নারী বিদ্বেষের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ: রাজু ভাস্করের অপমান জাতির বিবেকের অপমান।
আজ আমরা এক কলঙ্কজনক দৃশ্যের সাক্ষী হলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রস্থলে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতীক রাজু ভাস্করের সামনে নারী প্রতীককে জুতা দিয়ে আঘাত করছে একদল মৌলবাদী। তারা ‘নারী’ এবং ‘নারী কমিশন’ এর বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করছে। নিজেদের ভণ্ড ধার্মিক পরিচয়ে তারা নারীর স্বাধীনতা, মর্যাদা ও অধিকারকে পিষে ফেলতে চায়। অথচ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস জুড়েই আছে মুক্তচিন্তার চর্চা, প্রগতির দীপ্ত শিখা। আজ সেই আলোকবর্তিকা নিভে যাচ্ছে চোখের সামনে।
প্রশ্ন জাগে কোথায় আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীরা? কোথায় সেই সাহসী ছাত্র-ছাত্রী, যারা এক সময় স্বৈরাচার হটাতে রাজপথে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছিল? কোথায় সেই বিপ্লবীরা, যারা একদিন অন্যায়ের বিরুদ্ধে একসাথে দাঁড়িয়েছিল? আজ মৌলবাদীদের নারী বিদ্বেষী হামলার সময় এই নীরবতা আমাদের বিবেককে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
এই দেশের জন্মই হয়েছে ফ্যাসিবাদ, নির্যাতন ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। ১৯৭১ সালে আমরা একটি ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, মানবিক রাষ্ট্রের স্বপ্নে যুদ্ধ করেছিলাম। সেই যুদ্ধে ৩০ লক্ষ শহীদের রক্ত, ২ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমরা পেয়েছিলাম একটি স্বাধীন বাংলাদেশ। আজ সেই স্বাধীনতার মাটিতেই মৌলবাদীরা প্রকাশ্যে নারী অবমাননার উৎসবে মাতে, আর আমরা চুপ থাকি?
এই নীরবতা ভয়ংকর। কারণ এই নীরবতা মৌলবাদীদের শক্তি জোগায়। আজ যদি তারা রাজু ভাস্করের নারী প্রতীকে জুতা মারে, কাল তারা আমাদের নারীদের ঘর থেকে বের হতেই দেবে না। তাদের শাসনে নারীরা হবে কেবল পুরুষের ছায়া, এক নিষ্প্রাণ অবয়ব। এটাই কি আমাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ?
রাষ্ট্র যদি চুপ থাকে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি নির্লিপ্ত থাকে, যদি নাগরিক সমাজ প্রতিক্রিয়া না জানাই, তবে খুব শিগগিরই আমরা এমন এক বাংলাদেশে পৌঁছাবো, যেখানে প্রশ্ন করা যাবে না, নারীরা পড়াশোনা করতে পারবে না, কাজ করতে পারবে না, কথা বলতে পারবে না। নারীরা ঘর থেকে বের হতে পারবে না। এটা কি আমরা চাই?
না, এই বাংলাদেশ আমরা চাই না। আমরা চাই একটি সমানাধিকারের, প্রগতিশীল, মানবিক বাংলাদেশ যেখানে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই সম্মান ও মর্যাদা নিয়ে বাঁচবে।
তাই এখনই সময় রুখে দাঁড়াবার। এখনই সময় রাজপথে ফিরে যাবার। এই মৌলবাদী অপশক্তিকে প্রতিহত করতে হবে দৃঢ় কণ্ঠে, একত্রিতভাবে। যারা আজ নারীর মূর্তিকে জুতা মারছে, তারা আসলে আমাদের ইতিহাস, আমাদের চেতনা, আমাদের মা-বোনদের ত্যাগকে অপমান করছে। এ অপমান আমরা কোনোভাবেই মেনে নেব না।
বিপ্লব থেমে যায় না। নারী অপমানের বিরুদ্ধে আমাদের নতুন এক বিপ্লব শুরু হোক কলমে, কণ্ঠে, রাজপথে। এই লড়াই কোনো একটি নারীর নয়, এ লড়াই আমাদের সকলের।

সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মে, ২০২৫ রাত ৯:৩৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



