আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পরিবর্তন হয়েছে বিদেশে এসে।ছিলাম অতিসাধারন, হলাম অসাধারন।পড়তাম মেয়েদের স্কুলে, এসে পড়লাম আমেরিকান হাই স্কুল যেখানে মেয়েদের ছেলেদের স্কুল বলে কিছু নাই।ছিলাম একা হলাম দোকা।আমার স্বভাব ছিল যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলরে।সবসময় খুব শান্ত মেয়ে হিসেবে সবার কাছে পরিচিত ছিলাম(যদিও ভিতরে ভিতরে আমি হলাম পৃথিবীর সবচেয়ে অশান্ত মেয়ে)।
খুব কম কথা বলতাম।কাউকে ভালো না লাগলে বেশ ভালো ভাবেই ইগনোর করতাম।খুব কম বন্ধু ছিল।পরে একটা ব্যাপার বুঝতে পেরেছিলাম, কারো সাথে দীর্ঘদিন না মিশলে আমার বন্ধুত্ব হতো না।প্রাকটিকাল জোক্স ভালো লাগতো না।আর এর জন্যই আমার কম বন্ধু ছিল।তাছাড়া প্রথম দেখায় কারো অসঙ্গতি দেখলে তার সাথে কথা বলার ইচ্ছা চলে যেতো।সায়ন্টিস্টরা বলে প্রথম দেখার ইমপ্রেশন নাকি পরে বিশ বার কথা হবার পর পরিবর্তন হয়।
কম বন্ধু হবার কারনে বইকেই বন্ধু বানিয়ে ফেলে ছিলাম।প্রচুর বই পড়তাম।গনিত আর বাংলা ছাড়া আর বিষয়ে চিন্তিত থাকতাম সব সময়।ভালো লাগতো লাগে লাবে ছবি আঁকা।এখনো মনে আছে, প্রথম দিন ওখানে স্কুলে এক দল আমার সাথে স্প্যানিশএ কথা বলা শুরু করেছিলো।কিছুই বুঝতে পারলাম না, দুই মিনিট হা করে তাকিয়ে থাকার পর আমাকে ইংরেজিতে বলল আমি মাক্সিকান নাকি।কি আজব, ভাবলাম মনে মনে।বললাম না, ওরা হতাশ হল, কিন্তু জানতে চাইলো কোথা থেকে আসছি।দশ বার বলার পর যখন বুঝলো না তখন রাগ হলো।সবচেয়ে সমস্যা হল এশিয়া মহাদেশকে ওরা এইস্যা বলে।তাই ষোল সতেরোবার বোঝানোর পর বুঝল।তারচেয়েও বড় সমস্যা আমার উচ্চারন।ব্রিটিশ ইংলিশ এর সাথে আমেরিকান ইংলিশের যে কত পার্থক্য, তা প্রথমবারের মত বুঝলাম।
অনেক অনেক খারাপ লাগতো প্রথম দিকে।এখনো লাগে, গান শুনতে শুনত যখন স্কুলে যাই, বাংলা উপন্যাস লেখা যখন পড়ি তখন মনে হয় এখানে এসে সব পেয়েছি, সুখ পাইনি।
তবে একটা ব্যাপার এখনো পরিবর্তন হয়নি, এখনো আমি একা।আগে খুব সাধারন ছিলাম বলে সবাই কিছুটা উপেক্ষা করত, এখন অতিঅসাধারন আমাকে সবাই এত সম্মান দেয় যে আমার সামনে ওরা জোক্স কিংবা স্লং বলে না।
একটা বিষয়ে এখনো আমি একরকম, আগেও ভালো শিক্ষার্থী ছিলাম, এখনো তাই রয়েছি। আমার সব শিক্ষক সবসময় আমার উপর সন্তুষ্ট।শুধু অনেক বেশি জানি, যা জানার দরকার তার চেয়েও বেশি।
এই হল আমি যাকে আপনি এই মাত্র জানলেন!
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ ভোর ৬:৩৬