যখন তরুন ছিলাম (মনে মনে এখন তরুন আছি) পহেলা বৈশাখে বন্ধুরা মিলে গ্রামের দিকে চলে গিয়েছি গ্রামীণ মেলা খুঁজতে। একবার আমরা তিন বদ্ধু ঘুরতে ঘুরতে চলে গিয়েছিলাম পদ্মার পড়ে। ফেরিতে করে পদ্মা পার হয়ে পৌছে ছিলাম ফরিদপুরে। সেইখানে গিয়ে খুঁজে খুঁজে এক বন্ধুকে বের করে ওর ইউনিভার্সিটে গিয়ে চললো আড্ডা আর মেলায় ঘুরাঘুরি। তবে আমরা কখনো পহেলা বৈশাখে রমনায় যাইনি!!
আমি আজও পর্যন্ত পহেলা বৈশাখে রমনায় যাই নাই। বিয়ে করার পরে বউয়ের আবদারে একবার যাওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। সেগুন বাগিচা পর্যন্ত গিয়ে বউয়ের শখ মিটে গিয়েছে ছিলো। সেই শেষ, তারপর থেকে আজও পর্যন্ত রমনায় যাওয়ার নাম আর মুখে আনেনি।
বিয়ের পরেও নানান যায়গা বউকে নিয়ে পহেলা বৈশাখে বেড়াতে গেছি। একবার সেই পুরনো রুটে পদ্মাপার হয়ে ফরিদপুর ঘুরে গ্রামীন মেলা দেখে আরিচা হয়ে ফেরার পথে সাভাবে বিশাল কনসার্টের কারণে অচিন্তুনিয় জ্যামে বসে ছিলাম ঘন্টার পর ঘন্টা। বাড়িতে বাবা-মা আর শ্বশুর-শ্বাশুড়ি চিন্তায় অস্থি!!
আমার বাবা বৈশাখের আগেই অনেক গুলি ইলিশ কিনে রেখে দিতেন। আমার বোনদের বাসায় পাঠাতেন, নিজেদের জন্যও রাখতে। আমার বউ আর মেয়েকে শাড়ি-চুড়ি-গহনা কিনে দিতেন। শ্বশুর বাড়িতেও পানতা ইলিশ থাকতো। সকালে শুকনা মরিচ, আলু ভর্তা, ডিম ভাজি, ইলিশ ভাজি পান্ত দিয়ে নাস্তা হতো।
একবার খোঁজ পেলাম সোনারগাঁয়ের দিকে একটি বট গাছের নিচে বড়সড় মেলা হয়। সেবার আমরা বন্ধরা সবাই বৌদের নিয়ে গিয়ে ছিলাম সেই মেলায়। খুঁজে খুঁজে সেই মেলা ঠিকই পেয়েছিলাম। তবে খুব একটা আহামরি ছিলো না সেই মেলা।
এখন আর পহেলা বৈশাখে এইসবের কিছুই হয় না। বিবি-বাঁচ্চারা নতুন শাড়ি-চুড়ি পেরে না। আমার বাড়িতে পান্তা ইলিশ হয় না। শ্বশুর বাড়িতে হয় কিনা জানি না; হলেও আমাদের যেতে বলে না। কোথাও বেড়াতে যাওয়া হয় না। বোন-ভাগনা-ভাগনীদের বাড়িতে আয়োজন হয়; আমাদের যেতে বলে না। বাহিরে কোথাও বেড়াতে যাওয়া হয় না। গ্রামীণ মেলা আর খুঁজতে যাওয়া হয় না। আমরা বাড়িতেই থাকি, আমি আমার বউ আর দুই কন্যা। ওরাও কিছু চায় না, কোনো আবদার করে না কোথাও যাওয়ার। আমার ছোট কন্যা পহেলা বৈশাখের ছোঁয়াকখনো পায়নি। বছরের অন্য যেকোনো দিনের চেয়ে এই দিনটি অন্য রকম আমাদের জন্য। এই দিনে আমার বাবা মারা গেছিলেন।
"রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বাইয়ানি সাগিরা।"
- হে আমাদের পালনকর্তা! তাদের উভয়ের প্রতি রহম করুন; যেমনিভাবে তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১২:৫৫