somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কোরবানীর পশুর চামড়া কি করবেন?

১০ ই জুলাই, ২০২২ রাত ১২:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পশুর চামড়ার সাথে আমাদের সাধারণ জনগনের বছরে ২ বার যোগাযোগ হয়।
- কোরবানী শেষে আমরা পশুর চামড়া বাড়ির বাইরে ফেলে রাখি। এতিমখানা থেকে এসে নিয়ে যাবে বলে।
- দিন দুই পরে এলাকার এতিমখানা থেকে সেই চামড়ার বিক্রয় মূল্যের অর্ধেক টাকা সংগ্রহ করি। দরিদ্রদের বিলিয়ে দিবো বলে।



এলাকার এতিমখানার নির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবে চামড়া সংগ্রহের আরো কিছু কাজের ফিরিস্তি আমি জানি।
কোরবানীর পশুর চামড়া সংগ্রহের জন্য প্রস্তুতি নিতে হয় অনেক দিন আগে থেকেই।

# কোরবানীর পশুর চামড়া এতিমখানার জন্য দান হিসেবে চেয়ে লিফলেট-পোস্টার-ব্যানার ছাপাতে হয়, এবং সেগুলি বিতরনের ব্যবস্থা করতে হয়।

# কোরবানীর পুশুর চামড়া সংগ্রহের জন্য রশিদ বই ছাপাতে হয়।

# জেনারেল মিটিং ডেকে এলাকায় মাইকং করতে হয়। সদস্যদের চিঠি পাঠাতে হয়।
# জেনারেল মিটিং-এ যারা উপস্থিত হন তাদের আপ্পায়নের ব্যবস্থা করতে হয়। (করনার কারণে কয়েক বছর বন্ধ থাকার পরে এই বছর আবার ছোট পারিসরে হয়েছে।)

# এলাকাবাসীর ক্রয়কৃত পশুগুলি কোরবানী করে দেয়ার ব্যবস্থা করতে হয়।
# তারজন্য এতিমখানা ও মাদ্রাসার ছাত্র ও শিক্ষদের অনেকের ছুটি বাতিল করতে হয়।
# কোরবানী শেষে তাদের নিজ-নিজ বাড়িতে (গ্রামে) ফিরে যাওয়ার জন্য ভাড়ার ব্যবস্থা করতে হয়। সেই ভাড়াও সাধারন সময়ের চেয়ে অনেক বেশী হয়ে যায়।
# কোরবানী সম্পন্ন করতে তারা যে শ্রম দেয় তার জন্য কিছু হাদিয়া দিতে হয়।

# এলাকার প্রায় ২০টি মসজিদের খতিব-ইমাম-মুয়াজ্জিন সাহেবরাও কোরবানীর কাজে অংশ নেন বলে তাদের জন্যও কিছু সম্মানী পাঠাতে হয়।

# এলাকার প্রতিটি মসজিদের মসজিদ কমিটির সভাপতি বরাবর চিঠি পাঠাতে হয়।

# পুরনো ছুড়ি ধার করাতে হয়।
# পুরনো কিছু ছুড়ি বাতিল হয়। সেগুলির পরিবর্তে নতুন ছুড়ি তৈরি করতে হয়।
# ছুড়ির হিসাব-নিকাশ থানায় ইনফর্ম করতে হয়।

# কোরবানী শেষে বাড়ির বাইরে ফেলে রাখা চামড়া রশিদের মাধ্যমে সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট স্থানে জড়ো করার জন্য অনেকগুলি ভ্যান গাড়ি ও পিকাপ ভাড়া করতে হয়।
# চামড়া সংগ্রহের কাজে ছাত্র ও শিক্ষকদের সাথে আর কিছু শ্রমিক নিয়োগ দিতে হয়।

# কোরবানী পশুর চামরা সংগ্রহ করে যেখানে জমা করা হয় সেখানে ছাউনির ব্যবস্থা করতে হয়। লোকজন বসার জন্য সেখানে টেবিল চেয়ার রাখতে হয়।

তারপর বিকেল থেকে অপেক্ষা করতে হয় চামড়া কেনার পাইকারদের জন্য।

এই সমস্ত কাজ গুছিয়ে আনতে যে পরিমান খরচ হয় তাতে করে দেখা যায় চামড়া প্রতি ১৮০ থেকে ২২০ টাকার মতো খরচ পরে যায়। কমিটির সদস্য যে শ্রম আর সময় দেন তার হিসাব বাদ রইলো। কারণ তারা স্বেচ্ছায় এই শ্রম দেন, কোনো রকম সম্মানী বা ভাতা তারা নেন না।

