somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আপনি স্বীকার করছেন তো?

২৫ শে নভেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৩:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লেখার শুরুতেই স্মরণ করছি গোল্ডিং এবং পো কে। যেহেতু তারা আগেই মানুষের ভেতর পোষ মানানো পশুত্বকে টের পেয়ে গিয়েছিলেন। মানুষ শয়তানেরই আরেক রূপ। আবার একই মানুষ দেবতার দর্পণ। আজ শয়তানকে নিয়েই আলোচনা হবে। আজ সব ভালোরা দূরে থাকবে। জীবনে যতবারই নীচুতা থেকে দূরে থাকতে চেয়েছি ততবারই এর সমুদ্রে হাবুডুবু খেতে হয়েছে। যতবারই কারো উপকার করতে সায় দিয়েছি ততবারই তারা নিঃস্ব করে রেখে গেছে। যতবারই চেয়েছি সবাই একসাথে মিলেমিশে থাকুক ততবারই দেখেছি আসলে মানুষ এমন এক ভয়ানক জন্তু যে তারা বেশীক্ষন একসাথে ভালোবাসায় আবদ্ব হয়ে থাকতে পারে না।

শীতের সকাল। সবাই ঠিক করল ক্রিকেট খেলবে। আমি সরঞ্জাম কিনে দিলাম । এদের মধ্যে একজন ছেলে ঠিক করলো তার ব্যাট দিয়ে কাউকে খেলতে দেবে না। জানতে পারলাম হিন্দু ছেলেটির পরিবার ভেজিটেরিয়ান। অন্যরা ব্যাখ্য দিয়ে তাকে বুঝাতে বললে আমি কিছুই বললাম না। এর ব্যখ্যা আমি কি দিব?

আমি একজন ব্রাম্মণ পরিবারের সন্তান। আমাদের স্বপাক আহার করা কর্তব্য। আমি কিছু কিছু ক্ষেত্রে ধর্মীয় বিধান পুরোপুরি মেনে চলতে পারিনি। অনেকেই এখন পারে না। গোমাংস ভক্ষণে আমাদের ভয়ংকর পাপের কথা বলা আছে। অতএব বারণ। কিন্তু আমার ছোটবেলায় মামার বাড়ির পাশের একজন জোর করে কোথাও একটা কুড়িয়ে পাওয়া হাড় আমার মুখে ঢুকিয়ে দিয়ে তার মতে মুসলমান হয়ে গেছি বলতে বলতে বাড়িতে চলে গিয়েছেন। এছাড়া আমাকে ‘খাইলে কী হয়?’ প্রশ্ন তো অনেকবারই শোনা লেগেছে। কর্মস্থলে অনেকবার নিয়ম ভাংগতে হয়ও। একসাথেই খেতে হয়। ফিরে আসি ক্রিকেট খেলায়। পাশের মাঠেই কিছু মুসলমান বাচ্চাদের খেলতে দেখে এখানকার হিন্দু বাচ্চাদের বললাম এদের সাথে একসাথে খেলতে। তারা কিছুতেই রাজী হচ্ছিলো না। অনেক কস্টে রাজী করিয়ে একসাথে খেলতে বললাম। এতদিন খুব ভালোভাবেই খেলছিলো। যেইই আমি একত্র করলাম তাদের মধ্যে ঝামেলা শুরু হলো। একপর্যায়ে মুসলমান বাচ্চাগুলো পিচে গর্ত করা শুরু করলো। যেহেতু হিন্দু বাচ্চাগুলো তাদের নিচ্ছিলো না। মনুষ্য বর্জ্য ফেলতে লাগল। ফলাফল তাদের খেলা বন্ধ। তাহলে সমস্যাটার সুত্রপাতটা কে করল? আমি।

