somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কানাডায় উচ্চশিক্ষা

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১ সকাল ১১:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

উচ্চশিক্ষার জন্য পৃথিবীজুড়ে চাহিদা রয়েছে কানাডার। আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন শিক্ষা এবং আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে কানাডায় তুলনামূলক খরচ কম হওয়ায় বিশ্বব্যাপী শিক্ষার্থীদের পছন্দের শীর্ষ তালিকায় রয়েছে কানাডার অবস্থান। উন্নত জীবন ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের আশায় কানাডায় প্রতিবছর উচ্চশিক্ষার জন্য বহুসংখ্যক শিক্ষার্থী পাড়ি জমাচ্ছেন। শিক্ষাজীবন শেষে দেশে ফিরে তাঁরা প্রবেশ করছেন সম্ভাবনাময় পেশায়। আর কেউ বা পেশাগত জীবনে সে দেশেই থিতু হয়ে যাচ্ছেন। কানাডায় বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ৯০টি, যার সব কটিই সরকারি। এতে করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদের গুণগত মানসম্পন্ন শিক্ষা দেয়। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও কানাডায় বেশ কিছু বেসরকারি কলেজ ও ইনস্টিটিউট রয়েছে। তাই যাঁরা বিদেশে উচ্চশিক্ষার কথা ভাবছেন, তাঁরা নির্দ্বিধায় বেছে নিতে পারেন কানাডা। তবে এ জন্য নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও প্রোগ্রাম সম্পর্কে রাখতে হবে পর্যাপ্ত খোঁজখবর।

কানাডার টরন্টোতে অবস্থিত ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যোগাযোগ বিষয়ে পিএইচডি সম্পন্ন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবুল মনসুর আহাম্মদ। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা ও জীবনযাত্রা সম্পর্কে জানা যাক তাঁর অভিজ্ঞতার কথা। শিক্ষাক্ষেত্রে কানাডা বরাবরই গুণগতমান ও পরিবেশ বজায় রাখে। এতে করে শিক্ষার্থীরা সহজেই তা সম্পন্ন করতে পারেন। কানাডায় লেখাপড়ার খরচ বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু বেশি বটে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা বৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারেন। যাঁরা শুরুতেই বৃত্তি পান না, তাঁদের কিছুটা সমস্যা হতে পারে। তবে নিজ খরচে এসে প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার পর একটু খোঁজখবর রাখলেই নানা ধরনের বৃত্তি পাওয়া যায়, যা দিয়ে টিউশন ফি ও থাকার খরচ হয়ে যায়।

কানাডায় যেতে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের যাওয়ার প্রায় এক বছর আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। উচ্চশিক্ষার জন্য কানাডায় যেতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের করণীয় সম্পর্কে আবুল মনসুর আহাম্মদ বলেন, প্রথমেই শিক্ষার্থীকে নির্বাচন করতে হবে তিনি কী বিষয়ে পড়তে চান। এরপর খোঁজ নিতে হবে কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে এ প্রোগ্রামটি চালু আছে, প্রোগ্রামটির খরচ, পড়ার যোগ্যতা, বৃত্তির সুযোগ, খণ্ডকালীন কাজের সুযোগ প্রভৃতি সম্পর্কে। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা সহজেই কানাডায় যেতে পারেন, তবে এর জন্য তাঁদের এ বিষয়গুলো সম্পর্কে ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করে নিতে হবে। এই তথ্যগুলো শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিজস্ব ওয়েবসাইট, কানাডিয়ান দূতাবাস থেকে পেতে পারেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় আয়োজিত শিক্ষামেলা এ ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।

বিশ্বায়নের জোয়ারে প্রতিযোগিতাপূর্ণ চাকরির বাজারে কানাডার মানসম্মত শিক্ষা আপনাকে সফল পেশাজীবন লাভে সাহায্য করবে। তবে শিক্ষার্থীকে শুরুতেই জানতে হবে ভর্তির নিয়মাবলি ও প্রক্রিয়া সম্পর্কে; নতুবা পরে বিপদে পড়তে হবে। চলুন জেনে নিই কানাডার উচ্চশিক্ষা সম্পর্কিত কিছু প্রাথমিক তথ্য।

ডিগ্রির ধরন ও ভর্তির সেশন
কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে সাধারণত পাঁচ ধরনের ডিগ্রি দেওয়া হয়—ডক্টরেট ডিগ্রি, আন্ডারগ্র্যাজুয়েট, গ্র্যাজুয়েট, ডিপ্লোমা ডিগ্রি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তির সেশন নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মের ওপর। তবে অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়েই সাধারণত সেপ্টেম্বর থেকে মে পর্যন্ত সেশন থাকে। এ ছাড়া জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি, এপ্রিল ও জুনেও কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশন শুরু হয়।

