২১। আসশেওড়া
![]()
২২। অঞ্জন

ছবিসূত্র :
২ - কালের কন্ঠ
৫, ১৩ ও ১৯ - ছবিতে লেখা আছে
৯ - সচলায়তন
১২ - সমকাল
১৪ - banglafeeds.info
১৫ - bn.atomiyme.com
২০ - Sk Kabirul Hashan
২১ - উইকিপিডিয়া
বাকি ছবিগুলি আমার তোলা।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


