somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সম্রাট আওরঙ্গজেব আলমগীর

০৭ ই নভেম্বর, ২০২১ ভোর ৬:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কপি পোস্ট:
স্মরণঃ সম্রাট আওরঙ্গজেব আলমগীর (৩ নভেম্বর ১৬১৮- ৩ মার্চ ১৭০৭)
––—–——––—–——––—–—––—–
সম্রাট আওরঙ্গজেব ৪৯ বছর ধরে উপমহাদেশ শাসন করেছেন। ভারতবর্ষের প্রায় সব জায়গা তার সাম্রাজ্যের অন্তর্ভূক্ত ছিল।
আওরঙ্গজেবের সময়েই বাংলার সুবেদার ছিলেন শায়েস্তা খান। তার সময়ে টাকায় আট মণ চাল পাওয়া যেত। এবং এই সময়েই রোহিঙ্গাদের উপর অত্যাচারের খবর শুনে আরাকানে সম্রাট আলমগীর একটা সেনাবাহিনী পাঠান সেই সেনাবাহিনীর বিজয়ের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বাংলা সুবাহ তথা বাংলাদেশের অংশে পরিনত হয়।
সম্রাট আওরঙ্গজেবের সময়ে ১৭০০ সালে চীনকে পিছনে ফেলে ভারতবর্ষ পৃথিবীর বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিনত হয়। অর্থনীতির মূল্যমান ছিল প্রায় ৯০ বিলিয়ন ডলার, জিডিপি ছিল সে সময়ের সমগ্র বিশ্বের ৪ ভাগের ১ ভাগ। আব্দুর রাজ্জাক স্যার বলেছিলেন,
❝আওরঙ্গজেবের আমলে ইন্ডিয়ার মানিটারি সিস্টেম যে-কোন ইউরোপীয় দেশের চাইতে অনেক বেশি সুপিরিয়র আছিল।❞
সম্রাট আলমগীর সাম্রাজ্যের মধ্যে মদ্যপান, জুয়া, খোজা করন, দাস ব্যবসা, মাদক ব্যবসা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেন। সম্রাটকে নতজানু হয়ে কুর্নিশ করার পরির্বতে আস সালামু আলাইকুম বলা চালু করেন। সম্রাট আলমগীরের পৃষ্ঠপোষকতায় কয়েক শত ফকীহ হানাফী মাযহাবের আইনশাস্ত্র নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ বই লেখেন যা ফতোয়া-ই-আলমগীরী নামে বিখ্যাত। এখনো ফতোয়া-ই-আলমগীরী ইসলামি আইনশাস্ত্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটা "Reference" বই হিসেবে সম্মানিত।
হিন্দু পন্ডিতগন সম্রাট আলমগীরকে বিতর্কিত শাসক হিসেবে উপস্থাপন করেন। তবে নিরপেক্ষ ইতিহাসবেত্তারা মনে করেন যে তার হিন্দু মন্দির ধ্বংসের বিষয়টি অতিরঞ্জিত। আমেরিকান ইতিহাসবেত্তা অডিরি টুসকে "Aurangzeb: life and Legacy of India's most controversial King" লিখেছেন সম্রাট আলমগীরের হিন্দু বিদ্বেষের অভিযোগ শুধু অতিরঞ্জিত তাই নয় তিনি মন্দির নির্মাণে অর্থ অনুদানও করেছিলেন। তার আমলে তার পূর্বসূরীদের তুলনায় প্রশাসনে মুঘল প্রশাসনের সর্বোচ্চ সংখ্যক হিন্দু কর্মচারী নিয়োগ করা হয়েছিল।