একটা সময় ছিলো যখন আমরা ছোট ছিলাম তখন দেখতাম একটি গরুর চামড়া ৩,২০০ থেকে ৩,৫০০ টাকা বিক্রি করা হতো। শুধু মাথার চামড়াই আলাদা ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বিক্রি হতো। এতিখানা চামড়া বিক্রি করে বিক্রয় মূল্যের অর্ধে এতিমদের জন্য রেখে বাকি অর্ধেক গরুর মালিকদের দিয়ে দিতেন যাতে গরুর মালিকেরা তাদের পরিচিত দরিদ্রদের মাঝে তা বিতরন করতে পারেন। কিন্তু এখন সেই চিত্র পালটে গেছে।

এখন বর্তমানে একটি গরুর চামড়ার বিক্রয় মূল্য পাওয়া যায় ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। (এবছর কি হবে কে জানে!!)
মহিষের চামড়ার বিক্রয় মূল্য পাওয়া যায় ১০০ থেকে ১৫০ টাকা।
ছাগলের চামড়ার বিক্রয় মূল্য পাওয়া যায় ২০ থেকে ৩০ টাকা। (গতবছর বিক্রয় করা যায়নি।)
কখনো কখনো মহিষ ও ছাগলের চামড়া বিক্রিকরা সম্ভব হয় না, তখন ফ্রী দিয়ে দিতে হয়।

ফলে গত প্রায় ৩-৪ বছর যাবত আমরা ইচ্ছে থাকলেও গরুর মালিককে চামড়ার টাকার অংশ দিতে পারছি না। একটি গরুর চামড়া ৫০০ টাকা যদি বিক্রি হয় তাহলে ২০০ টাকা খরচ বাদ দিয়ে হাতে থাকে ৩০০ টাকা। কোরবানী দাতাকে ১০০ বা ১৫০ টাকা দিলে এতিমখানার ফান্ডে অতি নগন্য অর্থই জমা হবে কেবল।

গরিবের হকের, এতিমের হকের এই চামড়ার মূল্য নিয়ে যারা কারসাজি করছেন তাদের জন্য উচিত মূল্য নির্ধারিত হয়ে আছে আল্লাহর দরবারে।











রি-পোস্ট
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুলাই, ২০২২ রাত ১২:০৭
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তোর কথা তুই লিখে সত‍্যতা প্রমান কর।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৪১



ব্লগ মনে হয় কারো কারো বাপ দাদার জমিদারি হয়ে গেছে। সব পোস্ট দালাল , রাজাকার, জঙ্গিদের অথবা লালবদরদের স্বপক্ষে হোতে হবে। সত‍্যের আগমনে মিথ্যা বিস্মৃতির অবসান হয় ।আদর্শের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে গুমের ঘটনা: শেখ হাসিনার শাসনকালের একটি কালো অধ্যায়

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৪৯

বাংলাদেশে গুমের ঘটনা: শেখ হাসিনার শাসনকালের একটি কালো অধ্যায়

গুমের শিকার ব্যক্তিদের অতি ক্ষুদ্র কক্ষের ছবিটি বিবিসি ডটকম থেকে নেওয়া।

পরিচিতি

বাংলাদেশে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি'র লাখ লাখ কর্মী অপেক্ষা করছে, সর্দারের ১ম নতুন ডাকাতীর খবরের জন্য।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:৩১



আওয়ামী লীগের সময়, যারা ১৭ বছর ডাকাতী করে যা জমায়েছিলো, বিএনপি'র কয়েক লাখ লোজজন তাদের থেকে একটা বড় অংশ ছিনিয়ে নিয়েছে; সেই প্রসেস এখনো চলছে। তবে, বস... ...বাকিটুকু পড়ুন

=জোর যার, ক্ষমতা তার=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:৫৪



কনুইয়ের গুতাতে কার, জায়গাটা দখলে
কে সে, জানো তো সকলে!
ক্ষমতার লড়াইয়ে, বল চাই-
দেহে বাপু জোর চাই
জোর যার, ক্ষমতা তার,
রাজনীতির ছল চাই।

ক্ষমতাটা নিতে চাও, জোর চাই
দেহ মাঝে বল চাই,
ধাক্কায় নির্বল, ফেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামপন্থী রাজনীতির বয়ান এবং জামাতের গাজওয়াতুল হিন্দ-এর প্রস্তুতি

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২০


গোরা উপন্যাসে রবীন্দ্রনাথ নিজে ব্রাহ্ম হয়েও, ব্রাহ্ম সমাজের আদর্শের বিপরীতে "গোরা" নামে একটি চরিত্র তৈরি করেন। গোরা খুব কট্টরপন্থী হিন্দু যুবক। হিন্দু পরিচয়ে বড় হলেও, আসলে সে আইরিশ দম্পতির... ...বাকিটুকু পড়ুন

×