উন্নয়নের হাত ধরে মৌলবাদের ছায়া: আমরা কোথায় যাচ্ছি?
বাংলাদেশে গত দেড় দশক ধরে যে অভূতপূর্ব অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, বিদ্যুৎ উৎপাদনের অভাবনীয় অগ্রগতি এসবের পেছনে যিনি মূল ভূমিকা পালন করেছেন, তিনি আর কেউ নন, বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ অর্থনীতিতে মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত হয়েছে, নারীর ক্ষমতায়ন, ডিজিটাল বাংলাদেশ ও প্রযুক্তি খাতে অগ্রগতি নজরকাড়া।
তবে এই উজ্জ্বল সাফল্যের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক ভয়ঙ্কর ছায়া মৌলবাদের বিস্তার। উন্নয়নের পাশাপাশি তিনি যে রাজনৈতিক কৌশলে মৌলবাদীদের তুষ্ট করতে গিয়ে গ্রামেগঞ্জে হাজার হাজার ধর্মীয় স্থাপনা নির্মাণে সহায়তা করেছেন, সেই সিদ্ধান্ত আজ বাংলাদেশের সমাজ ও রাজনীতিকে ভয়ঙ্কর এক চোরাবালিতে ঠেলে দিয়েছে। ধর্মভিত্তিক রাজনীতিকে প্রশ্রয় দিয়ে, অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল চিন্তার মানুষদের পাশে না দাঁড়িয়ে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সঙ্গে আপোষ না করে যে রাজনৈতিক সমঝোতা তিনি করেছিলেন, তার মাশুল আজ তাকে এবং তার দলকে দিতে হচ্ছে।
ধর্মকে ব্যবহার করে মানুষ কতোটা ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে আজ বাংলাদেশের মানুষ তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখছে। একের পর এক মব জাস্টিস, ধর্ম অবমাননার নামে হত্যা, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, বুদ্ধিজীবীদের কণ্ঠরোধ এসবের পেছনে রয়েছে সেই মৌলবাদী চক্র, যাদেরকে এক সময় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে প্রশ্রয় দেওয়া হয়েছিল।
শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থেকেও সেই সমস্ত প্রগতিশীল মানুষদের উপেক্ষা করেছেন, যারা নীতির প্রশ্নে আপোষ করেন না। দেশের চিন্তাশীল, জ্ঞানভিত্তিক সমাজ, সংস্কারক ও আদর্শিক মানুষদের না শোনার পরিণতিতে, মৌলবাদীদের ফাঁদে পড়ে একদিন সেই নেতৃত্বই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে গেছে নিজের দলের প্রকৃত কর্মীদের কাছ থেকে। আজ যখন ক্ষমতা সরে গেছে, সেই প্রান্তিক নেতাকর্মীরাই হামলা-মামলা-মারধরের শিকার, আর উপরে কেউ নেই পাশে দাঁড়াতে। সেই দিনমজুর কর্মী, যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দল করেছে, আজ মৌলবাদীদের রোশানলের শিকার, অথচ উচ্চপর্যায়ের কোনো নেতা তার খোঁজ নিচ্ছে না।
এই বাস্তবতা থেকে শেখার সময় এসেছে। রাজনীতিতে সুবিধাবাদ আর মৌলবাদীদের সঙ্গে আপোষ কখনোই দীর্ঘমেয়াদে লাভজনক হয় না। বঙ্গবন্ধু যে রাষ্ট্রের কথা ভেবেছিলেন সেটি ছিল ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সমাজতান্ত্রিক ও মানবিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী। অথচ সেই রাষ্ট্র আজ ধর্মান্ধতা, বিদ্বেষ ও ভয়ভীতির মধ্যে আবদ্ধ।
বুদ্ধিজীবীরা কেন শেখ হাসিনার পাশে দাঁড়ালেন না? কারণ, যারা বুদ্ধিজীবী, তারা নির্ভর করেন চিন্তা, যুক্তি ও আদর্শের ওপর। তারা বোঝেন, সমাজে মৌলবাদকে প্রশ্রয় দিয়ে উন্নয়ন কখনো টেকসই হয় না। যখন নৈতিকতা হারিয়ে যায়, তখন তা একটি জাতির আত্মাকে গিলে ফেলে।
আজ সময় এসেছে আত্মসমালোচনার। উন্নয়ন মানে কেবল সেতু, সড়ক, বিদ্যুৎ নয় উন্নয়ন মানে চেতনার মুক্তি, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি শ্রদ্ধা, এবং সংখ্যালঘু, নারী ও ভিন্নমতের নিরাপত্তা।
শেখ হাসিনার অর্জনগুলো কখনোই অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু একবিংশ শতাব্দীর বাংলাদেশকে যদি মৌলবাদের দুঃস্বপ্ন থেকে বাঁচাতে হয়, তাহলে রাজনীতির নামে এই আত্মঘাতী সমঝোতা ও নিরবতা ভাঙতে হবে। রাষ্ট্রকে ফিরিয়ে আনতে হবে তার আদর্শিক মূলভিত্তির ওপর।
আর না হলে বাঙালি জাতি আবার এক অন্ধকার সময়ের দিকে ধাবিত হচ্ছে, যেখানে মানুষ ধর্মের নামে মানুষ খুন করছে, বিচারহীনতা ডুবছে দেশ ।দেশে বিচার ব্যবস্থার ওপর, আর সত্যের কণ্ঠরোধ হচ্ছে ক্ষমতার লাঠির জোরে। জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু।

সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মে, ২০২৫ সকাল ৭:০৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



