somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মস্তিষ্কের হেঁয়ালি

২৭ শে মে, ২০১২ রাত ২:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আসিফ হাসান
বুদ্ধিমত্তার কারণেই মানবজাতি পৃথিবীতে অন্যান্য প্রজাতির উপর প্রাধান্য সৃষ্টি করেছে। যতই দিন যাচ্ছে প্রকৃতির উপর মানুষের নিয়ন্ত্রণ আরো জোরদার হচ্ছে। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বিষয় আয়ত্তে আনার কারণেই এটা সম্ভব হচ্ছে। সেটা বুদ্ধিমত্তারই আরেকটি অংশ। অবশ্য বুদ্ধিমত্তা শব্দটিকে আবেগ, সৃজনশীলতা ও অর্থনীতি ইত্যাদির মতো শব্দগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত করা যায়। এগুলোই প্রযুক্তি এবং এর মাধ্যমগুলোর সর্বোত্তম ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়। বিজ্ঞানীরা এখন এই বুদ্ধিমত্তা নিয়েও কাজ করছেন। বুদ্ধিমত্তা মস্তিষ্কের সঙ্গে সম্পৃক্ত। যে যত মেধাবী অর্থাৎ যার মস্তিষ্ক যত বেশি উন্নত সে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তত বেশি এগিয়ে যায়।

আমরা সবাই জানি, মানবমস্তিষ্কের ক্ষমতা অবিশ্বাস্য। তবে আমরা গড়ে বিপুল সম্ভাবনাপূর্ণ মস্তিষ্কশক্তির মাত্র তিন শতাংশ ব্যবহার করি। এই অংশটুকুই আমাদের বিভিন্ন তথ্য দিয়ে থাকে এবং মস্তিষ্কের বাকি অংশ অবচেতন মন হিসেবে অব্যবহৃতই পড়ে থাকে। অব্যবহৃত অংশ ব্যবহারের প্রক্রিয়া নিয়ে গবেষণা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। অনেকেই বলে থাকেন নানা ধরনের পরীক্ষা ও ধাঁধার সমাধানের মাধ্যমে মস্তিষ্ক ব্যবহারের শক্তি ও কার্যক্ষমতা বাড়ানো যায়।
মানব অঙ্গগুলোর মধ্যে মস্তিষ্কই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও সবচেয়ে মূল্যবান। আমাদের নড়াচড়া, কথা বলা, কাজ করার ক্ষমতা, চিন্তাভাবনা, আবেগ-অনুভূতি, স্মরণশক্তি-এক কথায় সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করে মস্তিষ্ক। সম্ভবত দেহের এই অংশটিই আমরা সবচেয়ে অবহেলা করি।

সমীক্ষায় দেখা গেছে, বিভিন্ন প্রাণীর মস্তিষ্কের আকারের সঙ্গে তাদের বুদ্ধিমত্তার নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ডলফিনের মস্তিষ্কের আকার তুলনামূলকভাবে বড় এবং অন্যান্য প্রাণীর চেয়ে তারা অনেক বেশি বুদ্ধিমান। আবার এক লাখ বছর আগে মানুষের মস্তিষ্ক ছিল আজকের চেয়ে অনেক বড়, তবে তারা হয়তো এখনকার মানুষের চেয়ে বুদ্ধিমান ছিল না। অর্থাৎ মানুষের ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের আকারের সঙ্গে মেধার সম্পর্ক তেমন নেই। বরং অনেকে মনে করেন, মাথা মোটা লোকেরা সমস্যায় পড়েন বেশি, কারণ বিভিন্ন অংশের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করতে তাদের অনেক বেশি সময় ব্যয় করতে হয়। মেধাবী লোকেরা অত্যন্ত সম্মানিত বিবেচিত হন।
মেধার মধ্যে ‘সামাজিক বুদ্ধিমত্তা’ আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে প্রতীয়মান হচ্ছে। অনেক বিজ্ঞানী এখন এই সামাজিক বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ করছেন। অবশ্য কাজটা আরো আগেই শুরু হয়েছে। মস্তিষ্ককে জানার অভিযানে বর্তমানে বেশ উন্নতি হয়েছে। যদিও যে স্তরে যেতে হবে তার তুলনায় এখনো অনেক পিছিয়ে আছে মানুষ।

সামাজিক বুদ্ধিমত্তার উপলব্ধি
‘সামাজিক বুদ্ধিমত্তা’ পরিভাষাটি প্রথম ব্যবহার করেন ড্যানিয়েল গোলেমান। শারীরতত্ত্ব ও মস্তিষ্ক বিজ্ঞানের সাম্প্রতিক উন্নতির সঙ্গে এটির ঘনিষ্ঠ সংযোগ রয়েছে। এটা সবাই স্বীকার করে প্রত্যেক মানুষই একে অন্যের সঙ্গে নানাভাবে সম্পর্কযুক্ত এবং তাদের জীবনযাত্রার জন্য অন্যের উপর নির্ভরশীল। সচেতন মনের সীমাবদ্ধতার বাইরেও আমরা প্রতিদিন পিতামাতা, স্বামী/স্ত্রী, সহকর্মী, নিয়োগকর্তা, বন্ধুবান্ধব এবং এমনকি নবাগতদের সঙ্গেও সম্পর্ক রাখি এবং তাদের সবার আচরণ, দর্শন আমাদের প্রভাবিত করে। আমরা নিজের অজান্তেই ভালো হোক আর খারাপ হোক তাদের অনেক কিছুই আত্মস্থ করি।