আমার পিতা কট্টর ব্রাম্মণ। কোন মুসলমানের হাতের দূরে থাক অন্যকোন জাতের(!) মানুষের রান্না এই জাত্যাভীমানি মানুষটি খান না। এ ব্যাপারটি অনেকের কাছেই ঘৃণার বলে মনে হয়। আদতে তিনি একজন ব্রাম্মণ। আমার মাতামহ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত স্বপাক আহার করে গেছেন । আমার উপর ধর্মীয় আদেশ একই রকম। কিন্তু আমি মানি না। ব্যাপারটি যে ঘৃণার নয় তা আমি বোঝাতে ব্যর্থ। আমার প্লেটে গরুর মাংস খেয়ে ধরা মাত্রই আমি তা খেতে অপারগ। অন্তত এটুকু আমাকে করতেই হয়। আমি এক মুসলমান পরিবারের সাথে চব্বিশ বছরেরো বেশি সময় প্রতিবেশী হিসেবে আছি। তাদের কোন কারণে গ্যাসের সমস্যায় আমার বাসায় রান্নার প্রয়োজন পড়েছিলো। তাদের বাবা আবার কট্টর হিন্দু বিদ্বেষী। কিন্তু আমরা এ যুগের মানবতা চর্চাকারী মানুষ। তারা আমার আপারা এবং আমি তাদের হাফপ্যান্ট পরা খালি গায়ের ভাই। এখনো ঐটাই রয়ে গেছে। কিন্তু বুমার্সরা তাদের নিজস্বতায় অসাধারণ। ফলাফল দুদিক থেকে আমরা ভাইবোনেরা চাপে থেকে রান্নার ব্যাপার সমাপ্ত করলাম।

আমার সবসময় মনে হয়েছে এখন যারা পঞ্চাশোর্ধ (কিছু মহৎ প্রাণ ক্ষনজন্মারা ছাড়া) আছেন তারাই সর্বোচ্চ ঘৃণা উগরে দেয়া মানুষজন। তাদের বাচ্চাদেরকে তারা অভূতপুর্ব উপায়ে শিখিয়ে গেছেন , লাল পিপড়া হিন্দু , কালোরা মুসলমান, সবুজ মুসলমানদের রঙ , গেরুয়া হিন্দুদের। ইহুদি মারা পুণ্যের কাজ তা যদি বাচ্চা শিশু ও হয়। তেতুল না হয় মিস্টি, শেখ না হয় ইষ্টি ইত্যাদি ইত্যাদি। ফলাফল, তারা যেহেতু শিখছে না বই থেকে এবং নিজে মিশে না পরীক্ষা করে, তারা এই ঘৃণার পাইপলাইন নিয়ে যাচ্ছে বহুদূর। ইহা আরো দূর যাবে। আমার প্রাক্তন কখনো বলবেন না যে আমি আগাগোড়া খারাপ মানুষ ছিলাম । শুধুমাত্র অন্য ধর্মের বিধায়। আমার অনেক প্রিয়ভাজন বন্ধু আছেন যাদের সবার ধর্ম ভিন্ন। আমি জানি ব্যাপা[রটা ঠিক ধর্মের নয়। মানবধর্মের। ধর্ম বাদ দেই।

মানুষ আসলেই শান্তি পছন্দ করে না। এই প্রজাতির মোটামুটি নব্বই ভাগই ক্ষতিকর। স্বার্থ দ্বারা তাড়িত। কিন্তু কেউ কি স্বীকার করবে? গুটিকয়েক ছাড়া। তাদের জন্য এ ধরা এখনো সুন্দর। ইতিহাস সাক্ষী। পেছনের বর্বরতাগুলোই এর প্রমাণ। শুধু পরিচর্যা পেলেই মানুষ যে মেধাবী পশু এর প্রমাণ মিলে। আমার সমস্যা নেই তাতে । স্বীকার করতে দোষ কী? একজন পেট্রোল বোমা ছুড়ে মারার আগে কী হতে পারে তা কী ঐ মানুষটি জানে না? এটা বিশ্বাস যোগ্য নয়। এমন সৃজনশীল পশু তা কী করে জানবে না? ঐ মানুষের তা করতে মুহুর্তের জন্য হলেও ভালো লাগে। ভেতরের আদিমতা। নস্ট করার অভিলাষ। ধ্বংসের নৃত্যে অংশগ্রহনের অসাধারণ অনুভুতি। সৃষ্টির সেরা জীব বলে যে দাম্ভিকতা তার সার্থকতা কী আদৌ আছে? একজন অসুখী মানুষই আরেকজনের ক্ষতি করে। পরিবেশের পরিচর্যা পেলে এই জীব সবাইকে ছাড়িয়ে যেতে পারে তার প্রমাণ আমরা সবাই পেয়েছি। হিউম্যানিটি কি আসলেই ধনাত্মক শব্দ?