ভর্তির জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা
আন্ডারগ্র্যাজুয়েট পর্যায়ে ভর্তির জন্য কমপক্ষে ১২ বছরের শিক্ষাগত যোগ্যতা লাগবে। গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রির জন্য লাগবে ১৬ বছরের শিক্ষাগত যোগ্যতা। কানাডায় উচ্চশিক্ষার জন্য ইংরেজি ও ফ্রেঞ্চ—এ দুটো ভাষার প্রতিষ্ঠান রয়েছে। একজন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী এই দুটোর যেকোনো একটি ভাষা পড়তে পারবেন। ইংরেজি ভাষার প্রতিষ্ঠানগুলো ভাষাগত যোগ্যতা হিসেবে টোয়েফল, আইইএলটিএস, জিম্যাট, জিআরইকে প্রাধান্য দেয়। টোফেলের আইবিটি স্কোর থাকতে হবে ন্যূনতম ৭৫। অন্যদিকে যাঁরা আইইএলটিএস করেছেন, তাঁদের জন্য স্কোর প্রয়োজন ন্যূনতম ৬.০০। ভাষাগত যোগ্যতা ছাড়াও কিছু প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থী ভর্তি করায়। তবে এ ক্ষেত্রে ভর্তির পর প্রতিষ্ঠানে ভাষার ওপর ESL (English Second Language) মৌলিক কোর্স করতে হবে। ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের টোয়েফল, আইইএলটিএস, জিম্যাট, জিআরই না থাকলেও হবে। ফ্রেঞ্চ ভাষার প্রতিষ্ঠানে পড়তে চাইলে ওই প্রতিষ্ঠানে ফ্রেঞ্চ ভাষার ওপর লিখিত পরীক্ষা দিতে হয়। এটি তারা নিজস্ব নিয়মে নিয়ে থাকে। কানাডায় পড়ালেখার জন্য শক্ত পৃষ্ঠপোষকতা দেখাতে হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীকে তাঁর পৃষ্ঠপোষকের ন্যূনতম ২০ লাখ টাকা ব্যাংক হিসাব দেখাতে হবে এবং এই টাকা ন্যূনতম এক বছর ব্যাংকে থাকতে হবে।

টিউশন ফি ও থাকার ব্যবস্থা
কানাডার সব বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি একই রকম হয় না। অঞ্চল ও পড়ানোর প্রোগ্রামভেদে টিউশন ফিও ভিন্ন ভিন্ন হয়। স্থানীয় শিক্ষার্থীদের তুলনায় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর টিউশন ফি বেশি হয়। আন্ডারগ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীদের জন্য খরচ পড়বে ১৭ থেকে ২০ হাজার ইউএস ডলার। গ্র্যাজুয়েট, ডক্টরাল ও অ্যাসোসিয়েট ডিগ্রির জন্য খরচ পড়বে ১২ হাজার ৫০০ থেকে ২০ হাজার ইউএস ডলার।

আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের প্রথম ছয় মাস বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে থাকতে হয়। পরে তাঁরা ইচ্ছা করলে ক্যাম্পাসের বাইরেও থাকতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করতে হবে।

খণ্ডকালীন কাজের সুযোগ
কানাডায় শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে খণ্ডকালীন কাজের সুযোগ। সপ্তাহে একজন শিক্ষার্থী ২০ ঘণ্টা কাজ করতে পারেন। শিক্ষক সহকারী, বিক্রয়কর্মী, ফুড ক্যাটারিং, গবেষণা সহকারী, কম্পিউটার ওয়ার্কসহ বিভিন্ন খণ্ডকালীন কাজ শিক্ষার্থীরা করতে পারেন।

ক্রেডিট ট্রান্সফারের সুবিধা
বাংলাদেশে থেকে কানাডার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রেডিট ট্রান্সফারের সুবিধা রয়েছে। এ ছাড়া কানাডায় এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরেক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রেডিট ট্রান্সফার করা যায়। গ্র্যাজুয়েট ও আন্ডারগ্র্যাজুয়েট পর্যায়েই মূলত ক্রেডিট ট্রান্সফার হয়। তবে ক্রেডিট ট্রান্সফার কত শতাংশ পর্যন্ত করা যাবে, তাতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শর্তারোপ করে।

বৃত্তির খোঁজে
কানাডায় পড়তে যেতে আগ্রহীদের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেয়। শিক্ষার্থীর একাডেমিক ফলের ওপর ভিত্তি করে বৃত্তি দেওয়া হয়ে থাকে। তবে যাঁরা শুরু থেকেই বৃত্তি নিয়ে যেতে চান, তাঁদের ক্ষেত্রে টোয়েফল, আইইএলটিএস, জিআরই, জিম্যাট প্রভৃতি স্কোর ভালো থাকতে হবে। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য কানাডা সরকার আন্তর্জাতিক স্কলারশিপ প্রোগ্রাম নামে একটি বৃত্তি দেয়। এ ছাড়া কানাডা মিলেনিয়াম স্কলারশিপ ফাউন্ডেশন, ওন্টারিও গ্র্যাজুয়েট বৃত্তি প্রোগ্রামসহ নানা ধরনের বৃত্তির প্রোগ্রাম চালু আছে। কানাডা সরকারের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওয়েবসাইটেও আপনি বৃত্তির বিস্তারিত খোঁজখবর পাবেন।

উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিকানা:

http://www.albarta.ca

http://www.utoronto.ca

http://www.yorku.ca

http://www.concondia.ca

http://www.ucan.ca

http://www.mcgill.ca

http://www.mcmaster.ca
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×