এ ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার হলো, মানুষ সামাজিক জীব এবং প্রত্যেকের মস্তিষ্ক নীরবে অন্যের মস্তিষ্কের সঙ্গে অব্যাহতভাবে যোগাযোগ রক্ষা করে চলে- এই ধারণাটি স্বীকার করা। তাই আমাদের আচরণ ও প্রতিক্রিয়া আমাদের দেহের হরমোন ব্যবস্থাকে উদ্দীপ্ত করে এবং যা শেষ পর্যন্ত হৃদপিন্ড ও দৈহিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাতে কার্যকর প্রভাব ফেলে। এটা বলতে গেলে ভিটামিনের মতো কার্যকর। অর্থাৎ ভালো সম্পর্কে ইতিবাচক এবং খারাপে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।

গোলেমানের তত্ত্ব হলো, অন্যের সর্দিতে আমরা যেমন ওই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারি, তেমনি অন্যের আবেগ ও আচরণেও আমরা সুস্থ বা অসুস্থ হয়ে পড়তে পারি। একজন প্রাণবন্ত লোকের সাহচর্যে কিছু সময় ব্যয় করলে নিজের মধ্যেই বেশ উদ্দীপ্ত অবস্থার সৃষ্টি হয়। নিজেকে অনেক চাঙ্গা মনে হয়। আবার নেতিবাচক লোকদের সংস্পর্শে এলে আমাদের মধ্যে যে চাপের সৃষ্টি হয়, তা আমাদের জীবনীশক্তিকে ক্ষয় করে দেয়। আবার অন্যকে প্রভাবিত করে অনেক কাজও সহজে আদায় করা সম্ভব। এক্ষেত্রে জীবন অনেক বেশি সাবলীল ও গতিশীল হয়ে যায়। তিনি এই পদ্ধতি ব্যবহার করে ব্যক্তিগত আকর্ষণক্ষমতা, আবেগময় শক্তি এমনকি সত্য বা মিথ্যা নির্ণয়ের কাজটিও করতে পারার দাবি করেন। তার মতে, মানুষ সহজাতভাবেই অন্যের আবেগ-অনুভূতিতে সাড়া দেয়, সহযোগিতা করে এবং উদারতা প্রদর্শন করে। তবে সামাজিক বুদ্ধিমত্তার বিকাশের ফলে ব্যতিক্রম অবস্থার সৃষ্টি হয়।

মানবমনের উপলব্ধি
সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এল ক্যালিওবি ইন্সটিটিউটের বিজ্ঞানীরা Emotional Social Intelligence Prosthetic Device (ESIPD) নামের একটি যন্ত্র আবিষ্কার করেছেন যা দিয়ে মানুষের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব বলে তারা দাবি করেছেন। যন্ত্রটি মানুষের মানসিক অবস্থা বদলে দিতে পারে বলে বলা হচ্ছে। বিশেষ করে অন্যজনের কাছে সঠিকভাবে নিজের ভাবটি ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম এটি। মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত এবং বিশেষ করে মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য যন্ত্রটি আরো ভালো কাজ করবে। এই শ্রেণীর লোকদের কথা শুনে অন্যরা সহজেই বিরক্ত হয়ে পড়ে এবং এড়িয়ে যেতে চায়। এতে ছোট্ট একটি ক্যামেরা থাকে যার সঙ্গে সংযোগ থাকবে হাতে থাকা একটি ক্ষুদে কম্পিউটারের। ক্যামেরায় শ্রোতার অসংখ্য ছবি নিয়ে কম্পিউটারে পাঠাবে, যা দ্রুততার সঙ্গে বিশ্লেষণ করে জানা যাবে তার মানসিক অবস্থাটি কেমন। তা ছাড়া শ্রোতা মাঝে মাঝে যে কথা বলবে, তা-ও বিশ্লেষণ করবে। এগুলোর মাধ্যমে বোঝা যাবে, সে বক্তার বক্তব্যকে কেমন ভাবে নিচ্ছে। শ্রোতা যদি একভাবে বুঝতে না পারেন, তবে বক্তা ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করতে পারবেন। ভ্রু নাড়াচাড়া, কপাল কোচকানো, ঠোঁট নাড়া, মাথা-ঝাঁকুনি ইত্যাদি বিষয়গুলো একজনের মনের অবস্থা ফুটিয়ে তোলে। বুদ্ধিমান লোক এগুলো দেখেই বুঝতে পারে, তার বক্তব্যকে কীভাবে নেয়া হচ্ছে। কিন্তু যাদের মনের অবস্থা ধীর, তারা পড়ে সমস্যায়। এই সমস্যা কাটিয়ে উঠার জন্যই প্রয়োজন হয়ে পড়ে অন্যের সাহায্য। পরিণতিতে যন্ত্রের আবিষ্কার।

অবশ্য এখনো যন্ত্রটি পুরোপুরি বিকশিত হয়নি। এখন পর্যন্ত ছয়টি মৌলিক মানসিক অবস্থা: আনন্দ, বেদনা, ক্রোধ, ভয়, বিস্ময় ও বিরক্তি চিহ্নিত করতে সক্ষম। অবশ্য যন্ত্রটি একই সঙ্গে একাধিক অভিব্যক্তিও চিহ্নিত করতে পারেhttp://www.weeklysonarbangla.net/news_details.php?newsid=807
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×