অর্জুন গন্ধর্বরাজ অঙ্গারপর্ণকে প্রশ্ন করলেন- তুমি আমাকে তাপত্য বললে কেন?
তখন গন্ধর্বরাজ অঙ্গারপর্ণ একটি কাহিনী শুনালেন-
সূর্যের এক কন্যার নাম তপতী, ইনি সাবিত্রীর ছোট ছিলেন। রুপে গুণে তিনি অতুলনীয় ছিলেন। সূর্যদেব তপতীর উপযুক্ত কোনো পাত্র খুঁজে পেলেন না। সেই সময়ে কুরুবংশীয় ঋক্ষপুত্র সংবরণ রাজা প্রতিদিন সূর্যদয়ের সময় সূর্যের আরাধনা করতে লাগলেন। তিনি ধার্মিক, রুপবান ও বিখ্যাত বংশের রাজা, সেজন্য সূর্য তাঁকেই তপতীর বর হিসেবে পছন্দ করলেন।
একদিন সংবরণ পর্বতের ধারের বনে শিকারে গেলে সেখানে তার ঘোড়াটি ক্ষুধায় পিপাসায় মারা পড়লো। সংবরণ তখন এদিক সেদিন পায়ে হেঁটে বেড়াতে লাগলেন। ঠিক তখন তিনি এক অতুলনীয় রুপবতী মেয়ে (তপতী) দেখতে পেলেন। তিনি মুগ্ধ হয়ে মেয়েটির পরিচয় জিজ্ঞাসা করলেন, কিন্তু সেই মেয়েটি তখনই হাওয়া মিলিয়ে গেলো। রাজা কামমােহিত হয়ে মাটিতে পড়ে গেলেন, তখন তপতী আবার দেখা দিলো। সংবরণ তাঁকে প্রেম নিবেদন করলেন। তপতী তাঁর বাবাকে তপস্যা করে সন্তুষ্ট করার পরামর্শ দিয়ে আবার চলে গেলেন।
সংবরণা তার মন্ত্রীকেছাড়া বাকি সকল লোকদের রাজ্যে ফিরে যেতে বললেন এবং নিজে সেই পর্বতে থেকে গিয়ে দুই হাত জোড়করে উপরের দিতে মুখ করে পুরােহিত বশিষ্ঠ ঋষিকে স্মরণ করতে লাগলেন। এভাবে বার দিন পার হয়ে যাওয়ার পরে বশিষ্ঠ ঋষি সেখানে এলেন। তিনি যােগবলে সমস্ত ঘটনা জেনে নিয়ে উর্ধে চলে গেলেন। সূর্যের কাছে গিয়ে বশিষ্ঠ প্রণাম করে মহারাজ সংবরণের জন্য সূর্যের কন্যা তপতী চাইলেন। সূর্য সম্মত হয়ে তপতীকে দান করলেন। বশিষ্ঠ তপতীকে নিয়ে সংবরণের কাছে এলেন এবং সংবরণ তপতীকে বিবাহ করলেন। সংবরণ তার মন্ত্রীর উপর রাজ্যচালনার ভার দিয়ে সে নিজে তপতীকে নিয়ে পর্বতের বনে উপবনে বার বছরর সুখে বাস করলেন।
সেই বার বছর তাঁর রাজ্যে একবিন্দু, বৃষ্টিপাত হল না, খারার কবলে পরে সমস্ত প্রজার মৃত্য হতে লাগল। লােকে ক্ষুধায় কাতর হয়ে রাজ্য ছেড়ে দিকে দিকে উদভ্রান্তের মতো ছুটতে লাগল। এই সব দেখে বশিষ্ঠ মনি সংবরণ ও তপতীকে রাজপুরীতে ফিরিয়ে আনলেন। রাজা-রাণী রাজ্যে ফিরে আসার পরে ইন্দ্র বৃষ্টি বর্ষণ করলেন, শস্য উৎপন্ন হল।
সেই তপতীর গর্ভে কুরু নামক পুত্রের জন্ম হয়। অর্জুন সেই কুরু বংশে জন্মেছে, সেজন্য অর্জুনকে গন্ধর্বরাজ অঙ্গারপর্ণ তাপত্য বলে ডেকেছে।
====================================================================
বিশেষ ঘোষণা : হিন্দুদের ধর্মীয় সাহিত্যের মহাকাব্য মহাভারতের কথা আমরা সকলেই জানি। আমি এটিকে পড়ছি একটি কল্পকাহিনীর সাহিত্য হিসেবে, ধর্মগ্রন্থ হিসেবে নয়। আমি মনে করি "যার যার বিশ্বাস তার তার কাছে। অন্যের বিশ্বাস বা ধর্মানুভূতিতে খোঁচা দেয়ার কোনো ইচ্ছে আমার নেই।" এই গ্রন্থে প্রচুর কল্পকাহিনী রয়েছে। সেগুলিই আমি এই সিরিজে পেশ করবো। যারা মহাভারত পড়েননি তারা এখান থেকে ধারাবাহিক ভাবে সেগুলি জেনে যাবেন। মনে রাখতে হবে আমার এই পোস্ট কোনো ভাবেই ধর্মীয় পোস্ট নয়।
লেখার সূত্র : কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাস কৃত মহাভারত : অনুবাদক - রাজশেখর বসু।
ছবির সূত্র : এই সিরিজে ব্যবহৃত সকল ছবি বিভিন্ন সাইট থেকে সংগৃহীত।
=================================================================
মহাভারতের গপ্পো : এক নজরে সকল পর্ব
=================================================================
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মার্চ, ২০২২ দুপুর ১:০৯