কারো ক্ষতি করার পর , ঠকানোর পর, যদি ব্যাখ্যা না খুজে পান গর্বের সাথে বলুন , আমি মানুষ । আমি এর চেয়ে বেটার করতে পারতাম, করিনি। শুধু শুধু তার মিথ্যে দোষ ত্রুটি কেন বলবেন আত্মপক্ষ সমর্থনের উদ্দেশ্যে। আপনি ক্ষতিগ্রস্ত হলে ক্ষমা করে দিন শুধুমাত্র মানুষ বলে। পারবেন। আমি জানি পারবেন। একমাত্র আমরাই বিকৃতিতে সৃজনশীল এবং মেধাবী প্রাণি। আর যারা বুঝে গিয়েছেন সমস্যাটা এই প্রজাতির বহুকাল আগ থেকেই। তাহলে, স্বীকার করছেন?










সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে নভেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৪:০৫
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শোকের উচ্চারণ।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:১৬

নিত্যদিনের জেগে উঠা ঢাকা - সমস্তরাত ভারী যানবাহন টানা কিছুটা ক্লান্ত রাজপথ, ফজরের আজান, বসবাস অযোগ্য শহরের তকমা পাওয়া প্রতিদিনের ভোর। এই শ্রাবণেও ময়লা ভেপে উঠা দুর্গন্ধ নিয়ে জেগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আন্দোলনের নামে উগ্রতা কাম্য নয় | সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যবাদকে না বলুন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন "বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সমস্ত অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে" ধীরে ধীরে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে বা ছাত্রদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন প্রশ্নের কি উত্তর? আপনাদের মতামত।

লিখেছেন নয়া পাঠক, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

এখানে মাত্র ৫টি প্রশ্ন রয়েছে আপনাদের নিকট। আপনারা মানে যত মুক্তিযোদ্ধা বা অতিজ্ঞানী, অতিবুদ্ধিমান ব্লগার রয়েছেন এই ব্লগে প্রশ্নটা তাদের নিকট-ই, যদি তারা এর উত্তর না দিতে পারেন, তবে সাধারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকুরী সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের সরকার-প্রধানরা শুরু থেকেই অজ্ঞ ছিলেন

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:০৭



আমার বাবা চাষী ছিলেন; তখন(১৯৫৭-১৯৬৪ সাল ) চাষ করা খুবই কষ্টকর পেশা ছিলো; আমাদের এলাকাটি চট্টগ্রাম অন্চলের মাঝে মোটামুটি একটু নীচু এলাকা, বর্ষায় পানি জমে থাকতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

পঁচে যাওয়া বাংলাদেশ আর্মি

লিখেছেন রিয়াজ হান্নান, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:২৫


একটা দেশের আর্মিদের বলা হয় দেশ রক্ষা কবজ,গোটা দেশের অব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে বহিরাগত দুশমনদের আতংকের নাম। ছোটবেলা থেকে এই ধারণা নিয়ে কয়েকটা জেনারেশন বড় হয়ে উঠলেও সেই জেনারেশনের কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×