somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রাইমারির মাস্টার - ৩ (জোঁকের জগৎ)

০১ লা আগস্ট, ২০২২ সকাল ৮:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



শুরু করছি একটি ঘটনা দিয়ে। অনার্সের ফাইনাল ইয়ারে আমাদের একটি ম্যাগজিন বের হবে বলে তোড়জোড় শুরু হলো । সবার নামের পাশে এইম ইন লাইফ নামে একটা অপশন ছিলো। আমি ওখানে দিতে বললাম ' প্রাইমারী স্কুল টিচার' । কিন্তু এডিটরের দায়িত্বে যিনি ছিলেন তিনি এটা দুবার কেটে দিলেন। তখন আমি বললাম , এটা যদি না দেন তাহলে খালি রাখেন। আমি ঠাট্টা করছি না। এখনো মাঝে মাঝে গর্ব করে পৃষ্ঠা টা দেখাই। কেউ বিশ্বাস করতে না চাইলে। আমি তখন থেকেই ব্যাপার টা দেখতে পেতাম । শিক্ষক তথা একজন প্রাইমারী শিক্ষক সম্পর্কে মানুষের কতো নিম্নস্তরের দৃষ্টিভঙ্গি । কিন্তু ঘটনা হলো শিক্ষকতা কেমন পেশা এবং বহির্বিশ্বে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের অবস্থান সম্পর্কে আমি অবগত। কিছু ( সংখ্যায় বেপরোয়া রকমের বেশী) মুর্খের এবং অর্ধশিক্ষিত লোকদের দৃস্টিভংগির তোয়াক্কা না করেই আমার সিদ্ধান্ত নেয়া বলে আমি কখনো বিচলিত হইনি। আরো ভালো লেগেছে যখন অন্যান্য দেশের মানুষের সাথে কথা বলেছি । তারা যখন জেনেছেন আমি একজন শিক্ষক, খুবই সম্মানের এবং আন্তরিকতার সাথে নিয়েছেন। উল্লেখ্য আমি একটা এপ এ বিশ্বের ৬০ টি দেশের মানুষের সাথে কথা বলেছি। তাতে আমার মতো শিক্ষক ও পেয়েছি। একজন মিশরের ৪২ বছরের ইংরেজি শিক্ষক ছিলেন যিনি আমার মতো ইংরেজি টা ঝালিয়ে নিতেই এই এপ ব্যবহার করেছিলেন। এই পেশার প্রতি তার ডেডিকেশন আমাকে মুগ্ধ করেছে এবং আমি খুবই উৎসাহ পেয়েছি।

কয়েকদিন আগে জানতে পারলাম আমার বোনের শারীরিক অসুস্থতার জন্য আমাকে তার সাথে বাইরের দেশে যেতে হবে । সে কারণে আমাকে পাসপোর্ট করতে যেতে হয়েছে। এই পাসপোর্ট করতে গিয়েই নিজস্ব ডিপার্টমেন্টে শিক্ষকদের অবস্থান সম্পর্কে অবগত হলাম। পাসপোর্ট করতে হলে আপনাকে সরকারি চাকুরে হিসেবে অনাপত্তি পত্র (NOC) নিতে হবে। প্রথমে আপনাকে উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে কাগজপত্র যাচাই করে উর্ধতন কর্মকর্তার সাইন নিয়ে জেলা শিক্ষা অফিসে যেতে হয়। তারপর ওখান থেকে ওয়েবে আপলোড হলে তা পাসপোর্ট অফিসে গৃহীত হয়। পুরা প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে শক্তিশালী মানুষরা হচ্ছেন অফিসের তৃতীয় চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা। সবকয়টি জেলার প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের এই কর্মচারীরা শিক্ষকদের জিম্মি করে রেখেছেন।

মাতৃত্বকালীন ছুটির জন্য এরা শিক্ষিকাদের থেকে অর্ধেক বেতন দাবী করেন। শ্রান্তি বিনোদনের ভাতার জন্য উৎকোচ নেন। কোন সাহায্যের জন্য গেলে তারা তা ব্যাতীত মুখ খোলেন না। আমার ক্ষেত্র সহ বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে আরো পাবার আশায় উৎকোচ নেবার পরেও মুখ খোলেন না। আমার শুধু প্রাথমিক উপজেলা শিক্ষা অফিসেই এক সপ্তাহ গিয়েছে। এমন কর্মময় স্কুল এবং দুরত্ব অতিক্রম শেষে এটি একটি অসহায় পরিস্থিতি। কিছু গুরুতর অসুস্থ শিক্ষিকাদের দেখেছি ঘন্টার ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকেছেন । পরে নিরাশ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। এই ভয়ংকর কর্মচারীরা বেতন ভাতা সহ অন্যান্য বিভিন্ন ভাতায় উৎকোচ নেন এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে কর্মকর্তাগণ ও তাদের কাছে অসহায় হয়ে পড়েন। প্রধান শিক্ষক শিক্ষিকাগণ তাদের স্কুলের বিভিন্ন কাজে এসে এদের কে "প্লিজ একটু শুনুন" বলে ক্লান্ত হয়ে পড়লেও বকশিস না পেলে তারা কথা শোনেন না। সঠিক উপায় বলেন না এবং ভুল করে আনলে হেনস্থা করেন। এভাবে বিরূপ মনোভাব নিয়ে একজন শিক্ষক কিভাবে শিক্ষাদান করবেন। যেখানে তিনি তার হকটাই পাচ্ছেন উৎকোচ দিয়ে। শিক্ষকদের এই স্বল্প বেতন থেকে যদি এভাবে চুষে নিয়ে যাওয়া হয় তারা চলবেন কিভাবে? আমাকে অনাপত্তি পত্র নিতে যে উৎকোচ দিতে হয়েছে তা অন্য ডিপার্টমেন্টে বিরল । তবে মজার ব্যাপার লেগেছে একজন কর্মচারীর ডায়লগ," এটা নিয়ে যান, এটা হারিয়ে যাবে"। পরে ঠিকই হাসি মুখে তা নিয়েছেন।প্রথমে বলা "এই কাজ টা হবে না" এবং যাচ্ছেতাই ব্যবহার এবং নির্দিষ্ট খাবার পাবার পর বসিয়ে হাসিমুখে কথা বলা অসাধারণ লেগেছে। অপ্রতুল জনবলের দোহাই দিয়ে শিক্ষকগণের এই যৎসামান্য বেতনের যদি জোঁকের পেটে চলে যায় তাহলে কিভাবে শিক্ষাব্যবস্থা সামনে এগিয়ে যাবে?

ছিনতাইকারীদের আগে আমি অনেক ঘৃণা করতাম। এখন আর করিনা।




সর্বশেষ এডিট : ০১ লা আগস্ট, ২০২২ সকাল ৯:২৪
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×