পাঞ্জাবের নিকটবর্তী এক গ্রামের ঘটনা উল্লেখ্য। সম্রাট আওরঙ্গজেব প্রেরিত এক মুসলমান সেনাপতি তার বাহীনি নিয়ে পল্লীর ভিতর দিয়ে যাওয়ার কালে এক ব্রাহ্মনের সুন্দরী কন্যা তার নজরে পরে। সেনাপতি ব্রাহ্মনের নিকট সে কন্যাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন এবং এক মাসের মধ্যে বলে নিশ্চিত জানিয়ে আসেন। ব্রাহ্মন কিংকর্তব্যবিমূঢ়। কতিপয় বুদ্ধিমান লোকের পরামর্শে ব্রাহ্মন সরাসরি সম্রাট আওরঙ্গজেবের শরানাপন্ন হন। সম্রাট আওরঙ্গজেব ধৈর্য করে ব্রাহ্মনের বিপদের কথা শুনলেন। তিনি ব্রাহ্মনকে নিশ্চিন্তে বাড়ি ফিরে যেতে বললেন এবং বিয়ের দিন তিনি নিজে বাড়িতে উপস্থিত থাকবেন বলে জানান। কারো নিকট বিষয়টি প্রকাশ না করার জন্য নির্দেশ দিলেন। বিয়ের আগের রাতে সম্রাট সাধারনভাবে গিয়ে ব্রাহ্মনের বাড়িতে উপস্থিত হন। পরদিন যথাসময়ে সেনাপতি বরবেশে ব্রাহ্মনের বাড়িতে এসে হাজির হন। ব্রাহ্মনকে সেনাপতি বললেন যে বিয়ের আগে কন্যা দেখা উত্তম। তখন পূর্ব নির্দেশমত স্থান দেখিয়ে দেওয়া হয় যে কক্ষে সম্রাট রয়েছেন। সেনাপতি সে কক্ষে প্রবেশ করেই নাঙ্গা তলোয়ার হাতে স্বয়ং সম্রাটকে দেখে আতংকে ক্ষমা চাওয়ার আগেই বেহুশ হয়ে মাটিতে পরে যায়। ব্রাহ্মন সম্রাটের ভূমিকা দেখে আপ্লুত হয়ে যায়, সম্রাট তাকে বুকে জরিয়ে ধরে বললেন যে, এটা তারই দায়িত্ব ছিল। দায়িত্বটুকু পালন করতে পেরে তিনি নিজেকে ধন্য মনে করছেন। এই ঘটনার পর ওই গ্রামের সবাই এই ঘটনার স্মরণ রাখতে গ্রামের নাম দেন সম্রাটের নাম অনুসারে “আলমগীর”।
এর পর থেকে বিশেষ করে কেউ আর অন্যথা করার সাহস পায়নি৷ তবে এটা ঠিক তিনি শিয়া মুসলিম এবং হিন্দুদের বেশ কিছু রীতির(সতিদাহ, কৈলাণ্য, তাজিয়া ইত্যাদি) ব্যাপারে কঠোর ছিলেন।
আওরঙ্গজেব তার পূর্বসূরিদের মতো রাষ্ট্রীয় কোষাগারকে নিজের সম্পত্তি মনে না করে জনগণের আমানত হিসেবে মনে করতেন। ব্যক্তিগত জীবিকা নির্বাহের জন্য তিনি নিজ হাতে টুপি বানাতেন এবং কোরআনের নকল করে তা বিক্রি করতেন। তিনি ছিলেন কুরআনের হাফিজ এবং ব্যক্তিগত জীবনে প্রবাদ তুল্য সাধারণ। কবি যেভাবে বলেছেন,
❝উচ্ছ্বাস ভরে শিক্ষকে আজি দাঁড়ায়ে সগৌরবে
কুর্ণিশ করি বাদশাহে তবে কহেন উচ্চরবে-
আজ হতে চির-উন্নত হল শিক্ষাগুরুর শির,
সত্যই তুমি মহান উদার বাদশাহ্ আলমগীর।❞
১৬১৮ সালের আজকের দিনে আওরঙ্গজেব জন্ম গ্রহন করেন এবং ৮৯ বছর বয়স মারা যান। মৃত্যুর পরে তার সম্পদের হিসাব করে পাওয়া যায়- ৩১৪ রুপি আর নিজ হাতে বোনা কিছু টুপি (এই টাকা টুপি এবং কুরআন শরীফ নকল বিক্রি করে প্রাপ্ত)।
তিনি শেষ সময়ে বলে যান এ থেকেই জানাযা আর দাফনে খরচ করা হয় এবং যা বাঁচবে তা গরীবদের মাঝে দান করে দেওয়া হয়।
সম্রাট আলমগীরকে ইসলামি আলেমগন সম্রাট আলমগীরকে সম্মোধন করেছেন আমিরুল মুমিনিন বা বিশ্বাসীদের নেতা হিসেবে এবং শাসক হিসেবে তুলনা করেছেন হযরত উমর রা. ও গাজী সালাউদ্দীন আইয়ুবির সাথে

লেখাটি ফেসবুক ব্ন্ধু Ismail Hossain Shiraji থেকে কপি করা।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই নভেম্বর, ২০২১ ভোর ৬:৫৩
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×