somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ন্যায়ের অপমৃত্যু ও জাতির সঙ্গে অবিচার

২৮ শে মে, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ন্যায়ের অপমৃত্যু ও জাতির সঙ্গে অবিচার
জাতীয় ইতিহাসের সবচেয়ে রক্তাক্ত অধ্যায় একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ। সেই যুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট ও দেশদ্রোহীতার অপরাধে যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক যাদের মৃত্যুদণ্ড কিংবা বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে তাদের একজন এ টি এম আজহারুল ইসলাম।
সম্প্রতি এই প্রমাণিত মানবতাবিরোধী অপরাধী কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। তার মুক্তির পরপরই রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে, শাহবাগ মোড়ে, এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে নিজেকে 'মুক্ত' ও 'স্বাধীন' বলে ঘোষণার মাধ্যমে তিনি শুধু ইতিহাসের প্রতি ধৃষ্টতা প্রদর্শন করেননি, আহত করেছেন সমগ্র জাতিকে।
একজন স্বীকৃত যুদ্ধাপরাধী কীভাবে রাষ্ট্রক্ষমতার ছত্রছায়ায় কারামুক্তি পেতে পারেন, এটি একটি গুরুতর প্রশ্ন। এটি শুধু একটি মামলার বিচারিক প্রক্রিয়ার প্রশ্ন নয় এটি একটি জাতির চেতনার, আত্মত্যাগের এবং ন্যায়ের প্রশ্ন। যে রাষ্ট্র হাজারো শহীদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন হয়েছে, সেই রাষ্ট্রে যদি যুদ্ধাপরাধীদের পৃষ্ঠপোষকতা চলে, তবে তা শুধু মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি নয়, গণতন্ত্র, বিচার ও মানবিক ন্যায়ের মূল ভিত্তির ওপরও সরাসরি আঘাত।
আমরা মনে করি, আজহারুল ইসলামের মুক্তি ও সংবর্ধনা আয়োজন একটি ভয়ঙ্কর দৃষ্টান্ত। এটি যুদ্ধাপরাধীদের উৎসাহিত করবে এবং ভবিষ্যতের প্রজন্মের কাছে একটি বিভ্রান্তিকর বার্তা পাঠাবে যেখানে অপরাধ, বিশ্বাসঘাতকতা ও বর্বরতার বিচার নয়, বরং তাদের পুনর্বাসন ও সম্মানজনক অবস্থান নিশ্চিত করা হচ্ছে।
এই ঘটনাটি আমাদের সামনে নতুন করে প্রশ্ন তোলে: বিচার কি শুধুই আদালতের কাজ, নাকি বিচারব্যবস্থা ও শাসনব্যবস্থার সম্মিলিত দায়িত্ব? আমরা চাই, এ ধরনের ঘটনা যেন আর না ঘটে। রাষ্ট্রকে তার অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে সে কি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের, নাকি ঘাতকদের পুনর্বাসনে আগ্রহী?
জাতির পক্ষে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য এখনই প্রতিবাদ, প্রতিরোধ ও গণসচেতনতার বিকল্প নেই।
১. আইনি কাঠামো: আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩
এই আইনের আওতায় যুদ্ধাপরাধ, গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ, নির্যাতন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি অপরাধের বিচার হয়।
এই আইনে বলা আছে:
ট্রাইব্যুনালের রায় চূড়ান্ত (Final)।
তবে আসামি বা রাষ্ট্রপক্ষ চাইলে আপিল বিভাগে আপিল করতে পারে।
আপিলের রায়ও চূড়ান্ত।
২. সাজা মওকুফ বা মুক্তির সুযোগ কী আছে?
আইন অনুযায়ী তিনটি সম্ভাবনা থাকে
‌১) আপিলের মাধ্যমে খালাস পাওয়া:
আসামি যদি ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন, এবং সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ যদি সাক্ষ্যপ্রমাণে সন্তুষ্ট না হয়ে তাকে খালাস দেয় তাহলে সেটা আইনি খালাস, এবং তা বৈধ।
কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ টি এম আজহারুল ইসলাম মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ছিলেন এবং আপিলেও দণ্ড বহাল ছিল। সুতরাং এটি খালাস নয়।
২) রাষ্ট্রপতির ক্ষমা (Article 49, সংবিধান):
বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪৯ রাষ্ট্রপতিকে ক্ষমা করার ক্ষমতা দেয়।
তবে এটি বিরল, এবং সাধারণত মানবিক বিবেচনায় (মৃত্যুপথযাত্রী, দীর্ঘ কারাভোগ, বার্ধক্য ইত্যাদি) প্রয়োগ করা হয়।
৩) কারাবিধি অনুযায়ী শর্তসাপেক্ষ মুক্তি:
যদি কোনো আসামি দীর্ঘদিন সাজা ভোগ করেন, ভালো আচরণ করেন, বয়স বিবেচনায় থাকেন তাহলে সরকার বিশেষ বিবেচনায় শর্তসাপেক্ষে মুক্তি (parole বা remission) দিতে পারে।
তবে যুদ্ধাপরাধীরা সাধারণ কয়েদি নন, এবং তাদের ক্ষেত্রে এই সুযোগ প্রযোজ্য নয় বলেই ধরা হয়।
৩. বাস্তবতা ও আইনবহির্ভূত ইঙ্গিত
যদি একজন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী কারামুক্ত হন, এবং তার কোনো রাষ্ট্রপতির ক্ষমা বা সুপ্রিম কোর্টের রায় প্রকাশ্যে না আসে, তবে এটিকে আইনবহির্ভূত প্রভাব বা রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের ফল হিসেবে ধরা হবে।
এক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠে:
কী প্রক্রিয়ায় মুক্তি পেলেন?
রাষ্ট্রপতির ক্ষমার আদেশ কি প্রকাশ্যে এসেছে?
মুক্তির আগে পূর্ণ দণ্ড ভোগ করেছেন কি?
এ টি এম আজহারুল ইসলামের কারামুক্তি যদি রাষ্ট্রপতির ক্ষমা বা সুপ্রিম কোর্টের কোনো পরিবর্তিত রায়ের ভিত্তিতে না হয়ে থাকে, তবে এটি আইনের চরম লঙ্ঘন, এবং রাষ্ট্রের বিচারিক ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা ধ্বংসের সমতুল্য।
একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ন্যায়ের বিচ্যুতি শুধু আইন নয়, জাতির আত্মমর্যাদারও অবমাননা। একাত্তরের ঘাতককে এভাবে মুক্তির সুযোগ দেওয়া মানে শহীদদের রক্তের সঙ্গে প্রতারণা।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মে, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৯
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×